—শুরু হয়ে গেল রবিবারের লাইভ শো, ‘ঠাট্টা শপিং লাইভ’। আমরা এখন একটি বৃহত্তম শপিং সেন্টারের সামনে আছি। শুরুতেই আমরা একজন মোটাসোটা আপাকে পেয়েছি। আপা কেমন আছেন?
—ভালো না, এখন আবার মৌচাক যেতে হবে, তারপর গরুর বাজার। ওফ্ এখানো কত কিছু কেনা বাকি!
—তা কেনাকাটা কিছু করেছেন?
—কোথায় আর করতে পারলাম! এখনো তো শিরোনামটাই শেষ করতে পারলাম না।
—হুম্ম, আপনার সাথে আর কাউকে দেখছি না কেন?
—দেখছেন না মানে! পেছনেই তো আমার স্বামী দাঁড়ানো।
—বলেন কী!
[ঠাট্টার প্রতিবেদক পেছনে তাকাতেই শপিংয়ের ব্যাগে চাপা পড়া একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ব্যাগের কারণে লোকটার চেহারাই দেখা যাচ্ছে না। এই যদি হয় শিরোনাম, তাহলে বিস্তারিত জানতে হলে ঠাট্টা প্রতিবেদকেরই ইহলীলা সাঙ্গ করতে হবে। সে কারণে সাক্ষাত্কার এখানে অসমাপ্ত রেখে ঠাট্টার প্রতিবেদক গোবেচারা স্বামীর দিতে এগিয়ে যান।]
—ভাই আপনার কী অবস্থা?
—ধুর মিয়া, ইঁদুরের ওষুধ সাথে থাকলে দেন খাইয়া মইরা যাই।
—ভাই আমরা তো ওষুধ বিক্রেতা না। এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী?
—হারামি হারামি, হাত দুইটা ফ্রি থাকলে তোরে কানের নিচে মাইরা অনুভূতি বুঝাইতাম। আমার অবস্থা যায় যায় আর সে আছে অনুভূতি নিয়ে।
[ভাইয়ার বোধহয় প্রেশার হাই হয়ে গেছে—এই ভাবনা মাথায় নিয়ে ঠাট্টা প্রতিবেদক আরেকজন আপুর কাছে মাইক্রোফোন নিয়ে এগিয়ে যান।]
—আপু ঈদে আর কোথায় কোথায় শপিং করবেন?
—তার আগে বলেন আপনাদের এটা কি লাইভ প্রোগ্রাম?
—হু।
—বলেন কী, এই আমার কসমেটিকের ব্যাগটা দাও তো। শিলা-নিপা তোরা কই, জলদি আমারে মেকআপ দে।
—আপুরা মনে হচ্ছে পুরা পার্লার সাথে নিয়া ঘুরছেন...
—একটু ওয়েট করুন ভাইয়া, মেকআপটা নিয়ে নিই।
[যে পরিমাণ ফেস ঢালাই শুরু করেছেন তাতে এই ঈদ গিয়ে সামনের বছরের ঈদ চলে আসতে পারে। তার চেয়ে বরং একটু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাক। দর্শক, এখন একজন দোকানদার ব্রাদারের সাথে কথা বলা যাক, কী বলেন!]
—ভাই, বিক্রি কেমন চলছে?
—ব্যাপক ভালো।
—এইবারে নিউ কালেকশন কী কী?
—লুল প্যান্ট, সাথি থ্রিপিস, মাইরালা টি-শার্ট, আলেকজেন্ডার টি-শার্ট, সানি লিওন শাড়ি, আহু আহু থ্রি পিছ, ফলোয়ার আন্ডারওয়্যার।
[নাম শুনেই ঠাট্টা প্রতিবেদকের বমির উদ্রেক হলো। আসুন পাঠক, তারচেয়ে বরং আমরা সামনে একটা ভ্রাম্যমাণ মোবাইল হসপিটাল দেখতে পাচ্ছি, তার সাথে কথা বলে দেখি]
—ভাই এই শপিং মলে আপনাদের এই হসপিটাল কেন? টয়লেট হলেও না হয় কথা ছিল, মলে এসে মলত্যাগ...
—এইখানে যারা দুর্বল চিত্তের লোক আসে শপিং করতে, দেখা যায় দাম শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাদের জন্য ইমার্জেন্সি ব্যবস্থা।
—ব্যবস্থাটা খারাপ না! কিন্তু শপিং করতে তো এখন অনেকেই প্রেশারের ট্যাবলেট নিয়ে আসেন। প্রিয় দর্শক, এই মুহূর্তে গ্যাঞ্জাইম্মা লুঙ্গির সৌজন্যে নিচ্ছি মিনি একখানা বিরাটাকারের ব্রেক। আপনার টয়লেট ছাড়া আর কোথাও যাবেন না।... বিরতির পরে আমরা আবারও ফিরে এলাম। আমরা এখন একজন ব্রাদারের সাথে কথা বলব। ভাই শপিংয়ে নিশ্চয় অনেক কেনাকাটা করতে এসেছেন?
