join facebook page

Wednesday, 16 December 2015

১৪-১২-২০১৫ দৈনিক সমকালের প্যাঁচালে

লাইফটা প্যাঁচময়!
এক বা একাধিক_ কোনটা থাকা ভালো, নাকি কিছু না থাকাই ভালো? তারই
কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা খুঁজতে চেষ্টা করেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

ষ গার্লফ্রেন্ড একটা থাকলে যা হয় : গার্লফ্রেন্ড যদি একটা থাকে তাহলে সারাক্ষণ ব্রেকআপ নিয়ে টেনশন। বন্ধুরা কথায় কথায় খোঁচা দিয়ে বলে, জীবনে একটারেই কেবল পটাইতে পারছস। মেয়েটা বেকুব বলেই তোর সঙ্গে প্রেম করে।
- একাধিক থাকলে : বেশি গার্লফ্রেন্ড থাকলে রিস্কের ওপর দিন কাটে। কখন কার সামনে কাকে নিয়ে ধরা খেতে হয় তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শেষে পাবলিক পেল্গসে চরিত্রের সনদপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই একাধিক প্রেম করলে ইজ্জত নিহত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
- না থাকলে : না থাকলেও ব্যাপক সমস্যা। বন্ধুরা খোঁটা দিয়ে বলবে, তুই মানুষ, না কলাগাছ? একটা মেয়েকে পটাতে পারলি না! তোরে বন্ধু কইতেও আমার ঘাড়ের রগ টান খায়!
- বউ চিল্লা-পাল্লা না করলে যা হয় : স্বামী মুখ ঝামটা মেরে বলে, 'তোমার মতো বেকুব মহিলা আমি জীবনেও দেখি নাই। পাশের বাড়ির ভাবি তোমার পোলারে কানমলা দিল আর তুমি কিছুই কইলা না। এমন ডরাইন্না মাইয়া মানুষ লইয়া সংসার করুম ক্যামতে!'
বেশি চিল্লা-পাল্লা করলে : স্বামী বলে, 'ওরে বাপরে! এইবার অন্তত গলার সাউন্ডটা কমাও। কানের তো লোডশেডিং হইয়া যাইতাছে। গলা যেন চায়না মোবাইলের স্পিকার। মেয়ে মানুষের এই এক দোষ, সারাক্ষণ চিক্কুর-বাক্কুর না দিলে ভালোই লাগে না।
-টাকা ধার না চইলে যা হয় : আরে বেটা শুধু একবার মুখ দিয়ে বলে দেখবি। টাকার বন্যা বসাইয়া দিমু। আমরা খান আলী খান বংশের পোলাপান। আগেও খান পেছনেও খান। আমগো কাছে টাকার অভাব আছে নাকি। খালি বলি না, তোরা চাপা মনে করবি_ এই কারণে।
- চাইলে যা হয় : তোর টাকা লাগব আগে বলবি না। আমি তো গতকালই সব টাকা বাপজানরে দিয়া দিলাম। তুই আসলেই একটা গাধা! সকালে বললেও তোরে টাকা দিতে পারতাম। টাকা কি আমগো কাছে কম আছে?
-ফেরত না দিলে যা হয় : তুই আমার বন্ধু হয়েও টাকাটা এমন ঘুরাইতাছস; আগে জানলে টাকা তো দূরের কথা, এক টাকার কয়েনও তোকে দিতাম না। তুই আসলেই একটা পল্টিবাজ।
- প্রশংসা করলে যা হয় : যদি বেশি প্রশংসা করেন তাহলে আপনার গার্লফ্রেন্ড বলবে, ছেলেরা এমনই হয়; বুঝছো। মেয়েদের ফাঁদে ফেলতে প্রশংসা করে। কী ভাবছো, আমি কিছু বুঝি না তাই না! এই ক্লাস বহুত আগেই পাস করে আসছি। আজাইরা প্রশংসা করা বাদ দাও।
-না করলে : তুমি মানুষ, না রোবট! এত সুন্দর করে সেজে আসলাম আর কোনো কমেন্টই করতাছো না। আসলে তোমার ভেতরে আমারে নিয়ে কোনো ফিলিংস নাই। তুমি একটা হনুমান!
- অন্য কারও করলে :তুমি আমার চেয়ে আমার বান্ধবীরে বেশি সুন্দরী বললা! এই জন্যই তো বলি, আমার বান্ধবীর সামনে গেলে তুমি এমন ট্যারা হয়ে যাও কেন! আসলে তোমার চরিত্র বলে কিছু নাই। আগে জানলে প্রেম তো দূরের কথা, তোমারে আমার বাড়ির কুত্তা দিয়া দৌড়ানি খাওয়াতাম। আজ থেইক্কা ব্রেকআপ!

৮-১২-২০১৫ দৈনিক কালের কণ্ঠের ঘোড়ার ডিম-এ

যেভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে
বিপিএলে ক্যামেরাম্যানরা গ্যালারির সুন্দরী মেয়েদেরই ক্যামেরায় ধরেন, অথচ মেয়েদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়েও ছেলেরা ক্যামেরায় নিজেদের মুখমণ্ডল দেখাতে পারে না। এই দুরবস্থা কাটিয়ে ছেলেরা কিভাবে টিভিতে নিজেদের চেহারা দেখাবে সে পদ্ধতি জানাচ্ছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

জন্মদিন সেলিব্রেশন

আপনার জন্মদিন হোক আর না হোক, গ্যালারিতে ঘটা করে জন্মদিন পালন করুন। চাইলে বড় সাইজের একটা কেকও নিতে পারেন। তারপর সেটা কেটে উৎসব করুন। গ্যালারিতে ঘটা এমন বিরল দৃশ্য ক্যামেরাম্যানরা না ধারণ করে পারবেনই না।



সেলিব্রিটি ভাড়া

যদি সম্ভব হয় একজন সেলিব্রিটি ভাড়া করুন মাঠে বসে খেলা দেখার জন্য। তারপর পাশাপাশি দুটো সিট নিয়ে বসে পড়ুন। দেখবেন সেলিব্রিটিকে ধারণ করতে গিয়ে আপনাকেও লাইভ টিভিতে দেখাচ্ছে।



ক্যামেরাম্যানকে ঘুষ

ক্যামেরাম্যানকে ঘুষ দিতে পারেন, কারণ আমাদের দেশে ঘুষে অনেক কিছুই হয়। দেখবেন কারণে-অকারণে আপনাকেই দেখাচ্ছে।



হারানো বিজ্ঞপ্তি



বুদ্ধি করে একটা কার্ডে লিখে ফেলুন, জয় উৎসব করতে গিয়ে আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে হারিয়ে গেছি। এত লোকের ভিড়ে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না, প্লিজ তাকে একটু খুঁজে বের করে দিন। ব্যস, এবার সেটাকে উঁচু করে ধরুন। আমি শিওর দিয়ে বলতে পারি, এমন দৃশ্য ক্যামেরাম্যানরা ধারণ করবেনই।



গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝগড়া

ইচ্ছা করেই গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিন। জানেনই তো মেয়েদের যে গলা, একবার ক্যামেরাম্যানের কান পর্যন্ত যেতে পারলে দেখবেন খেলা বাদ দিয়ে আপনাদের দেখানো শুরু করেছে। তখন আপনারাই হয়ে যাবেন টপ অব দ্য গ্যালারি।





অনেক টিকিট কেটে

একসঙ্গে অনেক টিকিট কেটে ফেলুন। যদিও খরচ একটু বেশি পড়বে, তার পরও লাভ আছে। এবার শুয়ে-বসে আরাম করে খেলা দেখুন। এমন শৌখিন দৃশ্য আশা করি কোনো ক্যামেরাম্যানই ছাড়তে চাইবেন না।



