আজকের ভোরের কাগজে
দ্বিধা
** সোহানুর রহমান অনন্ত **
ছাদের পশ্চিম দিকে দাঁড়িয়ে আছি, এখান থেকে চাঁদটাকে অনেক বড় দেখা যায়। হাতে কফির মগ, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে। কলির সঙ্গে আজো ঝগড়া করেছি। মেয়েটির সঙ্গে ঝগড়া করতে অদ্ভুত ভালো লাগে আমার। মানুষ তার সুখের মুহ‚র্তগুলো ডায়রিতে লিখে রাখে। আর আমি লিখে রাখি আমাদের ঝগড়ার মুহ‚র্তগুলো।
প্রতিবার ফোন করার আগে হাজারবার শপথ করি আর ঝগড়া করব না। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও শেষটা ঝগড়া দিয়েই শেষ হয় আমাদের। তারপর আবার ছোট্ট একটা এসএমএস। রাগগুলো বরফে পরিণত হয়। এসএমএসটা অবশ্য আমাকেই করতে হয়। একটু আগেও করেছি, এখন উত্তরের অপেক্ষা। পাশের বাড়ির মেয়েটি চুল আচড়াচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখা যায় সেই দৃশ্য। দুটো বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই অকারণেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।
মেয়েটি আমায় দেখলেই কিছুক্ষণের জন্য রোবট হয়ে যায়। তারপর সেই পুরনো অভ্যাস, পর্দাটা ফেলে নিজেকে আড়াল করে নেয়া। আমি ঠোঁট টিপে হাসি। ঠিক তখনি কলির ফোন আসে। রিসিভ করতেই কলি হেসে বলে,
-বিয়ের পর তো বউ দু’দিনও সংসার করবে না।
-কেন?।
-এমন ঝগড়াটে তুই।
-আমি তখন শান্ত কণ্ঠে বলি, আচ্ছা হাসলে সব মেয়েকেই তো সুন্দর লাগে, রাগলে কেমন লাগে একটু বলবি?
-কলি ভারী কণ্ঠে বলে কেমন আবার নিশ্চয় খারাপ লাগে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
-নাহ লাগে না, সব হাসির মাঝে যেমন সৌন্দর্য নেই, তেমনি সব রাগের মধ্যে অসৌন্দর্য নেই। হিটলার মানুষ মেরে হাসতো, সেই হাসিতে কোনো সৌন্দর্য নেই।
-হয়েছে পণ্ডিত হতে হবে না তোকে। একটু আমার বাসার সামনে আসবি আমি বারান্দায় দাঁড়াব।
-এত রাতে! কেন?
-আজ ইচ্ছেমতো সাজুগুজু করেছি বলবি আমাকে কেমন লাগছে।
-পাগলি মেয়ে একটা, তোকে বনলতা সেনের অ্যাসিসটেন্টের মতো লাগছে। খুশি।
-তুই আবারো আমাকে পচালি…। কলি রাগ করে ফোন কেটে দিল। আমি হেসে খুন, ছেলেমানুষি আর গেল না ওর। খেয়াল করলাম সামনে পর্দার আড়াল থেকে মিষ্টি দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
২.
একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, মেয়েরা ভালোবাসতে অনেক সময় নেয় আর ঘৃণা করতে সময় নেয় একেবারে অল্প। অন্যদিকে ছেলেরা ভালোবাসতে অল্প সময় নেয় আর ঘৃণা করতে সময় নেয় অনেক। আমার বেলায় কি ঘটছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বাসার সামনে চায়ের দোকানটায় প্রায় বিকেলে আড্ডা দেই। আমাকে নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করে। একটা প্রেম করে দেখাতে পারলাম না সেই কারণে। এতে আমার কোনো আপসোস নেই…।
প্রেম হঠাৎ আসে…হঠাৎ হয়ে যায়। পাশের বাড়ির মেয়েটি আজ নীল শাড়ি পরে ছাদে উঠেছে। বন্ধুদের থেকে সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম। ঘরে গিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরে ছাদে উঠে দাঁড়ালাম। আমায় দেখে মেয়েটি মুখ টিপে হাসল, কারণটা বুঝতে একটু দেরি হলো। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে পাঞ্জাবি উল্টো পরে ফেলেছি। লজ্জায় আর দাঁড়াতে পারলাম না। তবে ছাদ থেকে নেমে আসার আগে একবার ফিরে তাকালাম। অসাধারণ লাগছে মেয়েটিকে, যেন রূপকথার কোনো রাজকন্যা, তবে কথাটা বলা হয়নি মেয়েটাকে।
৩.
