join facebook page

Wednesday, 28 September 2016

আজ দৈনিক যুগান্তরে

আজগুবি টিপস
দোকানদাররা মাঝে মাঝে কিছু আজগুবি কথা বলেন, যার যুক্তি দেখাতে গেলে ঘটবে অন্য ঘটনা। কী ঘটবে সেটাই জানতে নিচের বিষয়গুলো পড়ে ফেলুন। লিখেছেন

পানিতে চুবিয়ে ফেলুন
দোকানদার আপনাকে বলবে এটি কালার টিভি। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি আছে। সুতরাং আপনি টিভিটার কালার ওঠে কি না সেটা যাচাই করতে পানিতে চুবিয়ে দেখতে পারেন। বিক্রেতা কিছু বললে বলবেন, ক্রেতা হিসেবে যাচাই করে কেনা আপনার দায়িত্ব। তাছাড়া ওয়ারেন্টি তো আছেই।

ঘুমিয়ে পড়ুন
ফার্নিচার দোকানগুলোতে গেলে তারা নানা রকম কাঠের খাট দেখিয়ে বলবেন, এই খাটে আপনি আরামে ঘুমাতে পারবেন, মেরুদণ্ডও ভালো থাকবে। ব্যস, এবার আপনি কিছু না বলে শুয়ে পড়ুন এসির বাতাসে আরাম করে। এরপর দোকানি যখন বলবেন, কি ভাই, খাট কিনবেন না? তখন আপনি বলবেন, আগে ঘুমাইয়া টেরাই কইরা লই আপনি সত্যি বলছেন না মিথ্যা।

ফ্রি খেয়ে নিন
বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতি দোকানেই লেখা থাকে- আজ নগদ কাল বাকি। প্রথমে আপনাকে একটা দোকানে যেতে হবে তারপর এক এক করে সব জিনিস দেখুন। আজকাল দোকানগুলোতে ক্রেতার জন্য ভালোই খাবার বরাদ্দ থাকে। আরামে বসে যা দেবে খেয়ে নিন। এরপর যখন কিছু কেনার কথা বলবে, তখন আপনি বলবেন, পকেটের অবস্থা বেশি একটা ভালো না। কাল যেহেতু বাকি দেবেন কালই নেব। বাকি না নিলে আমার আবার এলার্জি বেড়ে যায়।

সম্পাদিত তামাশায় আমার লেখা


রহস্য পত্রিকা জুলাই ২০১৬ সংখ্যায়.. আমার প্রকাশিত লেখা.....
সমকালে আজ প্রকাশিত ঈদ নিয়ে গল্প আপাতত লেখা এবং অলংকরণ দুটোই আমার হাতে সময় থাকলে পড়তে পারেন........

গল্পের ওপারের মেয়েটি

সোহানুর রহমান অনন্ত

স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার গেলেই চেয়ারম্যানবাড়ি। আমার মায়ের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়বাড়ি সেটা। এর আগে কখনও আসা হয়নি। মাথায় হঠাৎ ভূত চাপল_ ঈদটা ঢাকার বাইরে করব। মাকে জানাতেই মন খারাপ করল। কারণ এতটুকু বয়সে আমি কখনও মাকে ছাড়া ঈদ করিনি। কিন্তু চিরকাল তো মানুষ একই নিয়মে চলতে পারে না। ঠিকানা দিয়ে বলল, ওখানে তোর কোনো অসুবিধা হবে না। দেড় ঘণ্টা লেটে ট্রেন স্টেশনে পেঁৗছেছে। একটা রিকশা নিয়ে কিছুদূর গেলাম তারপর হাঁটার পথ। দূরের কোথাও টিমটিম আলো জ্বলছে। একটা চায়ের দোকান দেখে জানতে চাইলাম, চেয়ারম্যানবাড়ি কোনদিকে? তিনি হাত উঁচু করে দেখিয়ে দিলেন। বাড়িটার কাছে যেতেই দেখি অল্প বয়সী এক মেয়ে হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা আলোয় তার চেহারা তেমন বোঝা যাচ্ছে না। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, আপনি ঢাকা থেকে এসেছেন? চমকে গেলাম আমি। গ্রামের মেয়েরা সাধারণরত আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।

প্রশ্নটা দ্বিতীয়বার করল আমাকে। হ্যাঁ। আমার পেছনে আসুন। আমি তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম। অনেক পুরনো বাড়ি। কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর একটা ঘরে ঢুকল। আমিও পেছনে ঢুকলাম। এক ভদ্রমহিলা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন, বসো বাবা। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বসলাম। তিনি বললেন, তোমার কষ্ট হয়নি তো আসতে? হেসে বললাম, না ঠিক...। মেয়েটা পাশের রুম থেকে এসে আমাকে এক গ্গ্নাস লেবুর শরবত দিল। তখনও ভালো করে দেখা হয়নি মেয়েটিকে। কথার পর্ব শেষে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়লাম। জানালা দিয়ে অসংখ্য জোনাকির সাথে সেই মিষ্টি ফুলের গন্ধটা এসে ঘরে ঢুকছিল।

গ্রামের মানুষ খুব দ্রুত ঘুম থেকে উঠে যায়। আমার ঘুম ভাঙল মিষ্টি রিনিঝিনি চুড়ির শব্দে। চোখ মেলতেই দেখি, একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। রাতের মেয়েটি, এতক্ষণে ভালো করে দেখলাম। এক কথায় সুন্দরী বলতে যা বোঝায়। মেয়েটির বয়স কম ভেবে ভুল করেছি। আসলে মেয়েটি একটু শর্ট। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মা ডাকছে। মেয়েটির প্রতিটি শব্দ কেন যেন আমার ইন্দ্রিয়ে শিহরণ তুলছিল! এক ফাঁকে মেয়েটির নাম জেনে গেলাম_ তৃষা। তারপর অসংখ্যবার চোখাচোখি। সারাদিন সবার সাথে কথা বললেও আমার কান একজনের হাসি আর পায়ের শব্দের দিকে জাগ্রত। কী অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছি আমি! তৃষা যেন একটু একটু করে আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিল। ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো দূর থেকে দেখে আমায়। এভাবে দিনের আলো নিভে যায় রাত আসে নেমে। আমার ঘরের পাশেই ছিল জানালা। আমি বালিশে হেলান দিয়ে একটা বই পড়ছিলাম। কেউ একজন জানালার ওপাশ থেকে বলল, শুনছেন? আর একটু হলে ভয়ে চিৎকার করে উঠতাম। তাকিয়ে দেখি তৃষা দাঁড়িয়ে। একটু হাতটা জানালার বাইরে দিন। আমি যেন ওর কথায় নিবেদিত। সাথে সাথে বাইরে হাত দিলে কয়েকটা গন্ধরাজ ফুল আমার হাতে দিয়ে চলে গেল। আমি কেবল শুনলাম ঝুমঝুম কাচের চুড়ির শব্দ।

এই বাড়িটার নামকরণ হয় মঞ্জু চেয়ারম্যানের নামে। তারপর কত সময় কেটে গেছে। এখন কেউ চেয়ারম্যান নয়, তবুও চেয়ারম্যানবাড়ি। এই কয়েক দিনে একটা জিনিস নিশ্চিত হলাম_ আমি তৃষার প্রেমে পড়ে গেছি। তৃষা যদিও আমাকে ওইভাবে সবুজ সংকেত দেয়নি, তবে দেবে_ এতে আশাবাদী। কিন্তু কথাটা মাকে বলব কীভাবে? ঠিক সেই মুহূর্তে তৃষার মা আমাকে ডাকলেন। ঘরে ঢুকতেই দেখি, কয়েকজন মুরুবি্ব বসে আছেন। তৃষার মা বললেন, উনারা তৃষাকে দেখতে এসেছে। কথাটা শুনে মুহূর্তেই থমকে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, বেশ তো। তা ছেলে আসেনি? এসেছে তো; ওই যে। একজন বয়স্ক লোককে দেখিয়ে বললেন তিনি। আমি পুরোপুরি হতবাক। লোকটার বয়স চলি্লশের কাছাকাছি। চুপচাপ শুনলাম। তৃষাকে সাজিয়ে নিয়ে আসা হলো। একবারের জন্যও তাকাইনি ওর দিকে। বিয়ের কথা পাকা_ ঈদের একদিন আগেই বিয়ে হবে। রাতে তৃষার মা আমাকে জানালেন, এর আগে তৃষার একটা বিয়ে হয়েছিল কিন্তু খোদা সইলেন না। সাপের কামড়ে মারা গেল ছয় মাসের মাথায়। তাই এই বয়স্ক লোকটার হাতেই মেয়েটাকে তুলে দিচ্ছি। অবাক হওয়ার কিছু নেই। গ্রামে এসব হয়। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, ওরা দেখে যাওয়ার পর থেকে তৃষা আর আমার সামনে আসছে না। কোথাও শুনছি না কাচের চুড়ির ঝুমঝুম শব্দ।

আজ রাতেই তৃষার বিয়ে। এই কয়েক দিন তৃষা আমার সামনে একেবারেই কম এসেছে। কোনো কথা বলেনি, সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে রেখেছে। চুপচাপ আমি ঘরের এক কোণে বসে আছি। জানালার পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়াল; তৃষা। আমাকে বলল, কিছু কথা আছে আপনার সাথে। একটু আসবেন? ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাঁদছে শ্রাবণের আকাশের মতো।

আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? অপ্রস্তুত হয়ে যাই আমি।

কী হলো?

আমিও আপনাকে ভালোবাসি। ভালো থাকবেন। একটা গন্ধরাজ ফুল আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। অপদার্থের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আটকাতে পারলাম না। রাত ১০টার শেষ ট্রেনে ঢাকায় চলে আসি। আর কখনও যাইনি ওখানে। শুকিয়ে যাওয়া সেই গন্ধরাজ ফুলটা আজও আছে আমার কাছে। এরপর ঈদ এসেছে কিন্তু তৃষা আর কখনও ফিরে আসেনি। ফিরবেও না কোনোদিন।

আজ সমকালের প্যাঁচআল-এ

এখনকার সময় যদি নিউটনের মাথায় আপেল পড়ত!
সোহানুর রহমান অনন্ত

-অনলাইন নিউজ : ব্রেকিং নিউজ, এইমাত্র পাওয়া খবরে জানা গেছে, নিউটনের চুলের ওপর ক্রাশ খেয়ে আপেলের সুইসাইড। কেমতে সুইসাইড খাইলো, আপেলের রঙ কেমন ছিল যাবতীয় তথ্য ভিডিওসহ না দেখলে চরম মিস করবেন। একমাত্র আমরাই প্রথম নিউটনের মুখোমুখি জানতে পেরেছি। তিনি কেন আপেল গাছের নিচে গিয়ে বসেছিলেন, পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। নয় তো দূরে গিয়ে মুড়ি খান।

-সরকারি দল : তাল গাছ, বেল গাছ থাকতে আপেল পড়ল কেন? এটা সাবেক বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে। কেউ গাছ ধরে নাড়া দিল কি-না খতিয়ে দেখে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা সবসময়ই আপনাদের পাশে থাকতে চাই কিন্তু সাবেক বিরোধী দলের জন্য সেটা মাঝে মধ্যে সম্ভব হয় না। তবে এবার আর কোনো চক্রান্তকে মেনে নেওয়া হবে না। আমরা নিউটনের পাশে আছি।

-সাবেক বিরোধী দল : এই সরকার সামান্য ফল নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। সব ঘটনা আপনারা জানেন বন্ধুগণ। আসলে এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না। সবকিছুতেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পরিণাম আজ নিউটন ভোগ করল। আমরা ক্ষমতায় এলে আপেল গাছ কেটে কলা গাছ লাগাব, মুলা গাছ লাগাব। আর একটা আপেলও কারও মাথায় পড়বে না- কথা দিলাম বন্ধুগণ।

-এরশাদ : আচ্ছা, আপেল গাছের নিচে উনি কি একা বসেছিলেন নাকি সঙ্গে কোনো নারীও ছিল! যদি একা বসে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে লোকটা বোকা। আর যদি সঙ্গে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বসেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি আমার মতোই বুদ্ধিমান!

-ফেসবুক ইউজার : নিউটনের মাথায় কীভাগে আপেল পড়ল? আপেল পড়ার সময় তিনি কোন দিকে তাকিয়ে ছিলেন? পড়তে হলে আমাদের পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গেই থাকুন। আছে এক্সকু্লসিভ ছবি। শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন ফ্রান্স।

-আপেল বিক্রেতা : কেমন যেন রহস্যের গন্ধ পাইতাছি। আমরা বসি লোকাল বাসের সিটে আর নিউটন গেছেন আপেল গাছের নিচে বসতে! আমার তো মনে হয় উনি আপেলে ফরমালিন মিশাইতে গেছেন। হে হে হে... আমরা যেমন মিশাই আর কি!

