join facebook page

Wednesday, 16 December 2015

২৭-১০-২০১৫ দৈনিক সমকালের সুহৃদ-এ আমার গল্প

দ্বিতীয় প্রেম
সোহানুর রহমান অনন্ত

বৃষ্টি দেখলেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে। নাম না জানা মেয়ে, সেই আমার প্রথম প্রেম তবে শেষ নয়! আর প্রথম বলেই ভুলতে গেলেই গলায় কাঁটা বিধার মতো আঘাত করে। খুব সংক্ষেপ প্রেম... আমি তখন পুরান ঢাকার নবরায় লেনে থাকতাম। চাকরি করতাম পুরানা পল্টনে। আমার বাসা থেকে কিছু দূর হেঁটে গেলেই একটি পুরনো বাড়ি। প্রায়ই আমার অফিসে যাওয়ার পথে একটি মেয়ের সঙ্গে চোখাচখি হতো। সন্ধ্যার ছায়ায় যখন চার পাশ ঢুবে যেত আমি তখন মেয়েটিকে খুঁজে বেড়াতাম মায়া কাজলের দ্বীপের মতো। মনে আছে চতুর্থ দিন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রেমে পড়ে যাই। সেদিন বৃষ্টি ছিল। প্রেমে পড়লে মেয়েরা হয় লাজুক আর ছেলেরা হয় ভাবুক। আমিও ভাবুক কবি হয়ে যাই। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে সোজা চলে যাই শাহবাগে। একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে বাসায় ফিরি। মনে মনে ঠিক করলাম সকাল হলেই ভালোবাসার ফুল ফোটাব, আর চুপি চুপি নয়। মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা বলতে না পারলে বুক ফেটে মারা যাব। নির্ঘুম রাত কাটল। ভালোবাসায় পড়া যতটা সহজ ভালোবাসার কথা বলাটা ততটাই কঠিন। মনে হলো যেন অনেক কাল পর আমার জীবন সি্নগ্ধ একটা ভোর এলো। আজও আকাশ মেঘলা, শরতের আকাশ সাদা না হয়ে কালো হয়ে আছে। গোলাপগুলো হাতে বাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মেয়েটি তেমনি দাঁড়িয়ে আছে, বাসন্তী কালার সালোয়ার পরে। ব্যতিক্রম কেবল আজ কপালে বড় একটা টিপ আর চুলগুলো ছাড়া। মায়াবী চোখ দুটো যেন পুরুষদের ঘায়েল করার যন্ত্র। বাড়িতে ঢোকার মুখে পথ আগলে দাঁড়াল দারোয়ান। কোথায় যাচ্ছেন? ওপরে মানে ছাদে। ছাদে যাবেন মানে, এই বাড়িতে তো কেউ থাকে না। আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম, কী বলছেন যা-তা ছাদে একটা মেয়ে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে, আমি তার কাছে যাব। দারোয়ান হেসে বলল, সকাল সকাল নেশা-টেশা করেছেন নাকি? দশ বছর ধরে এ বাড়িতে কেউ বসবাস করে না। বিশ্বাস না হওয়ায় পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখলাম। তাহলে কী আমার চোখে ভুল? হাজারো উত্তরবিহীন প্রশ্ন মনের ভেতর। জীবনের প্রথম প্রেম হওয়ার আগেই ছ্যাঁকা খেয়ে বসলাম। একটা ভূতের প্রেমে পড়েছি বলে, বন্ধুরা হাসাহাসি করে। প্রথম প্রেমটা এখানেই শেষ, সেই মেয়েটির দেখা আর পাইনি। বন্ধুদের উপহাস আর প্রেমের দহন সহ্য করতে না পেরে পুরান ঢাকার বাসাটা ছেড়ে দিই। শেষবারের মতো তাকিয়ে ছিলাম বাড়িটির দিকে তবুও দেখা পাইনি, চোখের ভুল হলেও প্রেমটা ভুল ছিল না আমার।
--

