এশিয়া কাপ বনাম বউ সমস্যা!
সোহানুর রহমান অনন্ত
আমার বউ হিন্দি সিরিয়াল দেখে না, এটাকে সৌভাগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ সে হিন্দি সিরিয়াল না দেখলেও ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালগুলো ঠিকই দেখে। রিমোটের সাইজ বড় না হলে সেটাকে রকেট বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখত মে বি। এশিয়া কাপ খেলা শুরু হলেও রিমোট আমার দখলে আসেনি। আমার বউকে আমি ভয় পাই, শুধু আমি না আমার ধারণা ভূতও ভয় পায়। সেদিন বউকে বলেছিলাম বাপের বাড়ি থেকে এ কয়দিন ঘুরে আসো, অনেক দিন তো যাও না। বিষয়টা টের পেয়ে উল্টো আমাকে বলল, 'বউয়ের চেয়ে খেলা বড় হয়ে গেল! আরেকবার যদি এই কথা বলেছ তোমার...।'
বাকিটুকু আর শোনার দরকার নেই বন্ধুরা। আমি আরও কিছু একটা বলতে গিয়েও গিলে ফেললাম। কিছু না বলা থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে না বলাই ভালো। অফিস থেকে চিন্তিত মনে বাড়ি ফিরছি, তখনই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বাসায় গিয়ে বউকে বললাম, 'চলো একটা গেইম খেলি।'
'কী গেইম?' খেলায় চার-ছয় হলে যে আগে চিক্কুর দিতে পারবে তার পকেটে একশ' টাকা যাবে। এমন লোভনীয় প্রস্তাব বউ মেনে নেবে জানতাম। খেলা শুরু হওয়ার পরই ঘটল বিপত্তি, যেটা জানা ছিল না। ব্যাটসম্যান শট নেওয়ার আগেই বউ চিক্কুর দিয়ে ওঠে ছক্কককাআআআ...! এত জোরে চিক্কুর দেয় যে আশপাশের দুই-তিন বাড়ির লোকের কানের ওপর ঠাডা পড়ার মতো অবস্থা। একেকটা চার, ছক্কা হয় আর আমার ঘরে চলে ভূমিকম্প। কখন যেন খাট ভেঙে পড়ে সেই আতঙ্কে আছি আমি। কানে বালিশ চেপে ধরেও কাজ হয় না। একেই বলে উল্টা বুদ্ধির রিঅ্যাকশন। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী এসে বলল, 'খেলা কি একা আপনারাই দেখতাছেন, আমরা দেখি না? এমন জোরে চিল্লান কেন?' আমি কোনো রকম বুঝিয়ে বিদায় করলাম। বউকে বললাম আর খেলা দেখার দরকার নাই। বউ বলল, 'না আজকেই তো ইনকাম করার দিন। অলরেডি এক হাজার টাকা পাওনা হয়ে গেছি।'
কাম সারছে! কী আর করার, বসে বসে বউয়ের চিক্কুর শুনতে লাগলাম। আর বাইরে পাবলিকের চিল্লানি। খেলা শেষ হতেই বউ মানিব্যাগ থেকে সব টাকা নিয়ে গেল। খেলা দেখা একেবার শিকায় উঠেছে আমার। রাগে-দুঃখে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে হঠাৎ বউয়ের চিক্কুরে ঘুম ভাঙল ছক্ককককা...। লাফিয়ে উঠলাম বিছানায়, ঘুমের মধ্যেও চিল্লাইতাছে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘুম থেকে জাগালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দেবে এখন। চিক্কুর হজম করতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
মাঝ রাতের শহর এমনিতেই ফাঁকা থাকে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, হঠাৎ কে যেন নাম ধরে ডাকল। আশপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আবারও ডাকল, এবার ডর খেয়ে গেলাম। কান পেতে শুনলাম ডাকটা আম গাছ থেকে আসছে। কাছে যেতেই দেখি আমার বন্ধু আকবর। বলল, 'গাছে উঠে পড়।' উঠে পড়লাম চট করে। বন্ধুকে গিয়ে আমার দুঃখের কথা বলার আগেই ও নিজের দুঃখের কথা বলতে লাগল। খেলা দেখার জন্য আত্মীয়দের মধ্য থেকে সবচেয়ে বাচাল মহিলাকে বাসায় নিমন্ত্রণ করে এনেছিল।
ভেবেছিল বউ বাচালের সঙ্গে কথা বলবে আর এই সুযোগে সে খেলা দেখবে। কিন্তু হলো তার বিপরীত! খেলা শেষ হয়ে মাঝ রাত হয়ে গেলেও তাদের কথা শেষ হওয়ার নাম নেই। মাঝে মাঝে হো হো করে হেসে উঠে বাচাল মহিলা। বেশ কয়েকবার ডাকতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে আমার বন্ধুটি। তাই কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিল কিছুক্ষণ। মহিলা যখন হো হো করে হেসে উঠে তখন মনে হয় পুরো বাড়ি হো হো করে কাঁপছে। তাই বাধ্য হয়ে গাছে এসে ঘুমানোর ব্যবস্থা। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'তুই এত রাতে কী করিস?'
আমি হেসে বললাম, 'ছক্কা মারি। চল দু'জন মশার কামড় খেয়ে রাত পার করে দিই।'
'কেন তুই বাড়িতে যাবি না?'