আজ দৈনিক ভোরের কাগজে ঈদ নিয়ে গল্প.......শনিবার, ২৫ জুন ২০১৬

অপূর্ণতা

** সোহানুর রহমান **

শহরে ঈদ আসে না, দালানের জন্য দেখা যায় না ঈদের খুশির চাঁদটাকে। ডায়রির পাতায় এসব লিখতে থাকে রেজা। গ্রাম থেকে এসেছে অনেক দিন হলো। ঢাকায় এসে কোনো চাকরি না পেয়ে শেষে শুরু করে হকারি। বাসে বাসে বিক্রি করে আদর্শলিপি বই। ব্যবসা খারাপ না, ভালোই দিনগুলো যাচ্ছে। টুনটুনির জন্য মনটা খুব পোড়ে। সেই ক্লাস সিক্স থেকে প্রেম তারপর কতশত সুখের স্মৃতি। অনেকটা বছর কেটে গেছে এরই মধ্যে। টুনটুনি অবশ্য ওর আসল নাম না রেজা ভালোবেসে ডাকে, ভালোলাগে তাই। ডায়রিতে আরো কিছু লিখতে যাচ্ছিল কিন্তু মাথায় আসছে না। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই বের হওয়া যাচ্ছে না। মায়ের জন্য এরই মধ্যে ঈদের শাড়ি কিনে ফেলেছে।

ঘরে অসুস্থ বাবা তার জন্যও কেনা হয়েছে লুঙ্গি, টুনটুনির জন্য কেনা হয়েছে মাথার ক্লিপ, চুড়ি ইত্যাদি। কেবল নিজের জন্যই কিছু কেনা হয়নি এখনো। জানালা দিয়ে আবার বাইরে তাকায়, আজ আর বের হতে পারবে কিনা সন্দেহ। পকেট থেকে বের করে টুনির চিঠিগুলো, এগুলো সব সময় ওর সঙ্গে থাকে। সুযোগ পেলেই পড়তে শুরু করে। আঁকাবাঁকা গ্রামের মেঠো পথের মতো হাতের লেখা। পিনআপ করা একটা স্ট্যাম্প সাইজ ছবিও আছে। সবকিছু পুরনো কিন্তু কথাগুলো যেন হৃদয়ে বাজে বিষের বাঁশির মতো।

২.

প্রতিদিন ফ্যাশন হাউসটার সামনে দিয়ে বাসায় ফিরতে হয় রেজাকে। ডলের গায়ে ঈদের বাহারি রঙের পোশাক। পাশাপাশি দুটো ডল, একটা মেয়ে একটা ছেলে যেন প্রেমিক-প্রেমিকা। রেজা হাসে, ভালোলাগে ওর কাছে। ডলের গায়ের জামাটার দাম কত সেটা নিয়ে টেনশনে ভোগে। এমন সুন্দর একটা জামা যদি টুনটুনি পড়ে, তাহলে কেমন লাগবে? গ্রামের মেয়েটি, কাজ করতে করতে যার শরীর ঘামে ভিজে যায়। রোদে জ্বলে কাপড়ের রঙ নষ্ট হয়ে যায়, সে হয়তো এতো দামি জামা কখনো পড়েনি। ইস যদি দিতে পারতাম তাহলে অনেক খুশি হতো। কিন্তু পকেটের কথা ভেবে আর দাম জিজ্ঞেস করা হয় না রেজার। হকারির কাজ কোনো বোনাস নেই, নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। কেবল টার্গেট পূরণ করতে পারলেই কিছু ইনকাম। মনের ইচ্ছে মনে রেখে কাজে যায় আবার ফিরে। দিনে দু’বার তাকায় জামাটার দিকে। এভাবেই দিন কাটে রাত আসে। ঈদও ক্রমে কাছে চলে আসে।

৩.

সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জামাটা কিনে রেজা। এবার বাড়িতে গিয়ে মাকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাবে টুনিদের বাড়িতে। আর শহরে ফিরবে না। এখানকার মানুষগুলোও কেমন ইট পাথরের। কেউ কারো প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ায় না গ্রামের মতো। মায়ের জন্য ঈদের কাপড় এবং বাবার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে। সন্ধ্যায় চলে যায় কমলাপুর স্টেশনে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। একজন লোক এসে রেজাকে বলল, টিকেট তো পাবে না। তবে চাইলে আমি তোমাকে ছাদে ব্যবস্থা করে দিতে পারি। এর আগে কখনো ট্রেনের ছাদে ওঠেনি রেজা। তবুও বাড়ি ফেরার ইচ্ছেটা ওকে বাধ্য করল। কিছু টাকা দিল লোকটাকে। তারপর সেই ব্যবস্থা করে ছাদে তুলে দিল। মাকে ফোন করে জানাল আসছে।

ট্রেন ছাড়ল দেড় ঘণ্টা লেটে। কেমন যেন একটু দুলছিল প্রথমে তারপর ঠিক হয়ে যায়। রেজা বসে থাকে অন্য সব মানুষের সঙ্গে। রাতের অন্ধকার চিরে চলছে ট্রেন। কেমন ঘুম ঘুম প্রায় রেজার, আবার জেগে ওঠে। ঘুমালে ঝুঁকি আছে ট্রেনের ছাদে। চোখে-মুখে অন্যরকম স্বপ্ন এইতো আর কয়েক ঘণ্টা। তারপরই বাবা-মা আর টুনিকে দেখবে সে। বিয়ে করে এবার সংসারী হবে। খেতে-খামারে কাজ করে সংসার চালাবে, টুনির সঙ্গে সুখে দিন কাটাবে। মনের আকাশ জুড়ে সেই সুখের তারাগুলোই যেন জ্বলে ওঠে বারবার। হঠাৎ ঝড় শুরু হয়, ভয়ঙ্কর ঝড়। রেজা আঁকড়ে ধরে থাকে অন্য মানুষদের হাত। বাতাস এতটাই জোরে বইছিল যে নিয়ন্ত্রণ রাখা বড় দায়। ভয়ে কয়েকজন চিৎকার করতে থাকে। রেজা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। হাতে থাকা ব্যাগটা ফসকে যায় সেটা ধরতে গিয়ে হঠাৎ পিছলে পড়ে যায় ট্রেনের ছাদ থেকে। কানে কেবল ভেসে আসে কিছু মানুষের চিৎকার আর ট্রেনের শব্দ। তারপর সব নিশ্চুপ।

৪.

রেজাদের বাড়ির পাশ দিয়েই ট্রেন যায় কিছুদূর গেলেই স্টেশন। রেজার মা ছেলের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে দরজার সামনে। বাবা একটু পর পর কাশি দিয়ে উঠে বলে, কই ছেলেটা এল?। টুনি কারণে-অকারণে ঘোরাফেরা করে রেজাদের বাড়ির আশপাশে কিন্তু রেজা আসে না। দিন ফুরিয়ে রাত হলো, আকাশে উঁকি দিলো ঈদের চাঁদ কিন্তু তার সোনামাণিক এখনো ফেরেনি ঘরে। রেজার মা তাকিয়ে থাকে পথের দিকে। কিন্তু রেজার মতো কেউ আসে না। অজানা ভয়ে তার চোখের কোণে জল চিকচিক করে। মনে প্রার্থনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ছেলের যেন কিছু না হয়। কয়েকটা জোনাক পোকা কেবল পথের এপাশ থেকে ওপাশে ছোটাছুটি করে। ঠিক সেই মুহ‚র্তে একটা লাশবাহী অ্যাম্বুলেস এসে ঢুকে রেজাদের বাড়িতে।


জ দৈনিক সমকালের প্যাঁচােলে

সাগর হরিলুট
মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংক খাতে নাকি সাগর চুরি ঘটেছে। সাগর চুরির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

প্রথম ব্যক্তি : বুঝলাম না, হুট করে বাপ-দাদার পেশা চুরি-ডাকাতি ছেড়ে দিবি? তোর কি সন্ত্রাসী হওয়ার শখ জাগছে?

দ্বিতীয় ব্যক্তি : আমাগো কি আর এখন কদর আছে। ব্যাংকার আর ঋণখেলাপি মিলে গোপনে সাগর লুট করে আর আমরা সারাজীবনে একটা ডোবাও লুট করতে পারলাম না, বড়ই পরিতাপ।

প্রথম ব্যক্তি : ছেলে ব্যাংক...।

দ্বিতীয় ব্যক্তি : কী কইলেন বেয়াই মশাই, ছেলে ব্যাংকার! এমন লুটেরা জামাই-ই তো আমি খুঁজতাছি। এই বিয়াতে আমার তো দূরের কথা আমার চৌদ্দগুষ্টিরও কারও অমত নাই।

প্রথম ব্যক্তি : আসলে বেয়াই সাহেব, আমি বলতে চাইছিলাম ছেলে ব্যাংক লুট নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক হিট খাইছে! শত শত লাইক কুড়াইছে। সেলিব্রেটি পোলা আমার।

প্রথম ব্যক্তি : মন্ত্রী চুরির সঙ্গে সাগরের উদাহরণ দিল কেন? মরুভূমি, এভারেস্টের কথাও তো বলতে পারত?

দ্বিতীয় ব্যক্তি : আসলে আমাদের দেশ নদীমাতৃক তো, তাই মন্ত্রীর সাগরের প্রতি একটা এক্সট্রা টান আছে।

প্রথম ব্যক্তি : আপনি এভাবে বিশ্বের ম্যাপ নিয়ে বসেছেন কেন, কোনো কাজ-কাম নাই নাকি?

দ্বিতীয় ব্যক্তি : আরে মিয়া এত টেনশন লইতাছেন কেন, ব্যাংক খাতে নাকি সাগর চুরি হইছে, তাই তো ম্যাপ দেখতাছি। আচমকা কোন সাগরটা গায়েব হয়ে গেল!

আজ দৈনিক যুগান্তরের......যুগান্তর রঙ্গতে

ফেসবুকময় কথামালা
বর্তমান সময় ফেসবুকের। চলুন দেখা যাক, যদি ফেসবুকময় কথাবার্তা আমাদের পরিবারে চালু হয়ে যায় তাহলে কেমন হবে! লিখেছেন -সোহানুর রহমান অনন্ত |

মা : শুনলাম, তুমি নাকি পাশের বাড়ির মেয়েটিকে পোক দিয়ে বিরক্ত কর।
ছেলে : আরে দূর! সেই তো আমাকে প্রেমের চিঠি ট্যাগ করে বিরক্ত করছে।
বাবা : এই শুনছ! অফিসের টাইম হয়ে গেছে। আমি লগআউট হলাম।
মা : এখানে গ্রুপ আড্ডা হচ্ছে। তুমি জয়েন করলে ভালো হতো, যাই হোক অফিসে ইন হয়ে একটা টেক্সট দিও।
মেয়ে : গুড মর্নিং মামণি, আমি তোমাদের সঙ্গে লগইন হতে পারি?
মা : অবশ্যই পারো। তবে তোমার তো বড় বড় স্ট্যাটাস দেয়ার বাজে অভ্যাস আছে, আপাতত সেটা অফ রেখ।
মেয়ে : একটা দিন তো আমার কথায় কমান্ড করলে না। শুনলাম, ভাইয়ার ফ্রেন্ড লিস্ট নাকি অনেক বড় হয়ে গেছে! তা ভাইয়া, ফেক ফ্রেন্ড নেই তো?
ছেলে : আরে না। আমি কি বোকা নাকি! সব ভালোভাবে চেক করে অ্যাকসেপ্ট করেছি।
মা : শুনলাম, তুমি নাকি ভার্সিটিতে এক ছেলেকে হুমকি দিয়েছ। বলেছ, ওর বাড়ির ওয়াল তামাতামা করে দেবে।
মেয়ে : ঠিকই তো বলেছি। ও আমার ময়দা মাখা চেহারা দেখে একবার লাইক মেরে আবার ডিজলাইক করে দিয়েছে।
কাজের মেয়ে : আম্মা, আমার প্রাক্তন স্বামী আবার আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছে। বলে, ফ্রেন্ড হয়ে সারা জীবন থাকতে চায়।

আজ ৬জুন ২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল এ

বিয়ে অতঃপর
সোহানুর রহমান অনন্ত

বউ আতঙ্ক
প্রথম ব্যক্তি : আমি প্রায় খেয়াল করি আপনি ঘরে ঢোকার সময় ফিসফিস করে একা কথা বলেন, এর কারণটা কি জানতে পারি?
দ্বিতীয় ব্যক্তি : তেমন কিছু না, বউয়ের সামনে কথা বলার সাহস নাই তো, তাই বাইরে থেকে ফিসফিস করে সব কথা শেষ করে যাই।

শুকিয়ে কাঠ
প্রথম ব্যক্তি : বিয়ের পর আপনি এমন শুকিয়ে যাচ্ছেন কেন ভাই, আগে তো ছোটখাটো একটা হাতি ছিলেন, খাওয়া-দাওয়া কি ছেড়ে দিলেন?

দ্বিতীয় ব্যক্তি : দুঃখের কথা আর কি কমু ভাই, খাওয়ার কিছু থাকলে তো খামু, বাজার থেকে যা আনি তা দিয়েই আপনার ভাবি রূপচর্চা শুরু করে।

বিলাই মারলেও সমস্যা
প্রথম বন্ধু : তোরে যে বলছিলাম বাসর রাইতে বিলাই মারতে, তুই কি সেই কাজটা করছিলি বন্ধু?
দ্বিতীয় ব্যক্তি : হারামি, তোর কথা শুনেই তো বিড়ালটা মেরে ধরা খাইছি, এখন তো ইঁদুর আমার প্যান্ট-জাইঙ্গা সব কেটে ফেলছে।

ফেসবুক নিয়ে সমস্যা
প্রথম ব্যক্তি : আপনার আর ভাবির ছবি এখন পর্যন্ত ফেসবুকে দেখলাম না, একটা সেলফি তুলে তো আপ করতে পারেন।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : শখ তো আমারও হয় কিন্তু আপনার ভাবি যখনই ছবি তোলার জন্য পার্লার থেকে সেজে আসে, তারে আঁতকা দেইখা পেতি্ন ভেবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি!