ম্যারি মি কার্ড

এত দিন ধরে মেয়েরাই কেবল খেলোয়াড়দের উদ্দেশে ‘ম্যারি মি’ কার্ড লিখে এনেছে। এবার আপনার পালা, মানে বড় করে গ্যালারির সুন্দরী মেয়েদের উদ্দেশে ‘ম্যারি মি’ কার্ড তুলে ধরুন। বুঝতেই পারছেন আপনি প্রথমবার এ কাজটি গ্যালারিতে করছেন, তাই ক্যামেরাম্যানরা তো মিস করবেনই না। ভাগ্য ভালো হলে সুন্দরী একজন পেয়েও যেতে পারেন।

০৮-১২-২০১৫ দৈনিক সমকালের সুহৃদ-এ

বাবা আর ফেরেনি
সোহানুর রহমান অনন্ত

ফিসফিস কথার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি, মা কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। আমি তখন বারো বছরের বালক। আকাশে ফুটফুটে চাঁদ, তার আলো ছড়িয়ে পড়েছে সব জায়গায়। চাদর মুড়ি দেওয়া একজন লোক দাঁড়িয়ে জানালার ওপাশে। আমি উঠে গেছি বুঝতে পেরে মা মুখে আঙুল দিয়ে শব্দ না করার জন্য বলল। বুঝতে পারলাম, ওপাশের মানুষটি আর কেউ নয়, আমার বাবা। মুহূর্তে সব ঘুম কোথায় যে হারিয়ে গেল বুঝতে পারিনি। ছুটে গেলাম মায়ের কাছে, ফিসফিস করে বললাম, বাবা। বাবা জানালা দিয়ে আমার গালে হাত রাখলেন, বাবা কাঁদছিলেন। বাবা এবার আমিও তোমার সঙ্গে যাব। আমার কথা শুনে বাবা বললেন, অবশ্যই বাবা আবার যখন আসব তোমাকে নিয়ে যাব। আমি রাগ হয়ে বললাম, আগেরবারও একই কথা বলেছ তুমি। বাবা কিছুই বললেন না। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমি তাকিয়ে ছিলাম বাবার চলে যাওয়ার দিকে। এক সময় বরই গাছটার ছায়ার আড়ালে বাবা হারিয়ে গেলেন। বাবার জন্য খুব খারাপ লাগছিল, মা কাঁদছিলেন নীরবে। কাছে কোথাও হু হু করে একটা হুতুম পেঁচা ডেকে উঠল।

২.
গ্রামের মানুষ ভয়ে পালাতে শুরু করেছে। যে কোনো সময় পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে হামলা করতে পারে। লোকমুখে শোনা যায়, আট মাইল দূরে লক্ষ্মীগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী সাধারণ গ্রামবাসীকে হত্যা করে পুরো গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমি সারাক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি। গ্রামটা থমথমে, কেউ খেলতেও আসে না সোনাদের মাঠে। শূন্য মাঠ, পথঘাট। বাজারে দোকানপাটও বন্ধ। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু অশিত কয়েক দিন আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে বর্ডার পার হয়ে কলকাতা চলে গেছে। বলেছে, যুদ্ধ থামলে আসবে। মায়ের বারণ থাকায় বাইরে যেতে পারছিলাম না। বন্দি পাখির মতো সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকতাম। এরই মধ্যে গ্রামে একদিন পাকিস্তানি বাহিনী সত্যি ঢুকে পড়ল। বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে মানুষ হত্যা করতে লাগল। বাঁচাও বাঁচাও বলে মানুষ যে যার মতো পালাতে লাগল। আমার হাত ধরে মাও নদীর দিকে ছুটে গিয়েছিল। বাঁচার চেষ্টা সবার মাঝে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, এই তো পেছন থেকে পাকিস্তানি বাহিনী এসে গুলি করে দেবে। নদীর পারে ধু-ধু বালু প্রান্তর। কাশঘেরা একটা জায়গায় আমরা লুকিয়ে পড়লাম। গ্রামের মধ্যে আগুন জ্বলছে, সঙ্গে আর্তনাদ। বাবার কথা তখন সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছিল। জানি না বাবা কোথায়?।
৩.
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নরম আলো এসে চোখের কোণে আঘাত করল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। পাশে মা জেগে আছেন। আমি মাকে বললাম, মা আমরা কোথায় যাব। মা বললেন, জানি না রে। তারপর নদীর পাড় ছুটে চললাম, তিন গ্রাম দূরে আমার নানাবাড়ি। সেখানে যেতেই দেখি তারা অনেক আগেই পালিয়ে গেছে। শূন্য বাড়ি, উঠান। পুরো গ্রাম শূন্য। ঠিক সে মুহূর্তে কী করা প্রয়োজন, মাথায় আসছিল না। মায়ের সঙ্গে হাঁটতে লাগলাম। কোথায় যাচ্ছি জানি না। কে জানি হয়তো যে মিলিটারির ভয়ে ছুটে চলছি তাদের সামনে গিয়েই পড়ব। যেমন কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। মা এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন, এমনিতেই মায়ের হাঁপানির সমস্যা ছিল। হাঁটতে পারছিলেন না। রাস্তার পাশে মা বসে পড়লেন। না খেয়ে মায়ের পাশেই পড়ে রইলাম। দিন কেটে রাত, আবার রাত কেটে দিন। কোথাও মানুষের দেখা নেই। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। মরলে এখানেই পড়ে মরব। এভাবেই মা আর আমার দিন কাটতে লাগল। রাতের খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মা'কে বললাম, বাবার সঙ্গে আর দেখা হবে না?। মা কাঁদতেন, কোনো উত্তর দিতে পারতেন না। জানি না বাবা কোথায় আছে, ভালো আছে কি-না।
৪.
অবশেষে অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এলো। নতুন এক ভোর এলো আমাদের জীবনে। মা ততদিনে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মানুষ ফিরতে শুরু করেছে তাদের ঘরবাড়িতে। গ্রামে ফিরে দেখি আমাদের ঘরটা আগের মতোই আছে। গ্রামে ফেরার তিন দিনের মাথায় মা মারা গেলেন। আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলাম। বাবার অপেক্ষায় আমার প্রতিটি সময় কাটতে লাগল। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি বাবাকে দেখেছে কি-না?। তারা দেখেনি বলে চলে যেত। অনেকেই ফিরে এলো, বাবা আর আসেনি। এখনও আমি বাবার অপেক্ষায় দিন পার করি, জানি না আমার বাবা কোথায় আছেন। তবুও বাবার জন্য অপেক্ষা করি, শুধু একটা কথা বলতে, বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
হ সুহৃদ ঢাকা

০৭-১২-২০১৫ দৈনিক সমকালের প্যাঁচালে
০৭-১২-২০১৫ দৈনিক সমকালের প্যাঁচালে
09-11-2015 Daily somokal-er pachall
ফেসবুকের প্রভাব
০১ নভেম্বর, ২০১৫ ইং
ফেসবুকের প্রভাব
l সোহানুর রহমান অনন্ত l



বিয়ের আগে ও পরে

বিয়ের আগে সময় পেলেই ফেসবুকে উঁকিঝুকি, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো। জীবনে কবিতা না লিখলেও, দু-এক লাইন কবিতা লেখা। রাতের ঘুম হারাম করে চ্যাট-বালিকাকে খোঁজা, আরও কত কী! বিয়ের পর, বউয়ের ফেস দেখেই তো জীবন শেষ ফেসবুকে আর বসার সময় কই? তারপরও বসলেই অমুক-তমুক স্ট্যাটাস—আজ বউ এটা রেঁধেছে, বউয়ের সাথে অমুক জায়গায় ঘুরতে গেলাম, মশারি টানানো নিয়ে ঝগড়া করলাম... আরও কত কী!