হেসে বললাম, 'নাহ, বাড়িতে ছক্কা উৎসব চলছে। আজ রাতটা তোর সঙ্গে গাছের ডালেই কাটাব ভাবছি। গাছ থেকে সরাসরি অক্সিজেন নেব! নে, ঘুমিয়ে পড়। সকালে আবার অফিসে যেতে হবে।' হ
সোহানুর রহমান অনন্ত
আমার বউ হিন্দি সিরিয়াল দেখে না, এটাকে সৌভাগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ সে হিন্দি সিরিয়াল না দেখলেও ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালগুলো ঠিকই দেখে। রিমোটের সাইজ বড় না হলে সেটাকে রকেট বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখত মে বি। এশিয়া কাপ খেলা শুরু হলেও রিমোট আমার দখলে আসেনি। আমার বউকে আমি ভয় পাই, শুধু আমি না আমার ধারণা ভূতও ভয় পায়। সেদিন বউকে বলেছিলাম বাপের বাড়ি থেকে এ কয়দিন ঘুরে আসো, অনেক দিন তো যাও না। বিষয়টা টের পেয়ে উল্টো আমাকে বলল, 'বউয়ের চেয়ে খেলা বড় হয়ে গেল! আরেকবার যদি এই কথা বলেছ তোমার...।'
বাকিটুকু আর শোনার দরকার নেই বন্ধুরা। আমি আরও কিছু একটা বলতে গিয়েও গিলে ফেললাম। কিছু না বলা থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে না বলাই ভালো। অফিস থেকে চিন্তিত মনে বাড়ি ফিরছি, তখনই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বাসায় গিয়ে বউকে বললাম, 'চলো একটা গেইম খেলি।'
'কী গেইম?' খেলায় চার-ছয় হলে যে আগে চিক্কুর দিতে পারবে তার পকেটে একশ' টাকা যাবে। এমন লোভনীয় প্রস্তাব বউ মেনে নেবে জানতাম। খেলা শুরু হওয়ার পরই ঘটল বিপত্তি, যেটা জানা ছিল না। ব্যাটসম্যান শট নেওয়ার আগেই বউ চিক্কুর দিয়ে ওঠে ছক্কককাআআআ...! এত জোরে চিক্কুর দেয় যে আশপাশের দুই-তিন বাড়ির লোকের কানের ওপর ঠাডা পড়ার মতো অবস্থা। একেকটা চার, ছক্কা হয় আর আমার ঘরে চলে ভূমিকম্প। কখন যেন খাট ভেঙে পড়ে সেই আতঙ্কে আছি আমি। কানে বালিশ চেপে ধরেও কাজ হয় না। একেই বলে উল্টা বুদ্ধির রিঅ্যাকশন। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী এসে বলল, 'খেলা কি একা আপনারাই দেখতাছেন, আমরা দেখি না? এমন জোরে চিল্লান কেন?' আমি কোনো রকম বুঝিয়ে বিদায় করলাম। বউকে বললাম আর খেলা দেখার দরকার নাই। বউ বলল, 'না আজকেই তো ইনকাম করার দিন। অলরেডি এক হাজার টাকা পাওনা হয়ে গেছি।'
কাম সারছে! কী আর করার, বসে বসে বউয়ের চিক্কুর শুনতে লাগলাম। আর বাইরে পাবলিকের চিল্লানি। খেলা শেষ হতেই বউ মানিব্যাগ থেকে সব টাকা নিয়ে গেল। খেলা দেখা একেবার শিকায় উঠেছে আমার। রাগে-দুঃখে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে হঠাৎ বউয়ের চিক্কুরে ঘুম ভাঙল ছক্ককককা...। লাফিয়ে উঠলাম বিছানায়, ঘুমের মধ্যেও চিল্লাইতাছে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘুম থেকে জাগালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দেবে এখন। চিক্কুর হজম করতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
মাঝ রাতের শহর এমনিতেই ফাঁকা থাকে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, হঠাৎ কে যেন নাম ধরে ডাকল। আশপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আবারও ডাকল, এবার ডর খেয়ে গেলাম। কান পেতে শুনলাম ডাকটা আম গাছ থেকে আসছে। কাছে যেতেই দেখি আমার বন্ধু আকবর। বলল, 'গাছে উঠে পড়।' উঠে পড়লাম চট করে। বন্ধুকে গিয়ে আমার দুঃখের কথা বলার আগেই ও নিজের দুঃখের কথা বলতে লাগল। খেলা দেখার জন্য আত্মীয়দের মধ্য থেকে সবচেয়ে বাচাল মহিলাকে বাসায় নিমন্ত্রণ করে এনেছিল।
ভেবেছিল বউ বাচালের সঙ্গে কথা বলবে আর এই সুযোগে সে খেলা দেখবে। কিন্তু হলো তার বিপরীত! খেলা শেষ হয়ে মাঝ রাত হয়ে গেলেও তাদের কথা শেষ হওয়ার নাম নেই। মাঝে মাঝে হো হো করে হেসে উঠে বাচাল মহিলা। বেশ কয়েকবার ডাকতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে আমার বন্ধুটি। তাই কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিল কিছুক্ষণ। মহিলা যখন হো হো করে হেসে উঠে তখন মনে হয় পুরো বাড়ি হো হো করে কাঁপছে। তাই বাধ্য হয়ে গাছে এসে ঘুমানোর ব্যবস্থা। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'তুই এত রাতে কী করিস?'
আমি হেসে বললাম, 'ছক্কা মারি। চল দু'জন মশার কামড় খেয়ে রাত পার করে দিই।'
'কেন তুই বাড়িতে যাবি না?'
হেসে বললাম, 'নাহ, বাড়িতে ছক্কা উৎসব চলছে। আজ রাতটা তোর সঙ্গে গাছের ডালেই কাটাব ভাবছি। গাছ থেকে সরাসরি অক্সিজেন নেব! নে, ঘুমিয়ে পড়। সকালে আবার অফিসে যেতে হবে।' হ
No comments:
Post a Comment