—ধুর মিয়া, কাপড়চোপরের যে দাম তাতে বড়জোর একখান টারজানের জাইঙ্গা কেনার হিম্মত করতে পারি।
[বুঝতেই পারছেন দর্শক, কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। সামনে বেশ ভিড় দেখা যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে না এখানে গরুর হাট বসল কি না। চলুন ঠাট্টা প্রতিবেদকের সাথে সাথে আমরাও একটু এগিয়ে যাই। ওহ্ আমরা একজন সেলিব্রেটিকে পেয়েছি।]
—এইবার ঈদের জন্য কী কী শপিং করলেন?
—আসলেই আমার শপিং করতে খুব ভালো লাগে। আর ঈদে তো এক্সট্রা শপিং করি। তবে এবার বেশি কিছু কিনিনি, তিনটা শাড়ি, পাঁচটা থ্রিপিস, চার জোড়া জুতো, তিনটা মেকআপ বক্স। ওহ্ নো আর কী কী যেন কিনেছি, এক মিনিট লিস্টটা বের করে নিই।
[এমন সময় ‘চোর চোর ধর ধর’ শুরু হলো। ব্যাটা চোর ঠাট্টার প্রতিবেদকের সামনে দিয়ে দৌড় মারার সময় তিনি চোরের কলার চেপে মুখের মধ্যে দিলেন এক ঘুষা। ঘুষি খেয়ে সাথে সাথে দুটো দাঁত নিহত। এমন সময় কাট কাট শব্দ হলো। কয়েকজন এগিয়ে এসে বলল, ‘ভাই কামডা করছেন কী, আপনি তো নায়কের দাঁত ভেঙে ফেলছেন। নায়ক পেস্টের বিজ্ঞাপন করবে কেমতে? শুটিংয়ের তো বারোটা বেজে গেল।’ বোঝা গেল, ঠাট্টা প্রতিবেদক নায়ককে চোর ভেবে আকাম করে ফেলেছেন। কোনো রকম নিজের দাঁত বাঁচিয়ে সেখানে থেকে অন্যদিকে ছুটলেন তিনি। একটু সামনে যেতেই কে যেন বলে উঠল ‘পাগলা গরু আইলো’। ‘হায় হায় মার্কেটে পাগলা গরু ঢুকল কেমতে’—এই ভাবনা মাথায় রেখে ঠাট্টা প্রতিবেদক জান বাঁচানোর জন্য দৌড় লাগালেন। পরে জানা গেল—এটা একটা পিওর গুজব ছিল। একটু ধাতস্থ হতেই ঠাট্টার প্রতিবেদক সামনে একজোড়া পাবলিক দেখতে পান, সম্ভবত এরা প্রেমিক-প্রেমিকা। ]
—আপনারা নিশ্চয় শপিং করতে এসেছেন?
(মেয়েটি বলল)—আসলে আমরা শপিং করতে আসিনি।
—মানে?
—মানে হইল—এইডা আমার ভাই। আমরা আসছি মেয়ে খুঁজতে, মানে আমার ভাইয়ের জন্য বউ খুঁজতে, বুঝছেন? [বাপরে বাপ! আজকাল কাজী অফিস রেখে মানুষ শপিংয়ে এসে পাত্রী খোঁজে। গরুর হাটেও পাবলিক গরুর বদলে পাত্র খুঁজতাছে কি না কে জানে। দর্শক চিন্তা করে দেখেন, দেশ কত আপডেট! আরেকজনকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে নাচছেন। আমরা এগিয়ে গেলাম তার কাছে।]
—ভাই, আপনি এমন নাচতাছেন কেন? শুটিং করেন নাকি?
—আরে না।
—তাইলে?
—প্রতিবছর শপিংয়ে আসি, মাগার কোনো ক্যামেরা আমার দিকে ধরে না। তাই এইবার বুদ্ধি খাটাইলাম—এমন বিরল নাচ নিশ্চয় কোনো টিভি ক্যামেরা মিস করতে চাইবে না। হা হা হা ভালো বুদ্ধি না।
—হ ভাই ডাহা ভালো বুদ্ধি। দর্শক, শপিংয়ের অবস্থা দেখে অলরেডি আমার মাথা ঘুরাইতাছে, আপনাদের কী অবস্থা কে জানে! জ্ঞান হারানোর আগে এখান থেকে ভাগতে চাই। সবাই ভালো থাকবেন, বাই বাই।
No comments:
Post a Comment