চাকরি পাওয়ার আগে ও পরে

সারাক্ষণই হতাশামাখা স্ট্যাটাস। পারলে দিনে দশবার সুইসাইড করে এমন নোট লেখা। চাকরি খুঁজতে খুঁজতে পায়ের জুতা শেষ, তার ছবি ফেসবুকে আপলোড দেওয়া ইত্যাদি। চাকরি পাওয়ার পড়ে অমুকের সাথে সেলফি, তমুকের সাথে ডিনার। আজ কাজ করতে করতে টায়ার্ড, হেনতেন কত কিছু যে সারাদিন ভরে দেয়।



প্রেমের আগে ও পরে

প্রেমের আগে সবকিছু শো করে রাখা। দিনভর সুন্দরী মেয়েদের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো। ওয়ালজুড়ে রোমান্টিক কবিতা, আর কথায় ভরে থাকা। মেয়েদের চ্যাটে দেখলেই হায়-হ্যালো করা। আর প্রেম হয়ে গেলে সবকিছু ‘অনলি মি’ করে ফেলা। বলা তো যায় না... কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যদি সাপ বের হয়ে যায়। তাই বিকল্প আইডি খুলে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।



ধার নেওয়ার আগে ও পরে

টাকা ধার নেওয়ার আগে পারলে বন্ধুকে মাথায় তুলে রাখা। দিনে চারবার বন্ধুর খোঁজখবর রাখা, ফেসবুকে বন্ধু আমার বন্ধু লিখে স্ট্যাটাস দেওয়া। সুযোগ পেলেই বন্ধুকে নিয়ে টঙের দোকানে চা, সিঙ্গারা খেতে বসে পড়া। তার সেলফিও আপলোড করা হয়। আর টাকা ধার নেওয়া হয়ে গেলে। বন্ধুর ছায়া দেখলেই জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। পারলে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা ফেসবুকে বন্ধুকে গালমন্দ করা। বন্ধুর আইডিকে ব্লক মেরে চুপচাপ ঝিম মেরে থাকা হয়।

গলি গলি মে চোর হ্যায়
l সোহানুর রহমান অনন্ত l

‘প্রেমের জন্য নাকি মানুষ সাত সাগর পারি দিতে পারে। আর তুমি সাধারণ হিন্দি ভাষাটা শিখতে পারবে না? এতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে—তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো!’ আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘আমি কুচকুচ হিন্দি ভাষা জানতা হুঁ। বাট বলতে কেমন চুলকানি লাগে।’ ‘চুলকানি লাগে না ছাই, তুমি একটা হনুমান। তোমার সাথে সম্পর্ক রাখাটাই বোকামি। আমার বান্ধবীর প্রেমিকরা কি সুন্দর হিন্দি ভাষায় চ্যাট করে, কথা বলে, ওহ নো। আজ থেকে নিয়মিত সিরিয়াল দেখবে, বুঝলে।’ ‘হু বুঝলাম।’ ‘আমি রাখছি... (টুট টুট টুট)।’

কান্তাকে নিয়ে বড্ড বিপদে পড়ে গেছি। মেয়েটা সারাদিন সিরিয়াল দেখে। সিরিয়ালে এতটা নেশাগ্রস্ত যে বাংলা কথা বলতে গেলে আজকাল ওর হাঁটু কাঁপে। যাই হোক, প্রেম টিকিয়ে রাখতে গেলে তো একটু ত্যাগ করতেই হবে। কিন্তু মেসে তো টিভি নেই, হিন্দি সিরিয়াল কোথায় দেখব? হঠাত্ জানালা দিয়ে চোখ যেতেই দেখলাম পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি হিন্দি সিরিয়াল দেখছেন। যাক বাবা ভালোই হলো, জানালা দিয়ে বসে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর ভাবি দাঁত-মুখ খিঁচে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওই মিয়া, তোমার মতলব তো ভালো মনে হচ্ছে না।’ আমি হেসে বললাম, ‘ইয়ে মানে ভাবি... হ্যাম তো থোরা হিন্দি সিরিয়াল দেখতাহু। আপনাকে বহাত আচ্ছা লাগতাছে।’ ভাবি আরও রেগে গিয়ে বললেন, ‘কী! আমার দিকে চোখ দেছ, ওই তুমি কই আছ, দেখো তোমার বউয়ের দিকে পাশের বাড়ির ব্যাচেলর পোলা নজর দিতাছে।’ তখনই পাশের রুম থেকে মোটা হাতির মতো একজন দৌড়ে এসে বললেন, ‘আইজকা ওর চোখে কাঠের চশমা পড়াইয়া দিমু, শালার (টুট টুট টুট) কই?’

আমি কোনোরকম জানালা বন্ধ করে বাসা থেকে পালালাম। কী যে করি, মাথায় ঢুকছে না। হঠাত্ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, আরে আমি হিন্দি ভাষার ওপর কোর্স করলেই তো কাম সাড়া। রাস্তার পাশে এদিক ওদিক তাকিয়ে কোর্স সেন্টার খুঁজতে লাগলাম। একজন আদমি এসে আমাকে বলল, ‘ভাই কিতা খুঁজেন?’ আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘হিন্দি ভাষা কোচিং।’ লোকটা বলল, ‘আছে তো, আমার লগে আসেন।’ লোকটার পেছন পেছন আমি যেতে লাগলাম। ঢাকায় এত ভদ্রলোক আছে চিন্তাই করা যায় না। লোকটা একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকিয়ে বলল, ‘ওস্তাদ, একটা ঠেলাগাড়ি পাইছি, হালায় অফসাইডে ঘুরতে ছিল।’ এমন সময় একজন মোটা তাড়া ভুঁড়িওয়ালা লোক এসে বলল, ‘কস কি! ওই বেটা, কী আছে বাইর কর? নইলে তোরে গুঁতা দিয়ে ওপরে পাঠাইয়া দিমু।’ আমি ভয় পেয়ে গেলাম। গলিতে কোচিং নয়, গালি গালি মে চোর হ্যায়! তাড়াতাড়ি মোবাইল, টাকা-পয়সা সব দিয়ে দিলাম। ‘এইবার দৌড় দে!’ আমি লোকটার কানে ফিসফিস করে বললাম, ‘ভাই প্রেম নিয়ে বড় যন্ত্রণায় আছি। আপনার তো সব পথ জানা আছে, কন তো হিন্দি ভাষা কোচিং কই পামু।’ ‘আবে হালায় কয় কী? কাইল্লা, ওরে একটা ফ্রি কিক মার তো।’ কোনোরকম দৌড়ে জান নিয়ে পালালাম।

বাসায় এসে দেখি রুমমেট সানি ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে বলল, ‘পাশের বাড়ির ভাবির স্বামী এসে উত্তম-মধ্যম দিয়েছে।’ বুঝতে পারলাম আমাকে না পেয়ে ঝড়টা সানির ওপর দিয়েই গেছে। হিন্দি সিরিয়ালের যন্ত্রণায় ‘লাইফ’টা ‘জীবন’ হয়ে যাচ্ছে!



২.

আমার এক বন্ধু এসে বলল, ‘দোস্ত আমি তো বেদনায় আছি।’ ‘কেন, কী হয়েছে?’ ‘আর বলিস না, তোর ভাবি সারাক্ষণ সিরিয়াল দেখে, সেদিন খেতে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে গরম ডাল প্লেটে না দিয়ে আমার হাতের ওপর ঢেলে দিয়েছে।’ ‘কস কী?’ ‘হু, বিপদে আছি বন্ধু।’

