চাঁদপুর, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০১৪, ২৪ শ্রাবণ ১৪২১, ১১ শাওয়াল ১৪৩৫
"ভৌতিক গল্প
"ভৌতিক গল্প
পিচাশ
সোহানুর রহমান অনন্ত
১
হেড লাইটটা অফ হয়ে যেতেই অন্ধকারে ঢেকে গেলো চারপাশ। শাহেদ নিলুর মুখের দিকে তাকালো। ভয়ে মুখটা চুপসে আছে। বড় একটা ছুটি পড়ায় শাহেদ এবং নিলু শাহেদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে। সাথে আছে শাহেদের খুব কাছের বন্ধু মাসুম। পেছনের সীটে হেলান দিয়ে মাসুম নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। বড় অদ্ভুত শাহেদদের গ্রাম। এখনো আধুনিকতার ছিটেফোটাও লাগেনি। গ্রামে ঢুকার মুখে প্রায় মাইল দুয়েকের একটি জঙ্গল। জায়গাটার নাম জংতলা। এখানকার মানুষেরা জংতলা জঙ্গল বলে ডাকে। শাহেদ ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় একবার গ্রামে ঘুরতে এসেছিলো। তারপর আর আসা হয়নি। নিলুর সাথে বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হলো। শহরের মেয়ে গ্রাম সম্পর্কে নিলুর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তাই সব সময় গ্রামে যাবো বলে শাহেদের মাথা খারাপ করে ফেলতো। গ্রামের বাড়িতে থাকার মধ্যে শাহেদদের পুরনো কেয়ারটেকার রাখাল দা আছেন। তিনিই বছরের পর বছর সব কিছু দেখাশোনা করে আসছেন। গাড়িটা নষ্ট হওয়ায় আর জায়গা পেলো না। বলে উঠলো শাহেদ, চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ যদিও নিলুকে কিছুই বলতে পারছে না। বেচারি এমনিতেই ভয়ে চুপসে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে কাল সকালেই ঢাকা যাওয়ার জন্য আবার উঠে পড়ে লাগবে। আশে-পাশে কোন আলো চোখে পড়ছে না। হঠাৎ কাছে কোথায় বিকট একটা চিৎকারের শব্দ হয়। অনেকটা মানুষের চিৎকারের মতো। ভয়ে প্রায় লাফিয়ে উঠে নিলু। শাহেদও ভয় পেয়ে গেছে। মোবাইলের হালকা আলোয়, যদিও কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। মাসুম পেছনে তখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। শাহেদ নিলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ও কিছু না, গ্রামে এমন নিশাচর প্রাণীর অনেক শব্দ রাতে পাওয়া যায়। শাহেদ কথা শেষ না করতেই গাড়িটা মৃদু ধুলে উঠলো। নিুল চিৎকার করতেই ধুলোনি থেমে গেলো। নিলু রীতিমত ভয়ে কাঁপছে আর মুখ ফুটে শুধু একটা কথাই বলছে। শাহেদ আমাকে ঢাকা নিয়ে চলো। আমি এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে চাই না। শাহেদ নিলুকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে লাগলো। হয়তো সবি কাকতালীয় ব্যাপার। মনের ভুল। তা ছাড়া এত দূর থেকে এসেছি, এখন আবার ফিরে যাবো। শাহেদ গাড়ি থেকে বের হতে গেলে নীলু শাহেদের হাত চেপে ধরে। না তুমি বের হবে না। শাহেদ নিলুর হাতটা হালকাভাবে ছাড়িয়ে বলে। লক্ষীটি, ভয় পেয়ো না আমিতো আছি। কারো সাহায্য না পেলে তো সারারাত এখানেই থাকতে হবে।
২
আকাশে একটুকুরো মরা চাঁদ। শাহেদ আশে-পাশে তাকালো। কোথাও মানুষে নামগন্ধ নেই। কি করবে কি করবে না ঠিক বুঝতে পারছে না শাহেদ। কোন কারণ ছাড়াই মোবাইলের নেটওয়ার্ক সমস্যা করছে। কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কেন যে বুদ্ধি করে একটা টর্চ সাথে করে আনলো না। মাসুম চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসেছে। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল, কোথায় আমরা?। নিলু বললাম, গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। কোথায় আছি সেটা তো আমি জানি না, তবে শাহেদ বলতে পারবেন। ঠিক সেই মুহুর্তে নিলু চিৎকার দিয়ে উঠে কি যেন দেখে। শাহেদ গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। নিলুর চিৎকার শুনে গাড়ির ভেতরে ঢুকে। মেয়েটা ফোপাচ্ছে। আঙুল দিয়ে রাস্তার পাশের জঙ্গলের দিকে দেখালো। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, দুটো চোখ।
