.
বাড়িতে ওঠার আগে বাড়িওয়ালা বলেছিল, বাসায় বসেই আপনারা সি বিচের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। ব্যাপারটা তখন ভালো করে বুঝিনি, কিছুদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় বাসার সামনে একেবারে নদী হয়ে গেছে। কোথায় ম্যানহল আর কোথায় রাস্তা সেটা স্বয়ং সিটি কর্পোরেশনের লোকেরাও বলতে পারবে না। অফিসে যাব কিন্তু পানি নেই। বাড়িওয়ালার কাছে যেতেই তিনি বললেন, ‘দূর মিয়া, সামনে এত সুন্দর পানির খনি থাকতে খামোখা পয়সা খরচ করে পানি তোলার কোনো মানে হয়! আপনারা ইয়াং পোলাপান বাড়ির সামনে থেইক্কা একটা ডুব মাইরা আসলেই তো কেল্লা ফতে। জানেন তো অপচয়কারী শয়তানের...।’ ব্যাটায় দেখছি পুরাই চালু মাল। হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলাম, বউ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাজার যে করলে না রাতে এসে খাবে কী?’ আমি বললাম, ‘এই যাচ্ছি গিন্নি।’ ‘আর শোনো টেইলারের দোকান থেকে আমার জামাটা নিয়ে আসবে। আজ একটু শপিংয়ে যাব।’ তাড়াহুড়া করে বাজারে গেলাম। ভাসমান বাজার। নৌকায় বসেছে বাজার। পকেটে টাকা কম তাই পেঁয়াজের দিকে তাকিয়ে আছি—এমন সময় একজন চিত্কার করে বলল, ‘হেল্প আমারে গোখরা সাপে কামড় দিছে।’ খাইছে পাবলিক সাপের ভয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। সবার ছোটাছুটি দেখে আমিও দৌড় দিলাম। আগে জীবন বাঁচাই তারপর বাজার। মোটা একজন দৌড়ে এসে আমার উপর পড়ল। একেবারে ব্যাটা শুদ্ধ দুজনেই ম্যানহলে। কোনোরকম উঠে জান নিয়ে একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হায় হায় সর্বনাশ হয়ে গেছে। টেইলার থেকে নিয়ে আসা বউয়ের কাপড় কই? কয়েকবার পানিতে ডুব মারলাম। কিন্তু কোথাও পেলাম না, ভাগ্যভালো আমার লুঙ্গিও সাথে গায়েব হয়নি। ভয়ে আমার কাঁপুনি ধরার মতো অবস্থা। কাপড় ছাড়া বাসায় গেলে বউ আমাকে ফ্রি কিক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেবে! অন্যদিকে অফিসে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে। জমজ ভয়ে আমি জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। কোনোরকম ভাসতে ভাসতে কালুদের বাড়িতে গেলাম। কালুর একটা শার্ট আর প্যান্ট পড়ে অফিসে রওনা হলাম। কালুর শার্ট সাইজে ছোট তাই বহু কষ্টে বোতাম লাগালাম। বাসে দাঁড়িয়ে আছি, সিট নেই। হঠাত্ বাস ব্রেক করায় গরুর মতো কাত্ হয়ে পড়লাম। সেই সাথে পেটের গ্যাসের শব্দ, পাবলিক সব আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
২.
অফিসে বসে আছি। কালাম সাহেব পান চিবুতে চিবুতে এসে বলল, ‘কী মিয়া, মুখ কালা কইরা বইসা আছেন কেন?’ আমি বললাম, ‘নাহ এমনিতেই, তার আপনার কী অবস্থা?’ ‘ভালোই অবস্থা, বাড়ির সামনে পানি জমছে।’ ‘তো খুশির কী হলো?’ ‘আরে মিয়া বেকুবের মতো কথা কন কেন? এই সুযোগেই তো পোলাপান সব কয়টারে সাঁতার শিখাইয়া ফেলছি, এইবার লঞ্চে বাড়িতে যাইতে আর কোনো রিস্ক নাই। তা ছাড়া আপনার ভাবিও পানির ডরে শপিংয়ে যায় না।’ আমি হতাশ হয়ে বললাম, আমার বউটা যদি পানিতে ডরাইতো। তিনি হেসে বললেন, ‘ভাই মেয়ে মানুষরে সবাই ডরায়। আফসোস কইরেন না।’ বিকেলে বাসায় ফেরার পথে আবার বাড়িওয়ালার সাথে দেখা। তিনি বললেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, সামনের মাস থেইক্কা সব বাড়াইয়া দিতে হইব।’ আমি কিছুই বললাম না, বউ আমারে দেইখা বড় বড় চোখ করে বলল, ‘তোমার জামা কোথায়?’ আমি বললাম, ‘ইয়ে... মানে জামা তো আনতে ভুলে গেছি।’ ‘বাজার কই?’ ‘জিনিসপত্রের যে দাম তাতে বাজার করতে পারি নাই। তয় কিছু ছবি তুলে আনছি। সেগুলো দেখেই খুশি থাকো।’ ‘মশকারা করো তুমি!’ ‘মশকারা কি করুম, দেশের হর্তাকর্তারাই তো আমগো লইয়া মশকারা করতাছে! আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সামনের মাস থেইক্কা সব কিছু বাইড়া গেছে। আজ থেইক্কা জিরো ফেসবুক চালাইবা, কোনো ছবিও দেখতে পারবা না, কিছুই কিনতেও ইচ্ছা হবে না।’ ঘরে ঢুকে বড় করে একটা বোর্ডে লিখলাম। আমার বউকে জ্বিনে ধরেছে সামনে যাকে পায় তারেই কিল-ঘুষি মারে। তারপর দরজার সামনে লাগিয়ে দিলাম। ঘণ্টা দুয়েক পর বাড়িওয়ালা এসে নিরাপদ দূরত্ব রেখে বলল, ‘ওই মিয়া বউরে নিয়া ওঝার কাছে যাও, আমার তো ডর লাগতাছে।’ আমি হেসে বললাম, ‘কাগু, এইডা তো এমনিতেই লাগাইছি।’ ‘মানে?’ ‘মানে হইল যাতে আত্মীয় এসে গেঞ্জাম না করতে পারে।’ ‘বুঝতেই তো পারছি না মামুর ব্যাটা।’ ‘আরে মিয়া, এই লেখা পড়লে আত্মীয় আর বেড়াতে আসবে না। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে আত্মীয় বেড়াতে এলে তো ফকির হয়ে যাব।’ বাড়িওয়ালা লাফিয়ে বলল, ‘বুঝছি মামুর ব্যাটা।’ রাতে দেখলাম বাড়িওয়ালা বড় সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে বাড়ির সামনে। তাতে বড় বড় করে লেখা, ‘এই বাড়িতে জ্বিন-ভূতের খনি পাওয়া গেছে, অপরিচিত কাউকে দেখলেই শেষ...।’ আমি হেসে খুন। বেচারা নিজেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আতঙ্কে আছে। আত্মীয়-স্বজন তো দূরের কথা, ভূতের কথা শুনে এলাকার পাবলিকও বাড়ির সামনে আসে না। আমার তো মনে হয় ভূতেরা এই লেখা পড়লে সেন্সলেস হয়ে ম্যানহলে গিয়ে পড়বে। বিশ্বের দ্বিতীয় বসবাসের অযোগ্য ঢাকায় এভাবেই আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে। কাউকে ভূতের ভয় দেখিয়ে অথবা কাউকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে
No comments:
Post a Comment