আজ কলির বার্থডে। আজ কোনোভাবেই ঝগড়া করা যাবে না। ঝগড়া লেখা ডায়রিটা ওকে উপহার দেব। পড়ে নিশ্চয়ই আরো ক্ষেপে যাবে পাগলিটা। কলি ফোন করে জানিয়েছে রাইফেল স্কয়ারের সামনে অপেক্ষা করছে। একগুচ্ছ সাদা বেলি কিনে নিলাম, সঙ্গে এক বক্স চকলেট।
সাদা গোলাপ পাইনি, সাদা ফুল ওর খুব পছন্দ। আসার সময় বেশ কয়েকবার ছাদে উঠেছিলাম পাশের বাড়ির মেয়েটিকে দেখতে কিন্তু পাইনি। আচ্ছা মেয়েটিকে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি…। কলিকে কথাটা বলতে হবে ও হয়তো ব্যাপারটা বুঝবে। জ্যামে পড়ে আধা ঘণ্টার রাস্তা আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছালাম। আমাকে দেখেই কলি রাগে ফেটে পড়ল।
-তোর সঙ্গে কোনো কথা নেই।
-আমি কি সুপারম্যান নাকি যে উড়ে উড়ে আসব।
-আমি জানি না।
-তোকে রাগলে হলিউডের….
-নায়িকাদের মতো লাগে, তাই না।
-আরে না আমি তাই বলেছি নাকি…বললাম রাগলে তোকে হলিউডের লোকাল হিরোইনদের মতো লাগে।
-ইউ…। তুই আবার আমাকে পচালি। আমি হাসতে লাগলাম।
হঠাৎ খেয়াল হলো, কলির চোখে জল। দু’এক ফোঁটা হয়তো গাল বেয়ে পড়েছে। আমি আলতো করে মুছে দিলাম। বুকের বাম পাশটা কেমন যেন ছলাৎ করে উঠল। কলি অভিমানী কণ্ঠে বলল,
-তুই আমাকে সব সময় পচাস আমি কি দেখতে এত খারাপ?। হেসে বললাম-
-ভুল হয়ে গেছে রে…তুই এত সুন্দরী এতটা দিন তোর পাশে থেকেও বুঝতে পারিনি। আজ বুঝলাম, আর কখনো তোকে পচাব না, প্রমিজ। কলির মুখে মিষ্টি হাসি। কেন যেন আজ ওর হাসিটা অনেক বেশি ভালো লাগছে। তাহলে কি…? থাক মনের কিছু বুঝে নিতে হয়।
একটা সময় কলি চলে গেল। রেললাইনের পথ ধরে আমি হাঁটতে লাগলাম। মনে হাজারো প্রশ্ন, আমি কাকে ভালোবাসি…কাকে…পাশের বাড়ির মেয়েটিকে নাকি কলিকে? উত্তর মেলে না অদ্ভুত দ্বিধায় ভুগছি।
—দ্বিধা
** সোহানুর রহমান অনন্ত **
ছাদের পশ্চিম দিকে দাঁড়িয়ে আছি, এখান থেকে চাঁদটাকে অনেক বড় দেখা যায়। হাতে কফির মগ, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে। কলির সঙ্গে আজো ঝগড়া করেছি। মেয়েটির সঙ্গে ঝগড়া করতে অদ্ভুত ভালো লাগে আমার। মানুষ তার সুখের মুহ‚র্তগুলো ডায়রিতে লিখে রাখে। আর আমি লিখে রাখি আমাদের ঝগড়ার মুহ‚র্তগুলো।
প্রতিবার ফোন করার আগে হাজারবার শপথ করি আর ঝগড়া করব না। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও শেষটা ঝগড়া দিয়েই শেষ হয় আমাদের। তারপর আবার ছোট্ট একটা এসএমএস। রাগগুলো বরফে পরিণত হয়। এসএমএসটা অবশ্য আমাকেই করতে হয়। একটু আগেও করেছি, এখন উত্তরের অপেক্ষা। পাশের বাড়ির মেয়েটি চুল আচড়াচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখা যায় সেই দৃশ্য। দুটো বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই অকারণেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।
মেয়েটি আমায় দেখলেই কিছুক্ষণের জন্য রোবট হয়ে যায়। তারপর সেই পুরনো অভ্যাস, পর্দাটা ফেলে নিজেকে আড়াল করে নেয়া। আমি ঠোঁট টিপে হাসি। ঠিক তখনি কলির ফোন আসে। রিসিভ করতেই কলি হেসে বলে,
-বিয়ের পর তো বউ দু’দিনও সংসার করবে না।
-কেন?।
-এমন ঝগড়াটে তুই।
-আমি তখন শান্ত কণ্ঠে বলি, আচ্ছা হাসলে সব মেয়েকেই তো সুন্দর লাগে, রাগলে কেমন লাগে একটু বলবি?
-কলি ভারী কণ্ঠে বলে কেমন আবার নিশ্চয় খারাপ লাগে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
-নাহ লাগে না, সব হাসির মাঝে যেমন সৌন্দর্য নেই, তেমনি সব রাগের মধ্যে অসৌন্দর্য নেই। হিটলার মানুষ মেরে হাসতো, সেই হাসিতে কোনো সৌন্দর্য নেই।
-হয়েছে পণ্ডিত হতে হবে না তোকে। একটু আমার বাসার সামনে আসবি আমি বারান্দায় দাঁড়াব।
-এত রাতে! কেন?
