৫-৩-২০১৬ ভোরের কাগজে প্রকাশিত
কাগজের সংসার
** সোহানুর রহমান অনন্ত **
রেহান প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে নীল বেরিয়ে গেছে। আজো নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। তবে যাওয়ার আগে কয়েকটা কাজ করতে একদমই ভুল করে না নীল। ছোট ছোট চিরকুট লিখে দিয়ে যায়। মুখের কাছেই সেগুলো পড়ে থাকে রেহানের।
ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ব্রাশ করতে হবে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে হবে। তারপর কোন কালারের ড্রেস পরে অফিসে যাবে ইত্যাদি। একটা সময় রেহানের কাছে এসব পাগলামি মনে হলেও এখন অনেকটা ভালো লাগে।
ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার নীলকে অনেক ভোরে উঠে চলে যেতে হয়। রেহান অনেক রাত করে অফিস থেকে আসে তাই আর রিবক্ত করে না ডেকে। বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।
সামনা সামনি দুটো বাড়ি। সামনের বাড়িটার রং পেস্ট কালার। পেস্ট কালার নীলের খুব পছন্দ। রেহানের পছন্দ না, তবে নীলের সামনে বলে ওটাই ওর পছন্দ। বউকে কষ্ট দিতে চায় না, খুব ভালোবাসে। খবরের কাগজটা হাতে নিতেই নীলের ফোন-
-ঘুম ভেঙেছে আপনার?
-রাজ্য ছেড়ে রানী চলে গেলে, রাজার কি আর ঘুম থাকে।
-ও তাই! তো রানীর সঙ্গে উঠলেই তো পারেন।
-উঠতে চাই কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোর সাইজ এত বড় যে শেষই হয় না।
-হয়েছে জনাব ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও, টেবিলে সব দেয়া আছে, আমি রাখছি।
-আজ তাড়াতাড়ি চলে আসব, রেডি হয়ে থেক বাইরে যাব।
-সত্যি?
-এক হাজার একটা সত্যি।
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ফোন রেখে দেয় নীল। রেহানের মনে পড়ে যায় পুরনো কথা, ঠিক পুরনোও বলা যায় না। এইতো বছর দুয়েক আগের কথা। রেহান অফিস থেকে ফিরছিল, ফাঁকা জায়গা বুঝে ছিনতাইকারীরা সব নিয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডেই যেন সব কিছু ঘটে যায় রেহানের সঙ্গে।
তারপর আবার সব নিশ্চুপ, ল্যাম্পের হলদে আলোয় রেহান নিজেকে একা আবিষ্কার করে। কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিল না। এমন সময় একটা রিকশা এসে থামে রেহানের পাশে। রিকশায় বসে আছে সুন্দরী একটি মেয়ে।
রেহানকে উদ্দেশ্য করেই বলল, দূর থেকে আমরা সব দেখেছি। আমরা বলতে মেয়েটি আর রিকশা চালক। খুব খারাপ একটা ব্যাপার ঘটে গেল আপনার সঙ্গে। রেহান একদম চুপ হয়ে ছিল। কারণ আজই সেলারি পেয়েছিল, বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে। তাছাড়া বাড়িতেও টাকা পাঠানোর প্রয়োজন ছিল।
সবই চলে গেছে কয়েক সেকেন্ডে। রেহানকে চুপ থাকতে দেখে, মেয়েটি আবার বলল, কোথায় যাবেন? কলতাবাজার, উত্তর দিল রেহান। আমিও সেই দিকে যাচ্ছি, চাইলে আপনি আমার সঙ্গে যেতে পারেন। রেহান হেসে বলল, আমি হেঁটে যেতে পারব। মেয়েটি এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল, জনাব অনেক দূরের পথ উঠে পড়ূন। রেহান উঠে পড়ল, কিছু করার নেই ওর কাছে। মাথার ওপর থেকে মস্ত বড় একটা চাঁদ আর পাশে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।
২.
রেহানকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি বলল, আমি জানি আপনি কি ভাবছেন? কী? আপনি ভাবছেন অচেনা-অজানা একটা ছেলেকে কেন রিকশায় তুলে নিলাম। আসলে আমি আপনাকে চোখের দেখায় চিনি। মানে? হ্যাঁ, আপনি প্রতিদিন জুতোর ফিতে বাঁধতে ভুলে যান এবং সেটা আমাদের স্কুলের সামনে এসে বাঁধেন। জানালা দিয়ে আমি দেখি, প্রায় দেখি বলতে পারেন। এক আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
বিস্ময়ে রেহান তাকায় মেয়েটির দিকে। প্রায় ওকে দেখে এই মেয়েটি। আজকের আগে ও নিজেও জানত না, এত সুন্দরী একটি মেয়ে আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছে ওর পাগলামিটাকে। কি নাম আপনার? নীল, আপনার? রেহান, পুরো নাম রেহান রাসুল। আরো কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল, সাউন্ডে আটকে আসছে। কোনো মেয়ের এতটা কাছে বসে কথা বলার অভিজ্ঞতা লাগে।
রেহানের সেটা নেই। নীল হয়তো বুঝেছিল ব্যাপারটা, ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল, নিন এটা আপনার দরকার। ঢকঢক করে গিলে খেল রেহান। হঠাৎ রিকশা ঝাঁকি খেতেই পানির বোতল কাৎ হয়ে পড়ল নীলের গায়ে। ব্যস, মুহ‚র্তে অনেকখানি ভিজে গেল। একসঙ্গে হেসে উঠল দু’জন। হাসল রাতের জোনাকিরা আর দল বেঁধে ছুটে যাওয়া মেঘগুলো।
৩.
তারপর পুরোটাই রোমান্টিক ইতিহাস। প্রতিদিন চোখাচোখি, ভালোলাগা, ভালোবাসা। বিয়েটাও হয়ে যায়, খুব তাড়াতাড়ি। দু’জনের কাগজের সংসারের দেড় বছর কেটে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেহান দ্রুত ফ্রেশ হতে চলে গেল। নাস্তা করার সময় নেই। নীল খাবারের পাশে কাগজে লিখে গেছে, নাস্তা কেমন হলো জানাবা। এই কমেন্টগুলো পড়তে ওর ভালো লাগে কিন্তু আজ আর কিছু লেখার সময় নেই। যাওয়ার সময় স্কুলের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়াল নীল নেই। প্রায় থাকে কিন্তু আজ নেই। রেহান দ্রুত অফিস চলে গেল। দুপুরে আর এল না, কে জানে নীল হয়তো সেজে বসেছিল ওর জন্য।
ফিরল ঠিক রাত সাড়ে ১১টায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে মস্ত বড় একটা তালার গায়ে লেখা, ছাদে আস। রেহান ছাদে চলে যায়। সেখানে নীল দাঁড়িয়ে আছে, পেছন থেকে রেহান গিয়ে বলল,
-স্যরি ভুলে গিয়েছিলাম, দুপুরে আসা উচিত ছিল। নীল চুপ হয়ে আছে। রেহান আবার বলল,
-কিছু হয়েছে? নীল রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোমার কাছে একটা জিনিস চাই?
-বল কি চাও, কি দেব তোমায়?
-আমার পাশে বস, একটু চোখে চোখ রাখে, মিষ্টি করে একটু হাস। তোমার কাঁধে মাথা রেখে আমি আকাশের চাঁদটাকে একটু দেখি। পাগলি মেয়ে বটে, রেহান তাই করল। ধবধবে সাদা চাঁদটা যেন আরেকটা ভালোবাসা পৃথিবী, দেখা যায় ছোঁয়া যায় না।
৪.
