চাঁদপুর, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০১৪, ২ ভাদ্র ১৪২১, ২০ শাওয়াল ১৪৩৫
অনুশোচনা
সোহানুর রহমান অনন্ত
আয়নায়
নিজের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো হাসান। ঘড়িতে বারোটা বাজার ঢং ঢং
শব্দ। পেছনে এসে দাঁড়ালো নীলু। কি জনাব এখানে দাঁড়িয়ে কি করা হচ্ছে? নীলুর
কথায় নিজেকে ফিরে পায় হাসান। কই কিছু না তো, এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি। নীলু আর
হাসানের বিয়ে হয়েছে বছরখানেক হলো। দীর্ঘ চার বছর প্রেম করেছে দু'জন অবশেষে
বিয়ে করছে পরিবারের স্ব-মতে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো টেবিলে খাবার দেয়া
আছে। ঠিক আছে তুমি গিয়ে শুরু কর আমি আসছি। একটা সিগারেট বের করে পকেট থেকে।
জানালা দিয়ে আসছে দক্ষিণা বাতাস। মুখ থেকে ধোঁয়া ছেড়ে আবারো আয়নায় নিজের
মুখের দিকে তাকায় হাসান। নীলুর কথা ভেবে ঠোঁটের কোণে পৈচাশিক হাসি ফুটে
উঠে।
২.
নীলু ঘুমিয়েছে কি না ভালো করে দেখলো হাসান। ইদানীং ফেসবুকে একটি মেয়ের সাথে বেশ ভাব হয়েছে হাসানের। মেয়েটি জানতে চেয়েছে হাসান বিবাহিত কি না। হাসান বলেছে সে বিবাহিত না। কারণ আজকালকার মেয়েরা বিবাহিত শুনলে আর আগ্রহ দেখায় না। ফেসবুক লগিং করতেই মেয়েটির ম্যাসেজ চোখে পড়লো। চমৎকার করে ম্যাসেজ লেখে মেয়েটি। প্রোফাইল পিকচারটার ভালো করে দেখে নিল। আধুনিক মেয়ে, দেখতেও বেশ চমৎকার। কিন্তু সমস্যা হলো নীলুকে নিয়ে। কাবাব মে হাড্ডি। যদিও নীলু ফেসবুক সম্পর্কে তেমন কোনো ধরণা রাখে না। ধারণাটা হাসানেরও ছিলো না। অফিস কলিগ আকরাম মাসখানেক আগে আইডিটা খুলে দেয়। প্রথম প্রথম তেমন একটা বসা হয়নি, কিন্তু ইদানীং মেয়েটির কারণে বসা হয়। এত সহজে যে এত সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যাবে হাসান ভাবতেও পারেনি। অপেক্ষা করতে থাকে মেয়েটির জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি লাইনে আসে এবং দুজনের চ্যাট শুরু হয়। নীলু আচমকা ঘুরে হাসানের হাতের উপর নিজের হাতটা রাখে। হাসান ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কিন্তু না সব ঠিক আছে। নীলু ঘুমের মধ্যে এমনটা করেছে। হাসান মেয়েটির সাথে চ্যাটে মনোযোগী হয়।
৩.