প্রমাণ দেখার জন্য বন্ধুর সাথে ওর বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি, ভাবি আরাম করে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। ঘরে ঢুকতেই পোড়া পোড়া গন্ধ নাকে এলো, মানে চুলার ওপর তরকারি পুড়ে শেষ। ঘটনা ভয়াবহ। আমি ভাবির কাছে গিয়ে বললাম, ‘ভাবি তরকারি মনে হয় পুড়ে যাচ্ছে। হুঁশ ফিরে পেল কি না কে জানে। কোনোরকম দৌড়ে গিয়ে চুলা বন্ধ করে আবার টিভির সামনে বসল। আমার বন্ধু এবার রেগে গিয়ে বলল, ‘সারাদিন বসে কেবল হিন্দি সিরিয়াল দেখো, তোমার বিরক্ত লাগে না?’ সাথে সাথে ঘরের মধ্যে ১৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেখা দিল। চোখের পলকে টিভির রিমোট গিয়ে পড়ল বন্ধুর মাথায়। ‘অ্যাঁ’ করার আগেই ভাবি কয়েকটা কিল ঘুষি মেরে বলল, ‘আমার সিরিয়াল দেখা নিয়ে খোঁচা দিচ্ছ না? আইজকা তোমার এক দিন আর আমার যে কয় বছর লাগে...’ আমি কোনোরকমে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পড়ে জান বাঁচিয়ে পালালাম। কিন্তু বাঁচতে আর পারলাম কই। বন্ধু এবার ধরে বসল, কিছু একটা বুদ্ধি বের করতে হবে আমাকেই। বুদ্ধি দিলাম—চোর দিয়ে টিভিটা চুরি করিয়ে ফেললেই কাম সারা। ব্যস দু’জন মিলে একজন চোর ঠিক করলাম। আমরা বাইরে পাহারা দেব আর চোর বেটা টিভি চুরি করবে। হিসেব মতো রাত দুটোর দিকে চোর ঢুকল চুরি করতে, এবার একটু শান্তি আসবে ঘরে। কিছুক্ষণ পর চোর টিভি নিয়ে এসে বলল, ‘ভাই, চলেন একটা সেলফি তুলি।’ ‘ধুর মিয়া, মশকারা কর।’ ‘না ভাই, এইটা হইলো অপারেশন সাকসেসফুল সেলিব্রেশন।’ বন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চল তুলি।’ চোর বেটা পকেট থেকে চায়না মোবাইল বের করল। তারপর সেটা চেপে ধরতেই এমন ফ্লাশ পড়ল যে আলোকিত হয়ে গেল আশপাশ। ঠিক তখন এলাকার নেড়িকুত্তাগুলো ঘেউ ঘেউ করে আমদের দিকে আসতে লাগল। চোর বেটা টিভি ফেলেই দৌড়, আমি আর বন্ধু দৌড়ে কোনোরকমে চৌদ্দটা ইঞ্জেকশন নেওয়া থেকে বাঁচলাম। এলাকার মধ্যে হইচই পড়ে গেছে—গলির মধ্যে এতক্ষণ চোর দাঁড়িয়েছিল! বন্ধুর নসিব খারাপ, টিভিটা আবারও ওর ঘরে গেছে। হিন্দি সিরিয়ালের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া হলো না। বড়ই পরিতাপ

ধৈর্য বাড়াতে হলে
০১ নভেম্বর, ২০১৫ ইং
ধৈর্য বাড়াতে হলে
আমাদের ধৈর্য নেই বললেই চলে তাই কি করলে ধৈর্য বাড়াতে পারবেন সেটাই জানাচ্ছে সোহানুর রহমান অনন্ত

পাবলিক টয়লেটে

লাইন ধরতে হবে

পাবলিক টললেট মানেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সকালবেলা পাবলিক টয়লেটের লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। লাইন যত বড় হবে ধৈর্যের ফল তত বৃদ্ধি পাবে। এতে আপনার ধৈর্য ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

বিটিভি দেখতে হবে

বিটিভি মানেই আজাইরা চিল্লা-পাল্লা, সরকারি ঢোল পেটানো। অমুক জায়গায় এত উন্নতি করেছে, তমুক জায়গায় সেটা করেছে, দেশ এখন লোডশেডিংমুক্ত ইত্যাদি। আপনার যদি হাই স্কেলের ধৈর্য না থাকে তাহলে বিটিভি আপনি দেখতেই পারবেন না। তাই আপনাকে বিটিভি দেখাতে হবে।

লোকাল বাসে চড়তে হবে

লোকাল বাসে, চিল্লা-পাল্লা, পায়ে পাড়া খেয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কোনোভাবে সিটে বসা যাবে না। প্রয়োজন বাদুরের মতো ঝুলে ঝুলে যেতে হবে। এখানেও ধৈর্যের পরিচয় পাওয়া যাবে।

প্রেমিকার সাথে শপিং করতে হবে

প্রেমিকার সাথে শপিংয়ে যাওয়া মানে বড় মাপের ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়া। প্রথমত কেনাকাটার ঝামেলা, দ্বিতীয়ত মানিব্যাগকে আত্মহত্যা করতে দেখা, তৃতীয়ত কেনা মালামাল আবার বহন করা। এইসব কি সম্ভব ধৈর্য না থাকলে? তাই আপনাকে শপিংয়ে গিয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে।

ফ্যান ছাড়া গরমে ঘুমাতে হবে

রাতে ঘুমাতে গেলে ফ্যান বন্ধ রেখে ঘুমাতে হবে। যত গরম পড়বে ধৈর্যের ফল তত ক্লিয়ার হবে। গরমের মধ্যে টিকে থাকতে পারলে। বুঝতে পারবেন আপনার ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সো, এটাও ধৈর্যের বড় প্রমাণ দেবে।

২৭-১০-২০১৫ দৈনিক সমকালের সুহৃদ-এ আমার গল্প

দ্বিতীয় প্রেম
সোহানুর রহমান অনন্ত

বৃষ্টি দেখলেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে। নাম না জানা মেয়ে, সেই আমার প্রথম প্রেম তবে শেষ নয়! আর প্রথম বলেই ভুলতে গেলেই গলায় কাঁটা বিধার মতো আঘাত করে। খুব সংক্ষেপ প্রেম... আমি তখন পুরান ঢাকার নবরায় লেনে থাকতাম। চাকরি করতাম পুরানা পল্টনে। আমার বাসা থেকে কিছু দূর হেঁটে গেলেই একটি পুরনো বাড়ি। প্রায়ই আমার অফিসে যাওয়ার পথে একটি মেয়ের সঙ্গে চোখাচখি হতো। সন্ধ্যার ছায়ায় যখন চার পাশ ঢুবে যেত আমি তখন মেয়েটিকে খুঁজে বেড়াতাম মায়া কাজলের দ্বীপের মতো। মনে আছে চতুর্থ দিন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রেমে পড়ে যাই। সেদিন বৃষ্টি ছিল। প্রেমে পড়লে মেয়েরা হয় লাজুক আর ছেলেরা হয় ভাবুক। আমিও ভাবুক কবি হয়ে যাই। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে সোজা চলে যাই শাহবাগে। একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে বাসায় ফিরি। মনে মনে ঠিক করলাম সকাল হলেই ভালোবাসার ফুল ফোটাব, আর চুপি চুপি নয়। মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা বলতে না পারলে বুক ফেটে মারা যাব। নির্ঘুম রাত কাটল। ভালোবাসায় পড়া যতটা সহজ ভালোবাসার কথা বলাটা ততটাই কঠিন। মনে হলো যেন অনেক কাল পর আমার জীবন সি্নগ্ধ একটা ভোর এলো। আজও আকাশ মেঘলা, শরতের আকাশ সাদা না হয়ে কালো হয়ে আছে। গোলাপগুলো হাতে বাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মেয়েটি তেমনি দাঁড়িয়ে আছে, বাসন্তী কালার সালোয়ার পরে। ব্যতিক্রম কেবল আজ কপালে বড় একটা টিপ আর চুলগুলো ছাড়া। মায়াবী চোখ দুটো যেন পুরুষদের ঘায়েল করার যন্ত্র। বাড়িতে ঢোকার মুখে পথ আগলে দাঁড়াল দারোয়ান। কোথায় যাচ্ছেন? ওপরে মানে ছাদে। ছাদে যাবেন মানে, এই বাড়িতে তো কেউ থাকে না। আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম, কী বলছেন যা-তা ছাদে একটা মেয়ে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে, আমি তার কাছে যাব। দারোয়ান হেসে বলল, সকাল সকাল নেশা-টেশা করেছেন নাকি? দশ বছর ধরে এ বাড়িতে কেউ বসবাস করে না। বিশ্বাস না হওয়ায় পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখলাম। তাহলে কী আমার চোখে ভুল? হাজারো উত্তরবিহীন প্রশ্ন মনের ভেতর। জীবনের প্রথম প্রেম হওয়ার আগেই ছ্যাঁকা খেয়ে বসলাম। একটা ভূতের প্রেমে পড়েছি বলে, বন্ধুরা হাসাহাসি করে। প্রথম প্রেমটা এখানেই শেষ, সেই মেয়েটির দেখা আর পাইনি। বন্ধুদের উপহাস আর প্রেমের দহন সহ্য করতে না পেরে পুরান ঢাকার বাসাটা ছেড়ে দিই। শেষবারের মতো তাকিয়ে ছিলাম বাড়িটির দিকে তবুও দেখা পাইনি, চোখের ভুল হলেও প্রেমটা ভুল ছিল না আমার।
--

