join facebook page

Wednesday, 16 December 2015

১৮-১০-২০১৫ অবকাশে

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

সোহানুর রহমান অনন্ত

একটা সময় গ্রামের বাড়িগুলোতে কিংবা পথের পাশের তালগাছের দিকে লক্ষ করলেই চোখে পড়ত বাবুই
পাখির বাসা। সকাল থেকে সাঁঝের বেলা পর্যন্ত চলত
তাদের বাসা তৈরির কারুকাজ। ধরে নেয়া হয় যে বাবুই পাখির মতো করে এমন নিখুঁত বাসা তৈরির কাজ আর কোনো পাখি করতে পারে না। বৈচিত্র্যের দিক থেকে এই পাখির বাসা কেবল দৃষ্টিনন্দনই না, বরং আর্কিটেকচারাল দিক থেকেও নিখুঁত। বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে এর টিকে থাকার বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ার মতো। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটি পড়েননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না একটিওÑ
‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,
কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে...।’
কবির স্বাধীনতার সুখ কবিতাটি আজো উদাহরণ হিসেবে মানুষ ব্যবহার করলেও সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক নিদর্শনের বাসা।
গ্রামে এখন মাইলের পর মাইল হেঁটে গেলেও বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসা চোখে পড়ে না।
দিনে দিনে মানুষ বাড়লেও কমছে পশু-পাখির সংখ্যা। অসচেতনতা, পাখি শিকার এবং আবাসনব্যবস্থার
কারণে গাছ কেটে ফেলার কারণে গ্রামবাংলার
এই নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি আজ
বিলুপ্তির পথে।
বাবুই পাখিকে মূলত শিল্পীপাখি বলা হয়। এরা
আকারে ছোট হলেও খুব চতুর ও বুদ্ধিমত্তার সাথে
বাসা তৈরি করে। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু
তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরি করে বাবুই পাখিরা।
সে বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। প্রবল
ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাসা বানানো
জন্য খুবই পরিশ্রম করে এরা। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। এরপর উঁচু তালগাছ, নারিকেল বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে।
বাসা তৈরির অর্ধেক কাজ হলে কাক্সিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার দিন। কেননা তখন পুরুষ বাবুই মহা আনন্দে বিরামহীন কাজ করে।
স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সাথে সাথেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মওসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘরসংসার করতে পারে ছয় সঙ্গীর সঙ্গে, তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের না নেই।
স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা ছেড়ে উড়ে যায়।
বাবুই সাধারণত তিন প্রজাতির হয়ে থাকে, দেশী বাবুই (Ploceus philippinus), দাগি বাবুই (Ploceus manyar), বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis), তাও আজকাল দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এরা কেবল বাসা তৈরি করেই থেমে নেই। রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়।
বাবুই পাখি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। গ্রামের তালগাছের পাতায় পাতায় বাবুই পাখির বাসা ঝুলে না থাকলে যেন গ্রামের সৌন্দর্যই থাকে না। কিন্তু হালসময়ের চিত্র একেবারে ভিন্ন। বাবুই পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগ। কারণ বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু, রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। ফসলি জমিতে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগের কারণে বিপণœ পাখির তালিকায় উঠে এসেছে বাবুইয়ের নাম।
দিন দিন বাবুই পাখির সংখ্যা এতটাই কমে যাচ্ছে হয়তো অদূরভবিষ্যৎতে বাবুই পাখি চোখেই পড়বে না। তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য ধরে রাখতে আমাদের সচেতন হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক ঐক্য। পাখি শিকার এবং অকারণে গাছ কেটে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সচেতন হলে প্রকৃতির কোনো কিছুই আর হারিয়ে যাবে না। া
ংৎধহড়হঃড়লঁমধহঃড়ৎ@মসধরষ.পড়স

No comments:

Post a Comment