আজ ৬জুন ২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল এ

মৌসুমি ফলের ভিন্ন ব্যবহার
সোহানুর রহমান অনন্ত

পুরস্কার হিসেবে কাঁঠাল : খেলায় পুরস্কার হিসেবে ট্রফি দেওয়া হয় বিজয়ী দলকে। যেহেতু কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল, আবার সাইজেও হেবি্ব বড়। তাই খেলার ট্রফির বদলে এই মৌসুমে বিজয়ী দলকে কাঁঠাল দেওয়া যেতে পারে। এতে যেমন ভিন্নতা আসবে আবার বিজয়ী দল চাইলেই কাঁঠাল খেয়ে পেটের ক্ষুধা মেটাতে পারবে।

বাড়ির বাউন্ডারিতে তারের বদলে আনারস : যেহেতু চোর বা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যেন বাড়িতে ঢুকতে না পারে, তাই আমরা বাড়ির বাউন্ডারির দেয়ালে কাচ অথবা কাঁটাতার দিয়ে রাখি। এ ক্ষেত্রে কাঁটাতারের বদলে আনারস ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ আনারসের পাতাতেও কাঁটা আছে।

ক্রাইম কমাতে তরমুজ থেরাপি : সন্ত্রাসীকে রিমান্ডে নিলে যেমন ডিম থেরাপি দেওয়া হয়, তেমনি এই সিজনে ডিমের বদলে তরমুজ থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। এটি সাইজেও ডিমের চেয়ে অনেক বড়। তাই তরমুজ থেরাপির ভয়ে অধিকাংশ ক্রাইম যে কমে যাবে এতে আমরা একশো পার্সেন্ট সিউর।

লিপস্টিকের বিকল্প হিসেবে জামের ব্যবহার : জাম দিয়ে লিপস্টিকের কাজ করতে পারে মেয়েরা। সবসময় লিপস্টিক সঙ্গে নাও থাকতে পারে। এই সিজনে পথের পাশেই জাম পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু জামে গাঢ় লাল রঙ হয়, তাই এটি ব্যবহার করা যেতেই পারে।

গেণ্ডারি দিয়ে সেলফি স্টিক : ইদানীং সেলফি রোগে ভুগছে পুরো জাতি। আর তাই সেলফি আরও সুন্দর করে তুলতে আপনার দরকার ভালো একটা সেলফি স্টিক। সে কারণেই সেলফি স্টিক হিসেবে গেণ্ডারি ব্যবহার করা যেতে পারে। অল্প খরচে শক্ত স্টিক দিয়ে আরামে কাজ চালিয়ে নিন।
- See more at: http://bangla.samakal.net/2016/06/06/216521#sthash.rBQdGRkr.dpuf

প্রতিটি সম্মাননা কেবল লেখার উৎসাহ-ই দেয় না....ভালো লেখার দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দেয়....আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরামে লেখা শুরু করেছিলাম....তারপর থেকে নিয়মিত প্রায় লেখার চেস্টা করছি এই বিভাগটিতে......আমাকে সম্মাননা করার জন্য ধন্যবাদ চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারকে...সেই সাথে স্পেশাল ধন্যবাদ প্রিয় লেখক/বন্ধু মুহাম্মদ ফরিদ হাসান কে...পাঠক ফোরামের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো

২৯-৬-২০১৬ দৈনিক ইত্তেফাকে.....

এই গরমে ঠাণ্ডা থাকতে
গরম দিন দিন বেড়েই চলছে, তাই আপনার মানসিক-শারীরিক অবস্থা—দুটোই ঠাণ্ডা রাখা প্রয়োজন। কীভাবে এই গরমেও কুল থাকবেন সেটাই জানাচ্ছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

ফেসবুক ওয়াল ঠাণ্ডা রাখুন
যেহেতু ফেসবুকে আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তাই সবাই যদি নিজের প্রোফাইল পিক আর কাভার পিকে বরফের ছবি দেয় তাহলে পুরো ওয়ালজুড়ে বরফ আর বরফ দেখা যাবে। ফিলিংস পুরাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মানসিক শান্তি তো বটেই বারবার দেখার কারণে ঠাণ্ডায় কাঁপুনি ধরে যাওয়ারও চান্স আছে। চাইলে ফটোশপে নিজের ছবি বরফের পাহাড়ে বসিয়ে দিতে পারেন এতে ঠাণ্ডা ভাবটা আরও দ্রুত চলে আসবে।



মাথায় খাবার রেখে
মাথায় বেশ কিছু ধান, গম রেখে দিন; এবার হাঁটতে থাকুন। দেখবেন পাখিরা সেই খাবার খাওয়ার জন্য আপনার মাথার উপর উড়াউড়ি করছে। আর পাখার ঝাপটানির বাতাসে আপনার শরীর-মন দুটোই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। তবে টাকলু মাথার কেউ এই কাজ করতে যাবেন না, শেষে ঠোকর খেয়ে হাসপাতালে চলে যেতে পারেন।



ওয়াটার পোস্টার
ঘরের দেয়ালে পানির পোস্টার লাগিয়ে দিন। ঘরে ঢুকলেই যেন মনে হয় সাগরে নেমেছেন। সেই সাথে ঘরে হালকা সাউন্ডে পানির শব্দ বাজিয়ে দিন কল কল কললললল কল কল। দেখবেন কী যে ঠাণ্ডা লাগা শুরু হয়েছে! না লাগলে অবশ্যই আমরা দায়ী না।

ঠাণ্ডা কাপড় পরে
যার ঘরে এসি নেই তার ঘরে ফ্রিজ-ই সবকিছু। আর তাই কিছুক্ষণ পর পর কাপড় ডিপ ফ্রিজে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে বের করে পরে ফেলুন, পুরো শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এভাবে মাঝে মাঝে করলেই দেখবেন গরম বলে কিছু নেই, পুরো শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা।



লতা-পাতা সাথে রাখুন
গাছের লতা-পাতা শরীরে পেঁচিয়ে রাখুন, যেহেতু প্রকৃতি বলতেই আমাদের অনুভূতি শীতল হয়ে যায় সুতরাং আপনি শতভাগ ঠাণ্ডা ফিলিংস নিয়ে চলাফেরা করতে পারবেন। অন্যদিকে ডিজিটাল টারজান খেতাবটাও পেয়ে যেতে পারেন এই সুযোগে।



কুল পাউডার
কুল পাউডার গায়ে মাখলে শরীর ঠাণ্ডা হয়। যারা টাক মাথার অধিকারী তারা এই গরমে বাইরে কুল পাউডার নিয়ে বের হতে পারে। গরম লাগলেই মাথায় পাউডার মারুন, সব কিছু ঠাণ্ডা। তবে নিজের চেহারা ভুলেও আয়নায় দেখবেন না, জ্ঞান হারাতে পারেন।

২৯-৬-২০১৬ দৈনিক ইত্তেফাকে.....

মৌসুমী ফল with ফরমালিন



চলছে ফলের মৌসুম। সেই সাথে ফরমালিনের কিঞ্চিত্ ভয়, চলুন দেখি ফলের বাজারের কী অবস্থা? সাথে আছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

ফরমালিনের বিকল্প এমন স্প্রে তৈরি হতেই পারে

কী ব্যাপার তোমার আমের গা থেকে কাঁঠালের গন্ধ আসতাছে কেন?

স্যার মনে হয় স্প্রে করার সময় ভুল কইরা ফেলছি, লইয়া যান এক দামে দুই ফলের স্বাদ পাইবেন।



কথার প্যাঁচে আটকে যেতেই পারেন

তুমি বললা লিচু একেবারে রসগোল্লার মতো মিষ্টি, এখন দেখতাছি পুরাই টক, ধান্দাবাজি শুরু করছ?

আপনি তো দেখতাছি পুরাই আবুল, রসগোল্লা কি চিনি ছাড়া মিষ্টি হয় নাকি, লিচুর সাথে চিনি মিক্স করে খাইয়া দেখেন হাছা কইছি না মিছা কইছি।

ফরমালিন যুক্ত ফল দিয়ে হতে পারে ছিনতাই

সবকিছু বাইর কর কইতাছি নইলে কিন্তু ফরমালিন দেওয়া ফল তোরে যাইত্তা খাওয়াইয়া দিমু...

ওরে বাবারে... আন্ডারওয়্যার ছাড়া সব লইয়া যান, তবুও এই ফল খাওয়াইয়েন না।



ফল আছে আরও অনেক

বুঝলে নাতি আমাদের সময় একেবারে ফ্রেশ ফরমালিনমুক্ত ফল পাওয়া যেত, আফসোস তোমাদের সময়...

আমাদের সময়ও তো ফরমালিনমুক্ত ফল পাওয়া যায়, এই যেমন ধরেন পরীক্ষার ফল।

আজ ২১-৬-২০১৬ দৈনিক যুগান্তরের যুগান্তর রঙ্গ-তে.....................

বাগধারাকে যদি সত্যি ধরে নিই...
বাগধারাকে যদি আমরা সত্যি ধরে নিই তাহলে সেই দৃশ্যগুলো কেমন হতো? চলুন জেনে নেয়া যাক। লিখেছেন- সোহানুর রহমান অনন্ত

খাল কেটে কুমির আনা

১ম জন : বুঝলাম না নেতা, আপনি বাড়িটা দখল না করে উল্টা বাড়ির পাশে খাল কেটে দিলেন কেন?

নেতা : আরে বেকুব, খাল কাটলেই তো কুমির আসবে, আর কুমিরের ভয়ে ওরা পালালেই তো বাড়িটা আমার। দখল করার কী দরকার!

চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো

১ম জন : চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছি তারপরও তুই দেখতে পাচ্ছিস না, আসলেই তুই দিনকানা।

২য় জন : বদের হাড্ডি! তুই আমার চোখে আঙুল দিয়ে রাখলে আমি কী করে দেখব!

চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে

১ম জন : চোরটা তোর সামনে দিয়ে চুরি করে পালাল আর তুই কিছুই করলি না?

২য় জন : আরে, আমি তো বুদ্ধির জন্য ওয়েট করছিলাম। জানিস না, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে!

আঙুল ফুলে কলাগাছ

১ম জন : ভাই, আপনার আঙুল ফুলে তো কলাগাছ হয়ে গেছে! তা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না কেন?

২য় জন : দূর মিয়া, উল্টা বুদ্ধি দেন কেন? ডাক্তারের কাছে গেলে যদি আমার কলাগাছ কেটে রেখে দেয়।

অর্ধচন্দ্র দেয়া

১ম জন : আজ বউ আমাকে অর্ধচন্দ্র দিয়েছে। লাইফটা পুরাই জীবন হয়ে গেল রে, কেবলা!

২য় জন : ওরে ব্যাটা, এজন্যই তো বলি, চন্দ্রের বাকি অর্ধেক গেল কই? তাড়াতাড়ি বের কর, নইলে কিন্তু চাঁদমামারে বলে দেব।
- See more at: http://www.jugantor.com/oneday-everyday/2016/05/21/33337/বাগধারাকে-যদি-সত্যি-ধরে-নিই...#sthash.GCYqd91a.dpuf

আজ ১৭-৬-২০১৬ দৈনিক সমকালে.....

তারে আমি চোখে দেখিনি
সোহানুর রহমান অনন্ত

তোমার ফেসবুক অ্যালবাম ঘাঁটাঘাঁটি করলাম, একটা পিকচারও দেখলাম না, ফেইক না তো? ইনবক্স করল রায়হান। পিকচারের কী দরকার? রোমানা বলল। আমি কাউকে না দেখে একসেপ্ট করি না। তাই। হু। আমাকে তো করে ফেলেছেন। ভুলে করেছি, এখন চেক করছি। যদি ফেইক হই, বলল রোমানা। রায়হান আর কোনো উত্তর দিল না। ফেসবুককে বিশ্বাস নেই, ফেইক হতেই পারে। মেয়েটি রায়হানকে কোনো জ্বালাতন করে না। মাঝে মাঝে স্ট্যাটাসে কমান্ড করে। সপ্তাহে সাত দিনই প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করে। কখনও বিড়ালের ছবি কখনও বা গোলাপের ছবি। রায়হানের এসবে মাথাব্যথা নেই। যে যেভাবে হ্যাপি থাকে, তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া উচিত। তবু মাঝে মাঝে মেয়েটিকে কড়া কথা শোনাতে ইচ্ছা হয়।

নিজেকে বেশ আনলাকি মানুষ বলে মনে হয় রায়হানের। তার কারণ হলো, কাউকে সহজে মেনে নিতে পারে না ও। কোথায় যেন একটা দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। কেন এমন হয়? রোমানা এই প্রথম নিজ থেকে মেসেজ করল কেমন আছেন? রায়হান কোনো উত্তর দিল না। আপনি কি আমার ওপর বিরক্ত? রায়হান এবারও কোনো উত্তর দিল না। কিছু বলছেন না যে? তবু কোনো উত্তর নেই? আপনার আইডিটা কি হ্যাক হয়ে গেছে? এবার রায়হান উত্তর দিল, আমি কোনো ফেইক আইডির সঙ্গে চ্যাট করতে ইচ্ছুক নই। রোমানার মেসেজ অফ হয়ে গেল। মেয়েটির সঙ্গে এভাবে খারাপ ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে রায়হান। উত্তর মেলেনি প্রশ্নের।