২.
এখন গুলশানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। ভেবেছিলাম জীবনে আর প্রেম করব না। কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাব না। কিন্তু আজকাল একটা ব্যাপার লক্ষ করছি। সুন্দরী অফিস কলিগ তানিশা আমার দিকে আড়চোখে তাকায়। অকারণে কফির দাওয়াত দেয়। ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ট্যাগ দেয়, রাত জেগে প্রেমের কবিতা আমার ওয়ালে আপলোড করে। আমি নিশ্চুপ হয়ে থাকি, প্রেম যে মনে দোলা দেয়নি তা নয়, কিন্তু সাহস হচ্ছিল না। এক দিন তো কফি খেতে গিয়ে তানিশাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম, তোমার হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি। তানিশা হেসে বলল, অবশ্যই কিন্তু এমনভাবে বলছেন কেন?। কিছু বলিনি উত্তরে, তানিশা যে সত্যি মানুষ সেটাই জানার চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রেমে বুঝি পড়েই গেলাম। কিন্তু কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলছি না। সেদিন শরতের আকাশে মেঘ ছিল না, অফিস শেষ করে বের হতে যাব_ এমন সময় তানিশা এসে বলল, একা একাই তো বাইক চালিয়ে যাবেন আমাকে একটু বাড়িতে পেঁৗছে দিন সময় থাকলে। আমি হেসে বললাম, উঠে বসো। পথে একটি কথাও হয়নি, মাঝে মাঝে তানিশার স্পর্শটা শুকনো মরুতে সুনামির ঢেউ আনলেও মুহূর্তে তা মলিন হয়ে যাচ্ছে। গেটের সামনে যেতেই তানিশা আমার হাতে একটা নীল খাম ধরিয়ে দিল। জানতে চাইলাম ভেতরে কী আছে?। উত্তরে বলল, আপনি একটা ভিতুর ডিম, বাড়িতে গিয়ে খুলে দেখবেন, হতে পারে আমার বিয়ের কার্ড। তারপর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বাড়িতে চলে গেল। আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
৩.
জ্যোৎস্নামাখা রাত, খামটা খুলে দেখি, তাতে তাতে বড় করে লেখা আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন তবে ভিতুর মতো চুপ করে থাকবেন না। এই ফেসবুক, ই-মেইলের যুগে চিঠিতে প্রেম প্রস্তাব মন্দ লাগল না। আগে থেকেই রাজি ছিলাম এখন পুরোপুরি দ্বিতীয় প্রেমে হাবুডুব খাচ্ছি। তানিশাকে নিয়ে এক দিন পদ্মার চরে গেলাম ঘুরতে। কাশফুলের বনের আড়ালে পদ্মার কলকল জলের শব্দ। তানিশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে একটা কথা জানানো উচিত। কী?। কয়েক বছর আগে গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার পর আমার জীবনে একটা অ্যাকসিডেন্ট ঘটেছিল। আমি অতীত জানতে চাই না। তবুও আপনাকে জানতে হবে। আমাকে একটি ছেলে পছন্দ করে ফেলে। আমি না করায় সে তীব্র রেগে যায় এবং এক রাতে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি বিস্ময় নিয়ে বললাম তারপর?। তারপর আমার জীবনে কালরাত নেমে আসে, চলে পাশবিক নির্যাতন। অনেকবার ভেবেছি আত্মহত্যা করব কিন্তু সুন্দর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে কেন যেন যেতে ইচ্ছা করে না। আমি আপনাকে ঠকাতে চাই না। এখন আপনার ইচ্ছা, এখনও সময় আছে আপনি চাইলে নিজেকে আড়াল করে নিতে পারেন। লক্ষ করলাম তানিশার চোখে জল। দূরে কোনো গ্রাম থেকে কাঁসের ঘণ্টার শব্দ ভেসে আসছে। আমি তানিশার হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বললাম, আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। ভালোবাসার শেষ দিনটা তোমাকে নিয়েই কাটাতে চাই। এক ফালি রোদের মতোই তানিশার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সূর্যটা তখন লাল আভা ছড়িয়ে দিগন্তে হারিয়ে যাচ্ছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে তানিশা ঠিক সে দিকে তাকিয়ে রইল। আর আমার মনে ফুটতে লাগল অজস্র ভালোবাসার ফুল।
হ সুুহৃদ ঢাকা

২৬-১০-২০১৫ বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর রকমারি রম্যতে>>>>>>

বৈবাহিক ‘কট অ্যান্ড বোল্ড’

সোহানুর রহমান অনন্ত

ফেসবুকে চ্যাটিং করতে দেখলে : ফেসবুকে আপনি মেয়েদের সঙ্গে চ্যাটিং করতেই পারেন। তবে বউ যদি সেটা দেখে ফেলে তাহলে ফেসবুক আপনার কানের তিন ইঞ্চি নিচ দিয়ে পালাবে। সুতরাং যদি একবারে ধরাই খেয়ে যান, তাহলে বলে ফেলুন। আহারে মেয়েটা নতুন ফেসবুক আইডি খুলেছে, কীভাবে কী করতে হয় কিছুই বুঝে না। আমাকে ভাই ডাকল তাই সব শিখিয়ে দিচ্ছি। আমি আবার দিল দরদি কি-না।

সুন্দরী তরুণীর দিকে তাকাতে দেখলে : সুন্দর কিছু দেখে চোখের ব্রেকফেল হতে পারে। তবে বউ যদি সেটা কোনোভাবে দেখে ফেলে, তাহলে কী আর চোখ চোখের জায়গায় থাকবে? সুন্দরী মেয়ের দিকে তাকাতে গিয়ে যদি ধরা খেয়েই যান তাহলে বলে ফেলুন, সামনে নির্বাচন করার চিন্তা-ভাবনা আছে, তাই পাবলিক চিনে রাখছেন। এগুলো তো এক একটা মানুষ না এক একটা ভোট।

বউয়ের টাকা চুরি করতে : বউয়ের টাকা চুরি করতে গিয়ে যদি ধরা খেয়ে যান, তাহলে আপনার ক্লিন ইমেজের বারোটা বেজে যাবে। অবশ্য বুদ্ধি খাটিয়ে যদি কিছু বলতে পারেন তাহলে বাঁচার সম্ভাবনা আছে। বলবেন, একটু আগে এখানে কয়েকটা ইঁদুর দৌড়াদড়ি করতে দেখলাম। যদি ব্যাগে ঢুকে তোমার টাকাগুলো কেটে ফেলে। কত কষ্টের টাকা তোমার, তাই সরিয়ে রাখছি।

অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে রিকশায় ঘুরতে দেখলে : যদি কারও সঙ্গে ঘুরতে দেখেই ফেলে, তাহলে বাড়িতে ঢুকে বলে ফেলুন, মেয়েটা এলাকায় নতুন এসেছে। ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছে। তাই রিকশায় করে আপনি ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এলেন। সমাজের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে না।

শার্টে লম্বা কালো চুল দেখলে : ঘরে ফেরার পর বউ যদি শার্টে কোনো বড় চুল দেখতে পায় তাহলে কী বলবেন? বলবেন, ঘর থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম শার্টে একটা চুল ঝুলছে। ভাবলাম তোমার চুল ছাড়া আর কার হবে। তাই সারাদিন সেটা শার্টের সঙ্গে আগলে রাখলাম। বুঝোই তো তোমার সবকিছু আমি কত ভালোবাসি। সব পানির মতো ক্লিয়ার।

