join facebook page

Wednesday, 28 September 2016

আজ দৈনিক যুগান্তরে

আজগুবি টিপস
দোকানদাররা মাঝে মাঝে কিছু আজগুবি কথা বলেন, যার যুক্তি দেখাতে গেলে ঘটবে অন্য ঘটনা। কী ঘটবে সেটাই জানতে নিচের বিষয়গুলো পড়ে ফেলুন। লিখেছেন

পানিতে চুবিয়ে ফেলুন
দোকানদার আপনাকে বলবে এটি কালার টিভি। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি আছে। সুতরাং আপনি টিভিটার কালার ওঠে কি না সেটা যাচাই করতে পানিতে চুবিয়ে দেখতে পারেন। বিক্রেতা কিছু বললে বলবেন, ক্রেতা হিসেবে যাচাই করে কেনা আপনার দায়িত্ব। তাছাড়া ওয়ারেন্টি তো আছেই।

ঘুমিয়ে পড়ুন
ফার্নিচার দোকানগুলোতে গেলে তারা নানা রকম কাঠের খাট দেখিয়ে বলবেন, এই খাটে আপনি আরামে ঘুমাতে পারবেন, মেরুদণ্ডও ভালো থাকবে। ব্যস, এবার আপনি কিছু না বলে শুয়ে পড়ুন এসির বাতাসে আরাম করে। এরপর দোকানি যখন বলবেন, কি ভাই, খাট কিনবেন না? তখন আপনি বলবেন, আগে ঘুমাইয়া টেরাই কইরা লই আপনি সত্যি বলছেন না মিথ্যা।

ফ্রি খেয়ে নিন
বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতি দোকানেই লেখা থাকে- আজ নগদ কাল বাকি। প্রথমে আপনাকে একটা দোকানে যেতে হবে তারপর এক এক করে সব জিনিস দেখুন। আজকাল দোকানগুলোতে ক্রেতার জন্য ভালোই খাবার বরাদ্দ থাকে। আরামে বসে যা দেবে খেয়ে নিন। এরপর যখন কিছু কেনার কথা বলবে, তখন আপনি বলবেন, পকেটের অবস্থা বেশি একটা ভালো না। কাল যেহেতু বাকি দেবেন কালই নেব। বাকি না নিলে আমার আবার এলার্জি বেড়ে যায়।

সম্পাদিত তামাশায় আমার লেখা


রহস্য পত্রিকা জুলাই ২০১৬ সংখ্যায়.. আমার প্রকাশিত লেখা.....
সমকালে আজ প্রকাশিত ঈদ নিয়ে গল্প আপাতত লেখা এবং অলংকরণ দুটোই আমার হাতে সময় থাকলে পড়তে পারেন........

গল্পের ওপারের মেয়েটি

সোহানুর রহমান অনন্ত

স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার গেলেই চেয়ারম্যানবাড়ি। আমার মায়ের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়বাড়ি সেটা। এর আগে কখনও আসা হয়নি। মাথায় হঠাৎ ভূত চাপল_ ঈদটা ঢাকার বাইরে করব। মাকে জানাতেই মন খারাপ করল। কারণ এতটুকু বয়সে আমি কখনও মাকে ছাড়া ঈদ করিনি। কিন্তু চিরকাল তো মানুষ একই নিয়মে চলতে পারে না। ঠিকানা দিয়ে বলল, ওখানে তোর কোনো অসুবিধা হবে না। দেড় ঘণ্টা লেটে ট্রেন স্টেশনে পেঁৗছেছে। একটা রিকশা নিয়ে কিছুদূর গেলাম তারপর হাঁটার পথ। দূরের কোথাও টিমটিম আলো জ্বলছে। একটা চায়ের দোকান দেখে জানতে চাইলাম, চেয়ারম্যানবাড়ি কোনদিকে? তিনি হাত উঁচু করে দেখিয়ে দিলেন। বাড়িটার কাছে যেতেই দেখি অল্প বয়সী এক মেয়ে হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা আলোয় তার চেহারা তেমন বোঝা যাচ্ছে না। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, আপনি ঢাকা থেকে এসেছেন? চমকে গেলাম আমি। গ্রামের মেয়েরা সাধারণরত আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।