৩
শাহেদ আর মাসুম বেশ ভালো করেই দেখলো। কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই। হ্যালুসিনেসন হয়েছে, বলল মাসুম। শাহেদ মাথা নেড়ে বলল হতে পারে। এভাবে কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ। নিলু ভেতর থেকে গলা ছেড়ে বলে, শাহেদ কোন উপায় পেলে। না। মাসুম বলল এখন কি করবি?। কিছু বুঝতে পারছি না, শাহেদ বলল। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা শব্দ কানে ভেসে এলো। দু'জনই একসঙ্গে তাকালো সেই দিকে। অন্ধকারের বুক চিরে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো শাহেদের সামনে।
৪
এই গরমের মধ্যেও রিক্সাওলা চাঁদর মুড়ি দিয়ে রেখেছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো রিক্সায় একটা হ্যারিকেন নেই। কোন আলো ছাড়াই এই জঙ্গলের ভেতর কিভাবে চালাচ্ছে কে জানে। লোকটা বোধহয় শাহেদের মনের ভাষা বুঝতে পারলো। তাই হাসতে হাসতে বলল, আপনেরা শহরের মানুষ, আর আমরা গ্রামের, এই জঙ্গলের পথঘাট সব কিছু আমার চোখের সামনে থাকে। চোখ বন্ধ কইরাও আমি চালাতে পারি। শাহেদ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। উত্তর শুনে, কিভাবে বুঝলো লোকটা যে শাহেদ এ কথাটাই ভাবছে। নিলু এসে যোগ দিলো ওদের মাঝে। মাসুম বলল, আশে-পাশে কোথাও গ্যারেজ আছে?। রিক্সাওলা হেসে বলল, এইহানে তো কারো গাড়িই নাই, গ্যারেজ কইথেন আইবো। তয় মাইল তিনেক গেলে, একখান গ্যারেজ পাইবার পারেন। মাসুম শাহেদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই নিলুকে নিয়ে এখানে অপেক্ষা কর, আমি বরং গিয়ে মিস্ত্রি নিয়ে আসি। শাহেদ বলল, তুই তো কিছুই চিনিস না। আরে তাতে কি, কোন সমস্যা হবে না। এই বলে মাসুম রিক্সায় ওঠে বসলো। আর অমনি রিক্সা চলতে লাগলো। শাহেদের মনে হলো আরে রিক্সাওলার চেহারাই তো দেখা হয়নি। চাঁদর দিয়ে যে ঘোমটা দিয়েছে তাতে দেখার কথাও না। অন্ধকারে রিক্সাটা মিলিয়ে গেলো।
৫
জংতলা এই জঙ্গল নিয়ে অনেক বিচ্ছিরি ঘটনা মানুষের মুখে মুখে। প্রকৃতির ভয়াবহতায় এখানে সব কিছু বিরাজমান। লোকমুখে শোনা যেত এই জঙ্গলে নাকি পিচাশ ঘুরে ফিরে। অনেকেই অনেক কিছু দেখেছে এই জঙ্গলে। আবার এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে অনেকের জীবনে ঘটে গেছে ভয়াবহ ঘটনা। সে অনেক আগের কথা। এখন এই আধুনিক সভ্যতায় এইসব ভাবতেও চায়না শাহেদ। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ফোনেও কারও সাথে যোগযোগ করতে পারছে না। নেটওয়ার্ক নেই। বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাহেদ। নিলু সীটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠলো ভয়ে এক হাত পিছে সরে গেলো শাহেদ। ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ড দিতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। নিলু জেগে উঠে বলল, কি হয়েছে?। শাহেদ বলল, গাড়িটার পাগলামো, নিজে নিজেই ভালো হয়ে গেছে। নিলুর চোখে মুখে স্বস্তির ছাপ। দীর্ঘ জঙ্গলে সরু ফাঁকা রাস্তা যতটুকু সম্ভব দ্রুত চালাতে চাচ্ছে শাহেদ। এই জঙ্গল থেকে আগে বের হতে হবে। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় তেমন একটা এগুতে পারছে না। নিলু কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
৬