জেনে রাখা ভালো, টিপসগুলো আপনার স্ত্রীও পড়ছেন।

১৯-১০-২০১৫ দৈনিক সমকালের প্যাঁচালে

একটি বিরতিহীন প্রেম অতঃপর ব্রেকআপ______(ভিডিও ছাড়া)

সোহানুর রহমান অনন্ত

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বিরতিহীন মোবাইলে, ফেসবুকে প্রেম করার পর পল্টন মোড়ে দু'জনের দেখা। রাশি খুব সুন্দর করে পার্লার থেকে সেজে এসেছে। প্রথম দেখা বলে কথা। কম হলেও মুখে এক-দেড় কেজি আটা-ময়দা তো হবেই। রাশি ওর নিজের দেওয়া নাম, হিন্দি সিরিয়ালপ্রেমী কি-না। আসল নামটা জানি না। জানার দরকারও নাই। শেকসপিয়র বলেছেন নামে কী আসে যায়। শেকসপিয়রই কথাটা বলেছেন তো? শিওর না। ভুল হলে কিছু মনে করবেন না।

রিকশা নিলাম, যাব হাতিরঝিল। তাকে দেখেই আমার চোখে যেন বাজ পড়ল। খাইছে! এইটা চেহারা না পাতিলার তলা। মুখের যে দিক দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে ওই দিকটাই ডিসকালার হয়ে যাচ্ছে। আমি বিষ হজম করার মতোই চুপ হয়ে রইলাম। কিন্তু অশান্তি বাধল শান্তিনগরে গিয়ে। চারদিকে পানি আর পানি। মনে হচ্ছে বিচের মধ্যে রিকশায় ঘুরছি। রাশি বারবার আয়নায় নিজের মুখ দেখছে আর বলছে, ওহ নো, তোমার একটা গাড়ি নেই কেন?
কারণ কিনি নাই তাই। তাহলে একটা বাইক তো কিনতে পারতে? কোন দুঃখে, বাইকের চেয়ে রিকশায় চড়া অনেক ভালো। বুঝলাম আমার কথা ওর পছন্দ হয় নাই। মালিবাগ মোড়ের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ রিকশার এক চাকা গর্তে পড়ে গেল। আর একটু হলেই কাতলা মাছের মতো চিৎ হয়ে পানিতে পড়তাম। রিকশাওয়ালা লুঙ্গি কাছা দিয়ে রিকশা টানছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অবস্থা খারাপ। আমাকে বোধহয় পানিতে নামতে হবে। কিন্তু নামার ভয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর রিকশাওয়ালা ব্যর্থ হয়ে বলল, ভাই, হাত লাগাইতো হইব। চাকা ফাঁইসা গেছে। প্রেমিকার সামনে ইজ্জত ঢেউটিন হওয়ার মতো অবস্থা। তারপরও নেমে পড়লাম। ধাক্কা দিলাম কিন্তু বেরসিক চাকা কিছুতেই ওঠে না। রিকশাওয়ালা বলল, কী ভাই, সকালে ভাত খান নাই! জোরে ধাক্কা দেন। মেজাজটাই হট হয়ে গেল। একটা বড় দম নিয়ে দিলাম জোরে ধাক্কা। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য পতনের শব্দ। মানে রাশি সেলফি তুলছিল। একেবারে মোবাইলসহ রিকশাওয়ালার ওপরে গিয়ে পড়ল। ধপাস! আমি মনে হয় হ্যাং হয়ে গেলাম। কাদাজল মুখে নিয়ে রাশি উঠে আমাকে বলল, তুমি একটা হুনুমান, গাধা, যমজ বেকুব, এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?
রিকশাওয়ালা গোঙাতে গোঙাতে উঠে বলল, ওরে বাবারে! মনে হয় ইহকাল শেষ হইয়া গেছে আমার। আমার ওপর মানুষ পড়ল না ঠাডা পড়ল বুঝলাম না!
রিকশাওয়ালার কথায় কান দিলাম না। রাশিকে উদ্দেশ করে আমি একগাল হেসে বললাম, অন্তত চেহারা ডিসকালারের চেয়ে এখন বেশি ভালো লাগছে তোমায়।
ইউ, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। খেয়াল করে দেখলাম, আম আদমিরা মোবাইল দিয়ে আমাদের ছবি তুলছে। নিশ্চিত ফেসবুকে ছেড়ে দেবে। রাশি দৌড় মারতে গিয়ে এক পা ম্যানহোলে পড়ে গেল। দ্বিতীয় পতন... চপাস। ব্রেকআপটা এতক্ষণ ওখানেই আটকে ছিল। এখন পুরোপুরি কনফার্ম। আমি কোনো রকম দৌড়ে বাঁচলাম। ঢাকার রাস্তাগুলো আসলেই দয়ামায়াহীন। কখন কার ব্রেকআপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলা মুশকিল। হ

১৮-১০-২০১৫ অবকাশে

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

সোহানুর রহমান অনন্ত

একটা সময় গ্রামের বাড়িগুলোতে কিংবা পথের পাশের তালগাছের দিকে লক্ষ করলেই চোখে পড়ত বাবুই
পাখির বাসা। সকাল থেকে সাঁঝের বেলা পর্যন্ত চলত
তাদের বাসা তৈরির কারুকাজ। ধরে নেয়া হয় যে বাবুই পাখির মতো করে এমন নিখুঁত বাসা তৈরির কাজ আর কোনো পাখি করতে পারে না। বৈচিত্র্যের দিক থেকে এই পাখির বাসা কেবল দৃষ্টিনন্দনই না, বরং আর্কিটেকচারাল দিক থেকেও নিখুঁত। বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে এর টিকে থাকার বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ার মতো। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটি পড়েননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না একটিওÑ
‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,
কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে...।’
কবির স্বাধীনতার সুখ কবিতাটি আজো উদাহরণ হিসেবে মানুষ ব্যবহার করলেও সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক নিদর্শনের বাসা।
গ্রামে এখন মাইলের পর মাইল হেঁটে গেলেও বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসা চোখে পড়ে না।
দিনে দিনে মানুষ বাড়লেও কমছে পশু-পাখির সংখ্যা। অসচেতনতা, পাখি শিকার এবং আবাসনব্যবস্থার
কারণে গাছ কেটে ফেলার কারণে গ্রামবাংলার
এই নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি আজ
বিলুপ্তির পথে।
বাবুই পাখিকে মূলত শিল্পীপাখি বলা হয়। এরা
আকারে ছোট হলেও খুব চতুর ও বুদ্ধিমত্তার সাথে
বাসা তৈরি করে। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু
তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরি করে বাবুই পাখিরা।
সে বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। প্রবল
ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাসা বানানো
জন্য খুবই পরিশ্রম করে এরা। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। এরপর উঁচু তালগাছ, নারিকেল বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে।
বাসা তৈরির অর্ধেক কাজ হলে কাক্সিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার দিন। কেননা তখন পুরুষ বাবুই মহা আনন্দে বিরামহীন কাজ করে।
স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সাথে সাথেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মওসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘরসংসার করতে পারে ছয় সঙ্গীর সঙ্গে, তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের না নেই।
স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা ছেড়ে উড়ে যায়।
বাবুই সাধারণত তিন প্রজাতির হয়ে থাকে, দেশী বাবুই (Ploceus philippinus), দাগি বাবুই (Ploceus manyar), বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis), তাও আজকাল দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এরা কেবল বাসা তৈরি করেই থেমে নেই। রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়।
বাবুই পাখি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। গ্রামের তালগাছের পাতায় পাতায় বাবুই পাখির বাসা ঝুলে না থাকলে যেন গ্রামের সৌন্দর্যই থাকে না। কিন্তু হালসময়ের চিত্র একেবারে ভিন্ন। বাবুই পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগ। কারণ বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু, রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। ফসলি জমিতে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগের কারণে বিপণœ পাখির তালিকায় উঠে এসেছে বাবুইয়ের নাম।
দিন দিন বাবুই পাখির সংখ্যা এতটাই কমে যাচ্ছে হয়তো অদূরভবিষ্যৎতে বাবুই পাখি চোখেই পড়বে না। তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য ধরে রাখতে আমাদের সচেতন হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক ঐক্য। পাখি শিকার এবং অকারণে গাছ কেটে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সচেতন হলে প্রকৃতির কোনো কিছুই আর হারিয়ে যাবে না। া
ংৎধহড়হঃড়লঁমধহঃড়ৎ@মসধরষ.পড়স

১৭-১০-২০১৫ দৈনিক প্রথম আলোর ছুটির দিনে..........

