১৯-১০-২০১৫ দৈনিক সমকালের প্যাঁচালে
একটি বিরতিহীন প্রেম অতঃপর ব্রেকআপ______(ভিডিও ছাড়া)
সোহানুর রহমান অনন্ত
দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বিরতিহীন মোবাইলে, ফেসবুকে প্রেম করার পর পল্টন মোড়ে দু'জনের দেখা। রাশি খুব সুন্দর করে পার্লার থেকে সেজে এসেছে। প্রথম দেখা বলে কথা। কম হলেও মুখে এক-দেড় কেজি আটা-ময়দা তো হবেই। রাশি ওর নিজের দেওয়া নাম, হিন্দি সিরিয়ালপ্রেমী কি-না। আসল নামটা জানি না। জানার দরকারও নাই। শেকসপিয়র বলেছেন নামে কী আসে যায়। শেকসপিয়রই কথাটা বলেছেন তো? শিওর না। ভুল হলে কিছু মনে করবেন না।
রিকশা নিলাম, যাব হাতিরঝিল। তাকে দেখেই আমার চোখে যেন বাজ পড়ল। খাইছে! এইটা চেহারা না পাতিলার তলা। মুখের যে দিক দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে ওই দিকটাই ডিসকালার হয়ে যাচ্ছে। আমি বিষ হজম করার মতোই চুপ হয়ে রইলাম। কিন্তু অশান্তি বাধল শান্তিনগরে গিয়ে। চারদিকে পানি আর পানি। মনে হচ্ছে বিচের মধ্যে রিকশায় ঘুরছি। রাশি বারবার আয়নায় নিজের মুখ দেখছে আর বলছে, ওহ নো, তোমার একটা গাড়ি নেই কেন?
কারণ কিনি নাই তাই। তাহলে একটা বাইক তো কিনতে পারতে? কোন দুঃখে, বাইকের চেয়ে রিকশায় চড়া অনেক ভালো। বুঝলাম আমার কথা ওর পছন্দ হয় নাই। মালিবাগ মোড়ের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ রিকশার এক চাকা গর্তে পড়ে গেল। আর একটু হলেই কাতলা মাছের মতো চিৎ হয়ে পানিতে পড়তাম। রিকশাওয়ালা লুঙ্গি কাছা দিয়ে রিকশা টানছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অবস্থা খারাপ। আমাকে বোধহয় পানিতে নামতে হবে। কিন্তু নামার ভয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর রিকশাওয়ালা ব্যর্থ হয়ে বলল, ভাই, হাত লাগাইতো হইব। চাকা ফাঁইসা গেছে। প্রেমিকার সামনে ইজ্জত ঢেউটিন হওয়ার মতো অবস্থা। তারপরও নেমে পড়লাম। ধাক্কা দিলাম কিন্তু বেরসিক চাকা কিছুতেই ওঠে না। রিকশাওয়ালা বলল, কী ভাই, সকালে ভাত খান নাই! জোরে ধাক্কা দেন। মেজাজটাই হট হয়ে গেল। একটা বড় দম নিয়ে দিলাম জোরে ধাক্কা। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য পতনের শব্দ। মানে রাশি সেলফি তুলছিল। একেবারে মোবাইলসহ রিকশাওয়ালার ওপরে গিয়ে পড়ল। ধপাস! আমি মনে হয় হ্যাং হয়ে গেলাম। কাদাজল মুখে নিয়ে রাশি উঠে আমাকে বলল, তুমি একটা হুনুমান, গাধা, যমজ বেকুব, এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?
রিকশাওয়ালা গোঙাতে গোঙাতে উঠে বলল, ওরে বাবারে! মনে হয় ইহকাল শেষ হইয়া গেছে আমার। আমার ওপর মানুষ পড়ল না ঠাডা পড়ল বুঝলাম না!