সকালে ইনবক্স খুলতেই মেয়েটির একটা দীর্ঘ মেসেজ। এভাবে কাউকে ছোট করে দেখতে হয় না। আমি ফেইক আইডি হলেও মানুষ, নিশ্চয়ই আপনার শত্রু নই? নিচে আমার সেলফোন নম্বর দেওয়া আছে। জাস্টিফাই করতে পারেন। সকাল সকাল এমন মেসেজ দেখে অবাক হলো রায়হান। বেশ রাগী মেয়ে মনে হচ্ছে। নম্বরটা নিজের সেলফোনে উঠিয়ে কল করল। বেশ কয়েকবার কল হলো কেউ ধরল না। মনে মনে ভাবল, এটাও ফেইক নম্বর কি-না। শেষবার যখন কল করল তখন রিসিভ হলো। ওপাশে মিষ্টির রিনরিনে গলা, হ্যালো। আপনি রোমানা? জি। না মানে, আমি রায়হান। চিনেছি, ফেইক আইডি বিশেষজ্ঞ, তাই না। রোমানার কথায় হেসে উঠল রায়হান। এভাবেই শুরুটা। প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর ভালোলাগা। দু'জন দুই মেরুর মানুষ। রায়হান ঢাকায় আর রোমানা চট্টগ্রামে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল, রোমানা-রায়হান দেখা করবে। প্রথমে রোমানা দেখা করতে রাজি

হয়নি। পরে রায়হানের চাপে রাজি হয়। তারপর অপেক্ষা। দেখা করার ঠিক তিন দিন আগে রোমানা বলল, ইদানীং কেন যেন মনে হয় আমি খুব সুখী মানুষ। আর মানুষ যখন বেশি সুখে থাকে। তখনই তার ভেতর মৃত্যুর ভয় চলে আসে। চলো না একদিন আগে দেখা করি আমরা। না, যেদিন দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে সেদিনই দেখা করব। তার আগে যদি আমার কিছু হয়ে যায়। দূর পাগলি মেয়ে, কিছুই হবে না। সত্যি কিছু হবে না। হু সত্যি।

বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে রায়হান। আশপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল। জায়গা তো ঠিকই আছে, কিন্তু রোমানা আসছে না কেন?। হাতের ফুলগুলো বাতাসে শুকিয়ে যাচ্ছে। রোমানার মোবাইলে ফোন করতেই, ধরল এক ভদ্রমহিলা। সম্ভবত রোমানার মা, আমি কি রোমানার সঙ্গে কথা বলতে পারি? ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন। আপনি কিছু জানেন না? না। আপনি রোমানার কী হন। বন্ধু? রোমানা গতকাল রাতে মারা গেছে। মাঝে মাঝে ওর বুকে ব্যথা করত। হঠাৎ গতকাল ব্যথাটা তীব্রভাবে উঠলে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো গেল না। ভদ্রমহিলা কেঁদে ফেললেন। মনে পড়ে গেল রোমানার কথা, একটা দিন আগে দেখা করা যায় না। সত্যি দেখা হলো তাকে, আর কোনো দিন দেখতেও পারব না। মনটা হাহাকার করে উঠল রোমানার জন্য। যেখানে থাক ভালো থাক, এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
- See more at: http://bangla.samakal.net/2016/05/17/212637#sthash.0w6kbM9l.dpuf

আজ ১৬-৬-২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল এ

পাস করা ছেলেদের ছবি যেভাবে মিডিয়ায় আসবে
প্রতি বছরই ফল প্রকাশের পর মেয়েদের ছবি পত্রিকা এবং চ্যানেলগুলোয় আসে। এ ক্ষেত্রে ছেলেরা একেবারেই বঞ্চিত থাকে। কী করলে ছেলেদের ছবিও আসতে পারে, সেটাই জানিয়েছে সোহানুর রহমান অনন্ত

-ফটোগ্রাফারকে কুকুরের ভয় দেখিয়ে

১ম ছাত্র : ছবি তুলবেন কি-না বলেন, নইলে আমাদের পাগলু ডগি ছাইড়া দিলাম, কামড় দিলে কিন্তু আমগো দোষ নাই, ছো ছো ছো...!

ফটোগ্রাফার : ভাই ডর দেখায়েন না, আমি তো মেয়েদের ছবি তুলি না, কুত্তাটারে নিরাপদ দূরত্বে রাইখা পোজ দেন, ছবি তুলতাছি।

-ফেসবুক সেলিব্রেটি প্রস্তাব

১ম ছাত্র : কেউ আমার গাইরালা পেইজের অ্যাডমিন কিন্তু আমাদের ভাইব্রেদার, আপনারে ফেসবুক সেলিব্রেটি বানানো তো ওয়ান-টুর ব্যাপার।

ফটোগ্রাফার : আগে বলবেন না, আইজকা সারাদিন কেবল আপনাদের ছবিই তুলুম, আমার আইডি লিংকটা কেবল পেইজে শেয়ার দিয়েন।

- ১ম ছাত্র : আমি হইলাম ট্যাঙরা সামসু, তোর ক্যামেরায় যদি কোনো মাইয়া মানুষের ফটো দেখি তাইলে কিন্তু লেন্স আর তোরে তামাতামা কইরা দিমু।

ফটোগ্রাফার : আপনি কিচ্ছু চিন্তা কইরেন না ট্যাঙরা ভাই, দরকার হইলে আরও দু'জন ফটোগ্রাফার ভাড়া কইরা ছবি তুলুম। মোট কথা, বাদ যাবে না একটা ছেলেও।

-ছবি তোলা নিয়ে পত্রিকা অফিসের সামনে অনশন করা যেতে পারে

১ম ব্যক্তি : ছাত্র ভাইয়েরা, আপনারা তো ছবি দেওয়া নিয়ে আমরণ অনশন করতাছেন। তাইলে এমন খাওন উৎসব চলতাছে কেন?

ছাত্র : দূর বেকুব, আমরাই যদি না খেয়ে মরে যাই তাইলে ছবি কি ভূতের তুলবে! একটা শিঙ্গাড়া খাইয়া কাইট্টা পড়েন।

-টাকলু হয়ে সারপ্রাইজ দিন। পুরাই বিরল দৃশ্য!

ফটোগ্রাফার : এত এ পল্গাস পাওয়া টাকলু তো আমার দাদার জন্মেও দেখি নাই, পুরাই লুল হয়ে গেলাম।

ছাত্র : এইবার চিন্তা করেন, এই ছবি আপনার পেপারে ছাপা হলেই হিট খাইবো, কেবলার মতো দাঁড়াইয়া না থাইক্কা ছবি তুলেন।

০৯-০৫-২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল-এ

১০০% হালাল আজগুবি টি প স
সোহানুর রহমান অনন্ত

- ভাব নিতে চাইলে : যদি আপনি অতিমাত্রায় ভাব দেখাতে পছন্দ করেন, তাহলে যে কোনো সময় আপনার ভাব নিতে ইচ্ছে করতেই পারে। যদি ভাব নেওয়ার জন্য সামনে কাউকে না পান, তাহলে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করুন। ব্যস, দেখবেন কীভাবে আপনাকে স্যার স্যার করে কথা বলে। অতএব আপনি যা-ই হোন না কেন এখানে কিন্তু আপনার ভাব ডাবল হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ভাব ধরতেই পারেন।

-ফেসবুকে যেভাবে ফলোয়ার বাড়াবেন : প্রথমে আইডিটা কোনো সুন্দর মেয়ের নামে খুলুন, তারপর মিসরীয় কোনো মেয়ের পিক আপলোড করুন। আমাদের দেশে কিছু লুল ফেসবুক ইউজার আছে, এরা মেয়ের নাম দেখলেই লাইক মারতে থাকে। ব্যস, কয়েক দিনেই দেখবেন আপনার ফলোয়ার হাজার হাজার হয়ে গেছে। এবার নামটা এবং পিক চেঞ্জ করে রিয়েল জেন্ডারে আসুন।

-চাপা মারতে চাইলে : প্রথমে কাউকে হোটেলে নিয়ে খাওয়ান, ইচ্ছামতো খাওয়ান, না খাইতে চাইলেও খাওয়ান। খাওয়া শেষ হলে চাপা মারতে শুরু করুন। আপনার দাদা, কাকা এইডা-সেইডা ছিল। জানেন তো আমাদের কেউ খাওয়ালে তার সব কথাই আমরা হাসতে হাসতে বিশ্বাস করি। আশা করি, যাকে বলছেন তিনি মনোযোগ দিয়ে আপনার চাপা হজম করবে।

-প্রপ্রোজ করতে চাইলে : কোনো সুন্দরী মেয়েকে প্রপ্রোজ করার সময় অন্তত দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে প্রপ্রোজ করুন। ভাবছেন, কেন? আরে ভাই যদি মেয়েটির কাছে থাকেন তাহলে থাপ্পড় খেয়ে কানের নেটওয়ার্ক হারানোর আশঙ্কা আছে। তাই দুই হাত দূরে থাকলে অন্তত থাপ্পড় খাবেন না বলে আমরা বিশ্বাস করি।
http://bangla.samakal.net/2016/05/09/210905

০৯-০৫-২০১৬ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর রকরম্য-তে.......

টাকা ধার চাওয়ার একাল-সেকাল

বন্ধুদের টাকা ধার চাওয়ার সঙ্গে প্রেমের একটা সম্পর্ক রয়েছে। যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়মটা একই রয়েছে। জানাচ্ছেন— সোহানুর রহমান অনন্ত



২০০০ সাল : দোস্ত এলাকায় একটা নতুন পাখি আইছে। এক্কেরে পরীর মতো। তোর লগে হেব্বি মানাইবো। তুই বললেই একটা লেটার ডেলিভারি দিয়ে দিতে পারি। ওর ফ্যামিলির সবাইরে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। তবে কথা হইল কয়েক দিন ধরে পকেটটা মরুভূমি হয়ে গেছে, কিছু টাকা ধার দিয়ে মহান ব্যক্তির কাজটা কর বন্ধু।

২০০৫ সাল : দোস্ত, এক সুন্দরীর ফোন নম্বর আছে। তার কণ্ঠ তো পুরাই কোকিল। কুহু কুহু। চিন্তা করে দেখলাম তোর কণ্ঠও তো হেব্বি। তাই এইটা তোর সঙ্গে ভালো মানায়। নম্বরটা তোরে দিয়ে খাটি বন্ধুর পরিচয় দিতে চাই বন্ধু। কিন্তু কথা হইল আমার কিছু টাকা ধার লাগবে। কয়েক দিন পরেই দিয়ে দিমু, আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড, না করিস না।

২০১০ সাল : তোরে কেউ কিছু কইলে খালি বলবি, ধইনা ঝাড়া দিয়া দিমু। আমাগো এলাকার মেয়ে বিয়ের জন্য পছন্দ করেছিস, তোর তো এটা অধিকার, কোন হেল্প লাগবে বলবি। আমি তোর বন্ধু বুঝলি।

এই এলাকায় আমার ওপর কথা বলার কারও সাহস নাই। যাই হোক কিছু টাকা ধার দে, বহুত বেদনায় আছি টাকার অভাবে, সামনের মাসেই দিয়ে দিব।

২০১৫ সাল : তোরে ফেসবুক সেলিব্রেটি বানানোর দায়িত্ব আমার। ফেসবুকের সুন্দরী মেয়েরা তোর আইডির পেছনে লাইন ধরব। তুই কেবল চাইয়া চাইয়া দেখবি, লাইক ক্যামনে বৃষ্টির মতো পড়ে। ফলোয়ার ক্যামনে ঝড়ের গতিতে বেড়ে যায়। আমি থাকতে তোর কোনো ভরসা নাই। আসল কথা হইল বন্ধু, গালফ্রেন্ড নিয়া ঘুরতে যামু, তোর তো কিছু টাকা ধার দিতেই হবে।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/rokomari-rommo/2016/05/09/143637#sthash.ZYKqclUn.dpuf