ভালোবাসি বলার কিছুটা আগে

তোকে রোজ একটি করে গোলাপের পাপড়ির টিপ পরিয়ে দেব। আমার কথা শুনে মুখ টিপে হাসে মেঘলা। মিষ্টি রিনরিনে গলায় বলল, যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে? তাত্ক্ষণিক উত্তরটা দিতে পারলাম না। কেনো যেন থেমে গেলাম, সত্যি তো, মেঘলার বিয়ে হয়ে গেলে কী হবে? রিকশাটা ঝাঁকুনি খেতেই মেঘলা আমার হাত চেপে ধরল। আরেকটু হলেই হয়েছিল...। আমি হেসে বললাম, তুই এত মোটা কেন?
আমাকে নিয়ে তোর দেখছি খুব টেনশন, এটা নিজের বউয়ের ওপর প্রয়োগ করিস।
রাগ করলি?
আমি রাগ করলে তোর কী?
একটু বেশি রাগ কর না।
মানে?
খুব সোজা, রাগলে তোকে খুব সুন্দর লাগে। এতটা সময় আমি তোর সঙ্গে থাকি অথচ আজকের আগে জানতামই না। মেঘলা এবার আমার পিঠে চাপড় দিয়ে বলল, ইউ...তুই একটা হনুমান।
তোর মতো মুটি তো নই।
মেঘলা চুপ হয়ে গেল, খেয়াল করলাম, ওর চোখের কোণে জল ছলছল করছে। বাড়ির কাছে আসতেই রিকশা থেকে নেমে গেল। প্রতিদিন পেছনে ফিরে একবার তাকায়, আজ তাকাল না। রাতে অনেকবার ফোন দিলাম, ফোন ধরল না। পরদিন ভার্সিটিতেও এল না। কয়েকটা দিন কেটে গেল। হঠাৎ মেঘলার মেসেজ, ‘তুই কি আমাকে নিয়ে একটু রিকশায় ঘুরবি, জাস্ট এখনই?’ আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম, ‘অবশ্যই। তুই ফোন ধরিস না কেন?’
—তুই আমার বাড়ির সামনে আয়, আমি দাঁড়িয়ে আছি।
আমি সঙ্গে সঙ্গে রিকশা নিয়ে গেলাম, মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ি পরেছে আজ, বাসন্তী রঙের, আমার খুব পছন্দের কালার।
তুই ফোন ধরিস না কেন? আর এমন বউ সেজে আছিস কেন?
—তোর ঘাড়ে চাপব বলে। ফোন না ধরলে তোর কি খুব লেগেছে?
সত্যি এ কটা দিন খুব কষ্টে কেটেছে।
কেন?
জানি না।
আমি জানি।
কী?
তুই আমাকে ভালোবাসিস।
কী করে বুঝলি?
মেয়েরা সব বুঝতে পারে। তুই একটা বোকা, গাধা। সাহস করে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারিস না।
সোহানুর রহমান, ঢাকা।

12-10-2015 Daily somokal-er pachall-e

ফরেনাররা যেভাবে বাইরে বের হবে
দেশজুড়ে ফরেনাররা বেশ আতঙ্কে আছে, একের পর এক সফর বাতিল হচ্ছে। তবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে ফরেনাররা নিশ্চিন্তে বাংলাদেশে ঘোরাফেরা করতে পারে! আজাইরা গবেষণা করেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

হসিসি ক্যামেরা নিয়ে
এ পদ্ধতিতে ফরেনারদের সামনে-পেছনে একটা করে সিসি ক্যামেরা থাকবে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কারা তাকে ফলো করছে ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ব্যস, এমনটা করতে পারলে সন্ত্রাসী দল ধরা খাওয়ার ভয়ে ভুলেও তাদের মারতে আসবে না।
হমেকআপ করে
মেকআপের ম্যাজিক বড় ম্যাজিক। ফরেনাররা বাংলা ছবির নায়িকাদের মতো মেকআপ নিয়ে বাইরে বের হতে পারে। এমনভাবে মেকআপ নেবে যাতে তাদের কেউ চিনতে না পারে। আর চিনতে না পারলে গুলি খাওয়ার কোনো চান্স আছে বলে আমরা মনে করি না।
হমাইক নিয়ে
ফরেনাররা একটা করে মাইক সঙ্গে নিয়ে বের হবে। বিপদের আলামত দেখলেই তাড়াতাড়ি মাইকিং শুরু করবে। এক্ষেত্রে তাদের হালকা-পাতলা বাংলা জানা জরুরি। ব্যস, একবার মাইকিং শুরু হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে কূল পাবে না। গুলি করা তো দূরের কথা।
হসুড়ঙ্গ খুঁড়ে
ফরেনাররা সবচেয়ে নিরাপদভাবে বাইরে বের হতে পারে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে। আমাদের দেশে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে অনেকে নানা অকর্ম করেও ধরা পড়ে না। সেক্ষেত্রে ফরেনাররা যদি এ পথ অনুসরণ করে তাহলে মন্দ হয় না। নিরাপদ যাত্রাও হবে আবার যানজটেও পড়তে হবে না।
হসফটওয়্যার পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে একটা সফটওয়্যার আবিষ্কার করতে হবে। যেটাতে আপলোড এবং ডাউনলোড পদ্ধতি থাকবে। ফরেনাররা যেখানে যাবে সেই ঠিকানায় আপলোড হবে এবং ওখান থেকে তাদের ডাউনলোড করে নামিয়ে নেওয়া হবে। যেহেতু এটা অদৃশ্য ব্যাপার-স্যাপার, সেহেতু গুলি খাওয়ার কোনো চান্স নেই।
হভিন্ন চেহারার মুখোশ পরে
এই পদ্ধতিতে ভিন্ন চেহারার একটা মুখোশ তৈরি করতে হবে। ফরেনাররা যখন বাইরে বের হবে তখন তারা সেই মুখোশ পরে নেবে। ব্যস, বডি এক হলেও চেহারা তো আরেক, কেউ চিনতে পারবে বলে আমগো মনে হয় না।
হপ্যারাসুট দিয়ে উড়ে
যেহেতু ফরেনারদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ভিজিট করতে হয়, আর তখনই অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই তারা প্যারাসুটে উড়ে উড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে। এতে গুলি খাওয়ারও চান্স নাই আবার ভিজিটও করতে পারবে সুন্দর করে।

05 oct 2015 daily somokal-e

কমন ডায়ালগ
অনেক মেয়েরই কিছু কমন ডায়ালগ আছে, যা তারা কখনও না কখনও দেবেই। অথচ সেই ডায়ালগের যদি ময়নাতদন্ত করা যায় তাহলে ফল কী হতে পারে সেটাই জানাচ্ছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