২.
এখন গুলশানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। ভেবেছিলাম জীবনে আর প্রেম করব না। কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাব না। কিন্তু আজকাল একটা ব্যাপার লক্ষ করছি। সুন্দরী অফিস কলিগ তানিশা আমার দিকে আড়চোখে তাকায়। অকারণে কফির দাওয়াত দেয়। ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ট্যাগ দেয়, রাত জেগে প্রেমের কবিতা আমার ওয়ালে আপলোড করে। আমি নিশ্চুপ হয়ে থাকি, প্রেম যে মনে দোলা দেয়নি তা নয়, কিন্তু সাহস হচ্ছিল না। এক দিন তো কফি খেতে গিয়ে তানিশাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম, তোমার হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি। তানিশা হেসে বলল, অবশ্যই কিন্তু এমনভাবে বলছেন কেন?। কিছু বলিনি উত্তরে, তানিশা যে সত্যি মানুষ সেটাই জানার চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রেমে বুঝি পড়েই গেলাম। কিন্তু কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলছি না। সেদিন শরতের আকাশে মেঘ ছিল না, অফিস শেষ করে বের হতে যাব_ এমন সময় তানিশা এসে বলল, একা একাই তো বাইক চালিয়ে যাবেন আমাকে একটু বাড়িতে পেঁৗছে দিন সময় থাকলে। আমি হেসে বললাম, উঠে বসো। পথে একটি কথাও হয়নি, মাঝে মাঝে তানিশার স্পর্শটা শুকনো মরুতে সুনামির ঢেউ আনলেও মুহূর্তে তা মলিন হয়ে যাচ্ছে। গেটের সামনে যেতেই তানিশা আমার হাতে একটা নীল খাম ধরিয়ে দিল। জানতে চাইলাম ভেতরে কী আছে?। উত্তরে বলল, আপনি একটা ভিতুর ডিম, বাড়িতে গিয়ে খুলে দেখবেন, হতে পারে আমার বিয়ের কার্ড। তারপর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বাড়িতে চলে গেল। আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
৩.
জ্যোৎস্নামাখা রাত, খামটা খুলে দেখি, তাতে তাতে বড় করে লেখা আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন তবে ভিতুর মতো চুপ করে থাকবেন না। এই ফেসবুক, ই-মেইলের যুগে চিঠিতে প্রেম প্রস্তাব মন্দ লাগল না। আগে থেকেই রাজি ছিলাম এখন পুরোপুরি দ্বিতীয় প্রেমে হাবুডুব খাচ্ছি। তানিশাকে নিয়ে এক দিন পদ্মার চরে গেলাম ঘুরতে। কাশফুলের বনের আড়ালে পদ্মার কলকল জলের শব্দ। তানিশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে একটা কথা জানানো উচিত। কী?। কয়েক বছর আগে গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার পর আমার জীবনে একটা অ্যাকসিডেন্ট ঘটেছিল। আমি অতীত জানতে চাই না। তবুও আপনাকে জানতে হবে। আমাকে একটি ছেলে পছন্দ করে ফেলে। আমি না করায় সে তীব্র রেগে যায় এবং এক রাতে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি বিস্ময় নিয়ে বললাম তারপর?। তারপর আমার জীবনে কালরাত নেমে আসে, চলে পাশবিক নির্যাতন। অনেকবার ভেবেছি আত্মহত্যা করব কিন্তু সুন্দর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে কেন যেন যেতে ইচ্ছা করে না। আমি আপনাকে ঠকাতে চাই না। এখন আপনার ইচ্ছা, এখনও সময় আছে আপনি চাইলে নিজেকে আড়াল করে নিতে পারেন। লক্ষ করলাম তানিশার চোখে জল। দূরে কোনো গ্রাম থেকে কাঁসের ঘণ্টার শব্দ ভেসে আসছে। আমি তানিশার হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বললাম, আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। ভালোবাসার শেষ দিনটা তোমাকে নিয়েই কাটাতে চাই। এক ফালি রোদের মতোই তানিশার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সূর্যটা তখন লাল আভা ছড়িয়ে দিগন্তে হারিয়ে যাচ্ছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে তানিশা ঠিক সে দিকে তাকিয়ে রইল। আর আমার মনে ফুটতে লাগল অজস্র ভালোবাসার ফুল।
হ সুুহৃদ ঢাকা

No comments:

Post a Comment