খুব ভোরে দরজা নক করার শব্দে ঘুম গেল রেহানের। বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজার খুলে দিল, কয়েকজন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীলের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, বলে উঠল একজন। কিভাবে হলো? উত্তেজিত হয়ে জানতে চায় রেহান। একজন বলল, ট্রাক চাপা দিয়েছে। এই এলাকাতে ব্যাঙের ছাতার মতো বিল্ডিং গজে উঠছে। তাই সকাল-বিকেল বালু বোঝাই ট্রাক ঢুকছে বেপরোয়াভাবে।
ভয়ে রেহানের পুরো শরীর কাঁপছে। হাসপাতালে ঢুকতেই ডাক্তার বলল, আপনি ওনার হাসব্যান্ড? জ্বি? দেখুন পেশেন্টকে হাসাপাতালে আনার আগেই সে মারা গেছে। ট্রাক এমনভাবে চাপা দেয়ার পর হয়তো বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল, তখনই যদি কারো নজরে আসত কিছু একটা হতে পারত।
কিন্তু এত সকালে তো রাস্তায় তেমন একটা লোকজন থাকে না, স্যরি। এই বলে ডাক্তার চলে গেল। রেহান বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, সাদা কাফনে ঢাকা লাশটার দিকে। এতদিন যে সাদা কাগজে চিরকুট লিখে গেছে, আজ সে নিজেই একটা সাদা চিরকুট। খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে রেহানের। খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব।
৫.
দেয়াল জুড়ে অসংখ্য চিরকুট ঝুলে আছে, নীল তুমি ফিরে এস, আজ একসঙ্গে চাঁদ দেখব, দুপুরে তোমায় নিয়ে ঘুরতে যেতে আর ভুল করব না ইত্যাদি। রেহান প্রতিদিনই একটা করে সাদা চিরকুট লেখে আর দেয়ালে টানিয়ে দেয়। ভোরের আলো ফুটলেই তাকিয়ে থাকে সামনের বাড়িটার পেস্ট কালারের দিকে।
বিড় বিড় করে বলে, নীল তুমি ফিরে এসো… আর তোমায় ভোরের আলোয় একা যেতে দেব না। হয়তো নীল শুনছে সে কথাগুলো দূর নীলিমার মাঝে থেকে।
http:// www.bhorerkagoj.net/ print-edition/2016/03/05/ 78591.php
কাগজের সংসার
** সোহানুর রহমান অনন্ত **
রেহান প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে নীল বেরিয়ে গেছে। আজো নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। তবে যাওয়ার আগে কয়েকটা কাজ করতে একদমই ভুল করে না নীল। ছোট ছোট চিরকুট লিখে দিয়ে যায়। মুখের কাছেই সেগুলো পড়ে থাকে রেহানের।
ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ব্রাশ করতে হবে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে হবে। তারপর কোন কালারের ড্রেস পরে অফিসে যাবে ইত্যাদি। একটা সময় রেহানের কাছে এসব পাগলামি মনে হলেও এখন অনেকটা ভালো লাগে।
ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার নীলকে অনেক ভোরে উঠে চলে যেতে হয়। রেহান অনেক রাত করে অফিস থেকে আসে তাই আর রিবক্ত করে না ডেকে। বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।
সামনা সামনি দুটো বাড়ি। সামনের বাড়িটার রং পেস্ট কালার। পেস্ট কালার নীলের খুব পছন্দ। রেহানের পছন্দ না, তবে নীলের সামনে বলে ওটাই ওর পছন্দ। বউকে কষ্ট দিতে চায় না, খুব ভালোবাসে। খবরের কাগজটা হাতে নিতেই নীলের ফোন-
-ঘুম ভেঙেছে আপনার?
-রাজ্য ছেড়ে রানী চলে গেলে, রাজার কি আর ঘুম থাকে।
-ও তাই! তো রানীর সঙ্গে উঠলেই তো পারেন।
-উঠতে চাই কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোর সাইজ এত বড় যে শেষই হয় না।
-হয়েছে জনাব ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও, টেবিলে সব দেয়া আছে, আমি রাখছি।
-আজ তাড়াতাড়ি চলে আসব, রেডি হয়ে থেক বাইরে যাব।
-সত্যি?