লাইটের আলোয় অনেক দূর দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ শাহেদ দেখলো সামনে একটা রিক্সা দাঁড়ানো। ব্রেক কষলো শাহেদ। আরে এটা তো সেই রিক্সা যেটাতে মাসুম উঠেছিলো। গাড়ি থেকে নেমে দেখে রিক্সায় কেউ নেই। আরে দু'জন কোথায় গেলো। মাসুম মাসুম বলে খুব জোরে চিৎকার করলো। কোন উত্তর নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা শব্দ কানে এলো শাহেদের। কে যেন করমড় করমড় করে হাড়গোড় চিবিয়ে খাচ্ছে। আস্তে আস্তে সেই শব্দ ধরে এগিয়ে যায় শাহেদ। একটা পঁচা গন্ধ শাহেদের নাকে ধাক্কা খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাছে কোথাও একটা গলিতো লাশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শব্দটা আরো স্পর্ক হচ্ছে, অন্ধকার একেবারে সয়ে এসেছে চোখে। শাহেদ দেখলো একটা কালো অবয়ব কি যেন চিব্বুচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে তার আলো সরাসরি ফেললো তার উপর। মুহূতেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো শাহেদের শরীরে। মাসুমের মৃত্যুর দেহটা মাটিতে পড়ে আছে আর তার উপর বসে আছে বিকৃত চেহারার এক মানুষ। যার মাথাটা অনেক বড়। চোখ বলতে কিছুই নেই। মুখের এক পাশের মাংস পচে খয়ে খয়ে পড়ছে। সারা শরীর বড় বড় লমে ঢাকা। মুখ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ফোটা। শাহেদের দিকে তাকিয়ে একটা বিকৃত হাসি দিলো। শাহেদ নড়তেও পারছে না, চিৎকারও করতে পারছে না। এক সময় সেই জিনিসটা হামাগুড়ি দিয়ে শাহেদের দিকে আসতে লাগলো। শাহেদ খুব দ্রুত দৌড়াতে লাগলো। গাড়িতে উঠেই দ্রুত টান দিলো। নিলু বলল কি হয়েছে। শাহেদ কিছুই বলছে না, চোখের কোনে বন্ধুর জন্য অশ্রু এসে জমেছে। যত দ্রুত সম্ভব লোকালয়ে যেতে হবে। বাঁচতে হবে তাদেরকে। কিন্তু হঠাৎ করেই গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেলো। নিভে গেলো হেডলাইট। চারিপাশে অন্ধকার নেমে এলো। অন্ধকার চোখে সয়ে আসতেই দেখে সামনের শুরু রাস্তা দিয়ে একটা অবয়ব হামাগুড়ি দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ঠিক সেই সময় সেই গন্ধটা আবার এসে নাকে ধাক্কা মারলো।
ই-মেইল:sranontojugantor@gmail.com
হেড লাইটটা অফ হয়ে যেতেই অন্ধকারে ঢেকে গেলো চারপাশ। শাহেদ নিলুর মুখের দিকে তাকালো। ভয়ে মুখটা চুপসে আছে। বড় একটা ছুটি পড়ায় শাহেদ এবং নিলু শাহেদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে। সাথে আছে শাহেদের খুব কাছের বন্ধু মাসুম। পেছনের সীটে হেলান দিয়ে মাসুম নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। বড় অদ্ভুত শাহেদদের গ্রাম। এখনো আধুনিকতার ছিটেফোটাও লাগেনি। গ্রামে ঢুকার মুখে প্রায় মাইল দুয়েকের একটি জঙ্গল। জায়গাটার নাম জংতলা। এখানকার মানুষেরা জংতলা জঙ্গল বলে ডাকে। শাহেদ ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় একবার গ্রামে ঘুরতে এসেছিলো। তারপর আর আসা হয়নি। নিলুর সাথে বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হলো। শহরের মেয়ে গ্রাম সম্পর্কে নিলুর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তাই সব সময় গ্রামে যাবো বলে শাহেদের মাথা খারাপ করে ফেলতো। গ্রামের বাড়িতে থাকার মধ্যে শাহেদদের পুরনো কেয়ারটেকার রাখাল দা আছেন। তিনিই বছরের পর বছর সব কিছু দেখাশোনা করে আসছেন। গাড়িটা নষ্ট হওয়ায় আর জায়গা পেলো না। বলে উঠলো শাহেদ, চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ যদিও নিলুকে কিছুই বলতে পারছে না। বেচারি এমনিতেই ভয়ে