প্রশ্নটা দ্বিতীয়বার করল আমাকে। হ্যাঁ। আমার পেছনে আসুন। আমি তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম। অনেক পুরনো বাড়ি। কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর একটা ঘরে ঢুকল। আমিও পেছনে ঢুকলাম। এক ভদ্রমহিলা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন, বসো বাবা। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বসলাম। তিনি বললেন, তোমার কষ্ট হয়নি তো আসতে? হেসে বললাম, না ঠিক...। মেয়েটা পাশের রুম থেকে এসে আমাকে এক গ্গ্নাস লেবুর শরবত দিল। তখনও ভালো করে দেখা হয়নি মেয়েটিকে। কথার পর্ব শেষে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়লাম। জানালা দিয়ে অসংখ্য জোনাকির সাথে সেই মিষ্টি ফুলের গন্ধটা এসে ঘরে ঢুকছিল।

গ্রামের মানুষ খুব দ্রুত ঘুম থেকে উঠে যায়। আমার ঘুম ভাঙল মিষ্টি রিনিঝিনি চুড়ির শব্দে। চোখ মেলতেই দেখি, একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। রাতের মেয়েটি, এতক্ষণে ভালো করে দেখলাম। এক কথায় সুন্দরী বলতে যা বোঝায়। মেয়েটির বয়স কম ভেবে ভুল করেছি। আসলে মেয়েটি একটু শর্ট। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মা ডাকছে। মেয়েটির প্রতিটি শব্দ কেন যেন আমার ইন্দ্রিয়ে শিহরণ তুলছিল! এক ফাঁকে মেয়েটির নাম জেনে গেলাম_ তৃষা। তারপর অসংখ্যবার চোখাচোখি। সারাদিন সবার সাথে কথা বললেও আমার কান একজনের হাসি আর পায়ের শব্দের দিকে জাগ্রত। কী অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছি আমি! তৃষা যেন একটু একটু করে আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিল। ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো দূর থেকে দেখে আমায়। এভাবে দিনের আলো নিভে যায় রাত আসে নেমে। আমার ঘরের পাশেই ছিল জানালা। আমি বালিশে হেলান দিয়ে একটা বই পড়ছিলাম। কেউ একজন জানালার ওপাশ থেকে বলল, শুনছেন? আর একটু হলে ভয়ে চিৎকার করে উঠতাম। তাকিয়ে দেখি তৃষা দাঁড়িয়ে। একটু হাতটা জানালার বাইরে দিন। আমি যেন ওর কথায় নিবেদিত। সাথে সাথে বাইরে হাত দিলে কয়েকটা গন্ধরাজ ফুল আমার হাতে দিয়ে চলে গেল। আমি কেবল শুনলাম ঝুমঝুম কাচের চুড়ির শব্দ।

এই বাড়িটার নামকরণ হয় মঞ্জু চেয়ারম্যানের নামে। তারপর কত সময় কেটে গেছে। এখন কেউ চেয়ারম্যান নয়, তবুও চেয়ারম্যানবাড়ি। এই কয়েক দিনে একটা জিনিস নিশ্চিত হলাম_ আমি তৃষার প্রেমে পড়ে গেছি। তৃষা যদিও আমাকে ওইভাবে সবুজ সংকেত দেয়নি, তবে দেবে_ এতে আশাবাদী। কিন্তু কথাটা মাকে বলব কীভাবে? ঠিক সেই মুহূর্তে তৃষার মা আমাকে ডাকলেন। ঘরে ঢুকতেই দেখি, কয়েকজন মুরুবি্ব বসে আছেন। তৃষার মা বললেন, উনারা তৃষাকে দেখতে এসেছে। কথাটা শুনে মুহূর্তেই থমকে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, বেশ তো। তা ছেলে আসেনি? এসেছে তো; ওই যে। একজন বয়স্ক লোককে দেখিয়ে বললেন তিনি। আমি পুরোপুরি হতবাক। লোকটার বয়স চলি্লশের কাছাকাছি। চুপচাপ শুনলাম। তৃষাকে সাজিয়ে নিয়ে আসা হলো। একবারের জন্যও তাকাইনি ওর দিকে। বিয়ের কথা পাকা_ ঈদের একদিন আগেই বিয়ে হবে। রাতে তৃষার মা আমাকে জানালেন, এর আগে তৃষার একটা বিয়ে হয়েছিল কিন্তু খোদা সইলেন না। সাপের কামড়ে মারা গেল ছয় মাসের মাথায়। তাই এই বয়স্ক লোকটার হাতেই মেয়েটাকে তুলে দিচ্ছি। অবাক হওয়ার কিছু নেই। গ্রামে এসব হয়। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, ওরা দেখে যাওয়ার পর থেকে তৃষা আর আমার সামনে আসছে না। কোথাও শুনছি না কাচের চুড়ির ঝুমঝুম শব্দ।