২৭-৪-২০১৬ দৈনিক যুগান্তরে....লেখা অলংকরন দুটো আমার.... মনশহর
সোহানুর রহমান অনন্ত
মেয়েটিকে প্রায় দেখি নতুন বাজার থেকে বাসে উঠে মালিবাগ নেমে যায়। স্টুডেন্ট হাফ, তাই অর্ধেক ভাড়া নিয়ে মাঝে মাঝে হেলপারদের সাথে কথাকাটাকাটি হতো। যেহেতু এই সময়টাতে বাসে সীট পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। তারপরও আমি ঠেলেঠুলে পেয়ে যেতাম। মেয়েটি কখনো পেতো কখনো পেতো না। দাঁড়িয়ে থাকতো, কখনো সীট ছেড়ে দিতাম। কখনো ছাড়লেও বসতো না। কিভাবে যেন সময়টা মিলে যায়, মিলে যায় বাসে উঠার ব্যাপারটা। এই শহরে মানুষের যেমন অভাব নেই বাসেরও তেমন অভাব নেই। কত লোক উঠে কত লোক নামে তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু মেয়েটি কিভাবে যেন মনে আটকে গেছে।
একদিন মেয়েটির পাশের সীটি জায়গা পেলাম। বার বার কথা বলতে গিয়েও গিলে ফেলছিলাম। একটা অজানা ভয়ে আছি আমি। যদি অন্য কিছু মনে করে। মেয়েটি এক মনে মোবাইল ফোন চেপে যাচ্ছে। স্মার্ট ফোন। ফেইসবুক চালায় হয়তো। আমি টেরা চোখে তাকাই। মেয়েটি সম্ভবত আমার বিষয়টা আচ করতে পেরেছে। কিছু বলবেন, এমন তাকাচ্ছেন কেন? একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। ইয়ে মানে, মানে.. না কই কিছু না। মেয়েটি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন কোন চিড়িয়াখানার নতুন আমদানি করা প্রাণী দেখছে।
সেদিন বাসষ্ট্র্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, মেয়েটি আজ ফিরোজা কালার একটি সেলোয়ার কামিজ পড়েছে। কোন একটা কারণে বাস আজ একেবারে কম। রাজনৈতিক কোন ব্যাপার হতে পারে। যদিও মাঝে মাঝে দু’একটা আসছে, কিন্তু সেগুলোতে তিল ধরনের ঠাই নেই। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম মেয়েটির সাথে। এদিকে রাত তো বাড়ছেই। একটা প্রস্তাব মনের মধ্যে ঘুরপাক খেলো। যদিও সাহসের অভাবে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। অবশেষে আর দাঁড়িয়ে না থেকে মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম, আপনি তো মালিবাগ যাবেন, আমিও সেই দিকে যাবো। আপনি চাইলে একটা রিক্সা....। মেয়েটি এমনভাবে তাকালো যেন আমি বলে অন্যায় করে ফেলেছি। আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, সমস্যা নেই স্টুডেন্ট হাফ এটা আমি জানি। মেয়েটি বলল, আপনি কি আমাকে চেনেন?। জ্বি না, তবে প্রায় বাসে দেখি, পথও চেনা বলতে পারেন। মেয়েটির ভাব দেখে মনে হলো যে যেতে রাজী না। এভাবে কেটে গেলো আরো অনেকক্ষন। শুনুন, মেয়েটি বলল। জ্বি। একটু মুচকি হেসে বলল, ঠিক আছে রিক্সা নিন। আমি ্কিছুদূর এগিয়ে গেলাম। রিক্সাও চোখে পড়ছে না। অনেক কষ্টে একটা পাওয়া গেলো তাও আবার দিগুন ভাড়া। মেয়েটি আবার পাশে উঠে বসলো।
এমন সময় আচমকা বৃষ্টি শুরু হলো। তানিশা ছাতা মেলে ধরলো। একি ছাতার নীচে দু’জন। চোখের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পুরো শহর। ভিজছে মনের দেয়াল। তানিশার খুব কাছাকাছি আমি। আমার একপাশ ভিজে গেছে,তানিশারও। যেন একটি ফ্রেমে বাঁধা দুটো ছবি। রিক্সাওয়ালার অবস্থ্যা কাহিল, রাস্তায় পানি জমেছে তাই কষ্ট হচ্ছে তার । মালিবাগ আসতেই, আমি ভাড়া দেওয়ার আগেই তাণিশা ভাড়া দিয়ে দিলো। আরে স্টুডেন্ট হাফ তো, বললাম আমি। আজ ইচ্ছে করে ফুল দেবো এই বলে হেসে চলে গেলো তাণিশা।
এরপর অনেকবার তাণিশা আর আমি নতুন বাজার টু মালিবাগ জার্নি করেছি। খুব ভালো লাগতো মেয়েটিকে। কেন এত ভালো লাগতো জানি না। তাণিশা একটি ছেলেকে পছন্দ করতো। কথাটা শুনে এতটুকু হৃদয়ে কষ্ট লাগেনি। প্রকৃত ভালবাসার জন্য হৃদয়ে কষ্ট নয় ভালবাসাই থাকে। দিনক্ষন দেখে তাণিশা ওর পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে ফেললো। আজ আর নতুন বাজার তাণিশার জন্য আমি অপেক্ষা করি না। বৃষ্টিতে মনের দেয়াল ভিজতে দেইনা। মন শহরে দু’দিনের অতিথি তাণিশাকে মন থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
- See more at: http://www.jugantor.com/…/%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A6%B6%E0%A6…

18-4-2016 Daily somokal-er Pachall-e

বাঁশ

সম্প্রতি জানা গেছে, সরকারি অফিস নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ দেওয়া হয়েছে! চলুন জানা যাক, বাঁশ দিয়ে নতুন আর কী করা যায়। জানাচ্ছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

১ম ব্যক্তি : দিনদুপুরে পাগল হইছেন নাকি মিয়া, আমাকে আইক্কাওয়ালা বাঁশ দেখাচ্ছেন কেন?

২য় ব্যক্তি: এই বাঁশ হেবি্ব শক্ত। শুনলাম আজকাল অফিস নাকি রডের বদলে বাঁশ দিয়ে নির্মাণ হয়, তাই বাঁশ বিক্রি করতে চলে আসলাম।

শ্বশুর : জামাই বাবাজি, তুমি বাঁশ বাগান দেখে এমন দৌড় মারতাছো কেন? আমি তো ডরানের কিছু দেখতাছি না।

জামাই : আসলে আব্বা হইছে কী, আমগো অফিস বাঁশ দিয়ে নির্মিত তো, তাই বাঁশ বাগান দেখলেই কেমন জানি অফিস অফিস মনে হয়।

১ম ব্যক্তি : ওই মিয়া, আপনার ফ্ল্যাটে তো রডের বদলে বাঁশের ব্যবহার হইছে, এই বাড়ি তো মাথার ওপর ভেঙে পড়ব।

২য় ব্যক্তি : আগেই তো বলেছি স্যার, আমরা আপনাদের প্রকৃতির মাঝে রাখব, বাঁশ তো প্রকৃতির একটা অংশ স্যার।

১ম ব্যক্তি : ভাই, রডের ব্যবসা ছেড়ে হঠাৎ করে বাঁশের ব্যবসা শুরু করলেন?

২য় জন : এটা তো সহজ বিষয়, দেশে রডের চেয়ে বাঁশের ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়তাছে। তাই রড আউট বাঁশ ইন।

১ম ব্যক্তি : বাঁশ বাগানে সিসি ক্যামেরা লাগাইতাছেন কোন দুঃখে, এখানে কোনো গুপ্তধন আছে নাকি?

২য় ব্যক্তি : তার চেয়েও বেশি কিছু আছে। আজকাল নাকি রডের বদলে বাঁশ দিয়া বিল্ডিং বানাইতাছে, তাই ব্যাম্বো গার্ডেনে সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিলাম আর কি।

আজ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর রকরম্য-তে বৈশাখী আইডিয়া

বৈশাখী টিপস
সামনেই পয়লা বৈশাখ। এ দিনে প্রযোজ্য আপনার জন্য দরকারি কিছু টিপস্ নিয়ে গবেষণা করেছেন— সোহানুর রহমান অনন্ত

ভাব বাড়াতে : বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাবেন আর ভাব দেখাবেন না তা কি হয়। বাজার থেকে যদি বড় সাইজের একটা ইলিশ কিনেই ফেলেন তাহলে তো এক্সট্রা কিছু আপনাকে করতেই হবে।

গলার মালা কিনুন, তারপর সেটা ইলিশের গলায় পরিয়ে দিন। চাইলে ব্যান্ড পার্টি ভাড়া করতে পারেন। ব্যস যেদিক দিয়ে যাবেন সেখান দিয়ে আলামত সৃষ্টি হয়ে যাবে যে আপনি ইলিশ কেনার সাহস দেখিয়েছেন। এটা করতে পারলে এলাকায় আপনার ভাব বেড়ে যাবে।

বিয়ে করতে পারেন : পয়সা বাঁচাতে চাইলে বৈশাখেই বিয়ে করে ফেলুন। সবাইকে পোলাও মাংসের বদলে পান্তা দিয়ে খাওয়াতে পারবেন। সেই সঙ্গে উপহার হিসেবে ইলিশ তো পাবেনই। সুতরাং এখনই সময় বিয়ে করার। পুরো দেশ আপনার বিয়ে উদযাপন করবে।

কৃপণ হলে যা করবেন : আপনি যদি বিশুদ্ধ কৃপণ হন তাহলে আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো, ঘরের সামনে বড় একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে দিতে হবে যে, এ ঘরের সবাই অ্যালার্জি রোগী, সুতরাং আমরা ইলিশ বর্জন করেছি। দেখবেন কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশী আর ইলিশে ভাগ বসাতে আসবে না। ডু ফুর্তি। এবার ইলিশ খান।

ইভেন্ট খুলতে পারেন : যেহেতু এখন ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা পান্তা ভাতের মতোই হয়ে গেছে তাই আপনি ফেসবুকপ্রেমী হলে একটা ইভেন্ট খুলে ফেলুন। ইলিশ খাওয়ার পর কার কি প্রতিক্রিয়া, কার ডায়রিয়া হলো, কে চুলকাইতে চুলকাইতে আহত হলো। কে পান্তার দাম শুনে জ্ঞান হারালো ইত্যাদি সব আপডেট সেখানে থাকতে পারে।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/rokomari-rommo/2016/04/11/137929#sthash.17so759k.dpuf

আজ দৈনিক প্রথম আলোর রস আলোতে মিক্স আইডিয়া
আজকের ভোরের কাগজে

দ্বিধা

** সোহানুর রহমান অনন্ত **

ছাদের পশ্চিম দিকে দাঁড়িয়ে আছি, এখান থেকে চাঁদটাকে অনেক বড় দেখা যায়। হাতে কফির মগ, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে। কলির সঙ্গে আজো ঝগড়া করেছি। মেয়েটির সঙ্গে ঝগড়া করতে অদ্ভুত ভালো লাগে আমার। মানুষ তার সুখের মুহ‚র্তগুলো ডায়রিতে লিখে রাখে। আর আমি লিখে রাখি আমাদের ঝগড়ার মুহ‚র্তগুলো।

প্রতিবার ফোন করার আগে হাজারবার শপথ করি আর ঝগড়া করব না। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও শেষটা ঝগড়া দিয়েই শেষ হয় আমাদের। তারপর আবার ছোট্ট একটা এসএমএস। রাগগুলো বরফে পরিণত হয়। এসএমএসটা অবশ্য আমাকেই করতে হয়। একটু আগেও করেছি, এখন উত্তরের অপেক্ষা। পাশের বাড়ির মেয়েটি চুল আচড়াচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখা যায় সেই দৃশ্য। দুটো বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই অকারণেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।

মেয়েটি আমায় দেখলেই কিছুক্ষণের জন্য রোবট হয়ে যায়। তারপর সেই পুরনো অভ্যাস, পর্দাটা ফেলে নিজেকে আড়াল করে নেয়া। আমি ঠোঁট টিপে হাসি। ঠিক তখনি কলির ফোন আসে। রিসিভ করতেই কলি হেসে বলে,

-বিয়ের পর তো বউ দু’দিনও সংসার করবে না।

-কেন?।

-এমন ঝগড়াটে তুই।

-আমি তখন শান্ত কণ্ঠে বলি, আচ্ছা হাসলে সব মেয়েকেই তো সুন্দর লাগে, রাগলে কেমন লাগে একটু বলবি?

-কলি ভারী কণ্ঠে বলে কেমন আবার নিশ্চয় খারাপ লাগে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,

-নাহ লাগে না, সব হাসির মাঝে যেমন সৌন্দর্য নেই, তেমনি সব রাগের মধ্যে অসৌন্দর্য নেই। হিটলার মানুষ মেরে হাসতো, সেই হাসিতে কোনো সৌন্দর্য নেই।

-হয়েছে পণ্ডিত হতে হবে না তোকে। একটু আমার বাসার সামনে আসবি আমি বারান্দায় দাঁড়াব।

-এত রাতে! কেন?

-আজ ইচ্ছেমতো সাজুগুজু করেছি বলবি আমাকে কেমন লাগছে।

-পাগলি মেয়ে একটা, তোকে বনলতা সেনের অ্যাসিসটেন্টের মতো লাগছে। খুশি।

-তুই আবারো আমাকে পচালি…। কলি রাগ করে ফোন কেটে দিল। আমি হেসে খুন, ছেলেমানুষি আর গেল না ওর। খেয়াল করলাম সামনে পর্দার আড়াল থেকে মিষ্টি দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

২.

একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, মেয়েরা ভালোবাসতে অনেক সময় নেয় আর ঘৃণা করতে সময় নেয় একেবারে অল্প। অন্যদিকে ছেলেরা ভালোবাসতে অল্প সময় নেয় আর ঘৃণা করতে সময় নেয় অনেক। আমার বেলায় কি ঘটছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বাসার সামনে চায়ের দোকানটায় প্রায় বিকেলে আড্ডা দেই। আমাকে নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করে। একটা প্রেম করে দেখাতে পারলাম না সেই কারণে। এতে আমার কোনো আপসোস নেই…।

প্রেম হঠাৎ আসে…হঠাৎ হয়ে যায়। পাশের বাড়ির মেয়েটি আজ নীল শাড়ি পরে ছাদে উঠেছে। বন্ধুদের থেকে সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম। ঘরে গিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরে ছাদে উঠে দাঁড়ালাম। আমায় দেখে মেয়েটি মুখ টিপে হাসল, কারণটা বুঝতে একটু দেরি হলো। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে পাঞ্জাবি উল্টো পরে ফেলেছি। লজ্জায় আর দাঁড়াতে পারলাম না। তবে ছাদ থেকে নেমে আসার আগে একবার ফিরে তাকালাম। অসাধারণ লাগছে মেয়েটিকে, যেন রূপকথার কোনো রাজকন্যা, তবে কথাটা বলা হয়নি মেয়েটাকে।

৩.

আজ কলির বার্থডে। আজ কোনোভাবেই ঝগড়া করা যাবে না। ঝগড়া লেখা ডায়রিটা ওকে উপহার দেব। পড়ে নিশ্চয়ই আরো ক্ষেপে যাবে পাগলিটা। কলি ফোন করে জানিয়েছে রাইফেল স্কয়ারের সামনে অপেক্ষা করছে। একগুচ্ছ সাদা বেলি কিনে নিলাম, সঙ্গে এক বক্স চকলেট।

সাদা গোলাপ পাইনি, সাদা ফুল ওর খুব পছন্দ। আসার সময় বেশ কয়েকবার ছাদে উঠেছিলাম পাশের বাড়ির মেয়েটিকে দেখতে কিন্তু পাইনি। আচ্ছা মেয়েটিকে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি…। কলিকে কথাটা বলতে হবে ও হয়তো ব্যাপারটা বুঝবে। জ্যামে পড়ে আধা ঘণ্টার রাস্তা আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছালাম। আমাকে দেখেই কলি রাগে ফেটে পড়ল।

-তোর সঙ্গে কোনো কথা নেই।

-আমি কি সুপারম্যান নাকি যে উড়ে উড়ে আসব।

-আমি জানি না।

-তোকে রাগলে হলিউডের….

