৩১-১-২০১৬ দৈনিক ইত্তেফাকের ঠাট্টায়
পাগল, ছিনতাইকারী ও জনৈক প্রেমিক
সোহানুর রহমান অনন্ত
আমি বরাবরই আড্ডাপ্রিয় মানুষ। রাত জেগে আড্ডা মারি, আমাদের টপিকের শেষ নেই। প্রেম, বিরহ, খাওয়া-দাওয়া সবই থাকে। একদিন আড্ডা দিতে দিতে অনেক রাত হয়েছে। বাসায় ফেরার সময় পাখিটার ফোন। ধরতেই বলল, আমাকে তার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, এখনই। ‘এত রাতে?’ ‘কেন রাতে কি দেখতে ইচ্ছে করতে পারে না?’ ‘আলবত্ পারে... একশ তিনবার পারে। আমি আসতাছি...।’ ঘটনা টাং টাং... যেতেই হবে। পাখিটার বাড়ি পাড়ার শেষ প্রান্তে, এই দিকটা সন্ধ্যার পরেই কেমন ঝিম মেরে যায়। দু-একটা নেড়ি কুকুর ছাড়া পাবলিকের দেখা পাওয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। তবুও সাহস করে গেলাম, প্রেমিকার দেখতে চাওয়া বলে কথা। শীতটা ভালোই পড়তে শুরু করেছে। পাখিটার বাসার সামনে যেতেই দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মুচকি হাসি। আমিও হাসলাম। পাখির মুখে হাসি অফ আমার মুখেও অফ। কী ব্যাপার বুঝে ওঠার আগেই পাখি কিছু একটা বুঝাতে চাইল। আমি আবার অদৃশ্য ভাষায় বিশেষজ্ঞ। অনেকটা ‘মাথা আছে মগজ নাই’-এর মতো। ভালো করে বুঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। হঠাত্ মনে হলো পোড়া গন্ধ আসছে, তাকিয়ে দেখি আমার পাঞ্জাবিতে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পাশে ফিরে দেখি ট্যারা পাগলা। ট্যারা পাগলার পাগলামি নিয়ে ব্যাপক ঘটনার কথা কানে এসেছে। ডরে আমি লাফিয়ে উঠলাম। ট্যারা পাগলা বলল, ‘কীরে, লাফাছ কেন? একটু আগুন পোহাইতাছি।’ বুঝতে পারলাম আর কিছুক্ষণ থাকলে দুগ্ধ হয়ে প্রেমসহ স্বর্গবাসী হতে হবে। তাই দিলাম খিচ্চা দৌড়, ট্যারা পাগলাও আমার পিছনে দিলো দৌড়। কোনোরকম দৌড়ে একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকলাম। ট্যারা পাগলা কোনদিক গেল, মালুম করতে পারলাম না। গলিটা বেশ অন্ধকার। ফিসফিস করে নিজে নিজেকে বললাম, ‘শালার সব রাইখা এমন অন্ধকার গলিতে একলা আইসা ঢুকলাম!’ ঠিক তখনি পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘একলা কোথায়, আমরা তো আছি!’ আমি তো ভূত ভেবে হূদয় অ্যাটাক খেয়েছিলাম আরেকটু হলে। একজন লোক আমার সামনে এসে বলল, ‘ভাইজান মনে হয় অফসাইডে ঘুরতাছেন, ব্যাপার না, আমরাও অফসাইডের পাবলিক।’ ‘মানে?’ ‘বেকুব নাকি, আমরা হইলাম বিশুদ্ধ ছিনতাইকারী, এখন কুইকলি যা আছে বাইর কর।’ আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ভাই, পকেটে একটা মোবাইল ছাড়া কিছু নাই।’ আরেকজন এসে বলল, ‘ওস্তাদ হালায় মনে হয় চাপা খিলাইতাছে, বরফ দেওয়া পানি গায়ে ঢাইলা দিই?’ ‘না, আগে ওর তল্লাশি নিয়া দেখ।’ একজন এসে আমার সবকিছু চেক করে বলল, ‘ওস্তাদ মোবাইল ছাড়া কিছু নাই।’ ‘ঠিক আছে সেইটাই নিয়া ব্যাটারে বিদায় কর।’ আমি বললাম, ‘ভাই, একটা ইচ্ছা ছিল।’ ‘কী?’ ‘মানে চাইছিলাম আপনাদের সাথে একটা সেলফি তুলতে।’ ‘সেইটা আবার কী?’ ‘ফটো... মানে জীবনেও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ি নাই তো তাই...।’ পাশে থাকা একজন বলল, ‘ভাই একটু খাড়ান, ফেয়ার অ্যান্ড বাবলি ক্রিমটা মুখে লাগাইয়া লই।’ কী মাখল খোদা জানে। ‘ঠিক আছে তুলেন।’ ‘এই অন্ধকারে সেলফি তুলুম কেমতে, তার চেয়ে গলির থেকে বাইরে যাই।’ পাশে থাকা চামচাটা বলল, ‘ওস্তাদ ঠিকই তো কইছে... চলেন... একটা লুক-এর দরকার আছে না।’ গলি থেকে বের হয়ে ছিনতাইকারী আর আমি একসঙ্গে সেলফি তুলতে লাগলাম। হঠাত্ মনে হলো পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে। তাকিয়ে দেখি ছিনতাইকারীদের লিডারের লুঙ্গিতে ট্যারা পাগলা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মুহূর্তে সব গোলমাল লেগে গেল। লিডার বলল, ‘ছিনতাইয়ের গুষ্টি কিলাই। জলদি পালা, নইলে আন্ডারওয়্যারে আগুন লাগিয়ে দিব।’ ছিনতাইকারীরা দৌড়াতে লাগল। আমিও ডরে দৌড় দিলাম। পেছনে ট্যারা পাগলা দৌড়াচ্ছে। আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে কে ছিনতাইকারী কে পাগল বোঝা মুশকিল। কোনোরকম দৌড়ে একটা পাবলিক টয়লেটে গিয়ে লুকালাম। জানে বাঁচলাম, কে জানে ছিনতাইকারী ব্যাটাদের আন্ডারওয়্যার ঠিক আছে কি না!
পাগল, ছিনতাইকারী ও জনৈক প্রেমিক
সোহানুর রহমান অনন্ত
আমি বরাবরই আড্ডাপ্রিয় মানুষ। রাত জেগে আড্ডা মারি, আমাদের টপিকের শেষ নেই। প্রেম, বিরহ, খাওয়া-দাওয়া সবই থাকে। একদিন আড্ডা দিতে দিতে অনেক রাত হয়েছে। বাসায় ফেরার সময় পাখিটার ফোন। ধরতেই বলল, আমাকে তার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, এখনই। ‘এত রাতে?’ ‘কেন রাতে কি দেখতে ইচ্ছে করতে পারে না?’ ‘আলবত্ পারে... একশ তিনবার পারে। আমি আসতাছি...।’ ঘটনা টাং টাং... যেতেই হবে। পাখিটার বাড়ি পাড়ার শেষ প্রান্তে, এই দিকটা সন্ধ্যার পরেই কেমন ঝিম মেরে যায়। দু-একটা নেড়ি কুকুর ছাড়া পাবলিকের দেখা পাওয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। তবুও সাহস করে গেলাম, প্রেমিকার দেখতে চাওয়া বলে কথা। শীতটা ভালোই পড়তে শুরু করেছে। পাখিটার বাসার সামনে যেতেই দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মুচকি হাসি। আমিও হাসলাম। পাখির মুখে হাসি অফ আমার মুখেও অফ। কী ব্যাপার বুঝে ওঠার আগেই পাখি কিছু একটা বুঝাতে চাইল। আমি আবার অদৃশ্য ভাষায় বিশেষজ্ঞ। অনেকটা ‘মাথা আছে মগজ নাই’-এর মতো। ভালো করে বুঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। হঠাত্ মনে হলো পোড়া গন্ধ আসছে, তাকিয়ে দেখি আমার পাঞ্জাবিতে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পাশে ফিরে দেখি ট্যারা পাগলা। ট্যারা পাগলার পাগলামি নিয়ে ব্যাপক ঘটনার কথা কানে এসেছে। ডরে আমি লাফিয়ে উঠলাম। ট্যারা পাগলা বলল, ‘কীরে, লাফাছ কেন? একটু আগুন পোহাইতাছি।’ বুঝতে পারলাম আর কিছুক্ষণ থাকলে দুগ্ধ হয়ে প্রেমসহ স্বর্গবাসী হতে হবে। তাই দিলাম খিচ্চা দৌড়, ট্যারা পাগলাও আমার পিছনে দিলো দৌড়। কোনোরকম দৌড়ে একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকলাম। ট্যারা পাগলা কোনদিক গেল, মালুম করতে পারলাম না। গলিটা বেশ অন্ধকার। ফিসফিস করে নিজে নিজেকে বললাম, ‘শালার সব রাইখা এমন অন্ধকার গলিতে একলা আইসা ঢুকলাম!’ ঠিক তখনি পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘একলা কোথায়, আমরা তো আছি!’ আমি তো ভূত ভেবে হূদয় অ্যাটাক খেয়েছিলাম আরেকটু হলে। একজন লোক আমার সামনে এসে বলল, ‘ভাইজান মনে হয় অফসাইডে ঘুরতাছেন, ব্যাপার না, আমরাও অফসাইডের পাবলিক।’ ‘মানে?’ ‘বেকুব নাকি, আমরা হইলাম বিশুদ্ধ ছিনতাইকারী, এখন কুইকলি যা আছে বাইর কর।’ আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ভাই, পকেটে একটা মোবাইল ছাড়া কিছু নাই।’ আরেকজন এসে বলল, ‘ওস্তাদ হালায় মনে হয় চাপা খিলাইতাছে, বরফ দেওয়া পানি গায়ে ঢাইলা দিই?’ ‘না, আগে ওর তল্লাশি নিয়া দেখ।’ একজন এসে আমার সবকিছু চেক করে বলল, ‘ওস্তাদ মোবাইল ছাড়া কিছু নাই।’ ‘ঠিক আছে সেইটাই নিয়া ব্যাটারে বিদায় কর।’ আমি বললাম, ‘ভাই, একটা ইচ্ছা ছিল।’ ‘কী?’ ‘মানে চাইছিলাম আপনাদের সাথে একটা সেলফি তুলতে।’ ‘সেইটা আবার কী?’ ‘ফটো... মানে জীবনেও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ি নাই তো তাই...।’ পাশে থাকা একজন বলল, ‘ভাই একটু খাড়ান, ফেয়ার অ্যান্ড বাবলি ক্রিমটা মুখে লাগাইয়া লই।’ কী মাখল খোদা জানে। ‘ঠিক আছে তুলেন।’ ‘এই অন্ধকারে সেলফি তুলুম কেমতে, তার চেয়ে গলির থেকে বাইরে যাই।’ পাশে থাকা চামচাটা বলল, ‘ওস্তাদ ঠিকই তো কইছে... চলেন... একটা লুক-এর দরকার আছে না।’ গলি থেকে বের হয়ে ছিনতাইকারী আর আমি একসঙ্গে সেলফি তুলতে লাগলাম। হঠাত্ মনে হলো পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে। তাকিয়ে দেখি ছিনতাইকারীদের লিডারের লুঙ্গিতে ট্যারা পাগলা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মুহূর্তে সব গোলমাল লেগে গেল। লিডার বলল, ‘ছিনতাইয়ের গুষ্টি কিলাই। জলদি পালা, নইলে আন্ডারওয়্যারে আগুন লাগিয়ে দিব।’ ছিনতাইকারীরা দৌড়াতে লাগল। আমিও ডরে দৌড় দিলাম। পেছনে ট্যারা পাগলা দৌড়াচ্ছে। আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে কে ছিনতাইকারী কে পাগল বোঝা মুশকিল। কোনোরকম দৌড়ে একটা পাবলিক টয়লেটে গিয়ে লুকালাম। জানে বাঁচলাম, কে জানে ছিনতাইকারী ব্যাটাদের আন্ডারওয়্যার ঠিক আছে কি না!
No comments:
Post a Comment