চুপসে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে কাল সকালেই ঢাকা যাওয়ার জন্য আবার উঠে পড়ে লাগবে। আশে-পাশে কোন আলো চোখে পড়ছে না। হঠাৎ কাছে কোথায় বিকট একটা চিৎকারের শব্দ হয়। অনেকটা মানুষের চিৎকারের মতো। ভয়ে প্রায় লাফিয়ে উঠে নিলু। শাহেদও ভয় পেয়ে গেছে। মোবাইলের হালকা আলোয়, যদিও কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। মাসুম পেছনে তখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। শাহেদ নিলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ও কিছু না, গ্রামে এমন নিশাচর প্রাণীর অনেক শব্দ রাতে পাওয়া যায়। শাহেদ কথা শেষ না করতেই গাড়িটা মৃদু ধুলে উঠলো। নিুল চিৎকার করতেই ধুলোনি থেমে গেলো। নিলু রীতিমত ভয়ে কাঁপছে আর মুখ ফুটে শুধু একটা কথাই বলছে। শাহেদ আমাকে ঢাকা নিয়ে চলো। আমি এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে চাই না। শাহেদ নিলুকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে লাগলো। হয়তো সবি কাকতালীয় ব্যাপার। মনের ভুল। তা ছাড়া এত দূর থেকে এসেছি, এখন আবার ফিরে যাবো। শাহেদ গাড়ি থেকে বের হতে গেলে নীলু শাহেদের হাত চেপে ধরে। না তুমি বের হবে না। শাহেদ নিলুর হাতটা হালকাভাবে ছাড়িয়ে বলে। লক্ষীটি, ভয় পেয়ো না আমিতো আছি। কারো সাহায্য না পেলে তো সারারাত এখানেই থাকতে হবে।
২
আকাশে একটুকুরো মরা চাঁদ। শাহেদ আশে-পাশে তাকালো। কোথাও মানুষে নামগন্ধ নেই। কি করবে কি করবে না ঠিক বুঝতে পারছে না শাহেদ। কোন কারণ ছাড়াই মোবাইলের নেটওয়ার্ক সমস্যা করছে। কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কেন যে বুদ্ধি করে একটা টর্চ সাথে করে আনলো না। মাসুম চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসেছে। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল, কোথায় আমরা?। নিলু বললাম, গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। কোথায় আছি সেটা তো আমি জানি না, তবে শাহেদ বলতে পারবেন। ঠিক সেই মুহুর্তে নিলু চিৎকার দিয়ে উঠে কি যেন দেখে। শাহেদ গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। নিলুর চিৎকার শুনে গাড়ির ভেতরে ঢুকে। মেয়েটা ফোপাচ্ছে। আঙুল দিয়ে রাস্তার পাশের জঙ্গলের দিকে দেখালো। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, দুটো চোখ।
৩
শাহেদ আর মাসুম বেশ ভালো করেই দেখলো। কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই। হ্যালুসিনেসন হয়েছে, বলল মাসুম। শাহেদ মাথা নেড়ে বলল হতে পারে। এভাবে কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ। নিলু ভেতর থেকে গলা ছেড়ে বলে, শাহেদ কোন উপায় পেলে। না। মাসুম বলল এখন কি করবি?। কিছু বুঝতে পারছি না, শাহেদ বলল। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা শব্দ কানে ভেসে এলো। দু'জনই একসঙ্গে তাকালো সেই দিকে। অন্ধকারের বুক চিরে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো শাহেদের সামনে।
৪
এই গরমের মধ্যেও রিক্সাওলা চাঁদর মুড়ি দিয়ে রেখেছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো রিক্সায় একটা হ্যারিকেন নেই। কোন আলো ছাড়াই এই জঙ্গলের ভেতর কিভাবে চালাচ্ছে কে জানে। লোকটা বোধহয় শাহেদের মনের ভাষা বুঝতে পারলো। তাই হাসতে হাসতে বলল, আপনেরা শহরের মানুষ, আর আমরা গ্রামের, এই জঙ্গলের পথঘাট সব কিছু আমার চোখের সামনে থাকে। চোখ বন্ধ কইরাও আমি চালাতে পারি। শাহেদ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। উত্তর শুনে, কিভাবে বুঝলো লোকটা যে শাহেদ এ কথাটাই ভাবছে। নিলু