join facebook page

Wednesday, 28 September 2016

২৭-৪-২০১৬ দৈনিক যুগান্তরে....লেখা অলংকরন দুটো আমার.... মনশহর
সোহানুর রহমান অনন্ত
মেয়েটিকে প্রায় দেখি নতুন বাজার থেকে বাসে উঠে মালিবাগ নেমে যায়। স্টুডেন্ট হাফ, তাই অর্ধেক ভাড়া নিয়ে মাঝে মাঝে হেলপারদের সাথে কথাকাটাকাটি হতো। যেহেতু এই সময়টাতে বাসে সীট পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। তারপরও আমি ঠেলেঠুলে পেয়ে যেতাম। মেয়েটি কখনো পেতো কখনো পেতো না। দাঁড়িয়ে থাকতো, কখনো সীট ছেড়ে দিতাম। কখনো ছাড়লেও বসতো না। কিভাবে যেন সময়টা মিলে যায়, মিলে যায় বাসে উঠার ব্যাপারটা। এই শহরে মানুষের যেমন অভাব নেই বাসেরও তেমন অভাব নেই। কত লোক উঠে কত লোক নামে তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু মেয়েটি কিভাবে যেন মনে আটকে গেছে।
একদিন মেয়েটির পাশের সীটি জায়গা পেলাম। বার বার কথা বলতে গিয়েও গিলে ফেলছিলাম। একটা অজানা ভয়ে আছি আমি। যদি অন্য কিছু মনে করে। মেয়েটি এক মনে মোবাইল ফোন চেপে যাচ্ছে। স্মার্ট ফোন। ফেইসবুক চালায় হয়তো। আমি টেরা চোখে তাকাই। মেয়েটি সম্ভবত আমার বিষয়টা আচ করতে পেরেছে। কিছু বলবেন, এমন তাকাচ্ছেন কেন? একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। ইয়ে মানে, মানে.. না কই কিছু না। মেয়েটি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন কোন চিড়িয়াখানার নতুন আমদানি করা প্রাণী দেখছে।
সেদিন বাসষ্ট্র্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, মেয়েটি আজ ফিরোজা কালার একটি সেলোয়ার কামিজ পড়েছে। কোন একটা কারণে বাস আজ একেবারে কম। রাজনৈতিক কোন ব্যাপার হতে পারে। যদিও মাঝে মাঝে দু’একটা আসছে, কিন্তু সেগুলোতে তিল ধরনের ঠাই নেই। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম মেয়েটির সাথে। এদিকে রাত তো বাড়ছেই। একটা প্রস্তাব মনের মধ্যে ঘুরপাক খেলো। যদিও সাহসের অভাবে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। অবশেষে আর দাঁড়িয়ে না থেকে মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম, আপনি তো মালিবাগ যাবেন, আমিও সেই দিকে যাবো। আপনি চাইলে একটা রিক্সা....। মেয়েটি এমনভাবে তাকালো যেন আমি বলে অন্যায় করে ফেলেছি। আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, সমস্যা নেই স্টুডেন্ট হাফ এটা আমি জানি। মেয়েটি বলল, আপনি কি আমাকে চেনেন?। জ্বি না, তবে প্রায় বাসে দেখি, পথও চেনা বলতে পারেন। মেয়েটির ভাব দেখে মনে হলো যে যেতে রাজী না। এভাবে কেটে গেলো আরো অনেকক্ষন। শুনুন, মেয়েটি বলল। জ্বি। একটু মুচকি হেসে বলল, ঠিক আছে রিক্সা নিন। আমি ্কিছুদূর এগিয়ে গেলাম। রিক্সাও চোখে পড়ছে না। অনেক কষ্টে একটা পাওয়া গেলো তাও আবার দিগুন ভাড়া। মেয়েটি আবার পাশে উঠে বসলো।
এমন সময় আচমকা বৃষ্টি শুরু হলো। তানিশা ছাতা মেলে ধরলো। একি ছাতার নীচে দু’জন। চোখের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পুরো শহর। ভিজছে মনের দেয়াল। তানিশার খুব কাছাকাছি আমি। আমার একপাশ ভিজে গেছে,তানিশারও। যেন একটি ফ্রেমে বাঁধা দুটো ছবি। রিক্সাওয়ালার অবস্থ্যা কাহিল, রাস্তায় পানি জমেছে তাই কষ্ট হচ্ছে তার । মালিবাগ আসতেই, আমি ভাড়া দেওয়ার আগেই তাণিশা ভাড়া দিয়ে দিলো। আরে স্টুডেন্ট হাফ তো, বললাম আমি। আজ ইচ্ছে করে ফুল দেবো এই বলে হেসে চলে গেলো তাণিশা।
এরপর অনেকবার তাণিশা আর আমি নতুন বাজার টু মালিবাগ জার্নি করেছি। খুব ভালো লাগতো মেয়েটিকে। কেন এত ভালো লাগতো জানি না। তাণিশা একটি ছেলেকে পছন্দ করতো। কথাটা শুনে এতটুকু হৃদয়ে কষ্ট লাগেনি। প্রকৃত ভালবাসার জন্য হৃদয়ে কষ্ট নয় ভালবাসাই থাকে। দিনক্ষন দেখে তাণিশা ওর পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে ফেললো। আজ আর নতুন বাজার তাণিশার জন্য আমি অপেক্ষা করি না। বৃষ্টিতে মনের দেয়াল ভিজতে দেইনা। মন শহরে দু’দিনের অতিথি তাণিশাকে মন থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
- See more at: http://www.jugantor.com/…/%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A6%B6%E0%A6…

No comments:

Post a Comment