আজ রাতেই তৃষার বিয়ে। এই কয়েক দিন তৃষা আমার সামনে একেবারেই কম এসেছে। কোনো কথা বলেনি, সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে রেখেছে। চুপচাপ আমি ঘরের এক কোণে বসে আছি। জানালার পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়াল; তৃষা। আমাকে বলল, কিছু কথা আছে আপনার সাথে। একটু আসবেন? ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাঁদছে শ্রাবণের আকাশের মতো।

আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? অপ্রস্তুত হয়ে যাই আমি।

কী হলো?

আমিও আপনাকে ভালোবাসি। ভালো থাকবেন। একটা গন্ধরাজ ফুল আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। অপদার্থের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আটকাতে পারলাম না। রাত ১০টার শেষ ট্রেনে ঢাকায় চলে আসি। আর কখনও যাইনি ওখানে। শুকিয়ে যাওয়া সেই গন্ধরাজ ফুলটা আজও আছে আমার কাছে। এরপর ঈদ এসেছে কিন্তু তৃষা আর কখনও ফিরে আসেনি। ফিরবেও না কোনোদিন।

আজ সমকালের প্যাঁচআল-এ

এখনকার সময় যদি নিউটনের মাথায় আপেল পড়ত!
সোহানুর রহমান অনন্ত

-অনলাইন নিউজ : ব্রেকিং নিউজ, এইমাত্র পাওয়া খবরে জানা গেছে, নিউটনের চুলের ওপর ক্রাশ খেয়ে আপেলের সুইসাইড। কেমতে সুইসাইড খাইলো, আপেলের রঙ কেমন ছিল যাবতীয় তথ্য ভিডিওসহ না দেখলে চরম মিস করবেন। একমাত্র আমরাই প্রথম নিউটনের মুখোমুখি জানতে পেরেছি। তিনি কেন আপেল গাছের নিচে গিয়ে বসেছিলেন, পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। নয় তো দূরে গিয়ে মুড়ি খান।

-সরকারি দল : তাল গাছ, বেল গাছ থাকতে আপেল পড়ল কেন? এটা সাবেক বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে। কেউ গাছ ধরে নাড়া দিল কি-না খতিয়ে দেখে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা সবসময়ই আপনাদের পাশে থাকতে চাই কিন্তু সাবেক বিরোধী দলের জন্য সেটা মাঝে মধ্যে সম্ভব হয় না। তবে এবার আর কোনো চক্রান্তকে মেনে নেওয়া হবে না। আমরা নিউটনের পাশে আছি।

-সাবেক বিরোধী দল : এই সরকার সামান্য ফল নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। সব ঘটনা আপনারা জানেন বন্ধুগণ। আসলে এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না। সবকিছুতেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পরিণাম আজ নিউটন ভোগ করল। আমরা ক্ষমতায় এলে আপেল গাছ কেটে কলা গাছ লাগাব, মুলা গাছ লাগাব। আর একটা আপেলও কারও মাথায় পড়বে না- কথা দিলাম বন্ধুগণ।

-এরশাদ : আচ্ছা, আপেল গাছের নিচে উনি কি একা বসেছিলেন নাকি সঙ্গে কোনো নারীও ছিল! যদি একা বসে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে লোকটা বোকা। আর যদি সঙ্গে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বসেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি আমার মতোই বুদ্ধিমান!