ইদানীং হাসানের কাজে মন বসে না। সুযোগ পেলেই ফেসবুকে ডু মারে। মেয়েটির সাথে চ্যাট করতে মনটা ছটফট করে। এক অন্য রকম আকর্ষণ আছে মেয়েটির মাঝে। ফোনটা বেজে উঠতেই মোবাইল স্কীনে নিলুর নামটা ভেসে উঠে। হ্যালো, দুপুরের খাবার খেয়েছো? নাহ্। কেন? সময় পাইনি, আর কিছু বলবে? একটা কথা ছিলো। কি কথা? ভাবছি ফোনে নয় তোমাকে সরাসরি বলবো। ওকে আমি এখন রাখছি অনেক ব্যস্ত। এই বলে ফোনটা রেখে দেয় হাসান। ইদানীং আর নীলুকে ভালো লাগে না ওর। মন পড়ে থাকে ফেসবুকের অপরিচিত মেয়েটির কাছে। ওহ্ মেয়েটির নামই তো বলা হয়নি। তানিশা চৌধুরী, গুলশানে থাকে। মেয়েটির কথা মনে পড়তেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে হাসানের। রাতে বাসায় ফিরতেই নীলু বলে উঠলো। আজকাল অনেক রাত করে অফিস থেকে ফিরছো, বউকে যে একটু সময় দিতে হয় সেটাও বুঝি ভুলে গেছো? হাসান কিছুই বলে না নীলুর কথায়। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। নীলু হাসানের হাত ধরে বলে, একটা ভালো খবর আছে। কি ভালো খবর? আমাদের...। কি আমাদের? আমাদের সন্তান আসছে...কথাটা বলেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নেয় নীলু। কথাটা শুনে আনন্দে মনটা ভরে উঠে হাসানের কিন্তু মুহূর্তেই সেই আনন্দ মিলিয়ে যায়। মুখে এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নীলু তাকিয়ে থাকে হাসানের দিকে। মুখে বিস্ময়।
৪.
দায়িত্বে অবহেলার কারণে চাকুরিটা চলে যায় হাসানের। তা ছাড়া কয়েকজন অভিযোগ করেছে হাসান এখন আর আগের মতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। সারাদিন ইন্টারনেটে পড়ে থাকে। চাকুরিটা হারিয়ে হাসান খুব ভেঙে পড়ে। হুট করে এমনটা হবে ভাবতেও পারেনি সে। অফিস থেকে বের হয়ে লোকাল বাসে চড়ে বসে। মোবাইলটা বের করে লগইন করতেই মেয়েটির ম্যাসেজ। তোমার কথা বাবাকে বলেছি, বাবা বলেছে সে আমাদের বিয়েতে রাজি আছে। খুব দ্রুত তোমার সাথে কথা বলবে। কথাটা শুনে মনটা ভালো হয়ে যায় হাসানের। একদিকে সুন্দরী বউ অন্যদিকে কোটি টাকা। রাজ্য, রাজকন্যা সবি আমার হাতে। কিন্তু সমস্যা হলো নীলুকে নিয়ে। ও থাকতে অন্য কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে তো দূরের কথা, বন্ধুত্ব শুনলেও খবর আছে। একটা ফন্দি আসে হাসানের মনে। লোভে চকচক করে উঠে হাসানের চোখ। একটা পথই আছে এখন সমাধান হিসেবে। আর সেটাই আজ রাতে করবে হাসান। বিকেলের আকাশটা তখন মেঘে ঢেকে গেছে। কেবল বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়।
৫.
বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হাসানের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে নীলু। এত রাতে ছাদে নিয়ে এলে কেনো হাসান। দেখ না তোমাকে বিয়ে করার পর রাতের আকাশ দেখা হয়নি। তাই ভাবছি আজ দু'জন রাতের আকাশ দেখবো। সত্যি হাসান, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো? সেটা আর বলতে হয় পাগলি, তোমাকে অনেক ভালবাসি। আশেপাশে তাকায় হাসান, রাতের শহর মোটামুটি ঘুমন্ত এখন। এক পা দু' পা করে একেবারে ছাদের এক কোণে চলে যায় দু'জন। এখান থেকে আকাশ দেখা যায়, দেখা যায় নিচের মাটিও তবে দুটোর দূরত্বই অনেক। নীলু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসান তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। হঠাৎ নীলু কিছু বুঝে উঠার আগেই হাসান ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নীলুকে। তারপর দ্রুত ছাদ থেকে নেমে যায়। নীলু বুঝতেও পারেনি, সে এবং তার অনাগত সন্তান কিছুক্ষণের মধ্যেই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। হাসান রুমে এসে একটা বুদ্ধি বের করে ফেলে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে সে কিছু জানে না। তা ছাড়া নীলুর মাঝে মাঝে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আছে। বৃষ্টি হয়েছে হয়তো পা পিছলে পড়ে গেছে। সবি ঠিকঠাক আছে, পথের কাটাও শেষ। দেয়ালে বাঁধানো নীলুর ছবির দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে হাসান। নীরব কণ্ঠে বলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
৬.