-এক হাজার একটা সত্যি।
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ফোন রেখে দেয় নীল। রেহানের মনে পড়ে যায় পুরনো কথা, ঠিক পুরনোও বলা যায় না। এইতো বছর দুয়েক আগের কথা। রেহান অফিস থেকে ফিরছিল, ফাঁকা জায়গা বুঝে ছিনতাইকারীরা সব নিয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডেই যেন সব কিছু ঘটে যায় রেহানের সঙ্গে।
তারপর আবার সব নিশ্চুপ, ল্যাম্পের হলদে আলোয় রেহান নিজেকে একা আবিষ্কার করে। কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিল না। এমন সময় একটা রিকশা এসে থামে রেহানের পাশে। রিকশায় বসে আছে সুন্দরী একটি মেয়ে।
রেহানকে উদ্দেশ্য করেই বলল, দূর থেকে আমরা সব দেখেছি। আমরা বলতে মেয়েটি আর রিকশা চালক। খুব খারাপ একটা ব্যাপার ঘটে গেল আপনার সঙ্গে। রেহান একদম চুপ হয়ে ছিল। কারণ আজই সেলারি পেয়েছিল, বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে। তাছাড়া বাড়িতেও টাকা পাঠানোর প্রয়োজন ছিল।
সবই চলে গেছে কয়েক সেকেন্ডে। রেহানকে চুপ থাকতে দেখে, মেয়েটি আবার বলল, কোথায় যাবেন? কলতাবাজার, উত্তর দিল রেহান। আমিও সেই দিকে যাচ্ছি, চাইলে আপনি আমার সঙ্গে যেতে পারেন। রেহান হেসে বলল, আমি হেঁটে যেতে পারব। মেয়েটি এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল, জনাব অনেক দূরের পথ উঠে পড়ূন। রেহান উঠে পড়ল, কিছু করার নেই ওর কাছে। মাথার ওপর থেকে মস্ত বড় একটা চাঁদ আর পাশে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।
২.
রেহানকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি বলল, আমি জানি আপনি কি ভাবছেন? কী? আপনি ভাবছেন অচেনা-অজানা একটা ছেলেকে কেন রিকশায় তুলে নিলাম। আসলে আমি আপনাকে চোখের দেখায় চিনি। মানে? হ্যাঁ, আপনি প্রতিদিন জুতোর ফিতে বাঁধতে ভুলে যান এবং সেটা আমাদের স্কুলের সামনে এসে বাঁধেন। জানালা দিয়ে আমি দেখি, প্রায় দেখি বলতে পারেন। এক আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
বিস্ময়ে রেহান তাকায় মেয়েটির দিকে। প্রায় ওকে দেখে এই মেয়েটি। আজকের আগে ও নিজেও জানত না, এত সুন্দরী একটি মেয়ে আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছে ওর পাগলামিটাকে। কি নাম আপনার? নীল, আপনার? রেহান, পুরো নাম রেহান রাসুল। আরো কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল, সাউন্ডে আটকে আসছে। কোনো মেয়ের এতটা কাছে বসে কথা বলার অভিজ্ঞতা লাগে।
রেহানের সেটা নেই। নীল হয়তো বুঝেছিল ব্যাপারটা, ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল, নিন এটা আপনার দরকার। ঢকঢক করে গিলে খেল রেহান। হঠাৎ রিকশা ঝাঁকি খেতেই পানির বোতল কাৎ হয়ে পড়ল নীলের গায়ে। ব্যস, মুহ‚র্তে অনেকখানি ভিজে গেল। একসঙ্গে হেসে উঠল দু’জন। হাসল রাতের জোনাকিরা আর দল বেঁধে ছুটে যাওয়া মেঘগুলো।
৩.