-নায়িকাদের মতো লাগে, তাই না।

-আরে না আমি তাই বলেছি নাকি…বললাম রাগলে তোকে হলিউডের লোকাল হিরোইনদের মতো লাগে।

-ইউ…। তুই আবার আমাকে পচালি। আমি হাসতে লাগলাম।

হঠাৎ খেয়াল হলো, কলির চোখে জল। দু’এক ফোঁটা হয়তো গাল বেয়ে পড়েছে। আমি আলতো করে মুছে দিলাম। বুকের বাম পাশটা কেমন যেন ছলাৎ করে উঠল। কলি অভিমানী কণ্ঠে বলল,

-তুই আমাকে সব সময় পচাস আমি কি দেখতে এত খারাপ?। হেসে বললাম-

-ভুল হয়ে গেছে রে…তুই এত সুন্দরী এতটা দিন তোর পাশে থেকেও বুঝতে পারিনি। আজ বুঝলাম, আর কখনো তোকে পচাব না, প্রমিজ। কলির মুখে মিষ্টি হাসি। কেন যেন আজ ওর হাসিটা অনেক বেশি ভালো লাগছে। তাহলে কি…? থাক মনের কিছু বুঝে নিতে হয়।

একটা সময় কলি চলে গেল। রেললাইনের পথ ধরে আমি হাঁটতে লাগলাম। মনে হাজারো প্রশ্ন, আমি কাকে ভালোবাসি…কাকে…পাশের বাড়ির মেয়েটিকে নাকি কলিকে? উত্তর মেলে না অদ্ভুত দ্বিধায় ভুগছি।

দৈনিক আমাদের সময়ের ঘটাংঘট পাতায়.... সময় থাকলে পড়তে পারেন গল্পটা.....

সূচনার চড়–ই বিকেল

সোহানুর রহমান অনন্তর গল্প

বারান্দায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে সূচনা। মেঘ দেখছে। মা বলেছেন মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়, তা একদিন বুঝিয়ে বলবেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা চড়–ই পাখি বারান্দা দিয়ে এসে ঢুকে পড়ল। সূচনা ভালো করে তাকিয়ে দেখল। বারান্দার ওপরের অংশে একটা পাইপের মতো দেখা যাচ্ছে। সেখানে চড়–ই পাখির বাসা। এটা আবার কবে হলো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে। মা টিভি দেখছিলেন। সূচনা গিয়ে বললÑ ‘মা, আমরা তো এ বাসায় ভাড়া থাকি, তাই না? মা মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

আমাদের তো অনেক টাকা ভাড়া দিতে হয়, তাই না?

হ্যাঁ, কেন মা?

তাহলে ওই চড়–ই পাখিগুলোর তো উচিত আমাদের সঙ্গে ভাড়া দেওয়া।

মা অবাক হয়ে বললেনÑ কোন চড়–ই পাখি?

ওই যে বারান্দায় যে চড়–ই থাকছে।

মেয়ের কথায় হেসে ওঠে মা। ওরা তো আর মানুষ না মা, যে ভাড়া দেবে।

নাহ, মাকে বোঝানো সম্ভব নয়, সূচনা নিজে বারান্দায় ছুটে যায়। একটা ছোট মইয়ের মতো আছে সেটা দিয়ে ওপরে ওঠে। পাইপের কাছে মুখ নিয়ে বলেÑ তোমরা কতদিন ধরে আছো? জলদি ভাড়া দাও। না দিলে এখানে থাকতে পারবে না। সূচনার কথায় চড়–ইগুলো ভয় পেয়ে গেল। তারা ছুটে পালাল। সূচনা দেখল, দুটো চড়–ই ছানা। ও আবার মায়ের কাছে ছুটে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে বললÑ মা জানো, ওদের দুটো ছানাও আছে। ওরাও কি কিছুদিন পর আমার মতো স্কুলে যাবে?

মা হেসে খুন মেয়ের কথা শুনে। হ্যাঁ রে, যাবেই তো।

সূচনা আবার বারান্দায় ছুটে যায়। ছানাদের বলেÑ তোমরা কি অ, আ বলতে পারো?

উত্তর না পেয়ে বললÑ বুঝেছি, পারো না। অবশ্য আমার মতো তো তোমাদের তো টিচার নেই। যা-ই হোক, আমিই তোমাদের পড়াব। তোমার আব্বুকে বলবে, তোমাকে খাতা-কলম কিনে দিতে।

মা মেয়ের কা- দেখে আর হাসে। সূচনা রোজ বিকেলে ছানাগুলো পড়ায়। এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। ছানাগুলো বড় হয়। ততদিনে সূচনাও নতুন স্কুলে ভর্তি হয়। একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখে ছানাগুলো আর নেই। হঠাৎ ওর চোখ চলে যায় পাশের পেয়ারা গাছের দিকে। দেখে, ছানাগুলো মায়ের সঙ্গে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে বেড়াচ্ছে। সূচনা অনেক ডাকল। কিন্তু শুনল না পাখিগুলো। এক সময় কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সূচনা দাঁড়িয়ে রইল একলা বারান্দায়। ওর চোখ দিয়ে তখন শেষ বিকেলের বৃষ্টি ঝড়ছে।

http://www.dainikamadershomoy.com/todays-paper/features/ghatangghat/8107/সূচনার-চড়–ই-বিকেল

আজ ৪-৪-২০১৬ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর রকমারি রম্যতে

খেলার সময় যে ভুলগুলো হতে পারে
সোহানুর রহমান অনন্ত

— খেলার সময় বাউন্ডারি হলেই হয়তো ক্রিকেটপ্রেমীরা চিক্কুর দিয়ে বলে উঠেন— ছক্কা আ-আ-আ। আপনি যদি ক্রিকেটঅজ্ঞ হন তাহলে এমন চিৎকার শুনে ভাবতে পারেন বাড়িতে বাড়িতে লুডু খেলার উৎসব চলছে। সুতরাং আশ-পাশে দু-একজন এমন ভুল করেই ফেলে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

— প্রিয় দল জিতে গেলে মিছিল হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাকে বিরোধী পক্ষের নির্বাচনী মিছিল ভেবে আপনার দৌড় মেরে ম্যানহোলে পড়ে হাত-পা ভাঙার দরকার নেই। কারণ পছন্দের টিম ম্যাচ জিতবে আর মিছিল হবে না এইটা তো হইতেই পারে না।

— সব ব্যাচেলরদের ঘরে তো আর টিভি থাকে না। তাই যাদের ঘরে টিভি নেই তারা অন্যের বাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি মেরে খেলা দেখতেই পারে। হঠাৎ করে এমন দৃশ্য দেখে ভাববেন না যে এখানে ডুবে ডুবে বুড়িগঙ্গার জল খাওয়া হচ্ছে। সুতরাং খেলা চলা অবস্থায় এমন উঁকি-ঝুঁকির ঘটনা ঘটতে পারে।

— আপনি যতই বিশুদ্ধ বেকুব হন না কেন খেলা চলা অবস্থায় যদি দেখেন পাশের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী মারামারি লেগে জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে। তাহলে সেটা প্রেমঘটিত ক্যাচাল ভেবে ভুল করবেন না। ক্যাচালটা টিভি রিমোটের দখল নেওয়া নিয়েও হতে পারে। যেহেতু টি-টোয়েন্টি খেলা বলে কথা।

— এই অবস্থায় রাস্তায় কাউকে মাঙ্কি টুপি পরে হাঁটতে দেখলে ভাববেন না শীত আবার এসে গেছে। কারণ খেলা নিয়ে অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে বাজি ধরে হারু পাটি হচ্ছে। সুতরাং চেহারা লুকাতে এমন দৃশ্য দেখা যাওয়াটা দোষের কিছু নয়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/rokomari-rommo/2016/04/04/136615#sthash.al2dAmis.dpuf


আজ ২২-০৩-২০১৬ দৈনিক কালের কণ্ঠের ঘোড়ার ডিম-এ নির্বাচনী আইডিয়া......

ইউপি নির্বাচন ধামাকা
এবারের ইউপি নির্বাচনে যা হতে পারে তা আগাম জানাচ্ছেন সোহানুর রহমান অনন্ত, এঁকেছেন মাসুম

প্রার্থীর উদ্দেশে মেরি মি কার্ড দেখাতে পারে

প্রথমজন : নেতা এমন কাতলা মাছের মতো চিৎ হয়ে পড়ল কেন?

দ্বিতীয়জন : এক মেয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে ‘মেরি মি প্রার্থী কাগু’ লেখা কাগজ ধরতেই নেতা খুশিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।



ভোটার ধরতে প্রার্থীর বাড়িতে ফ্রি ওয়াইফাই থাকতে পারে

প্রথম বন্ধু : পাবলিক সারাক্ষণ কেরামতের বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করে, মনে হয় ওরা ভোটটা তারেই দিব?

দ্বিতীয় বন্ধু : ওনার বাড়ির পাশে গেলেই ওয়াইফাই পাওয়া যায় তো, তাই।



একের ভোট দিতে পারে অন্যে

প্রার্থী : চাইলাম ভোট, দিলেন ফোন নম্বর, বিষয়টা কী?

দ্বিতীয়জন : প্রতিবার কেন্দ্রে গিয়া দেখি অন্য কেউ ভোট দিয়া দিছে, এইবার যদি কেউ আগে না দেয় তাইলে কল দিয়েন, খামাখা কষ্ট করে কেন্দ্রে যাওয়ার কী কাম।
- See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/ghorar-dim/2016/03/22/338681#sthash.sPPeKWAS.dpuf

আজ ২১-৩-২০১৬ দৈনিক প্রথম আলোর রস আলোতে
আজ ৭-২-২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল-এ মিনি রম্য................

আলাদিনের জিন ও কয়েকটি শিশু

সোহানুর রহমান অনন্ত

আলাদিনের জিন বার্থডে সেলিব্রেশন করতে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছে। হঠাৎ মধ্যরাতে তার চোখে পড়ল একদল বাচ্চা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সে তাদের সামনে গিয়ে বলল, 'ছোট্ট বন্ধু, তোমরা কেমন আছো?' বাচ্চাগুলো কেউ কোনো কথা বলল না। তাই দেখে জিন আবার বলল, 'বলো, তোমাদের কী চাই_ চকোলেট, খেলনা, নাকি হাওয়াই মিঠাই?'

বাচ্চারা এবারও কোনো কথা বলল না। জিন চিন্তিত মনে বলল, 'বুঝেছি, তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার সাইকেল প্রয়োজন।' একজন বাচ্চা বলল, 'তুমি কে?'

'আমি আলাদিনের জিন।'

বাচ্চাগুলো আবার চুপ হয়ে গেল। জিন দাঁত বের করে হেসে বলল, 'তোমরা কি পথ হারিয়ে ফেলেছ?' বাচ্চাগুলো একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল। ওদের মধ্যে বয়সে একটু বড় একটা বাচ্চা এসে বলল, 'না, আমরা পথ হারাইনি।'

জিন নিশ্চিত হয়ে বলল, 'তাহলে চলো, তোমাদের দ্রুত বাড়িতে পেঁৗছে দিই।' বাচ্চাগুলো ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। সে দৃশ্য দেখে জিন আরও অবাক হলো, 'তোমরা বাড়ি যাবে না?' সবাই একসঙ্গে বলল, 'না।'

'না কেন বলো তো? তোমরা কেন বাড়িতে যেতে চাও না?'

'বাড়ি যেতে আমাদের ভয় করে।' এবার সত্যি জিনের মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা হলো। বাচ্চাগুলো বলে কী! বাড়িতে যেতে ভয় করে, এটা আবার কেমন কথা হলো! জিন একটু ইজি হয়ে বলল, 'তোমাদের বাবা-মা চিন্তা করবে তোমাদের জন্য।' বয়সে বড় বাচ্চাটা সামনে এসে বলল, 'আমাদের ঘরে কোনো নিরাপত্তা নেই।'

'কী নেই?'

'নিরাপত্তা নেই, মানে আমরা ঘরে নিরাপদ না।'

'তোমরা ছোট মানুষ তাই বোঝো না, ঘরেই তো সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।'

'না, নিরাপদ না।'

'কেন নিরাপদ না?'

