প্রকাশ : ২৬ আগস্ট, ২০১৪ >সুহৃদ সমাবেশ> daily somokal
বিবাহিত ব্যাচেলর
সোহানুর রহমান অনন্ত
দূর থেকে দেখলে বোঝাই যায় না, এটা টু-লেট না টয়লেট লেখা। কলিংবেল চাপতেই এক ভদ্রলোক খুলে দিলেন। কী চাই? না মানে বাইরে টু-লেট দেখলাম...। ব্যাচেলর? হেসে বললাম বিবাহিত ব্যাচেলর। মানে? মানে হলো বিয়ে করেছি কিন্তু বউ দেশের বাড়িতে থাকে। তার মানে তুমি একা থাকবে? জি বলতে পারেন। কী কর? পত্রিকা অফিসে চাকরি করি। সাংবাদিক? না, ফটোগ্রাফার। ও। কিন্তু তোমাকে ভাড়া দেওয়া যাবে না। হাসিটা মিলিয়ে গেল আমার। কেন? কারণ তুমি বিবাহিত হলেও ব্যাচেলর থাকবে। তাতে কী, বউ তো মাঝে মধ্যে আসে। একটু দাঁড়াও, আমি আসছি। আমাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে লোকটা ভেতরে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, তোমার সাহস কেমন? জি মাশাল্লাহ ভালো, কিন্তু কেন? তোমাকে ছাদে যে রুমটায় থাকতে হবে সেটায় একটু সমস্যা আছে। কী সমস্যা? সেটা হলো সেই রুমে একটি মেয়ে থাকত, মাসখানেক আগে মেয়েটি গলায় ফাঁস নিয়ে মারা যায়। এরপর আর রুমটা ভাড়া দিতে পারিনি। যারাই ভাড়া নেয় দু'তিন দিন থেকে চলে যায়। কোনো সমস্যা নেই, আমি এসব বিশ্বাস করি না। ঠিক আছে দেখ থাকতে পার কি-না।
২.
আসলেই কি ভয় পাচ্ছি আমি, বুকে একটু ফুঁ দিয়ে নিলাম। মিথ্যা কথাটা গুছিয়ে না বলতে পারলে হয়তো এ বাসাটাও পেতাম না। ভূতের হোক আর যাই হোক মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই তো হয়েছে। ব্যাচেলর বলে কি আমরা মানুষ না। এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ। বুকটা দপাস করে উঠল। দোয়া যা জানতাম সব পড়ে ফেলেছি। আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুললাম। একটা মেয়ে দাঁড়ানো হাতে খাবারের বাটি। কী ব্যাপার কানে কি তুলো দিয়েছেন? ইয়ে মানে... আপনি। আপনার বাড়িওয়ালার মেয়ে। বাবা বাসায় নেই তাই মা খাবারটা আমাকে দিয়েই পাঠিয়েছে, নিন। আমি ভয়ে ভয়ে নিলাম। কি ভয় পাচ্ছেন নাকি? না কিসের ভয়, আমি হলাম সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। মেয়েটি হেসে বলল, তা আপনি নাকি বিবাহিত ব্যাচেলর। লজ্জায় পড়ে গেলাম। মুচকি হেসে চলে গেল মেয়েটি। আমি দরজা লাগিয়ে বসে পড়লাম। ভালোই হলো ক্ষুধায় পেটের অবস্থা মরুভূমি। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
৩.
রাতটা ভালই কাটলো, সকাল সকাল অফিস চলে গেলাম। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে শাহবাগে মেয়াটার সঙ্গে দেখা। মেয়েটি গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, এখন গাড়ি পাওয়া যাবে না, ইচ্ছা করলে পেছনে বসতে পারেন। মেয়েটি উঠে বসল। আজ ভার্সিটিতে একটু কাজ ছিল তাই দেরি হয়ে গেল। আমি কিছুই বললাম না। আচ্ছা আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? নেই। বলেন কী? হুম। বিয়ে করেছেন কয় বছর হলো? করিনি। মানে? মানে বিয়ে করিনি এখনও। তাহলে বাবাকে যে বললেন। না বললে তো আর ঘরটা পাওয়া হতো না। ও মাই গড! আপনি এত বড় মিথ্যা বলেছেন। কিছু করার নেই, মিথ্যা না বলে উপায় ছিল না। তাই আব্বু জানলে, আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেবে। আপনার আব্বাকে তো বলিনি, বলেছি আপনাকে। বাসার কিছুটা আগে মেয়েটি নেমে পড়ল। বাড়িওয়ালা দেখে ফেললে বিপদ। ওহ্ মেয়েটির নাম ফারিয়া, তবে ফারিয়া আমাকে বিবাহিত ব্যাচেলর বলেই ডাকবে বলে ঠিক করেছে। মোটামুটি বেশ কয়েকদিন কথা বলায় ভালোই সম্পর্ক হয়ে গেল।
৪.
