আজ ১৬-২-২০১৬ দৈনিক সমকালের সুহৃদ-এ
কষ্টের ক্যানভাস
সোহানুর রহমান অনন্ত
আজকাল নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। মাঝরাতে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার দু'চোখের বৃষ্টিতে জ্যোৎস্নার আলো ঝলসে ওঠে। নন্দিনীকে আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছে। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ওর চাঁদমুখটাকে। নন্দিনী, মনে কি আছে তোমার? কোনো এক জ্যোৎস্নামাখা রাতে, রেললাইনের পথ ধরে অনেক দূর হেঁটে গিয়েছিলাম। তুমি আর আমি হাত রেখে হাতে। আমার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি আর তুমি নীল শাড়িতে। বাতাসে উড়ছিল তোমার বাঁধনহারা চুলগুলো। তোমার হাতের চুড়িগুলো একটু পরপরই মৃদু শব্দ করছিল। নীরব কণ্ঠে বলেছিলে, এভাবেই যদি জীবনটা পার করে দিতে পারতাম। আমি তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে। তোমার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি, হেসেছিল ছোট্ট তিলটাও। এটাই বোধহয় ভালোবাসা এটাই বোধহয় প্রেম।
আজকাল স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি জ্বালাতন করছে। বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরনো সেই দিনগুলোতে। ধুলোপড়া ডায়রির কবিতাগুলোতে হাত বুলাই। কতশত রাত জেগে এই কবিতাগুলো তোমায় পড়ে শুনিয়েছিলাম। তোমাকে কাছে পাওয়াটা অনেকটা অসাধ্য সাধনের মতো ছিল। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে দেখাটা যদি তোমার কাছে ধরা না পড়ত তাহলে হয়তো কোনো দিন বলাই হতো না, মনের সেই কথাটা। কতটা বোকা ছিলাম আমি তাই না?। মাঝে মাঝে বড্ড হাসি পায় সেই কথাগুলো ভেবে। ল্যাম্পপোস্টের নরম আলোয় তোমার বাড়ির সামনে গিটারের টুংটাং শব্দ। জানালায় তোমার দাঁড়িয়ে থাকা। আর আমার চোখ তোমার দিকে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন স্বপ্নের মতো ছিল। কত সুখে ছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসে। আমার নিঃশ্বাস ছিল নন্দিনী, যাকে ছাড়া বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
আমার জীবনের দুঃখের অধ্যয়টা বিধি এভাবে লিখে রেখেছে বুঝতে পারিনি। যেভাবে নন্দিনী চলন্ত রেলগাড়ির মতো আমার জীবনে এলো, ঠিক সেভাবে আবার হারিয়ে গেল। যখন বুঝতে পেরেছি আমার নন্দিনী আর আমার নেই, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাকে রিক্ত করে, নন্দিনী অন্য কারও প্রাসাদের ঘরনী হয়ে গেল। এরপর কত জ্যোৎস্নামাখা রাত এলো। একা একা রেললাইনের পথ ধরে কত হেঁটে গেলাম। কিন্তু নন্দিনী আর ফেরেনি আমার জীবনে। গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে আর কখনও নন্দিনীর কপালে টিপ পরিয়ে দেওয়া হয়নি। কষ্টটাকেই নীরবে মেনে নিতে হলো। দিনগুলো স্রোতের মতো হারিয়ে যেতে লাগল একা একা। এখনও সন্ধ্যায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় টুংটাং গিটারের সুর তুলি। তাকিয়ে থাকি জানালার দিকে। নন্দিনী নেই বন্ধ জানালাটা তারই সাক্ষী হয়ে থাকে। নন্দিনী কেন এমন করল, এ প্রশ্নের জবাব আমি আজও খুঁজে ফিরি। উত্তর মেলে না হাজারো প্রশ্নের বৃষ্টিতে ভিজে যায় মনের দেয়াল। ডুকরে কেঁদে ওঠি, কষ্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। আমার নন্দিনী যখন অন্য কারও বুকে সুখের স্বর্গ খোঁজে, আমি তখন একলা দাঁড়িয়ে থাকি জানালার শিক ধরে। ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা বড্ড বেশি যন্ত্রণা দেয় আমায়। তবুও একটি কথা, শতবার বলি, নন্দিনী যেখানে থাকুক ভালো থাকুক। রক্ত-মাংসের নন্দিনী আমাকে ছেড়ে গেলেও, ভালোবাসার নন্দিনী আজও ভালোবাসার মাঝে বেঁচে আছে। আর বেঁচে থাকবে যতদিন আমি বেঁচে থাকব। কেউ আলাদা করতে পারবে না। কেউ না।
সুহৃদ ঢাকা
- See more at: http://bangla.samakal.net/ 2016/02/16/ 193340#sthash.bjeeLw1o.dpuf
