daily borar kagoja amar eid golpo<<< sudhu-e golpo noy aro bashi kichu >><<
চেনাপথে অচেনা যাত্রী
সোহানুর রহমান অনন্ত
ভোরের কাগজ : ২৬/০৭/২০১৪
বুঝতে পারলাম, মায়ের জন্য কেনা ওষুধগুলো মেসে ফেলে এসেছি। এ সমস্যাটা আমাকে খুব তাড়া করে বেড়াচ্ছে, কোনো কিছু দ্রুত করতে গেলেই মন ভোলা হয়ে যাই। বাসস্ট্যান্ডে এসে মনে পড়লো, মায়ের ওষুধগুলো নেয়া হয়নি।
এদিকে বাসও ছেড়ে দেবে এখন। নিজের প্রতি নিজেরই বিরক্তি ধরে গেলো। যাই হোক জংতলা স্ট্যান্ডে নেমে ওষুধগুলো কিনে নেবো আবার। একটা কম বয়সী ছেলে এসে বললো, স্যার পানি লাগবো ঠা-া পানি। জোবায়ের এক বোতল পানি কিনে নিলো। কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা নেই। ঈদের আগে এমনটাই ঘটে টার্মিনালগুলোতে। সবার মুখেই বাড়ি ফেরার আনন্দ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।
২.
টিকেট নিয়ে একটু ঝামেলা হলো। আমি যে সিটে বসেছি, তার পাশের সিটে এসে বসলো একজন ভদ্রলোক। এসে বললো, ভাই একটা সমস্যা হয়ে গেছে, আমি আর আমার ওয়াইফ বাড়িতে যাচ্ছি। দুজনের সিট দুই জায়গায় পড়ে গেছে। আপনি যদি ঐ সিটটায় গিয়ে বসতেন, তাহলে আমরা দুজন এক সঙ্গে যেতে পারতাম। লোকটার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছি। আমি একটা মানুষ যে কোনো এক জায়গায় বসতে পারলেই হলো। সিটটা ছেড়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। জানালার পাশে, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম।
হুড়হুড় করে যাত্রীতে তলিয়ে গেলো পুরো বাসটা। আমার পাশের সিটে কে বসেছে তখনো আমার জানা হয়নি। চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম। হঠাৎ কে যেন আমার কান থেকে হেডফোনটা খুলে নিলো। এক প্রকার লাফিয়ে উঠলাম। পাশেই একটি মেয়ে বসা। কি ব্যাপার কতোক্ষণ ধরে আপনাকে ডাকছিৃ.। ইয়ে মানেৃমানে কেন?। জানালার পাশের সিটটায় কি আমাকে বসতে দেয়া যায়? আজ যে কার মুখ দেখে বাসে উঠছি। ঠিক আছে বসুন। জানালার পাশে মেয়েটি বসলো আমি পাশে বসলাম। রাতের যাত্রা এর আগে অনেক করেছি আমি। এই প্রথম কোনো সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে।
৩.
মেয়েটি কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে। মিষ্টি রিনরিনে গলা, চমৎকার একটা পারফিউমের ঘ্রাণ নাকের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। আমি মাঝে মাঝে ট্যাড়া চোখে তাকাচ্ছি। বাসের বেশির ভাগ মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন। আমারও একটা ঘুম দেয়া প্রয়োজন কিন্তু ঘুম যেন আর আসছে না। মেয়েটি ফোন রেখে দিলো। আচ্ছা আপনি কিছু মনে করেননি তো?। আবারো চমকে উঠলাম আমি। কেন, কি মনে করবো?। এই যে জানালার পাশে বসলাম বলে। আরে না, মনে করার কি আছে। তা নিশ্চয় গ্রামে যাচ্ছেন?।
জি, এটা তো গ্রামের যাওয়ারই রাস্তা। কি করা হয়? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। আপনি? সদ্য পাস করে বের হয়েছি, এখনো চাকরি-বাকরি কিছুই জোটেনি। বায় দ্যা ওয়ে, আমি জোবায়ের। আমি বিন্দু। ফাইন, নামটা বেশ চমৎকার। নিশ্চয় জংতলা স্ট্যান্ডে নামবেন?। জি। আর কি বলা যায় ঠিক ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটি কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছু একটা বলতে গিয়েও গিলে ফেললাম।
৪.
