join facebook page

Wednesday, 28 September 2016

আজ ১৭-৬-২০১৬ দৈনিক সমকালে.....

তারে আমি চোখে দেখিনি
সোহানুর রহমান অনন্ত

তোমার ফেসবুক অ্যালবাম ঘাঁটাঘাঁটি করলাম, একটা পিকচারও দেখলাম না, ফেইক না তো? ইনবক্স করল রায়হান। পিকচারের কী দরকার? রোমানা বলল। আমি কাউকে না দেখে একসেপ্ট করি না। তাই। হু। আমাকে তো করে ফেলেছেন। ভুলে করেছি, এখন চেক করছি। যদি ফেইক হই, বলল রোমানা। রায়হান আর কোনো উত্তর দিল না। ফেসবুককে বিশ্বাস নেই, ফেইক হতেই পারে। মেয়েটি রায়হানকে কোনো জ্বালাতন করে না। মাঝে মাঝে স্ট্যাটাসে কমান্ড করে। সপ্তাহে সাত দিনই প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করে। কখনও বিড়ালের ছবি কখনও বা গোলাপের ছবি। রায়হানের এসবে মাথাব্যথা নেই। যে যেভাবে হ্যাপি থাকে, তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া উচিত। তবু মাঝে মাঝে মেয়েটিকে কড়া কথা শোনাতে ইচ্ছা হয়।

নিজেকে বেশ আনলাকি মানুষ বলে মনে হয় রায়হানের। তার কারণ হলো, কাউকে সহজে মেনে নিতে পারে না ও। কোথায় যেন একটা দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। কেন এমন হয়? রোমানা এই প্রথম নিজ থেকে মেসেজ করল কেমন আছেন? রায়হান কোনো উত্তর দিল না। আপনি কি আমার ওপর বিরক্ত? রায়হান এবারও কোনো উত্তর দিল না। কিছু বলছেন না যে? তবু কোনো উত্তর নেই? আপনার আইডিটা কি হ্যাক হয়ে গেছে? এবার রায়হান উত্তর দিল, আমি কোনো ফেইক আইডির সঙ্গে চ্যাট করতে ইচ্ছুক নই। রোমানার মেসেজ অফ হয়ে গেল। মেয়েটির সঙ্গে এভাবে খারাপ ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে রায়হান। উত্তর মেলেনি প্রশ্নের।

সকালে ইনবক্স খুলতেই মেয়েটির একটা দীর্ঘ মেসেজ। এভাবে কাউকে ছোট করে দেখতে হয় না। আমি ফেইক আইডি হলেও মানুষ, নিশ্চয়ই আপনার শত্রু নই? নিচে আমার সেলফোন নম্বর দেওয়া আছে। জাস্টিফাই করতে পারেন। সকাল সকাল এমন মেসেজ দেখে অবাক হলো রায়হান। বেশ রাগী মেয়ে মনে হচ্ছে। নম্বরটা নিজের সেলফোনে উঠিয়ে কল করল। বেশ কয়েকবার কল হলো কেউ ধরল না। মনে মনে ভাবল, এটাও ফেইক নম্বর কি-না। শেষবার যখন কল করল তখন রিসিভ হলো। ওপাশে মিষ্টির রিনরিনে গলা, হ্যালো। আপনি রোমানা? জি। না মানে, আমি রায়হান। চিনেছি, ফেইক আইডি বিশেষজ্ঞ, তাই না। রোমানার কথায় হেসে উঠল রায়হান। এভাবেই শুরুটা। প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর ভালোলাগা। দু'জন দুই মেরুর মানুষ। রায়হান ঢাকায় আর রোমানা চট্টগ্রামে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল, রোমানা-রায়হান দেখা করবে। প্রথমে রোমানা দেখা করতে রাজি

হয়নি। পরে রায়হানের চাপে রাজি হয়। তারপর অপেক্ষা। দেখা করার ঠিক তিন দিন আগে রোমানা বলল, ইদানীং কেন যেন মনে হয় আমি খুব সুখী মানুষ। আর মানুষ যখন বেশি সুখে থাকে। তখনই তার ভেতর মৃত্যুর ভয় চলে আসে। চলো না একদিন আগে দেখা করি আমরা। না, যেদিন দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে সেদিনই দেখা করব। তার আগে যদি আমার কিছু হয়ে যায়। দূর পাগলি মেয়ে, কিছুই হবে না। সত্যি কিছু হবে না। হু সত্যি।

বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে রায়হান। আশপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল। জায়গা তো ঠিকই আছে, কিন্তু রোমানা আসছে না কেন?। হাতের ফুলগুলো বাতাসে শুকিয়ে যাচ্ছে। রোমানার মোবাইলে ফোন করতেই, ধরল এক ভদ্রমহিলা। সম্ভবত রোমানার মা, আমি কি রোমানার সঙ্গে কথা বলতে পারি? ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন। আপনি কিছু জানেন না? না। আপনি রোমানার কী হন। বন্ধু? রোমানা গতকাল রাতে মারা গেছে। মাঝে মাঝে ওর বুকে ব্যথা করত। হঠাৎ গতকাল ব্যথাটা তীব্রভাবে উঠলে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো গেল না। ভদ্রমহিলা কেঁদে ফেললেন। মনে পড়ে গেল রোমানার কথা, একটা দিন আগে দেখা করা যায় না। সত্যি দেখা হলো তাকে, আর কোনো দিন দেখতেও পারব না। মনটা হাহাকার করে উঠল রোমানার জন্য। যেখানে থাক ভালো থাক, এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
- See more at: http://bangla.samakal.net/2016/05/17/212637#sthash.0w6kbM9l.dpuf

No comments:

Post a Comment