মোবাইলে ফেসবুক লগিং করতেই তানিশার নিউ ম্যাসেজ। বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে হাসান। কিন্তু ম্যাসেজটা পড়েই থমকে গেলো হাসান। মাথার উপর সবকিছু কেমন যেন ঘুরতে লাগলো। চোখের ভুল হচ্ছে না তো। তানিশা লিখেছে, আসলে তার ভুল হয়ে গেছে। হাসানকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। কারণ তানিশার পুরনো প্রেমিক আবার ফিরে এসেছে। সো প্রথম প্রেম বলে কথা, তার কাছেই তানিশাকে ছুটতে হলো। হাসান যেনো তাকে ক্ষমা করে দেয়। হাসান জানতো না তানিশার আগে প্রেম ছিলো। তা ছাড়া বড় লোকের মেয়ে বলে কথা, একাধিক বন্ধু, প্রেমিক থাকতেই পারে। নিজের বোকামি বুঝতে পেরে নিজের চুলই ছিড়তে ইচ্ছে করছে হাসানের। খুব জোরে মোবাইলটাকে দেয়ালে ছুড়ে মারলো হাসান। সব নষ্টের মূল এই জিনিসটা। সব শেষ হয়ে গেছে তার। নীলুর কথা মনে পড়তেই দু'চোখ বেয়ে জল ঝড়ে পড়তে লাগলো। আর নীলুর গর্ভে থাকা হাসানের অনাগত সন্তান...। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে হাসান। এ কি করলাম আমি.... কি করলাম। সব শেষ হয়ে গেলো।
৭.
নীলুর লাশের পাশে মানুষের ভিড়। রক্তে একাকার হয়ে গেছে পথের ধুলোগুলো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখলো হাসান। চোখের কোণে তখনো কান্না। একবারের জন্যও আর নীলুকে দেখতে যেতে মন চাইছে না তার। অনুশোচনায় পুড়ছে। একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে এ কাজটা কিভাবে করলো? চারটি বছর প্রেমের পর যাকে বিয়ে করেছে। চার সেকেন্ডে তাকে শেষ করে দিলো? নিজেকেই ছিঃ ছিঃ দেয় হাসান। এক পা দু পা করে থানার দিকে হেঁটে যায়। সবকিছু স্বীকার করবে সে, অকারণে নীলুকে হত্যার কথা। কিছুই আর লুকাবে না। কিছুই না।
sranontojugantor@gmail.com
২.
নীলু ঘুমিয়েছে কি না ভালো করে দেখলো হাসান। ইদানীং ফেসবুকে একটি মেয়ের সাথে বেশ ভাব হয়েছে হাসানের। মেয়েটি জানতে চেয়েছে হাসান বিবাহিত কি না। হাসান বলেছে সে বিবাহিত না। কারণ আজকালকার মেয়েরা বিবাহিত শুনলে আর আগ্রহ দেখায় না। ফেসবুক লগিং করতেই মেয়েটির ম্যাসেজ চোখে পড়লো। চমৎকার করে ম্যাসেজ লেখে মেয়েটি। প্রোফাইল পিকচারটার ভালো করে দেখে নিল। আধুনিক মেয়ে, দেখতেও বেশ চমৎকার। কিন্তু সমস্যা হলো নীলুকে নিয়ে। কাবাব মে হাড্ডি। যদিও নীলু ফেসবুক সম্পর্কে তেমন কোনো ধরণা রাখে না। ধারণাটা হাসানেরও ছিলো না। অফিস কলিগ আকরাম মাসখানেক আগে আইডিটা খুলে দেয়। প্রথম প্রথম তেমন একটা বসা হয়নি, কিন্তু ইদানীং মেয়েটির কারণে বসা হয়। এত সহজে যে এত সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যাবে হাসান ভাবতেও পারেনি। অপেক্ষা করতে থাকে মেয়েটির জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি লাইনে আসে এবং দুজনের চ্যাট শুরু হয়। নীলু আচমকা ঘুরে হাসানের হাতের উপর নিজের হাতটা রাখে। হাসান ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কিন্তু না সব ঠিক আছে। নীলু ঘুমের মধ্যে এমনটা করেছে। হাসান মেয়েটির সাথে চ্যাটে মনোযোগী হয়।
৩.