হ পরার মতো কাপড় নাই
বিয়ের পরে অনেক মেয়েরই যতই কাপড় থাকুক না কেন সুযোগ পেলেই হাজবেন্ডকে বলবে, আমার তো পরার মতো ভালো কাপড়ই নাই। বাপের বাড়ি থাকতে আমার এত্তো এত্তো কাপড় ছিল। তুমি আসলেই একটা কৃপণ, আন্তর্জাতিক কৃপণ। পাশের বাড়ির ভাবি প্রতি মাসেই নতুন কাপড় বানায়। আমার কপালটাই খারাপ! নইলে তোমার মতো কিপটে স্বামী কপালে জোটে!
_ ময়নাতদন্ত : ওয়ারড্রোব, আলমারি ঘাঁটলেই দেখা যাবে সেখানে এত কাপড় যে নতুন কাপড় রাখার জায়গা নাই।
হ আমি কোনো প্রেমই করিনি
কিছু কিছু মেয়ে আছে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি কারও সঙ্গে প্রেম করেছ? সে প্রথমেই বলবে_ প্রেম! আরে নাহ পড়াশোনা করেই তো শেষ করতে পারছি না আবার প্রেম করব কখন! ছেলেদের আমার একদম বিশ্বাস হয় না। তা ছাড়া মা-বাবার পছন্দই আমার পছন্দ। আমাকে দিয়ে প্রেম-ট্রেম হবে না।
_ ময়নাতদন্ত : সত্য বলে বিপদে পড়তে চাই না।
হ আমি এফবিতে কম বসি
ফেসবুকে কিছু মেয়ে দেখা যায় যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কখন এফবিতে থাকেন। তাহলে সে বলবে, আমি তো এফবিতে খুব কম বসি। জাস্ট নোটিফিকেশন চেক আর পিকচার আপলোড করার জন্য মাঝেমধ্যে বসি। এসব আমার একদম ভালো লাগে না।
_ ময়নাতদন্ত : অথচ বালিকা ২৪ ঘণ্টাই...!
হ আমি তো হিন্দি সিরিয়াল দেখি না
হিন্দি সিরিয়াল না দেখে বাংলা নাটক দেখতে পারেন না? এমন প্রশ্ন করা হলে তারা যেন আকাশ থেকে পড়ে, 'বলেন কী ভাইয়া? আমি তো হিন্দি সিরিয়াল দেখিই না। এগুলো কোনো নাটক হলো! সারাক্ষণ কূটনামি দেখায়। আমি একদম পছন্দ করি না!'
_ ময়নাতদন্ত : অথচ কখন কোন চ্যানেলে কোন হিন্দি সিরিয়াল দেখাবে তা মুখস্থ বলে দিতে পারবে।

আরও যেভাবে আন্দোলন করা যেতে পারে
মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় কীভাবে তারা আন্দোলন সফল করতে পারে তারই হালকা-পাতলা আজগুবি গবেষণা করেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত
হআত্মীয় বানিয়ে ফেলুন
পুলিশ সামনে এলে তাকে জড়িয়ে ধরে আত্মীয় বানিয়ে ফেলুন। আপনি তার বন্ধুর খালাতো ভাইয়ের ফুফাতো ভাইয়ের মেয়ের জামাইয়ের বন্ধুর ছোট ভাই বলে পুলিশকে ভালো করে বুকে চেপে ধরুন। এমন আজগুবি আত্মীয়তার কথা পুলিশের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারলে পুলিশ হয়তো লজ্জায় পড়ে যাবে। তখন নিশ্চিন্তে আন্দোলন করতে পারবেন।
হমোমাছির চাক ভেঙে
খেয়াল রাখুন যেখানে আন্দোলন করবেন তার আশপাশে মোমাছির বাসা আছে কি-না। প্রথমে আপনাদের নিজেদের মোটা পোশাক পরতে হবে। যাতে উল্টো কামড় না খান। পুলিশ কাছে এলেই মৌচাকে ঢিল মারুন! ব্যস, কর্ম সারা। পুলিশ বাবাজিরা দৌড়ে কূল পাবে না। এমনটা করতে পারলে আন্দোলনে ব্যাপক সফলতা আসতে পারে।
হগাছে ঝুলে থেকে
ঢাকায় গাছ নেই, তবুও রাস্তার পাশে যে কয়টা গাছ আছে তাই কাজে লাগিয়ে ফেলুন। মানে রাস্তার পাশে গাছের ডালে ঝুলে ঝুলে আন্দোলন করুন। যেহেতু সিস্টেমটা নতুন, তাই আন্দোলনে পাবলিকের সাড়া পাওয়ার চান্স আছে। এমন বিরল আন্দোলনে নিশ্চয় মিডিয়ারও ভালো সাড়া পাবেন।
হগিফট করুন
আন্দোলনে নামার আগে কিছু গিফট সামগ্রী সঙ্গে রাখুন। যেমন_ চকোলেট, খেলনা, সিটি গোন্ডের চুড়ি ইত্যাদি। ভাবছেন, এগুলো দিয়ে কী হবে? বলছি। আন্দোলনে নামলেই পুলিশ বাধা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তখনই আপনারা এসব জিনিস পুলিশকে গিফট করবেন। গিফট নিতে তারা আশা করি আপত্তি করবে না। সুতরাং এই সুযোগে আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবেন। খরচ হলেও পুলিশকে তো থামাতে পারবেন।
হবেসুরা গান বাজিয়ে
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যত বেসুরা গায়ক-গায়িকা আছে সবাই একসঙ্গে গান ধরুন, যাতে গান শুনে পুলিশের কানের বলটিউব বাস্ট হয়ে যায়। যখন পুলিশ কাছে আসবে তখনি গান শুরু করুন। বিরক্ত হয়ে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য।
হমনে মনে
যদি এর কোনোটাই না পারেন তাহলে আর কী করবেন। মনে মনে আন্দোলন করুন। দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা মনে মনে আন্দোলন চর্চা শুরু করেছেন। মাঠে না নামতে পারলে মনে মনে আন্দোলন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

21-09-2015 Daily bangladesh protidine-er rokomari rommo te

কৌশলী হোন
সোহানুর রহমান অনন্ত

সালামি থেকে বাঁচতে : এ সময় সালামি দিতে হয়। যদি আপনি কৃপণ প্রকৃতির হয়ে থাকেন তাহলেও নিশ্চিন্তে থাকার জো নেই। ছেলেপেলেরা অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে। তবু যদি কাউকে দুই টাকা দিতেও আপনার কলিজায় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তাহলে আপনি যেটা করবেন সেটা হলো, কয়েকটা ডলার জোগাড় করুন। সালামি চাইলে, পকেট থেকে ডলার বের করে বলুন, ওহহো এটা তো ভাঙানো হয়নি। অপেক্ষা করেন ডলারকে টাকা বানিয়ে অচিরেই পৌঁছে দেওয়া হবে। ধন্যবাদ। আবার আসবেন।

ফ্যাশন সচেতনতা : কে কার চেয়ে বেশি ড্রেস কিনবে বা পরবে তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। পাবলিকের দৃষ্টিতে পড়ার জন্য আমরা কতকিছুই না করি। কিন্তু আপনি চাইলে সাধারণ পোশাকেও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। প্রথমে মার্কেট থেকে একটা প্যান্ট কিনুন। তারপর সেটা এক পা হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলুন। দেখতে যেমনই লাগুক, এটাই লেটেস্ট ফ্যাশন বলে প্রচার করে দিন।

অতিথি হয়ে যান : অতিথিদের চাপ সামলাতে না চাইলে নিজেই এবার অতিথি হয়ে যান। পারলে বউ বাচ্চা সবসহ শ্বশুরবাড়ি কিংবা আত্দীয়র বাড়িতে গিয়ে উঠে পড়ুন। ছুটি কাটিয়ে আরামে বাড়ি ফিরুন।

আরামে টিভি দেখতে : এটা খুব কষ্টের কাজরে ভাই। প্রথমে আপনাকে খুঁজতে হবে, আত্দীয়স্বজনের মধ্যে কে বেশি কথা বলে। ব্যস এমন একজন যদি পেয়ে যান তাহলেই হয়েছে। তাকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসুন, তারপর আপনার বউয়ের সঙ্গে খোশ গল্পে বসিয়ে দিন। একবার যদি দুজন একসঙ্গে বসে কথা বলা শুরু করে তাহলে ঘরবাড়ি তামাতামা হয়ে গেলেও তাদের খবর থাকে না সো, আপনি আরামে টিভি দেখতে পারবেন।