-ফেসবুক ইউজার : নিউটনের মাথায় কীভাগে আপেল পড়ল? আপেল পড়ার সময় তিনি কোন দিকে তাকিয়ে ছিলেন? পড়তে হলে আমাদের পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গেই থাকুন। আছে এক্সকু্লসিভ ছবি। শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন ফ্রান্স।

-আপেল বিক্রেতা : কেমন যেন রহস্যের গন্ধ পাইতাছি। আমরা বসি লোকাল বাসের সিটে আর নিউটন গেছেন আপেল গাছের নিচে বসতে! আমার তো মনে হয় উনি আপেলে ফরমালিন মিশাইতে গেছেন। হে হে হে... আমরা যেমন মিশাই আর কি!

আজ দৈনিক ভোরের কাগজে ঈদ নিয়ে গল্প.......শনিবার, ২৫ জুন ২০১৬

অপূর্ণতা

** সোহানুর রহমান **

শহরে ঈদ আসে না, দালানের জন্য দেখা যায় না ঈদের খুশির চাঁদটাকে। ডায়রির পাতায় এসব লিখতে থাকে রেজা। গ্রাম থেকে এসেছে অনেক দিন হলো। ঢাকায় এসে কোনো চাকরি না পেয়ে শেষে শুরু করে হকারি। বাসে বাসে বিক্রি করে আদর্শলিপি বই। ব্যবসা খারাপ না, ভালোই দিনগুলো যাচ্ছে। টুনটুনির জন্য মনটা খুব পোড়ে। সেই ক্লাস সিক্স থেকে প্রেম তারপর কতশত সুখের স্মৃতি। অনেকটা বছর কেটে গেছে এরই মধ্যে। টুনটুনি অবশ্য ওর আসল নাম না রেজা ভালোবেসে ডাকে, ভালোলাগে তাই। ডায়রিতে আরো কিছু লিখতে যাচ্ছিল কিন্তু মাথায় আসছে না। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই বের হওয়া যাচ্ছে না। মায়ের জন্য এরই মধ্যে ঈদের শাড়ি কিনে ফেলেছে।

ঘরে অসুস্থ বাবা তার জন্যও কেনা হয়েছে লুঙ্গি, টুনটুনির জন্য কেনা হয়েছে মাথার ক্লিপ, চুড়ি ইত্যাদি। কেবল নিজের জন্যই কিছু কেনা হয়নি এখনো। জানালা দিয়ে আবার বাইরে তাকায়, আজ আর বের হতে পারবে কিনা সন্দেহ। পকেট থেকে বের করে টুনির চিঠিগুলো, এগুলো সব সময় ওর সঙ্গে থাকে। সুযোগ পেলেই পড়তে শুরু করে। আঁকাবাঁকা গ্রামের মেঠো পথের মতো হাতের লেখা। পিনআপ করা একটা স্ট্যাম্প সাইজ ছবিও আছে। সবকিছু পুরনো কিন্তু কথাগুলো যেন হৃদয়ে বাজে বিষের বাঁশির মতো।

২.

প্রতিদিন ফ্যাশন হাউসটার সামনে দিয়ে বাসায় ফিরতে হয় রেজাকে। ডলের গায়ে ঈদের বাহারি রঙের পোশাক। পাশাপাশি দুটো ডল, একটা মেয়ে একটা ছেলে যেন প্রেমিক-প্রেমিকা। রেজা হাসে, ভালোলাগে ওর কাছে। ডলের গায়ের জামাটার দাম কত সেটা নিয়ে টেনশনে ভোগে। এমন সুন্দর একটা জামা যদি টুনটুনি পড়ে, তাহলে কেমন লাগবে? গ্রামের মেয়েটি, কাজ করতে করতে যার শরীর ঘামে ভিজে যায়। রোদে জ্বলে কাপড়ের রঙ নষ্ট হয়ে যায়, সে হয়তো এতো দামি জামা কখনো পড়েনি। ইস যদি দিতে পারতাম তাহলে অনেক খুশি হতো। কিন্তু পকেটের কথা ভেবে আর দাম জিজ্ঞেস করা হয় না রেজার। হকারির কাজ কোনো বোনাস নেই, নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। কেবল টার্গেট পূরণ করতে পারলেই কিছু ইনকাম। মনের ইচ্ছে মনে রেখে কাজে যায় আবার ফিরে। দিনে দু’বার তাকায় জামাটার দিকে। এভাবেই দিন কাটে রাত আসে। ঈদও ক্রমে কাছে চলে আসে।

৩.

সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জামাটা কিনে রেজা। এবার বাড়িতে গিয়ে মাকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাবে টুনিদের বাড়িতে। আর শহরে ফিরবে না। এখানকার মানুষগুলোও কেমন ইট পাথরের। কেউ কারো প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ায় না গ্রামের মতো। মায়ের জন্য ঈদের কাপড় এবং বাবার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে। সন্ধ্যায় চলে যায় কমলাপুর স্টেশনে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। একজন লোক এসে রেজাকে বলল, টিকেট তো পাবে না। তবে চাইলে আমি তোমাকে ছাদে ব্যবস্থা করে দিতে পারি। এর আগে কখনো ট্রেনের ছাদে ওঠেনি রেজা। তবুও বাড়ি ফেরার ইচ্ছেটা ওকে বাধ্য করল। কিছু টাকা দিল লোকটাকে। তারপর সেই ব্যবস্থা করে ছাদে তুলে দিল। মাকে ফোন করে জানাল আসছে।

ট্রেন ছাড়ল দেড় ঘণ্টা লেটে। কেমন যেন একটু দুলছিল প্রথমে তারপর ঠিক হয়ে যায়। রেজা বসে থাকে অন্য সব মানুষের সঙ্গে। রাতের অন্ধকার চিরে চলছে ট্রেন। কেমন ঘুম ঘুম প্রায় রেজার, আবার জেগে ওঠে। ঘুমালে ঝুঁকি আছে ট্রেনের ছাদে। চোখে-মুখে অন্যরকম স্বপ্ন এইতো আর কয়েক ঘণ্টা। তারপরই বাবা-মা আর টুনিকে দেখবে সে। বিয়ে করে এবার সংসারী হবে। খেতে-খামারে কাজ করে সংসার চালাবে, টুনির সঙ্গে সুখে দিন কাটাবে। মনের আকাশ জুড়ে সেই সুখের তারাগুলোই যেন জ্বলে ওঠে বারবার। হঠাৎ ঝড় শুরু হয়, ভয়ঙ্কর ঝড়। রেজা আঁকড়ে ধরে থাকে অন্য মানুষদের হাত। বাতাস এতটাই জোরে বইছিল যে নিয়ন্ত্রণ রাখা বড় দায়। ভয়ে কয়েকজন চিৎকার করতে থাকে। রেজা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। হাতে থাকা ব্যাগটা ফসকে যায় সেটা ধরতে গিয়ে হঠাৎ পিছলে পড়ে যায় ট্রেনের ছাদ থেকে। কানে কেবল ভেসে আসে কিছু মানুষের চিৎকার আর ট্রেনের শব্দ। তারপর সব নিশ্চুপ।

৪.

রেজাদের বাড়ির পাশ দিয়েই ট্রেন যায় কিছুদূর গেলেই স্টেশন। রেজার মা ছেলের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে দরজার সামনে। বাবা একটু পর পর কাশি দিয়ে উঠে বলে, কই ছেলেটা এল?। টুনি কারণে-অকারণে ঘোরাফেরা করে রেজাদের বাড়ির আশপাশে কিন্তু রেজা আসে না। দিন ফুরিয়ে রাত হলো, আকাশে উঁকি দিলো ঈদের চাঁদ কিন্তু তার সোনামাণিক এখনো ফেরেনি ঘরে। রেজার মা তাকিয়ে থাকে পথের দিকে। কিন্তু রেজার মতো কেউ আসে না। অজানা ভয়ে তার চোখের কোণে জল চিকচিক করে। মনে প্রার্থনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ছেলের যেন কিছু না হয়। কয়েকটা জোনাক পোকা কেবল পথের এপাশ থেকে ওপাশে ছোটাছুটি করে। ঠিক সেই মুহ‚র্তে একটা লাশবাহী অ্যাম্বুলেস এসে ঢুকে রেজাদের বাড়িতে।