একটা হোটেলের সামনে এসে বাসটা থামলো। আপাতত বিরতি, বিশ মিনিট পর আবার ছাড়বে। হালকা আলো এসে পড়েছে জানালা দিয়ে। বিন্দুকে অনেক ভালো লাগছে। মুখের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চুলগুলো। বেশ কয়েকবার নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। আবারো ডাকলাম, মেয়েটি এবার উঠে বললো, কি হয়েছে?। তেমন কিছু হয়নি, আপনি চাইলে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আসতে পারেন বিরতি চলছে।
ধন্যবাদ, আমি খাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এই বলে মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটা আপেল বের করে খেতে লাগলো। কি ব্যাপার আপনি যাচ্ছেন না? না মানে আমার তো ক্ষুধা নেই। একটা আপেল খাবেন, যদিও আমি অপরিচিত। এই বলে মেয়েটি আপেল খেতে লাগলো। খাবো কি খাবো না এই দ্বন্দ্বে ভুগছি। কি হলো চুপ হয়ে গেলেন যে, না ভয় পেয়েছেন? যদি অজ্ঞান করে সব নিয়ে যাই। এই বলে বিন্দু হাসতে লাগলো। না না তেমন কিছু নয়, আসলেই আমি বাসে উঠলে যে তেমন কিছু খাই না। ওকে নো প্রবলেম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস আবার ছেড়ে দিলো।
৫.
হঠাৎ করেই বিন্দু বমি করতে লাগলো। বেশ কয়েকবার মাথায় হালকা পানি দিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়িনি, তাই কি করতে হয় জানি না। বিন্দুর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো। ভোরের হালকা আলো এসে পড়েছে বাসের মধ্যে। শেষে অনেক কষ্টে বমি করা থামানো গেলো। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাস ততোক্ষণে জংতলা স্ট্যান্ডে চলে এসেছে। বাস থেকে নামলাম, বিন্দু কেমন লাগছে এখন। মোটামুটি। একা যেতে পারবেন তো? হ্যাঁ পারবো, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো। খুব মায়া লাগছিল মেয়েটির জন্য। অল্প সময়ের পরিচিত হলেও কোথায় যেন একটা টান অনুভব করছিলাম। বিন্দু একটা সিএনজিতে উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে বাই বাই জানালো। আমি তাকিয়ে রইলাম, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। তবে ভালো লাগাটুকু থেকে যাবে
চেনাপথে অচেনা যাত্রী
সোহানুর রহমান অনন্ত
ভোরের কাগজ : ২৬/০৭/২০১৪
বুঝতে পারলাম, মায়ের জন্য কেনা ওষুধগুলো মেসে ফেলে এসেছি। এ সমস্যাটা আমাকে খুব তাড়া করে বেড়াচ্ছে, কোনো কিছু দ্রুত করতে গেলেই মন ভোলা হয়ে যাই। বাসস্ট্যান্ডে এসে মনে পড়লো, মায়ের ওষুধগুলো নেয়া হয়নি।
এদিকে বাসও ছেড়ে দেবে এখন। নিজের প্রতি নিজেরই বিরক্তি ধরে গেলো। যাই হোক জংতলা স্ট্যান্ডে নেমে ওষুধগুলো কিনে নেবো আবার। একটা কম বয়সী ছেলে এসে বললো, স্যার পানি লাগবো ঠা-া পানি। জোবায়ের এক বোতল পানি কিনে নিলো। কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা নেই। ঈদের আগে এমনটাই ঘটে টার্মিনালগুলোতে। সবার মুখেই বাড়ি ফেরার আনন্দ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।
২.
টিকেট নিয়ে একটু ঝামেলা হলো। আমি যে সিটে বসেছি, তার পাশের সিটে এসে বসলো একজন ভদ্রলোক। এসে বললো, ভাই একটা সমস্যা হয়ে গেছে, আমি আর আমার ওয়াইফ বাড়িতে যাচ্ছি। দুজনের সিট দুই জায়গায় পড়ে গেছে। আপনি যদি ঐ সিটটায় গিয়ে বসতেন, তাহলে আমরা দুজন এক সঙ্গে যেতে পারতাম। লোকটার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছি। আমি একটা মানুষ যে কোনো এক জায়গায় বসতে পারলেই হলো। সিটটা ছেড়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। জানালার পাশে, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম।
হুড়হুড় করে যাত্রীতে তলিয়ে গেলো পুরো বাসটা। আমার পাশের সিটে কে বসেছে তখনো আমার জানা হয়নি। চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম। হঠাৎ কে যেন আমার কান থেকে হেডফোনটা খুলে নিলো। এক প্রকার লাফিয়ে উঠলাম। পাশেই একটি মেয়ে বসা। কি ব্যাপার কতোক্ষণ ধরে আপনাকে ডাকছিৃ.। ইয়ে মানেৃমানে কেন?। জানালার পাশের সিটটায় কি আমাকে বসতে দেয়া যায়? আজ যে কার মুখ দেখে বাসে উঠছি। ঠিক আছে বসুন। জানালার পাশে মেয়েটি বসলো আমি পাশে বসলাম। রাতের যাত্রা এর আগে অনেক করেছি আমি। এই প্রথম কোনো সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে।
৩.
