join facebook page

Wednesday, 28 September 2016

৬-৩-২০১৬ দৈনিক ইত্তেফাকের ঠাট্টায়... রম্য.বিশুদ্ধ নারীপ্রীতি.....

বিশুদ্ধ নারীপ্রীতি

সোহানুর রহমান অনন্ত




আমার এক কাছের বন্ধু এসে বলল, ‘দোস্ত নতুন বিয়ে করেছিস, ভাবির হাতের রান্না খাওয়াবি না?’ কথাটা শুনে আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘বন্ধু, তোর ভাবি তো এখনো তেমন রান্না করতে শেখেনি, বরং আমরা কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিই।’ বন্ধু নাছোড়বান্দা। না, আমার বউয়ের হাতেই রান্না খাবে। কী আর করা, বিকেলে বন্ধুকে নিয়ে বাসায় এলাম। আমার বউকে বললাম, ‘আমার খুব কাছের বন্ধু তোমার হাতের রান্না খাবে বলে এসেছে।’ এতটুকু বলতেই বউ আমার রান্না করা নিয়ে বেশ এক্সসাইডেট হয়ে গেল। মেয়েরা এমনই, একটু প্রশংসা পাওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে। তারপর সেই রবীন্দ্রনাথের বাণী ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’, মানে মেকআপ নেওয়ার মতো বউ আমার রেসিপির সব বই রান্না ঘরে নিয়ে একটার পর একটা আইটেম রান্না করছে। এদিকে আমার বন্ধু বেচারার তো ক্ষুধায় পেটের মধ্যে ঠাডা পড়ার মতো অবস্থা। একটু পরপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ভাবি মনে হয় অনেক আইটেম করছে। মামুলি কিছু রান্না করলেই তো হতো।’ আমি হেসে জবাব দিলাম, ‘খাওয়াতে যখন চাইছে, তখন আর না করে কী লাভ। একটু অপেক্ষা কর, ঠিকই খাবার চলে আসবে।’ কিছুক্ষণ পর আমার বউ এসে বলল, ‘একটু দেরি হয়ে গেল, নাও সবাই বসে পড়।’ আমার বন্ধুটি হাত ধুয়ে খেতে বসে পড়ল। মুরগির তরকারি দিয়ে সাদা ভাত। প্রথম লোকমা মুখে দিতেই বেটা কেমন হ্যাং হয়ে গেল। বিষয়টা খেয়াল করে বললাম, ‘কোনো সমস্যা বন্ধু?’ বোধকরি বেচারা বিপদে পড়েই বলল, ‘কই না তো। খাবার তো ফ্যান্টাস্টিক ফাইন হইছে। ভাবির হাতে তো জাদু আছে।’ এই বলে বাকি ভাতটুকু গিলতে লাগল। বউ আমার ব্যাপক খুশি, বন্ধু রান্নার প্রশংসা করায়। আমি একটু মুরগির তরকারি টেস্ট করেই বুঝলাম কাম সারছে। তরকারি তো না যেন লবণের খনি। আমার বন্ধুটি কীভাবে যে বাকি রান্নাগুলো খেল সেটা ভাবতে গেলেও আমার মস্তিষ্কে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। খাওয়া শেষে আমায় বলল, ‘দোস্ত, মনে হয় দুই নম্বর সিগন্যাল হইছে, ওয়াসরুমটা কোনদিকে?’ দেখিয়ে দিলাম, কারণ এটাই আপাতত ওর স্থায়ী ঠিকানা। হলোও তাই, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বন্ধু মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হলো। বেচারাকে এরপর যতবার বলেছি, ‘চল, তোর ভাবী নতুন একটা রেসিপি করে তোকে খাওয়াবে।’ খেয়াল করেছি, ওর চোখে পেত্নী দেখার মতো আতঙ্কের ছাপ পড়েছে। খাওয়া তো দূরের কথা, আমার বাড়ির আশপাশে আর সে আসে না ভুল করেও।