ভালোবাসাটা খুব অদ্ভুত, কখন এসে যায় কেউ বলতে পারে না। ফারিয়াকে ইদানীং খুব ভালো লাগতে শুরু করেছে। সেই কথাটা বলতেও বাধা নেই, কিন্তু বলার জন্য ভালো একটা সময়ের প্রয়োজন। রাতের একটা অধ্যায় ওর সঙ্গে ফেসবুকে কাটে যদিও একই বাড়িতে থাকি আমরা। মাঝে মাঝে বাইকে করে ঘুরে বেড়াই ঢাকা শহরটা। কখনওবা রেললাইনের পথ ধরে হেঁটে যাই বহুদূর। তবুও বলা হয় না, হবে হবে এ আশায়।
হঠাৎ করেই একটা ঝড় আসে আমার জীবনে। ফারিয়ার ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক ভাবি আমি, একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে বিয়ে করে কী লাভ, শেষে সারাটা জীবন তার স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। ভালোবাসাটা চাপা দিয়ে ফেলি। বাসাটা ছেড়ে দিই আমি। ফারিয়া ঘুম থেকে ওঠার আগে এক কাকডাকা ভোরে নতুন বাসায় চলে যাই। যেখানে ফারিয়া নেই, নেই ফারিয়ার স্মৃতিগুলো। মাস তিনেকের মধ্যেই ফারিয়া মারা গেল। খবর শুনেছি আমি কিন্তু দেখতে যাইনি। পুরনো স্মৃতিকে জাগাতে চাই না। খুব তাড়াহুড়া করেই সুন্দরী কলিগকে বিয়ে করে ফেলি। জীবনটাকে নতুন করে সাজাবো বলে। আমি এক স্বার্থপর মানুষ।
৫.
ইদানীং ফারিয়াকে খুব বেশি মনে পড়ে। আমার বউকে আমি অনেক ভালোবাসি, তাই মনে পড়লেও ভুলতে চাই সেসব স্মৃতি। আজ আমাদের ঘরে আলোর প্রদীপ হয়ে আসবে আমার একমাত্র সন্তান। হাসপাতালে তখন অপেক্ষা করছি, একটা শব্দ শোনার জন্য। ডাক্তার বেরিয়ে এলো, মুখটা কালো করে। কী ব্যাপার ডাক্তার সাহেব? স্যরি, দু'জনের একজনকেও বাঁচানো গেল না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আমি যেন পাথর হলে গেলাম। ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল কথাটা। সবকিছু এলোমেলো লাগছিল। নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিলাম ভালোবাসাকে। এক এক করে সবাই চলে গেল। আমি তখনও দাঁড়িয়ে, চোখ দিয়ে জল পড়ছে। বুকের মধ্যে হাহাকার। চলে আসার জন্য পা বাড়াবো এমন সময় হঠাৎ ফারিয়ার বাবার সঙ্গে দেখা। আংকেল আপনি? হ্যাঁ বাবা, মেয়ের কবর দেখতে এলাম। ফারিয়াকে কি এখানে কবর দেওয়া হয়েছে?। হু ওই তো নতুন কবরটার পাশের কবরটাই ফারিয়ার। কবরটার দিকে তাকিয়ে বুকটা চমকে উঠল। এবার ফারিয়াকে ভুলব কী করে? আমার ভালোবাসাকে দেখতে এলেই যে পুরনো ভালোবাসাকেও দেখতে হবে।
হসুহৃদ ঢাকা
বিবাহিত ব্যাচেলর
সোহানুর রহমান অনন্ত
দূর থেকে দেখলে বোঝাই যায় না, এটা টু-লেট না টয়লেট লেখা। কলিংবেল চাপতেই এক ভদ্রলোক খুলে দিলেন। কী চাই? না মানে বাইরে টু-লেট দেখলাম...। ব্যাচেলর? হেসে বললাম বিবাহিত ব্যাচেলর। মানে? মানে হলো বিয়ে করেছি কিন্তু বউ দেশের বাড়িতে থাকে। তার মানে তুমি একা থাকবে? জি বলতে পারেন। কী কর? পত্রিকা অফিসে চাকরি করি। সাংবাদিক? না, ফটোগ্রাফার। ও। কিন্তু তোমাকে ভাড়া দেওয়া যাবে না। হাসিটা মিলিয়ে গেল আমার। কেন? কারণ তুমি বিবাহিত হলেও