ইদানীং হাসানের কাজে মন বসে না। সুযোগ পেলেই ফেসবুকে ডু মারে। মেয়েটির সাথে চ্যাট করতে মনটা ছটফট করে। এক অন্য রকম আকর্ষণ আছে মেয়েটির মাঝে। ফোনটা বেজে উঠতেই মোবাইল স্কীনে নিলুর নামটা ভেসে উঠে। হ্যালো, দুপুরের খাবার খেয়েছো? নাহ্। কেন? সময় পাইনি, আর কিছু বলবে? একটা কথা ছিলো। কি কথা? ভাবছি ফোনে নয় তোমাকে সরাসরি বলবো। ওকে আমি এখন রাখছি অনেক ব্যস্ত। এই বলে ফোনটা রেখে দেয় হাসান। ইদানীং আর নীলুকে ভালো লাগে না ওর। মন পড়ে থাকে ফেসবুকের অপরিচিত মেয়েটির কাছে। ওহ্ মেয়েটির নামই তো বলা হয়নি। তানিশা চৌধুরী, গুলশানে থাকে। মেয়েটির কথা মনে পড়তেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে হাসানের। রাতে বাসায় ফিরতেই নীলু বলে উঠলো। আজকাল অনেক রাত করে অফিস থেকে ফিরছো, বউকে যে একটু সময় দিতে হয় সেটাও বুঝি ভুলে গেছো? হাসান কিছুই বলে না নীলুর কথায়। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। নীলু হাসানের হাত ধরে বলে, একটা ভালো খবর আছে। কি ভালো খবর? আমাদের...। কি আমাদের? আমাদের সন্তান আসছে...কথাটা বলেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নেয় নীলু। কথাটা শুনে আনন্দে মনটা ভরে উঠে হাসানের কিন্তু মুহূর্তেই সেই আনন্দ মিলিয়ে যায়। মুখে এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নীলু তাকিয়ে থাকে হাসানের দিকে। মুখে বিস্ময়।
৪.
দায়িত্বে অবহেলার কারণে চাকুরিটা চলে যায় হাসানের। তা ছাড়া কয়েকজন অভিযোগ করেছে হাসান এখন আর আগের মতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। সারাদিন ইন্টারনেটে পড়ে থাকে। চাকুরিটা হারিয়ে হাসান খুব ভেঙে পড়ে। হুট করে এমনটা হবে ভাবতেও পারেনি সে। অফিস থেকে বের হয়ে লোকাল বাসে চড়ে বসে। মোবাইলটা বের করে লগইন করতেই মেয়েটির ম্যাসেজ। তোমার কথা বাবাকে বলেছি, বাবা বলেছে সে আমাদের বিয়েতে রাজি আছে। খুব দ্রুত তোমার সাথে কথা বলবে। কথাটা শুনে মনটা ভালো হয়ে যায় হাসানের। একদিকে সুন্দরী বউ অন্যদিকে কোটি টাকা। রাজ্য, রাজকন্যা সবি আমার হাতে। কিন্তু সমস্যা হলো নীলুকে নিয়ে। ও থাকতে অন্য কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে তো দূরের কথা, বন্ধুত্ব শুনলেও খবর আছে। একটা ফন্দি আসে হাসানের মনে। লোভে চকচক করে উঠে হাসানের চোখ। একটা পথই আছে এখন সমাধান হিসেবে। আর সেটাই আজ রাতে করবে হাসান। বিকেলের আকাশটা তখন মেঘে ঢেকে গেছে। কেবল বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়।
৫.
বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হাসানের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে নীলু। এত রাতে ছাদে নিয়ে এলে কেনো হাসান। দেখ না তোমাকে বিয়ে করার পর রাতের আকাশ দেখা হয়নি। তাই ভাবছি আজ দু'জন রাতের আকাশ দেখবো। সত্যি হাসান, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো? সেটা আর বলতে হয় পাগলি, তোমাকে অনেক ভালবাসি। আশেপাশে তাকায় হাসান, রাতের শহর মোটামুটি ঘুমন্ত এখন। এক পা দু' পা করে একেবারে ছাদের এক কোণে চলে যায় দু'জন। এখান থেকে আকাশ দেখা যায়, দেখা যায় নিচের মাটিও তবে দুটোর দূরত্বই অনেক। নীলু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসান তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। হঠাৎ নীলু কিছু বুঝে উঠার আগেই হাসান ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নীলুকে। তারপর দ্রুত ছাদ থেকে নেমে যায়। নীলু বুঝতেও পারেনি, সে এবং তার অনাগত সন্তান কিছুক্ষণের মধ্যেই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। হাসান রুমে এসে একটা বুদ্ধি বের করে ফেলে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে সে কিছু জানে না। তা ছাড়া নীলুর মাঝে মাঝে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আছে। বৃষ্টি হয়েছে হয়তো পা পিছলে পড়ে গেছে। সবি ঠিকঠাক আছে, পথের কাটাও শেষ। দেয়ালে বাঁধানো নীলুর ছবির দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে হাসান। নীরব কণ্ঠে বলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
৬.
মোবাইলে ফেসবুক লগিং করতেই তানিশার নিউ ম্যাসেজ। বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে হাসান। কিন্তু ম্যাসেজটা পড়েই থমকে গেলো হাসান। মাথার উপর সবকিছু কেমন যেন ঘুরতে লাগলো। চোখের ভুল হচ্ছে না তো। তানিশা লিখেছে, আসলে তার ভুল হয়ে গেছে। হাসানকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। কারণ তানিশার পুরনো প্রেমিক আবার ফিরে এসেছে। সো প্রথম প্রেম বলে কথা, তার কাছেই তানিশাকে ছুটতে হলো। হাসান যেনো তাকে ক্ষমা করে দেয়। হাসান জানতো না তানিশার আগে প্রেম ছিলো। তা ছাড়া বড় লোকের মেয়ে বলে কথা, একাধিক বন্ধু, প্রেমিক থাকতেই পারে। নিজের বোকামি বুঝতে পেরে নিজের চুলই ছিড়তে ইচ্ছে করছে হাসানের। খুব জোরে মোবাইলটাকে দেয়ালে ছুড়ে মারলো হাসান। সব নষ্টের মূল এই জিনিসটা। সব শেষ হয়ে গেছে তার। নীলুর কথা মনে পড়তেই দু'চোখ বেয়ে জল ঝড়ে পড়তে লাগলো। আর নীলুর গর্ভে থাকা হাসানের অনাগত সন্তান...। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে হাসান। এ কি করলাম আমি.... কি করলাম। সব শেষ হয়ে গেলো।
৭.
নীলুর লাশের পাশে মানুষের ভিড়। রক্তে একাকার হয়ে গেছে পথের ধুলোগুলো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখলো হাসান। চোখের কোণে তখনো কান্না। একবারের জন্যও আর নীলুকে দেখতে যেতে মন চাইছে না তার। অনুশোচনায় পুড়ছে। একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে এ কাজটা কিভাবে করলো? চারটি বছর প্রেমের পর যাকে বিয়ে করেছে। চার সেকেন্ডে তাকে শেষ করে দিলো? নিজেকেই ছিঃ ছিঃ দেয় হাসান। এক পা দু পা করে থানার দিকে হেঁটে যায়। সবকিছু স্বীকার করবে সে, অকারণে নীলুকে হত্যার কথা। কিছুই আর লুকাবে না। কিছুই না।
sranontojugantor@gmail.com
No comments:
Post a Comment