মেয়েটি কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে। মিষ্টি রিনরিনে গলা, চমৎকার একটা পারফিউমের ঘ্রাণ নাকের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। আমি মাঝে মাঝে ট্যাড়া চোখে তাকাচ্ছি। বাসের বেশির ভাগ মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন। আমারও একটা ঘুম দেয়া প্রয়োজন কিন্তু ঘুম যেন আর আসছে না। মেয়েটি ফোন রেখে দিলো। আচ্ছা আপনি কিছু মনে করেননি তো?। আবারো চমকে উঠলাম আমি। কেন, কি মনে করবো?। এই যে জানালার পাশে বসলাম বলে। আরে না, মনে করার কি আছে। তা নিশ্চয় গ্রামে যাচ্ছেন?।
জি, এটা তো গ্রামের যাওয়ারই রাস্তা। কি করা হয়? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। আপনি? সদ্য পাস করে বের হয়েছি, এখনো চাকরি-বাকরি কিছুই জোটেনি। বায় দ্যা ওয়ে, আমি জোবায়ের। আমি বিন্দু। ফাইন, নামটা বেশ চমৎকার। নিশ্চয় জংতলা স্ট্যান্ডে নামবেন?। জি। আর কি বলা যায় ঠিক ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটি কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছু একটা বলতে গিয়েও গিলে ফেললাম।
৪.
একটা হোটেলের সামনে এসে বাসটা থামলো। আপাতত বিরতি, বিশ মিনিট পর আবার ছাড়বে। হালকা আলো এসে পড়েছে জানালা দিয়ে। বিন্দুকে অনেক ভালো লাগছে। মুখের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চুলগুলো। বেশ কয়েকবার নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। আবারো ডাকলাম, মেয়েটি এবার উঠে বললো, কি হয়েছে?। তেমন কিছু হয়নি, আপনি চাইলে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আসতে পারেন বিরতি চলছে।
ধন্যবাদ, আমি খাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এই বলে মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটা আপেল বের করে খেতে লাগলো। কি ব্যাপার আপনি যাচ্ছেন না? না মানে আমার তো ক্ষুধা নেই। একটা আপেল খাবেন, যদিও আমি অপরিচিত। এই বলে মেয়েটি আপেল খেতে লাগলো। খাবো কি খাবো না এই দ্বন্দ্বে ভুগছি। কি হলো চুপ হয়ে গেলেন যে, না ভয় পেয়েছেন? যদি অজ্ঞান করে সব নিয়ে যাই। এই বলে বিন্দু হাসতে লাগলো। না না তেমন কিছু নয়, আসলেই আমি বাসে উঠলে যে তেমন কিছু খাই না। ওকে নো প্রবলেম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস আবার ছেড়ে দিলো।
৫.
হঠাৎ করেই বিন্দু বমি করতে লাগলো। বেশ কয়েকবার মাথায় হালকা পানি দিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়িনি, তাই কি করতে হয় জানি না। বিন্দুর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো। ভোরের হালকা আলো এসে পড়েছে বাসের মধ্যে। শেষে অনেক কষ্টে বমি করা থামানো গেলো। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাস ততোক্ষণে জংতলা স্ট্যান্ডে চলে এসেছে। বাস থেকে নামলাম, বিন্দু কেমন লাগছে এখন। মোটামুটি। একা যেতে পারবেন তো? হ্যাঁ পারবো, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো। খুব মায়া লাগছিল মেয়েটির জন্য। অল্প সময়ের পরিচিত হলেও কোথায় যেন একটা টান অনুভব করছিলাম। বিন্দু একটা সিএনজিতে উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে বাই বাই জানালো। আমি তাকিয়ে রইলাম, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। তবে ভালো লাগাটুকু থেকে যাবে
No comments:
Post a Comment