'কারণ বাসাতেই আমরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছি।'

'বুঝেছি, তোমাদের কোল ড্রিংকস প্রয়োজন। গরম পড়েছে তাই কী বলছ নিজেও বুঝতে পারছ না।' জিন ছু মন্তর দিয়ে একটা কোল্ড ড্রিংকস এনে ছেলেটির হাতে দিল। ছেলেটি রাগে-দুঃখে জিনের মুখের ওপর কোল্ড ড্রিংকস ছুড়ে মারল। তারপর সব শিশু একসঙ্গে চেঁচিয়ে বলল, 'আমাদের ঘরে চার দেয়ালের মধ্যেই আমাদের হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের মা-বাবাকেও আমরা আর নিরাপদ মনে করতে পারছি না!' এক সঙ্গে এতগুলো কণ্ঠ রাতের অন্ধকারে অনেক দূর পর্যন্ত প্রতিধ্বনি হলো।

ছোট্ট একটা ছেলে একটা পেপার কাটিং এনে জিনের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর ওরা সবাই জিনকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। জিন একমনে পড়ল নিউজগুলো। চোখে জল আসার মতো অবস্থা তার! সত্যি, মা-বাবার কাছেও সন্তান নিরাপদ নয়! অবিশ্বাস্য! তা ছাড়া কয়েকদিন আগেই বালুর নিচে পাওয়া গেছে কয়েকটি শিশুর লাশ। জিনের মনে পড়ে গেল সেই কথা।

সঙ্গে মনে পড়ল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার কথা। এসেছে নতুন শিশু; তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। কিন্তু কোথায় ছাড়বে, নিজের ঘরেই শিশুরা এখন আর নিরাপদ নয়! জিন পেছনে ফিরে তাকাল। ততক্ষণে বাচ্চাগুলো অনেক দূরে চলে গেছে। নিষ্পাপ শিশুদের ছায়াগুলোও যেন ভয় পাচ্ছিল।

জিনের চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো। সামনে তাকাতেই দেখল দলে দলে শিশুরা রাস্তার অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের চোখে-মুখে ভয়, হাজারো অজানা ভয়। শিশুদের এই অনিরাপদ দেশটিতে আর এক মিনিটও থাকল না আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের জিন। সেও উড়াল দিল। হ
- See more at: http://bangla.samakal.net/2016/03/07/197799#sthash.9WIU5hDE.dpuf

আজ ৭-২-২০১৬ দৈনিক সমকালের প্যাঁচআল-এ................

গরমে কার অবদান বেশি?
গরম তো প্রায় এসে গেছে। চলুন দেখে আসি, গরমে কার বেশি অবদান। আর এমনটা নিয়ে যদি কোনো পুরস্কার দেওয়া হতো, তাহলে তারা কে কী বক্তব্য দিত, সেটাই জানাচ্ছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

ফ্রিজ : বন্ধুগণ, আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমরা বারো মাসই সেবা প্রদান করে থাকি। যদিও শীতকালে আমাদের ব্যবহার কম হয়। কিন্তু গরমকালে তো আমরা দম ফেলার টাইমও পাই না। আমরা আছি বলেই ঠাণ্ডা পানি খেয়ে কলিজা ঠাণ্ডা করেন, স্বস্তি পান। নইলে আপনাদের কী যে হতো। সুতরাং গরমে আমার অবদান সবচেয়ে বেশি।

হাতপাখা : বলদ ফ্রিজ অমন চিক্কুর পাইরা লাভ নাই। তুমি তো আছো আরেকজনের ঘাড়ের ওপর। কারেন্ট না থাকলে তো নিজেই গরমে অজ্ঞান হয়ে পড়ো। আর আমাকে দেখছো। আমি গরম বাতাসকে কনভার্ট করে ঠাণ্ডা করি। আমার জন্য কোনো কারেন্টের প্রয়োজন হয় না। অতএব এই গরমে তোমার চেয়ে আমার অবদান অনেক বেশি।

লেবুর শরবত : বললেই হলো, আমাদের শাখা যদি প্রতিটি রাস্তার পাশে না থাকত, তাহলে কী হতো একবার ভেবে দেখুন। আমাদের দাম অল্প কিন্তু আমরা প্রচণ্ড গরমে কলিজা ঠাণ্ডা করে থাকি। মানুষ আমাদের খাওয়ার জন্য লাইন দেয়। শুধু মানুষ না, মশা-মাছিও লাইন মারে। এইবার চিন্তা কইরা দেখেন, আমাদের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে! অতএব এই গরমে আমাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি।

বিদ্যুৎ : তোমাদের কথা শুনলে হাসি পায়। গরমে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলাম আমি। আমি না থাকলে মানুষের মনে শান্তি থাকে না। আমার জন্যই তো ফ্রিজ, ফ্যান এগুলো চলতে পারে। এই গরমে আমার দেখা পাওয়া মানে, সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। তাই গরমে সবচেয়ে বেশি অবদান আমিই রাখি।

কুল পাউডার : কথা শুনে আর কী কইতাম! বিদ্যুৎ মিয়া, তুমি তো চোরের মতো পালিয়ে থাকো। তোমার অবদান হলো এক ঘণ্টার জন্য এসে ২ ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যাওয়া। আমার কথা সবাই জানে, আমি একদিকে যেমন ঠাণ্ডা রাখি অন্যদিকে গরমের ঘামের গন্ধটাকেও ছড়াতে দিই না। তাই অবদানটা তো আমারই বেশি হইলো।

এসি : চুপ থাকো চুলকাইন্না পাইডার! তোমরা চুলাচুলি করে যা ইচ্ছে তাই বলো। গরমে আমার চেয়ে বেশি অবদান কেউই রাখে না। অফিস, বাড়ি, সব জায়গায় আমার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আমি বন্ধ থাকলে তো মানুষের চিল্লাপাল্লা শুরু হইয়া যায়। সুতরাং চিক্কুর পাইরা কোনো লাভ নাই। আমিই বেস্ট!

পানি : গরমে যে আমার অবদান সবচেয়ে বেশি এটা তো সবাই জানে। বেশি গরম লাগলেই সবাই আমাদের দিয়ে গোসল করে ঠাণ্ডা হয়। আমাকে পান করে শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করে। যে যত লেকচারই মারুক না কেন, আমার অবদান কইলাম সবার চাইতে বেশি।

আইসক্রিম : সবার বকবক তো শুনলাম। এইবার আমারটা শোনো, আমি কি গরমে অবদানটা কম রাখি! আমি যেমন স্বাদযুক্ত তেমন ঠাণ্ডাও। গরমে ঠাণ্ডার পাশাপাশি মানুষের মনও ভালো করতে পারি। তাইলে আমার অবদানটাই বা কম কিসের!

http://bangla.samakal.net/2016/03/07/197790

৬-৩-২০১৬ দৈনিক ইত্তেফাকের ঠাট্টায়... রম্য.বিশুদ্ধ নারীপ্রীতি.....

বিশুদ্ধ নারীপ্রীতি

সোহানুর রহমান অনন্ত




আমার এক কাছের বন্ধু এসে বলল, ‘দোস্ত নতুন বিয়ে করেছিস, ভাবির হাতের রান্না খাওয়াবি না?’ কথাটা শুনে আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘বন্ধু, তোর ভাবি তো এখনো তেমন রান্না করতে শেখেনি, বরং আমরা কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিই।’ বন্ধু নাছোড়বান্দা। না, আমার বউয়ের হাতেই রান্না খাবে। কী আর করা, বিকেলে বন্ধুকে নিয়ে বাসায় এলাম। আমার বউকে বললাম, ‘আমার খুব কাছের বন্ধু তোমার হাতের রান্না খাবে বলে এসেছে।’ এতটুকু বলতেই বউ আমার রান্না করা নিয়ে বেশ এক্সসাইডেট হয়ে গেল। মেয়েরা এমনই, একটু প্রশংসা পাওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে। তারপর সেই রবীন্দ্রনাথের বাণী ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’, মানে মেকআপ নেওয়ার মতো বউ আমার রেসিপির সব বই রান্না ঘরে নিয়ে একটার পর একটা আইটেম রান্না করছে। এদিকে আমার বন্ধু বেচারার তো ক্ষুধায় পেটের মধ্যে ঠাডা পড়ার মতো অবস্থা। একটু পরপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ভাবি মনে হয় অনেক আইটেম করছে। মামুলি কিছু রান্না করলেই তো হতো।’ আমি হেসে জবাব দিলাম, ‘খাওয়াতে যখন চাইছে, তখন আর না করে কী লাভ। একটু অপেক্ষা কর, ঠিকই খাবার চলে আসবে।’ কিছুক্ষণ পর আমার বউ এসে বলল, ‘একটু দেরি হয়ে গেল, নাও সবাই বসে পড়।’ আমার বন্ধুটি হাত ধুয়ে খেতে বসে পড়ল। মুরগির তরকারি দিয়ে সাদা ভাত। প্রথম লোকমা মুখে দিতেই বেটা কেমন হ্যাং হয়ে গেল। বিষয়টা খেয়াল করে বললাম, ‘কোনো সমস্যা বন্ধু?’ বোধকরি বেচারা বিপদে পড়েই বলল, ‘কই না তো। খাবার তো ফ্যান্টাস্টিক ফাইন হইছে। ভাবির হাতে তো জাদু আছে।’ এই বলে বাকি ভাতটুকু গিলতে লাগল। বউ আমার ব্যাপক খুশি, বন্ধু রান্নার প্রশংসা করায়। আমি একটু মুরগির তরকারি টেস্ট করেই বুঝলাম কাম সারছে। তরকারি তো না যেন লবণের খনি। আমার বন্ধুটি কীভাবে যে বাকি রান্নাগুলো খেল সেটা ভাবতে গেলেও আমার মস্তিষ্কে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। খাওয়া শেষে আমায় বলল, ‘দোস্ত, মনে হয় দুই নম্বর সিগন্যাল হইছে, ওয়াসরুমটা কোনদিকে?’ দেখিয়ে দিলাম, কারণ এটাই আপাতত ওর স্থায়ী ঠিকানা। হলোও তাই, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বন্ধু মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হলো। বেচারাকে এরপর যতবার বলেছি, ‘চল, তোর ভাবী নতুন একটা রেসিপি করে তোকে খাওয়াবে।’ খেয়াল করেছি, ওর চোখে পেত্নী দেখার মতো আতঙ্কের ছাপ পড়েছে। খাওয়া তো দূরের কথা, আমার বাড়ির আশপাশে আর সে আসে না ভুল করেও।





সেদিন আবুলকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে যাচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য কয়েকটা প্যান্ট কিনব। লোকাল বাসে বসে আছি। এমন সময় একটা মেয়ে উঠল দৈনিক বাংলা থেকে। বন্ধু আমার তখন যায় যায় অবস্থা। আমাকে খোঁচা দিয়ে বলল, ‘তুই একটু দাঁড়িয়ে যা, মেয়েটি আমার পাশে বসুক।’ আমি রেগে বললাম, ‘দূর বেকুব, বন্ধুর চেয়ে অচেনা মেয়েটি বেশি আপন হয়ে গেল?’ বন্ধু আমার উপরের পকেটে একটা দশ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলল, ‘আর একটা কথাও বলিস না, ঘুষের কসম!’ বন্ধুর নারীপ্রীতির কারণেই আমাকে শেষ পর্যন্ত সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে যেতে হলো। আর মেয়েটি বসল আমার সিটে। মনে মনে আবুলকে দাড়ি-কমা ছাড়া গালি দিচ্ছি। বিধি বাম আবুলের জন্য, শাহবাগ যেতেই শুনলাম মেয়েটি ওয়াক... ওয়াক... করে উঠল; বাকি দৃশ্য দেখতে গিয়ে আমার নিজেরই মৃগী রোগ উঠে গেল! মেয়েটি আবুলের গায়ের উপর বমি করে দিয়েছে। বেচারা আবুল সিট থেকে উঠতে গিয়েও পারল না। পুরোই কার্টুন হয়ে বসে রইল। এমন অবস্থায় হাসব না কাঁদব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাস থেকে নেমে পাবলিক টয়লেটে ঢুকিয়ে বেটাকে পরিষ্কার করলাম। মার্কেটে যাওয়া ক্যানসেল, বন্ধুকে বুঝালাম নারীপ্রীতি আসলেই ভালো না। বুঝল কি না কে জানে। না বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। অনেক রাত করে বাড়ি ফেরার সময় দেখি, একজন বাড়ির পাশ দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। প্রথমে ভাবলাম চোর। আজকাল সুড়ঙ্গ খুড়ে ব্যাংক লুট হচ্ছে, বাড়িতেও নিশ্চয় লুটপাট চলতে পারে। পিছন দিক থেকে গিয়ে দিলাম কয়েকটা কিল বসিয়ে। পড়ে তাকিয়ে দেখি মঈন কাগু। ঘটনাক্রমে জানতে পারলাম, বউ শার্টে লম্বা চুল পেয়েছে তাই ঘরের দরজা বন্ধ। সেজন্যই মঈন কাগু সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। কয়েকটা সান্ত্বনার কথা বলে আমিও বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। মনে মনে ভাবলাম, নারীদের এত ভয় পাওয়ার কী আছে? সবই কপাল, নইলে এমন বেকুব পুরুষদের চেহারা আমার দেখতে হয়। ঘরে ঢুকতেই দেখি বউ আরাম করে সিরিয়াল দেখছে খাটে শুয়ে শুয়ে। আমাকে দেখেই বলল, ‘মশারি টানাও।’ আমি কিঞ্চিত্ বাঁকা হয়ে বললাম, ‘পারব না।’ এটা শোনার পর বউয়ের চেহারা এমন হলো যে আর একটু হলো বোম হয়ে ফেটেই যেত। রিমোটটা মাথায় পড়ার আগেই বললাম, ‘ইয়ে মানে আমিই তো টানাব, চিন্তা করো না তুমি।’ বুঝলাম, বিশুদ্ধ নারীপ্রীতি আমাকেও পেয়ে বসেছে। খামোখাই পাবলিকের দোষ দিই!





সবশের্ষ যে বন্ধুটির কথা বলব, ওর নাম সোহাগ। নারীদের কথা শুনলেই কেমন যেন বাংলা ছবির হিরো হিরো ভাব নেয়। সেদিন আমাকে এসে বলল, ‘দোস্ত কাজী অফিসে যেতে হবে।’

‘কেন?’

‘এক বান্ধবী বিয়ে করবে, আমরা সাক্ষী।’

‘পালিয়ে বিয়ে?’