তারপর পুরোটাই রোমান্টিক ইতিহাস। প্রতিদিন চোখাচোখি, ভালোলাগা, ভালোবাসা। বিয়েটাও হয়ে যায়, খুব তাড়াতাড়ি। দু’জনের কাগজের সংসারের দেড় বছর কেটে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেহান দ্রুত ফ্রেশ হতে চলে গেল। নাস্তা করার সময় নেই। নীল খাবারের পাশে কাগজে লিখে গেছে, নাস্তা কেমন হলো জানাবা। এই কমেন্টগুলো পড়তে ওর ভালো লাগে কিন্তু আজ আর কিছু লেখার সময় নেই। যাওয়ার সময় স্কুলের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়াল নীল নেই। প্রায় থাকে কিন্তু আজ নেই। রেহান দ্রুত অফিস চলে গেল। দুপুরে আর এল না, কে জানে নীল হয়তো সেজে বসেছিল ওর জন্য।
ফিরল ঠিক রাত সাড়ে ১১টায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে মস্ত বড় একটা তালার গায়ে লেখা, ছাদে আস। রেহান ছাদে চলে যায়। সেখানে নীল দাঁড়িয়ে আছে, পেছন থেকে রেহান গিয়ে বলল,
-স্যরি ভুলে গিয়েছিলাম, দুপুরে আসা উচিত ছিল। নীল চুপ হয়ে আছে। রেহান আবার বলল,
-কিছু হয়েছে? নীল রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোমার কাছে একটা জিনিস চাই?
-বল কি চাও, কি দেব তোমায়?
-আমার পাশে বস, একটু চোখে চোখ রাখে, মিষ্টি করে একটু হাস। তোমার কাঁধে মাথা রেখে আমি আকাশের চাঁদটাকে একটু দেখি। পাগলি মেয়ে বটে, রেহান তাই করল। ধবধবে সাদা চাঁদটা যেন আরেকটা ভালোবাসা পৃথিবী, দেখা যায় ছোঁয়া যায় না।
৪.
খুব ভোরে দরজা নক করার শব্দে ঘুম গেল রেহানের। বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজার খুলে দিল, কয়েকজন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীলের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, বলে উঠল একজন। কিভাবে হলো? উত্তেজিত হয়ে জানতে চায় রেহান। একজন বলল, ট্রাক চাপা দিয়েছে। এই এলাকাতে ব্যাঙের ছাতার মতো বিল্ডিং গজে উঠছে। তাই সকাল-বিকেল বালু বোঝাই ট্রাক ঢুকছে বেপরোয়াভাবে।
ভয়ে রেহানের পুরো শরীর কাঁপছে। হাসপাতালে ঢুকতেই ডাক্তার বলল, আপনি ওনার হাসব্যান্ড? জ্বি? দেখুন পেশেন্টকে হাসাপাতালে আনার আগেই সে মারা গেছে। ট্রাক এমনভাবে চাপা দেয়ার পর হয়তো বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল, তখনই যদি কারো নজরে আসত কিছু একটা হতে পারত।
কিন্তু এত সকালে তো রাস্তায় তেমন একটা লোকজন থাকে না, স্যরি। এই বলে ডাক্তার চলে গেল। রেহান বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, সাদা কাফনে ঢাকা লাশটার দিকে। এতদিন যে সাদা কাগজে চিরকুট লিখে গেছে, আজ সে নিজেই একটা সাদা চিরকুট। খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে রেহানের। খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব।
৫.
দেয়াল জুড়ে অসংখ্য চিরকুট ঝুলে আছে, নীল তুমি ফিরে এস, আজ একসঙ্গে চাঁদ দেখব, দুপুরে তোমায় নিয়ে ঘুরতে যেতে আর ভুল করব না ইত্যাদি। রেহান প্রতিদিনই একটা করে সাদা চিরকুট লেখে আর দেয়ালে টানিয়ে দেয়। ভোরের আলো ফুটলেই তাকিয়ে থাকে সামনের বাড়িটার পেস্ট কালারের দিকে।
বিড় বিড় করে বলে, নীল তুমি ফিরে এসো… আর তোমায় ভোরের আলোয় একা যেতে দেব না। হয়তো নীল শুনছে সে কথাগুলো দূর নীলিমার মাঝে থেকে।
http://
No comments:
Post a Comment