রিকশাওয়ালার কথায় কান দিলাম না। রাশিকে উদ্দেশ করে আমি একগাল হেসে বললাম, অন্তত চেহারা ডিসকালারের চেয়ে এখন বেশি ভালো লাগছে তোমায়।
ইউ, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। খেয়াল করে দেখলাম, আম আদমিরা মোবাইল দিয়ে আমাদের ছবি তুলছে। নিশ্চিত ফেসবুকে ছেড়ে দেবে। রাশি দৌড় মারতে গিয়ে এক পা ম্যানহোলে পড়ে গেল। দ্বিতীয় পতন... চপাস। ব্রেকআপটা এতক্ষণ ওখানেই আটকে ছিল। এখন পুরোপুরি কনফার্ম। আমি কোনো রকম দৌড়ে বাঁচলাম। ঢাকার রাস্তাগুলো আসলেই দয়ামায়াহীন। কখন কার ব্রেকআপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলা মুশকিল। হ
একটি বিরতিহীন প্রেম অতঃপর ব্রেকআপ______(ভিডিও ছাড়া)
সোহানুর রহমান অনন্ত
দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বিরতিহীন মোবাইলে, ফেসবুকে প্রেম করার পর পল্টন মোড়ে দু'জনের দেখা। রাশি খুব সুন্দর করে পার্লার থেকে সেজে এসেছে। প্রথম দেখা বলে কথা। কম হলেও মুখে এক-দেড় কেজি আটা-ময়দা তো হবেই। রাশি ওর নিজের দেওয়া নাম, হিন্দি সিরিয়ালপ্রেমী কি-না। আসল নামটা জানি না। জানার দরকারও নাই। শেকসপিয়র বলেছেন নামে কী আসে যায়। শেকসপিয়রই কথাটা বলেছেন তো? শিওর না। ভুল হলে কিছু মনে করবেন না।
রিকশা নিলাম, যাব হাতিরঝিল। তাকে দেখেই আমার চোখে যেন বাজ পড়ল। খাইছে! এইটা চেহারা না পাতিলার তলা। মুখের যে দিক দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে ওই দিকটাই ডিসকালার হয়ে যাচ্ছে। আমি বিষ হজম করার মতোই চুপ হয়ে রইলাম। কিন্তু অশান্তি বাধল শান্তিনগরে গিয়ে। চারদিকে পানি আর পানি। মনে হচ্ছে বিচের মধ্যে রিকশায় ঘুরছি। রাশি বারবার আয়নায় নিজের মুখ দেখছে আর বলছে, ওহ নো, তোমার একটা গাড়ি নেই কেন?
কারণ কিনি নাই তাই। তাহলে একটা বাইক তো কিনতে পারতে? কোন দুঃখে, বাইকের চেয়ে রিকশায় চড়া অনেক ভালো। বুঝলাম আমার কথা ওর পছন্দ হয় নাই। মালিবাগ মোড়ের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ রিকশার এক চাকা গর্তে পড়ে গেল। আর একটু হলেই কাতলা মাছের মতো চিৎ হয়ে পানিতে পড়তাম। রিকশাওয়ালা লুঙ্গি কাছা দিয়ে রিকশা টানছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অবস্থা খারাপ। আমাকে বোধহয় পানিতে নামতে হবে। কিন্তু নামার ভয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর রিকশাওয়ালা ব্যর্থ হয়ে বলল, ভাই, হাত লাগাইতো হইব। চাকা ফাঁইসা গেছে। প্রেমিকার সামনে ইজ্জত ঢেউটিন হওয়ার মতো অবস্থা। তারপরও নেমে পড়লাম। ধাক্কা দিলাম কিন্তু বেরসিক চাকা কিছুতেই ওঠে না। রিকশাওয়ালা বলল, কী ভাই, সকালে ভাত খান নাই! জোরে ধাক্কা দেন। মেজাজটাই হট হয়ে গেল। একটা বড় দম নিয়ে দিলাম জোরে ধাক্কা। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য পতনের শব্দ। মানে রাশি সেলফি তুলছিল। একেবারে মোবাইলসহ রিকশাওয়ালার ওপরে গিয়ে পড়ল। ধপাস! আমি মনে হয় হ্যাং হয়ে গেলাম। কাদাজল মুখে নিয়ে রাশি উঠে আমাকে বলল, তুমি একটা হুনুমান, গাধা, যমজ বেকুব, এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?
রিকশাওয়ালা গোঙাতে গোঙাতে উঠে বলল, ওরে বাবারে! মনে হয় ইহকাল শেষ হইয়া গেছে আমার। আমার ওপর মানুষ পড়ল না ঠাডা পড়ল বুঝলাম না!
রিকশাওয়ালার কথায় কান দিলাম না। রাশিকে উদ্দেশ করে আমি একগাল হেসে বললাম, অন্তত চেহারা ডিসকালারের চেয়ে এখন বেশি ভালো লাগছে তোমায়।
ইউ, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। খেয়াল করে দেখলাম, আম আদমিরা মোবাইল দিয়ে আমাদের ছবি তুলছে। নিশ্চিত ফেসবুকে ছেড়ে দেবে। রাশি দৌড় মারতে গিয়ে এক পা ম্যানহোলে পড়ে গেল। দ্বিতীয় পতন... চপাস। ব্রেকআপটা এতক্ষণ ওখানেই আটকে ছিল। এখন পুরোপুরি কনফার্ম। আমি কোনো রকম দৌড়ে বাঁচলাম। ঢাকার রাস্তাগুলো আসলেই দয়ামায়াহীন। কখন কার ব্রেকআপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলা মুশকিল। হ
No comments:
Post a Comment