সেদিন আবুলকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে যাচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য কয়েকটা প্যান্ট কিনব। লোকাল বাসে বসে আছি। এমন সময় একটা মেয়ে উঠল দৈনিক বাংলা থেকে। বন্ধু আমার তখন যায় যায় অবস্থা। আমাকে খোঁচা দিয়ে বলল, ‘তুই একটু দাঁড়িয়ে যা, মেয়েটি আমার পাশে বসুক।’ আমি রেগে বললাম, ‘দূর বেকুব, বন্ধুর চেয়ে অচেনা মেয়েটি বেশি আপন হয়ে গেল?’ বন্ধু আমার উপরের পকেটে একটা দশ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলল, ‘আর একটা কথাও বলিস না, ঘুষের কসম!’ বন্ধুর নারীপ্রীতির কারণেই আমাকে শেষ পর্যন্ত সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে যেতে হলো। আর মেয়েটি বসল আমার সিটে। মনে মনে আবুলকে দাড়ি-কমা ছাড়া গালি দিচ্ছি। বিধি বাম আবুলের জন্য, শাহবাগ যেতেই শুনলাম মেয়েটি ওয়াক... ওয়াক... করে উঠল; বাকি দৃশ্য দেখতে গিয়ে আমার নিজেরই মৃগী রোগ উঠে গেল! মেয়েটি আবুলের গায়ের উপর বমি করে দিয়েছে। বেচারা আবুল সিট থেকে উঠতে গিয়েও পারল না। পুরোই কার্টুন হয়ে বসে রইল। এমন অবস্থায় হাসব না কাঁদব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাস থেকে নেমে পাবলিক টয়লেটে ঢুকিয়ে বেটাকে পরিষ্কার করলাম। মার্কেটে যাওয়া ক্যানসেল, বন্ধুকে বুঝালাম নারীপ্রীতি আসলেই ভালো না। বুঝল কি না কে জানে। না বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। অনেক রাত করে বাড়ি ফেরার সময় দেখি, একজন বাড়ির পাশ দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। প্রথমে ভাবলাম চোর। আজকাল সুড়ঙ্গ খুড়ে ব্যাংক লুট হচ্ছে, বাড়িতেও নিশ্চয় লুটপাট চলতে পারে। পিছন দিক থেকে গিয়ে দিলাম কয়েকটা কিল বসিয়ে। পড়ে তাকিয়ে দেখি মঈন কাগু। ঘটনাক্রমে জানতে পারলাম, বউ শার্টে লম্বা চুল পেয়েছে তাই ঘরের দরজা বন্ধ। সেজন্যই মঈন কাগু সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। কয়েকটা সান্ত্বনার কথা বলে আমিও বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। মনে মনে ভাবলাম, নারীদের এত ভয় পাওয়ার কী আছে? সবই কপাল, নইলে এমন বেকুব পুরুষদের চেহারা আমার দেখতে হয়। ঘরে ঢুকতেই দেখি বউ আরাম করে সিরিয়াল দেখছে খাটে শুয়ে শুয়ে। আমাকে দেখেই বলল, ‘মশারি টানাও।’ আমি কিঞ্চিত্ বাঁকা হয়ে বললাম, ‘পারব না।’ এটা শোনার পর বউয়ের চেহারা এমন হলো যে আর একটু হলো বোম হয়ে ফেটেই যেত। রিমোটটা মাথায় পড়ার আগেই বললাম, ‘ইয়ে মানে আমিই তো টানাব, চিন্তা করো না তুমি।’ বুঝলাম, বিশুদ্ধ নারীপ্রীতি আমাকেও পেয়ে বসেছে। খামোখাই পাবলিকের দোষ দিই!





সবশের্ষ যে বন্ধুটির কথা বলব, ওর নাম সোহাগ। নারীদের কথা শুনলেই কেমন যেন বাংলা ছবির হিরো হিরো ভাব নেয়। সেদিন আমাকে এসে বলল, ‘দোস্ত কাজী অফিসে যেতে হবে।’

‘কেন?’

‘এক বান্ধবী বিয়ে করবে, আমরা সাক্ষী।’

‘পালিয়ে বিয়ে?’

‘হু।’

‘এইসব কেসে ঝামেলা হয়।’

‘দূর বেটা কীসের ঝামেলা, চল তো।’

গেলাম কাজী অফিসে। কবুল বলার কিছু আগেই জানতে পারলাম মেয়ের বাবা দলবল নিয়ে আসছে আমাদের প্যাঁদাতে। এই কথা শুনে কাজী বেটা জানালা বরাবর লাফ দিয়ে পালাল। মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আর আমিও দিলাম লাফ। কিন্তু আমার সেই বন্ধু রয়ে গেল অতিরিক্ত নারীপ্রীতি আছে বলে। পড়ে জানতে পাড়লাম প্যাঁদাতে নয়, তারা বিয়ে পড়াতেই এসেছিল। এবং কাউকে না পেয়ে আমার সেই বন্ধুটির সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হলো নতুন কাজী এনে। সবই নারীপ্রীতির কল্যাণে...

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/tahtta/2016/03/06/106122.html

No comments:

Post a Comment