ব্যাচেলর থাকবে। তাতে কী, বউ তো মাঝে মধ্যে আসে। একটু দাঁড়াও, আমি আসছি। আমাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে লোকটা ভেতরে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, তোমার সাহস কেমন? জি মাশাল্লাহ ভালো, কিন্তু কেন? তোমাকে ছাদে যে রুমটায় থাকতে হবে সেটায় একটু সমস্যা আছে। কী সমস্যা? সেটা হলো সেই রুমে একটি মেয়ে থাকত, মাসখানেক আগে মেয়েটি গলায় ফাঁস নিয়ে মারা যায়। এরপর আর রুমটা ভাড়া দিতে পারিনি। যারাই ভাড়া নেয় দু'তিন দিন থেকে চলে যায়। কোনো সমস্যা নেই, আমি এসব বিশ্বাস করি না। ঠিক আছে দেখ থাকতে পার কি-না।
২.
আসলেই কি ভয় পাচ্ছি আমি, বুকে একটু ফুঁ দিয়ে নিলাম। মিথ্যা কথাটা গুছিয়ে না বলতে পারলে হয়তো এ বাসাটাও পেতাম না। ভূতের হোক আর যাই হোক মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই তো হয়েছে। ব্যাচেলর বলে কি আমরা মানুষ না। এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ। বুকটা দপাস করে উঠল। দোয়া যা জানতাম সব পড়ে ফেলেছি। আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুললাম। একটা মেয়ে দাঁড়ানো হাতে খাবারের বাটি। কী ব্যাপার কানে কি তুলো দিয়েছেন? ইয়ে মানে... আপনি। আপনার বাড়িওয়ালার মেয়ে। বাবা বাসায় নেই তাই মা খাবারটা আমাকে দিয়েই পাঠিয়েছে, নিন। আমি ভয়ে ভয়ে নিলাম। কি ভয় পাচ্ছেন নাকি? না কিসের ভয়, আমি হলাম সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। মেয়েটি হেসে বলল, তা আপনি নাকি বিবাহিত ব্যাচেলর। লজ্জায় পড়ে গেলাম। মুচকি হেসে চলে গেল মেয়েটি। আমি দরজা লাগিয়ে বসে পড়লাম। ভালোই হলো ক্ষুধায় পেটের অবস্থা মরুভূমি। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
৩.
রাতটা ভালই কাটলো, সকাল সকাল অফিস চলে গেলাম। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে শাহবাগে মেয়াটার সঙ্গে দেখা। মেয়েটি গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, এখন গাড়ি পাওয়া যাবে না, ইচ্ছা করলে পেছনে বসতে পারেন। মেয়েটি উঠে বসল। আজ ভার্সিটিতে একটু কাজ ছিল তাই দেরি হয়ে গেল। আমি কিছুই বললাম না। আচ্ছা আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? নেই। বলেন কী? হুম। বিয়ে করেছেন কয় বছর হলো? করিনি। মানে? মানে বিয়ে করিনি এখনও। তাহলে বাবাকে যে বললেন। না বললে তো আর ঘরটা পাওয়া হতো না। ও মাই গড! আপনি এত বড় মিথ্যা বলেছেন। কিছু করার নেই, মিথ্যা না বলে উপায় ছিল না। তাই আব্বু জানলে, আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেবে। আপনার আব্বাকে তো বলিনি, বলেছি আপনাকে। বাসার কিছুটা আগে মেয়েটি নেমে পড়ল। বাড়িওয়ালা দেখে ফেললে বিপদ। ওহ্ মেয়েটির নাম ফারিয়া, তবে ফারিয়া আমাকে বিবাহিত ব্যাচেলর বলেই ডাকবে বলে ঠিক করেছে। মোটামুটি বেশ কয়েকদিন কথা বলায় ভালোই সম্পর্ক হয়ে গেল।
৪.
