join facebook page

Wednesday, 28 September 2016

আজ ৭-২-২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল-এ মিনি রম্য................

আলাদিনের জিন ও কয়েকটি শিশু

সোহানুর রহমান অনন্ত

আলাদিনের জিন বার্থডে সেলিব্রেশন করতে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছে। হঠাৎ মধ্যরাতে তার চোখে পড়ল একদল বাচ্চা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সে তাদের সামনে গিয়ে বলল, 'ছোট্ট বন্ধু, তোমরা কেমন আছো?' বাচ্চাগুলো কেউ কোনো কথা বলল না। তাই দেখে জিন আবার বলল, 'বলো, তোমাদের কী চাই_ চকোলেট, খেলনা, নাকি হাওয়াই মিঠাই?'

বাচ্চারা এবারও কোনো কথা বলল না। জিন চিন্তিত মনে বলল, 'বুঝেছি, তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার সাইকেল প্রয়োজন।' একজন বাচ্চা বলল, 'তুমি কে?'

'আমি আলাদিনের জিন।'

বাচ্চাগুলো আবার চুপ হয়ে গেল। জিন দাঁত বের করে হেসে বলল, 'তোমরা কি পথ হারিয়ে ফেলেছ?' বাচ্চাগুলো একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল। ওদের মধ্যে বয়সে একটু বড় একটা বাচ্চা এসে বলল, 'না, আমরা পথ হারাইনি।'

জিন নিশ্চিত হয়ে বলল, 'তাহলে চলো, তোমাদের দ্রুত বাড়িতে পেঁৗছে দিই।' বাচ্চাগুলো ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। সে দৃশ্য দেখে জিন আরও অবাক হলো, 'তোমরা বাড়ি যাবে না?' সবাই একসঙ্গে বলল, 'না।'

'না কেন বলো তো? তোমরা কেন বাড়িতে যেতে চাও না?'

'বাড়ি যেতে আমাদের ভয় করে।' এবার সত্যি জিনের মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা হলো। বাচ্চাগুলো বলে কী! বাড়িতে যেতে ভয় করে, এটা আবার কেমন কথা হলো! জিন একটু ইজি হয়ে বলল, 'তোমাদের বাবা-মা চিন্তা করবে তোমাদের জন্য।' বয়সে বড় বাচ্চাটা সামনে এসে বলল, 'আমাদের ঘরে কোনো নিরাপত্তা নেই।'

'কী নেই?'

'নিরাপত্তা নেই, মানে আমরা ঘরে নিরাপদ না।'

'তোমরা ছোট মানুষ তাই বোঝো না, ঘরেই তো সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।'

'না, নিরাপদ না।'

'কেন নিরাপদ না?'

'কারণ বাসাতেই আমরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছি।'

'বুঝেছি, তোমাদের কোল ড্রিংকস প্রয়োজন। গরম পড়েছে তাই কী বলছ নিজেও বুঝতে পারছ না।' জিন ছু মন্তর দিয়ে একটা কোল্ড ড্রিংকস এনে ছেলেটির হাতে দিল। ছেলেটি রাগে-দুঃখে জিনের মুখের ওপর কোল্ড ড্রিংকস ছুড়ে মারল। তারপর সব শিশু একসঙ্গে চেঁচিয়ে বলল, 'আমাদের ঘরে চার দেয়ালের মধ্যেই আমাদের হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের মা-বাবাকেও আমরা আর নিরাপদ মনে করতে পারছি না!' এক সঙ্গে এতগুলো কণ্ঠ রাতের অন্ধকারে অনেক দূর পর্যন্ত প্রতিধ্বনি হলো।

ছোট্ট একটা ছেলে একটা পেপার কাটিং এনে জিনের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর ওরা সবাই জিনকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। জিন একমনে পড়ল নিউজগুলো। চোখে জল আসার মতো অবস্থা তার! সত্যি, মা-বাবার কাছেও সন্তান নিরাপদ নয়! অবিশ্বাস্য! তা ছাড়া কয়েকদিন আগেই বালুর নিচে পাওয়া গেছে কয়েকটি শিশুর লাশ। জিনের মনে পড়ে গেল সেই কথা।

সঙ্গে মনে পড়ল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার কথা। এসেছে নতুন শিশু; তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। কিন্তু কোথায় ছাড়বে, নিজের ঘরেই শিশুরা এখন আর নিরাপদ নয়! জিন পেছনে ফিরে তাকাল। ততক্ষণে বাচ্চাগুলো অনেক দূরে চলে গেছে। নিষ্পাপ শিশুদের ছায়াগুলোও যেন ভয় পাচ্ছিল।

জিনের চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো। সামনে তাকাতেই দেখল দলে দলে শিশুরা রাস্তার অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের চোখে-মুখে ভয়, হাজারো অজানা ভয়। শিশুদের এই অনিরাপদ দেশটিতে আর এক মিনিটও থাকল না আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের জিন। সেও উড়াল দিল। হ
- See more at: http://bangla.samakal.net/2016/03/07/197799#sthash.9WIU5hDE.dpuf

No comments:

Post a Comment