join facebook page

Wednesday, 2 March 2016

আজ প্রিয়জনে.... জনি হোসেন কাব্যকে ধন্যবাদ ইনবক্স করার জন্য

সাদা জোছনায় নীল কষ্ট

সোহানুর রহমান অনন্ত

বেশ কয়েকটা টোকা পড়ল জানালা দিয়ে। ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ বইটা নিয়ে মাত্র বসেছিল অধীর। শীতটা আজ খুব বেশি পড়েছে মনে হচ্ছে। ঠাণ্ডায় হাত-পা কেমন ঠকঠক করছে। অবশ্য বিকেল থেকেই আকাশ মেঘলা। জানালায় আবার টোকা পড়ার শব্দ। চাদরটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল অধীর। এটা নতুন নয়, প্রায় রাতেই রুপা এসে জানালায় নক করে। তাই আর জিজ্ঞেস করতে হয় না। হাত বাড়িয়ে জানালাটা খুলে দিলো। ওপাশ থেকে ফিসফিস করে রুপা বলল, এত সময় লাগল কেন? ড্যান ব্রাউনের বই পড়ছিলাম, বইটি ওয়ার্ল্ড বেস্ট সেলার, তুমি পড়েছে? নাহ পড়িনি, আচ্ছা শোনো, তোমার মোবাইলে কি ব্যালান্স আছে। হ্যাঁ। একটু দাও, প্লিজ, জরুরি ফোন করতে হবে। এই বলে রুপা এদিক-ওদিক তাকায়। অধীর টেবিলের ওপর থেকে সেলফোনটা এনে রুপার হাতে দেয়। রুপা নম্বর ডায়াল করতে করতে ছাদের এক কোণে চলে যায়। অধীর জানালার কাছে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। ছাদের ওপর এই একটি মাত্র রুম। ভাড়া কম হওয়ায় অধীর অনেক দিন ধরেই আছে এখানে। রুপা অধীরের কাসমেট, এই বাসার তৃতীয়তলায় থাকে। বাবা পরহেজগার মানুষ, তাই রুপার হাতে কোনো মোবাইল ফোন দেয়নি। রুপা মাঝে মাঝেই এসে অধীরের ফোন দিয়ে কথা বলে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবার ব্যালান্স রিচার্জ করে দেয়। জানালা দিয়ে হু হু করে মাঘের হাওয়া ঘরে আসছে। অধীর দরজা খুলে রুপার দিকে হেঁটে গেল। রুপা অধীরকে দেখে কথা বন্ধ করে দেয়। কিছু বলবে? ইয়ে মানে... বাইরে অনেক ঠাণ্ডা তুমি চাইলে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিতে পারো। না ঠিক আছে, আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তুমি যাও। অধীর যেভাবে এলো আবার সেভাবেই চলে এলো রুমের মধ্যে। টেবিলে বসে আবার বইটা পড়তে লাগল। আধা ঘণ্টা পর রুপা এসে মোবাইলটা রেখে পাশের বিছানায় সটান বসে পড়ল। অধীর মোটা ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে একবার তাকালো, তারপর আবার বইয়ে মনোযোগ দিলো। রুপার চোখে মুখে বিরক্তি, আচ্ছা বই পড়া ছাড়া কি আর কোনো কাজ নেই তোমার? আছে তো। কী? বই কেনা। হোয়াট? রেগে যাচ্ছ কেন? রাগার কথা বলবে আর আমি রাগতে পারব না? মেয়েরা অহেতুক উত্তেজিত হয়, তুমি জানো অহেতুক উত্তেজিত হলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। হয়েছে হয়েছে, আর জ্ঞান দিতে হবে না। আচ্ছা শোনো, তোমার মোবাইলের ব্যালান্স শেষ করে ফেলেছি। কাল ভার্সিটিতে গিয়ে রিচার্জ করে দেবো। আমি তো তোমার কাছে চাইনি? তোমার চাইতে হবে নাকি? যাচ্ছি কাল দেখা হবে। শোনো? কী? তুমি রোজ রোজ কার সাথে কথা বলো? রুপা একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এমন প্রশ্ন এর আগে করিনি আমি, আজই প্রথম করলাম। আমতা আমতা করে বলল, আরেক দিন বলি? ঠিক আছে। রুপা চলে গেল, অধীর মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল, আজো কল করা নাম্বারটা ডিলিট করে গেছে রুপা। হয়তো রুপা চায় না, অধীর জানুক রুপা কার সাথে কথা বলে। মুচকি হেসে বইয়ে চোখ রাখল অধীর।
এখন আর রুপাকে তেমন একটা দেখা যায় না। ছাদেও আসে না, ভার্সিটিতেও যায় না। একই বিল্ডিংয়ে থাকে তবুও যেন দূরের মানুষ রুপা। সে দিন রুপার ছোট বোনের সাথে দেখা হতেই জানতে পারল রুপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কথাটা শুনে কষ্ট পেলেও মুখে ম্লান এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে বলল, বেশ তো, রুপা এবার সংসারী হবে। সে রাতে অনেক কেঁদেছে অধীর। রুপার থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়ার জন্য শেষরাতে পা বাড়াল বাড়ির বাইরে। শান্ত নগরী তখনো ঘুমিয়ে আছে।
অনেকক্ষণ জানালায় টোকা দিলো রুপা। কিন্তু ভেতর থেকে জানালা খুলছে না অধীর। বিরক্ত হয়ে দরজায় টোকা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখে অধীর নেই। নজরে পড়ল টেবিলের ওপর রাখা একটা চিঠির ওপর। কাছে যেতেই দেখল। বড় করে লেখা ‘রুপা এই চিঠিটা তোমার জন্য’। রুপা কিছুই বুঝতে পারল না, চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে...
‘এই চিঠিটা তুমি যখন পড়ছ, আমি তখন তোমার থেকে অনেক দূরে। রুপা, আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না, কিন্তু বিধাতার কী অপরূপ খেলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। অথচ একবারও তোমায় সে কথাটা বলতে পারিনি। বিশ্বাস করো, তুমি যতবার আমার সামনে এসে দাঁড়াও, ততবারই আমার ভালোবাসা দিগুণ হয়ে যায়। তাই তোমার সুখের কথা ভেবে আমি অনেক দূর চলে যাচ্ছি। এই শহর ছেড়ে আমার সেই গ্রামে। যেখান থেকে এসেছিলাম, ঠিক সেখানে। এই জীবনে তোমার সাথে আর কখনো দেখা হবে কি না জানি না। শুধু এতটুকুই বলব, সুখে থাকো তুমি। অনেক বেশি সুখে থাকো।’ চিঠিটা শেষ হতেই রুপার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে। কেন, রুপা নিজেও জানে না। বাইরে তখন জ্যোৎস্নার আলো আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।
পরিশেষ : স্কুল থেকে বের হয়ে সাইকেলে চড়ে বসল অধীর। বয়সের ভারে আজকাল তেমন একটা সাইকেল চালাতে পারে না। শহর থেকে আসার পর এই হরিরামপুর স্কুলে চাকরি নেয়। তারপর এখানে কেটে গেছে ত্রিশটি বছর। আজো বিয়ে করেনি।
sranontojugantor@gmail.com - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/85597#sthash.0iyxkW3O.dpuf

No comments:

Post a Comment