ভালোবাসাটা খুব অদ্ভুত, কখন এসে যায় কেউ বলতে পারে না। ফারিয়াকে ইদানীং খুব ভালো লাগতে শুরু করেছে। সেই কথাটা বলতেও বাধা নেই, কিন্তু বলার জন্য ভালো একটা সময়ের প্রয়োজন। রাতের একটা অধ্যায় ওর সঙ্গে ফেসবুকে কাটে যদিও একই বাড়িতে থাকি আমরা। মাঝে মাঝে বাইকে করে ঘুরে বেড়াই ঢাকা শহরটা। কখনওবা রেললাইনের পথ ধরে হেঁটে যাই বহুদূর। তবুও বলা হয় না, হবে হবে এ আশায়।
হঠাৎ করেই একটা ঝড় আসে আমার জীবনে। ফারিয়ার ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক ভাবি আমি, একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে বিয়ে করে কী লাভ, শেষে সারাটা জীবন তার স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। ভালোবাসাটা চাপা দিয়ে ফেলি। বাসাটা ছেড়ে দিই আমি। ফারিয়া ঘুম থেকে ওঠার আগে এক কাকডাকা ভোরে নতুন বাসায় চলে যাই। যেখানে ফারিয়া নেই, নেই ফারিয়ার স্মৃতিগুলো। মাস তিনেকের মধ্যেই ফারিয়া মারা গেল। খবর শুনেছি আমি কিন্তু দেখতে যাইনি। পুরনো স্মৃতিকে জাগাতে চাই না। খুব তাড়াহুড়া করেই সুন্দরী কলিগকে বিয়ে করে ফেলি। জীবনটাকে নতুন করে সাজাবো বলে। আমি এক স্বার্থপর মানুষ।
৫.
ইদানীং ফারিয়াকে খুব বেশি মনে পড়ে। আমার বউকে আমি অনেক ভালোবাসি, তাই মনে পড়লেও ভুলতে চাই সেসব স্মৃতি। আজ আমাদের ঘরে আলোর প্রদীপ হয়ে আসবে আমার একমাত্র সন্তান। হাসপাতালে তখন অপেক্ষা করছি, একটা শব্দ শোনার জন্য। ডাক্তার বেরিয়ে এলো, মুখটা কালো করে। কী ব্যাপার ডাক্তার সাহেব? স্যরি, দু'জনের একজনকেও বাঁচানো গেল না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আমি যেন পাথর হলে গেলাম। ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল কথাটা। সবকিছু এলোমেলো লাগছিল। নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিলাম ভালোবাসাকে। এক এক করে সবাই চলে গেল। আমি তখনও দাঁড়িয়ে, চোখ দিয়ে জল পড়ছে। বুকের মধ্যে হাহাকার। চলে আসার জন্য পা বাড়াবো এমন সময় হঠাৎ ফারিয়ার বাবার সঙ্গে দেখা। আংকেল আপনি? হ্যাঁ বাবা, মেয়ের কবর দেখতে এলাম। ফারিয়াকে কি এখানে কবর দেওয়া হয়েছে?। হু ওই তো নতুন কবরটার পাশের কবরটাই ফারিয়ার। কবরটার দিকে তাকিয়ে বুকটা চমকে উঠল। এবার ফারিয়াকে ভুলব কী করে? আমার ভালোবাসাকে দেখতে এলেই যে পুরনো ভালোবাসাকেও দেখতে হবে।
হসুহৃদ ঢাকা
No comments:
Post a Comment