‘হু।’

‘এইসব কেসে ঝামেলা হয়।’

‘দূর বেটা কীসের ঝামেলা, চল তো।’

গেলাম কাজী অফিসে। কবুল বলার কিছু আগেই জানতে পারলাম মেয়ের বাবা দলবল নিয়ে আসছে আমাদের প্যাঁদাতে। এই কথা শুনে কাজী বেটা জানালা বরাবর লাফ দিয়ে পালাল। মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আর আমিও দিলাম লাফ। কিন্তু আমার সেই বন্ধু রয়ে গেল অতিরিক্ত নারীপ্রীতি আছে বলে। পড়ে জানতে পাড়লাম প্যাঁদাতে নয়, তারা বিয়ে পড়াতেই এসেছিল। এবং কাউকে না পেয়ে আমার সেই বন্ধুটির সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হলো নতুন কাজী এনে। সবই নারীপ্রীতির কল্যাণে...

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/tahtta/2016/03/06/106122.html

৬-৩-২০১৬ দৈনিক ইত্তেফাকের ঠাট্টায়....টি ২০ আইডিয়া

এশিয়া কাপ ধামাকা



চলছে এশিয়া কাপ। চলুন দেখি, এর পাশাপাশি আর কী কী খেলা চলছে পাবলিকের মধ্যে। সঙ্গে আছেন সোহানুর রহমান অনন্ত ও কার্টুন এঁকেছেন রবিউল ইসলাম সুমন

ঘুমের মধ্যেও ছয় সেলিব্রেশন করলে এমন হতেই পারে—

কী ব্যাপার আবুল সাহেব, আপনার মাথায় এমন বড় সাইজের আলু হইল কেমতে, কাউরে গুঁতা মারছেন নাকি?

গতকাল রাইতে ঘুমের মইধ্যে ভুল করে ‘ছয়’ বলে চিক্কার মাইরা উঠতেই বউ রেগে রিমোট দিয়ে এমন বাড়ি দিল যে সাথে সাথে আলু ডেলিভারি হয়ে গেল!

টাইগার বাঁশ আনলিমিটেড চলছে

দোস্ত, তুই হুট করে বাঁশের ব্যবসা চালু করবি বলে চিন্তা করলি... ঘটনা তো কিছুই বুঝতাছি না?

টাইগাররা যেমনে বিপক্ষ দলকে বাঁশ দিতাছে তাতে এই ব্যবসা করলে রাতারাতি লাখপতি হওয়ার চান্স আছে বন্ধু।

সবাই কিন্তু খেলা দেখতে

যায় না

তোরা ফ্যামেলির সবাই তো খেলা দেখতে মাঠে যাস... নিশ্চয় তোরা খেলাপ্রেমী?

খেলা দেখতে যাই কে কইল, আমরা তো পাত্রী খুঁজতে যাই, আব্বার একটা ম্যারেজ মিডিয়া খুলার ইচ্ছা আছে কিনা।

চিক্কর শুনে কানে তুলা দিলে তো এমনই হবে

কন কি কাগু? আপনার ঘর থেইক্কা সব কিছু চোরে নিয়া গেছে আপনি কিছুই টের পেলেন না!

বদমাইশ পোলাপান ছয় হলেই যেমনে চিল্লাইয়া উঠে, তাই কানে তুলা দিয়া একটু ঘুমাইতে গেছিলাম, এই সুযোগে...

সিম্পল টিপস্

বিপক্ষ দলের ব্যটসম্যানরে কীভাবে সহজে আউট করা যায় বলে তুই মনে করিস?

এইটা তো খুবই ইজি, বলের উপর সানি লিওনের ছবিযুক্ত স্টিকার লাগাইয়া বল করলেই দেখবে কেমনে পানির মতো উইকেট পড়া শুরু করছে!

সেলফি রোগী

একটু আগে না দেখলাম তুই টিভির সামনে বসে খেলা দেখার ছবি আপলোড করলি, তাইলে আমার কাছে কোন টিম জিতল এটা জানতে চাস কেন?

খেলা দেখছি কে বলল, আমি তো টিভির সামনে সেলফি তুলছি, ফেসবুকে আপলোড করার জন্য!

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/tahtta/2016/03/06/106130.html

৫-৩-২০১৬ ভোরের কাগজে প্রকাশিত

কাগজের সংসার

** সোহানুর রহমান অনন্ত **

রেহান প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে নীল বেরিয়ে গেছে। আজো নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। তবে যাওয়ার আগে কয়েকটা কাজ করতে একদমই ভুল করে না নীল। ছোট ছোট চিরকুট লিখে দিয়ে যায়। মুখের কাছেই সেগুলো পড়ে থাকে রেহানের।

ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ব্রাশ করতে হবে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে হবে। তারপর কোন কালারের ড্রেস পরে অফিসে যাবে ইত্যাদি। একটা সময় রেহানের কাছে এসব পাগলামি মনে হলেও এখন অনেকটা ভালো লাগে।

ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার নীলকে অনেক ভোরে উঠে চলে যেতে হয়। রেহান অনেক রাত করে অফিস থেকে আসে তাই আর রিবক্ত করে না ডেকে। বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।

সামনা সামনি দুটো বাড়ি। সামনের বাড়িটার রং পেস্ট কালার। পেস্ট কালার নীলের খুব পছন্দ। রেহানের পছন্দ না, তবে নীলের সামনে বলে ওটাই ওর পছন্দ। বউকে কষ্ট দিতে চায় না, খুব ভালোবাসে। খবরের কাগজটা হাতে নিতেই নীলের ফোন-

-ঘুম ভেঙেছে আপনার?

-রাজ্য ছেড়ে রানী চলে গেলে, রাজার কি আর ঘুম থাকে।

-ও তাই! তো রানীর সঙ্গে উঠলেই তো পারেন।

-উঠতে চাই কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোর সাইজ এত বড় যে শেষই হয় না।

-হয়েছে জনাব ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও, টেবিলে সব দেয়া আছে, আমি রাখছি।

-আজ তাড়াতাড়ি চলে আসব, রেডি হয়ে থেক বাইরে যাব।

-সত্যি?

-এক হাজার একটা সত্যি।

একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ফোন রেখে দেয় নীল। রেহানের মনে পড়ে যায় পুরনো কথা, ঠিক পুরনোও বলা যায় না। এইতো বছর দুয়েক আগের কথা। রেহান অফিস থেকে ফিরছিল, ফাঁকা জায়গা বুঝে ছিনতাইকারীরা সব নিয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডেই যেন সব কিছু ঘটে যায় রেহানের সঙ্গে।

তারপর আবার সব নিশ্চুপ, ল্যাম্পের হলদে আলোয় রেহান নিজেকে একা আবিষ্কার করে। কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিল না। এমন সময় একটা রিকশা এসে থামে রেহানের পাশে। রিকশায় বসে আছে সুন্দরী একটি মেয়ে।

রেহানকে উদ্দেশ্য করেই বলল, দূর থেকে আমরা সব দেখেছি। আমরা বলতে মেয়েটি আর রিকশা চালক। খুব খারাপ একটা ব্যাপার ঘটে গেল আপনার সঙ্গে। রেহান একদম চুপ হয়ে ছিল। কারণ আজই সেলারি পেয়েছিল, বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে। তাছাড়া বাড়িতেও টাকা পাঠানোর প্রয়োজন ছিল।

সবই চলে গেছে কয়েক সেকেন্ডে। রেহানকে চুপ থাকতে দেখে, মেয়েটি আবার বলল, কোথায় যাবেন? কলতাবাজার, উত্তর দিল রেহান। আমিও সেই দিকে যাচ্ছি, চাইলে আপনি আমার সঙ্গে যেতে পারেন। রেহান হেসে বলল, আমি হেঁটে যেতে পারব। মেয়েটি এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল, জনাব অনেক দূরের পথ উঠে পড়ূন। রেহান উঠে পড়ল, কিছু করার নেই ওর কাছে। মাথার ওপর থেকে মস্ত বড় একটা চাঁদ আর পাশে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।

২.

রেহানকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি বলল, আমি জানি আপনি কি ভাবছেন? কী? আপনি ভাবছেন অচেনা-অজানা একটা ছেলেকে কেন রিকশায় তুলে নিলাম। আসলে আমি আপনাকে চোখের দেখায় চিনি। মানে? হ্যাঁ, আপনি প্রতিদিন জুতোর ফিতে বাঁধতে ভুলে যান এবং সেটা আমাদের স্কুলের সামনে এসে বাঁধেন। জানালা দিয়ে আমি দেখি, প্রায় দেখি বলতে পারেন। এক আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

বিস্ময়ে রেহান তাকায় মেয়েটির দিকে। প্রায় ওকে দেখে এই মেয়েটি। আজকের আগে ও নিজেও জানত না, এত সুন্দরী একটি মেয়ে আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছে ওর পাগলামিটাকে। কি নাম আপনার? নীল, আপনার? রেহান, পুরো নাম রেহান রাসুল। আরো কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল, সাউন্ডে আটকে আসছে। কোনো মেয়ের এতটা কাছে বসে কথা বলার অভিজ্ঞতা লাগে।

রেহানের সেটা নেই। নীল হয়তো বুঝেছিল ব্যাপারটা, ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল, নিন এটা আপনার দরকার। ঢকঢক করে গিলে খেল রেহান। হঠাৎ রিকশা ঝাঁকি খেতেই পানির বোতল কাৎ হয়ে পড়ল নীলের গায়ে। ব্যস, মুহ‚র্তে অনেকখানি ভিজে গেল। একসঙ্গে হেসে উঠল দু’জন। হাসল রাতের জোনাকিরা আর দল বেঁধে ছুটে যাওয়া মেঘগুলো।

৩.

তারপর পুরোটাই রোমান্টিক ইতিহাস। প্রতিদিন চোখাচোখি, ভালোলাগা, ভালোবাসা। বিয়েটাও হয়ে যায়, খুব তাড়াতাড়ি। দু’জনের কাগজের সংসারের দেড় বছর কেটে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেহান দ্রুত ফ্রেশ হতে চলে গেল। নাস্তা করার সময় নেই। নীল খাবারের পাশে কাগজে লিখে গেছে, নাস্তা কেমন হলো জানাবা। এই কমেন্টগুলো পড়তে ওর ভালো লাগে কিন্তু আজ আর কিছু লেখার সময় নেই। যাওয়ার সময় স্কুলের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়াল নীল নেই। প্রায় থাকে কিন্তু আজ নেই। রেহান দ্রুত অফিস চলে গেল। দুপুরে আর এল না, কে জানে নীল হয়তো সেজে বসেছিল ওর জন্য।

ফিরল ঠিক রাত সাড়ে ১১টায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে মস্ত বড় একটা তালার গায়ে লেখা, ছাদে আস। রেহান ছাদে চলে যায়। সেখানে নীল দাঁড়িয়ে আছে, পেছন থেকে রেহান গিয়ে বলল,

-স্যরি ভুলে গিয়েছিলাম, দুপুরে আসা উচিত ছিল। নীল চুপ হয়ে আছে। রেহান আবার বলল,

-কিছু হয়েছে? নীল রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

-তোমার কাছে একটা জিনিস চাই?

-বল কি চাও, কি দেব তোমায়?

-আমার পাশে বস, একটু চোখে চোখ রাখে, মিষ্টি করে একটু হাস। তোমার কাঁধে মাথা রেখে আমি আকাশের চাঁদটাকে একটু দেখি। পাগলি মেয়ে বটে, রেহান তাই করল। ধবধবে সাদা চাঁদটা যেন আরেকটা ভালোবাসা পৃথিবী, দেখা যায় ছোঁয়া যায় না।

৪.

খুব ভোরে দরজা নক করার শব্দে ঘুম গেল রেহানের। বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজার খুলে দিল, কয়েকজন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীলের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, বলে উঠল একজন। কিভাবে হলো? উত্তেজিত হয়ে জানতে চায় রেহান। একজন বলল, ট্রাক চাপা দিয়েছে। এই এলাকাতে ব্যাঙের ছাতার মতো বিল্ডিং গজে উঠছে। তাই সকাল-বিকেল বালু বোঝাই ট্রাক ঢুকছে বেপরোয়াভাবে।

ভয়ে রেহানের পুরো শরীর কাঁপছে। হাসপাতালে ঢুকতেই ডাক্তার বলল, আপনি ওনার হাসব্যান্ড? জ্বি? দেখুন পেশেন্টকে হাসাপাতালে আনার আগেই সে মারা গেছে। ট্রাক এমনভাবে চাপা দেয়ার পর হয়তো বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল, তখনই যদি কারো নজরে আসত কিছু একটা হতে পারত।

কিন্তু এত সকালে তো রাস্তায় তেমন একটা লোকজন থাকে না, স্যরি। এই বলে ডাক্তার চলে গেল। রেহান বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, সাদা কাফনে ঢাকা লাশটার দিকে। এতদিন যে সাদা কাগজে চিরকুট লিখে গেছে, আজ সে নিজেই একটা সাদা চিরকুট। খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে রেহানের। খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব।

৫.

দেয়াল জুড়ে অসংখ্য চিরকুট ঝুলে আছে, নীল তুমি ফিরে এস, আজ একসঙ্গে চাঁদ দেখব, দুপুরে তোমায় নিয়ে ঘুরতে যেতে আর ভুল করব না ইত্যাদি। রেহান প্রতিদিনই একটা করে সাদা চিরকুট লেখে আর দেয়ালে টানিয়ে দেয়। ভোরের আলো ফুটলেই তাকিয়ে থাকে সামনের বাড়িটার পেস্ট কালারের দিকে।

বিড় বিড় করে বলে, নীল তুমি ফিরে এসো… আর তোমায় ভোরের আলোয় একা যেতে দেব না। হয়তো নীল শুনছে সে কথাগুলো দূর নীলিমার মাঝে থেকে।

http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/03/05/78591.php