কষ্টের ক্যানভাস
সোহানুর রহমান অনন্ত
আজকাল নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। মাঝরাতে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার দু'চোখের বৃষ্টিতে জ্যোৎস্নার আলো ঝলসে ওঠে। নন্দিনীকে আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছে। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ওর চাঁদমুখটাকে। নন্দিনী, মনে কি আছে তোমার? কোনো এক জ্যোৎস্নামাখা রাতে, রেললাইনের পথ ধরে অনেক দূর হেঁটে গিয়েছিলাম। তুমি আর আমি হাত রেখে হাতে। আমার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি আর তুমি নীল শাড়িতে। বাতাসে উড়ছিল তোমার বাঁধনহারা চুলগুলো। তোমার হাতের চুড়িগুলো একটু পরপরই মৃদু শব্দ করছিল। নীরব কণ্ঠে বলেছিলে, এভাবেই যদি জীবনটা পার করে দিতে পারতাম। আমি তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে। তোমার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি, হেসেছিল ছোট্ট তিলটাও। এটাই বোধহয় ভালোবাসা এটাই বোধহয় প্রেম।
আজকাল স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি জ্বালাতন করছে। বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরনো সেই দিনগুলোতে। ধুলোপড়া ডায়রির কবিতাগুলোতে হাত বুলাই। কতশত রাত জেগে এই কবিতাগুলো তোমায় পড়ে শুনিয়েছিলাম। তোমাকে কাছে পাওয়াটা অনেকটা অসাধ্য সাধনের মতো ছিল। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে দেখাটা যদি তোমার কাছে ধরা না পড়ত তাহলে হয়তো কোনো দিন বলাই হতো না, মনের সেই কথাটা। কতটা বোকা ছিলাম আমি তাই না?। মাঝে মাঝে বড্ড হাসি পায় সেই কথাগুলো ভেবে। ল্যাম্পপোস্টের নরম আলোয় তোমার বাড়ির সামনে গিটারের টুংটাং শব্দ। জানালায় তোমার দাঁড়িয়ে থাকা। আর আমার চোখ তোমার দিকে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন স্বপ্নের মতো ছিল। কত সুখে ছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসে। আমার নিঃশ্বাস ছিল নন্দিনী, যাকে ছাড়া বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
আমার জীবনের দুঃখের অধ্যয়টা বিধি এভাবে লিখে রেখেছে বুঝতে পারিনি। যেভাবে নন্দিনী চলন্ত রেলগাড়ির মতো আমার জীবনে এলো, ঠিক সেভাবে আবার হারিয়ে গেল। যখন বুঝতে পেরেছি আমার নন্দিনী আর আমার নেই, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাকে রিক্ত করে, নন্দিনী অন্য কারও প্রাসাদের ঘরনী হয়ে গেল। এরপর কত জ্যোৎস্নামাখা রাত এলো। একা একা রেললাইনের পথ ধরে কত হেঁটে গেলাম। কিন্তু নন্দিনী আর ফেরেনি আমার জীবনে। গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে আর কখনও নন্দিনীর কপালে টিপ পরিয়ে দেওয়া হয়নি। কষ্টটাকেই নীরবে মেনে নিতে হলো। দিনগুলো স্রোতের মতো হারিয়ে যেতে লাগল একা একা। এখনও সন্ধ্যায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় টুংটাং গিটারের সুর তুলি। তাকিয়ে থাকি জানালার দিকে। নন্দিনী নেই বন্ধ জানালাটা তারই সাক্ষী হয়ে থাকে। নন্দিনী কেন এমন করল, এ প্রশ্নের জবাব আমি আজও খুঁজে ফিরি। উত্তর মেলে না হাজারো প্রশ্নের বৃষ্টিতে ভিজে যায় মনের দেয়াল। ডুকরে কেঁদে ওঠি, কষ্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। আমার নন্দিনী যখন অন্য কারও বুকে সুখের স্বর্গ খোঁজে, আমি তখন একলা দাঁড়িয়ে থাকি জানালার শিক ধরে। ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা বড্ড বেশি যন্ত্রণা দেয় আমায়। তবুও একটি কথা, শতবার বলি, নন্দিনী যেখানে থাকুক ভালো থাকুক। রক্ত-মাংসের নন্দিনী আমাকে ছেড়ে গেলেও, ভালোবাসার নন্দিনী আজও ভালোবাসার মাঝে বেঁচে আছে। আর বেঁচে থাকবে যতদিন আমি বেঁচে থাকব। কেউ আলাদা করতে পারবে না। কেউ না।
সুহৃদ ঢাকা
- See more at: http://bangla.samakal.net/
No comments:
Post a Comment