-আজ ইচ্ছেমতো সাজুগুজু করেছি বলবি আমাকে কেমন লাগছে।
-পাগলি মেয়ে একটা, তোকে বনলতা সেনের অ্যাসিসটেন্টের মতো লাগছে। খুশি।
-তুই আবারো আমাকে পচালি…। কলি রাগ করে ফোন কেটে দিল। আমি হেসে খুন, ছেলেমানুষি আর গেল না ওর। খেয়াল করলাম সামনে পর্দার আড়াল থেকে মিষ্টি দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
২.
একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, মেয়েরা ভালোবাসতে অনেক সময় নেয় আর ঘৃণা করতে সময় নেয় একেবারে অল্প। অন্যদিকে ছেলেরা ভালোবাসতে অল্প সময় নেয় আর ঘৃণা করতে সময় নেয় অনেক। আমার বেলায় কি ঘটছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বাসার সামনে চায়ের দোকানটায় প্রায় বিকেলে আড্ডা দেই। আমাকে নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করে। একটা প্রেম করে দেখাতে পারলাম না সেই কারণে। এতে আমার কোনো আপসোস নেই…।
প্রেম হঠাৎ আসে…হঠাৎ হয়ে যায়। পাশের বাড়ির মেয়েটি আজ নীল শাড়ি পরে ছাদে উঠেছে। বন্ধুদের থেকে সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম। ঘরে গিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরে ছাদে উঠে দাঁড়ালাম। আমায় দেখে মেয়েটি মুখ টিপে হাসল, কারণটা বুঝতে একটু দেরি হলো। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে পাঞ্জাবি উল্টো পরে ফেলেছি। লজ্জায় আর দাঁড়াতে পারলাম না। তবে ছাদ থেকে নেমে আসার আগে একবার ফিরে তাকালাম। অসাধারণ লাগছে মেয়েটিকে, যেন রূপকথার কোনো রাজকন্যা, তবে কথাটা বলা হয়নি মেয়েটাকে।
৩.
আজ কলির বার্থডে। আজ কোনোভাবেই ঝগড়া করা যাবে না। ঝগড়া লেখা ডায়রিটা ওকে উপহার দেব। পড়ে নিশ্চয়ই আরো ক্ষেপে যাবে পাগলিটা। কলি ফোন করে জানিয়েছে রাইফেল স্কয়ারের সামনে অপেক্ষা করছে। একগুচ্ছ সাদা বেলি কিনে নিলাম, সঙ্গে এক বক্স চকলেট।
সাদা গোলাপ পাইনি, সাদা ফুল ওর খুব পছন্দ। আসার সময় বেশ কয়েকবার ছাদে উঠেছিলাম পাশের বাড়ির মেয়েটিকে দেখতে কিন্তু পাইনি। আচ্ছা মেয়েটিকে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি…। কলিকে কথাটা বলতে হবে ও হয়তো ব্যাপারটা বুঝবে। জ্যামে পড়ে আধা ঘণ্টার রাস্তা আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছালাম। আমাকে দেখেই কলি রাগে ফেটে পড়ল।
-তোর সঙ্গে কোনো কথা নেই।
-আমি কি সুপারম্যান নাকি যে উড়ে উড়ে আসব।
-আমি জানি না।
-তোকে রাগলে হলিউডের….
-নায়িকাদের মতো লাগে, তাই না।
-আরে না আমি তাই বলেছি নাকি…বললাম রাগলে তোকে হলিউডের লোকাল হিরোইনদের মতো লাগে।
-ইউ…। তুই আবার আমাকে পচালি। আমি হাসতে লাগলাম।
হঠাৎ খেয়াল হলো, কলির চোখে জল। দু’এক ফোঁটা হয়তো গাল বেয়ে পড়েছে। আমি আলতো করে মুছে দিলাম। বুকের বাম পাশটা কেমন যেন ছলাৎ করে উঠল। কলি অভিমানী কণ্ঠে বলল,
-তুই আমাকে সব সময় পচাস আমি কি দেখতে এত খারাপ?। হেসে বললাম-
-ভুল হয়ে গেছে রে…তুই এত সুন্দরী এতটা দিন তোর পাশে থেকেও বুঝতে পারিনি। আজ বুঝলাম, আর কখনো তোকে পচাব না, প্রমিজ। কলির মুখে মিষ্টি হাসি। কেন যেন আজ ওর হাসিটা অনেক বেশি ভালো লাগছে। তাহলে কি…? থাক মনের কিছু বুঝে নিতে হয়।
একটা সময় কলি চলে গেল। রেললাইনের পথ ধরে আমি হাঁটতে লাগলাম। মনে হাজারো প্রশ্ন, আমি কাকে ভালোবাসি…কাকে…পাশের বাড়ির মেয়েটিকে নাকি কলিকে? উত্তর মেলে না অদ্ভুত দ্বিধায় ভুগছি।
No comments:
Post a Comment