এসে যোগ দিলো ওদের মাঝে। মাসুম বলল, আশে-পাশে কোথাও গ্যারেজ আছে?। রিক্সাওলা হেসে বলল, এইহানে তো কারো গাড়িই নাই, গ্যারেজ কইথেন আইবো। তয় মাইল তিনেক গেলে, একখান গ্যারেজ পাইবার পারেন। মাসুম শাহেদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই নিলুকে নিয়ে এখানে অপেক্ষা কর, আমি বরং গিয়ে মিস্ত্রি নিয়ে আসি। শাহেদ বলল, তুই তো কিছুই চিনিস না। আরে তাতে কি, কোন সমস্যা হবে না। এই বলে মাসুম রিক্সায় ওঠে বসলো। আর অমনি রিক্সা চলতে লাগলো। শাহেদের মনে হলো আরে রিক্সাওলার চেহারাই তো দেখা হয়নি। চাঁদর দিয়ে যে ঘোমটা দিয়েছে তাতে দেখার কথাও না। অন্ধকারে রিক্সাটা মিলিয়ে গেলো।
৫
জংতলা এই জঙ্গল নিয়ে অনেক বিচ্ছিরি ঘটনা মানুষের মুখে মুখে। প্রকৃতির ভয়াবহতায় এখানে সব কিছু বিরাজমান। লোকমুখে শোনা যেত এই জঙ্গলে নাকি পিচাশ ঘুরে ফিরে। অনেকেই অনেক কিছু দেখেছে এই জঙ্গলে। আবার এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে অনেকের জীবনে ঘটে গেছে ভয়াবহ ঘটনা। সে অনেক আগের কথা। এখন এই আধুনিক সভ্যতায় এইসব ভাবতেও চায়না শাহেদ। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ফোনেও কারও সাথে যোগযোগ করতে পারছে না। নেটওয়ার্ক নেই। বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাহেদ। নিলু সীটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠলো ভয়ে এক হাত পিছে সরে গেলো শাহেদ। ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ড দিতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। নিলু জেগে উঠে বলল, কি হয়েছে?। শাহেদ বলল, গাড়িটার পাগলামো, নিজে নিজেই ভালো হয়ে গেছে। নিলুর চোখে মুখে স্বস্তির ছাপ। দীর্ঘ জঙ্গলে সরু ফাঁকা রাস্তা যতটুকু সম্ভব দ্রুত চালাতে চাচ্ছে শাহেদ। এই জঙ্গল থেকে আগে বের হতে হবে। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় তেমন একটা এগুতে পারছে না। নিলু কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
৬
লাইটের আলোয় অনেক দূর দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ শাহেদ দেখলো সামনে একটা রিক্সা দাঁড়ানো। ব্রেক কষলো শাহেদ। আরে এটা তো সেই রিক্সা যেটাতে মাসুম উঠেছিলো। গাড়ি থেকে নেমে দেখে রিক্সায় কেউ নেই। আরে দু'জন কোথায় গেলো। মাসুম মাসুম বলে খুব জোরে চিৎকার করলো। কোন উত্তর নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা শব্দ কানে এলো শাহেদের। কে যেন করমড় করমড় করে হাড়গোড় চিবিয়ে খাচ্ছে। আস্তে আস্তে সেই শব্দ ধরে এগিয়ে যায় শাহেদ। একটা পঁচা গন্ধ শাহেদের নাকে ধাক্কা খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাছে কোথাও একটা গলিতো লাশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শব্দটা আরো স্পর্ক হচ্ছে, অন্ধকার একেবারে সয়ে এসেছে চোখে। শাহেদ দেখলো একটা কালো অবয়ব কি যেন চিব্বুচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে তার আলো সরাসরি ফেললো তার উপর। মুহূতেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো শাহেদের শরীরে। মাসুমের মৃত্যুর দেহটা মাটিতে পড়ে আছে আর তার উপর বসে আছে বিকৃত চেহারার এক মানুষ। যার মাথাটা অনেক বড়। চোখ বলতে কিছুই নেই। মুখের এক পাশের মাংস পচে খয়ে খয়ে পড়ছে। সারা শরীর বড় বড় লমে ঢাকা। মুখ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ফোটা। শাহেদের দিকে তাকিয়ে একটা বিকৃত হাসি দিলো। শাহেদ নড়তেও পারছে না, চিৎকারও করতে পারছে না। এক সময় সেই জিনিসটা হামাগুড়ি দিয়ে শাহেদের দিকে আসতে লাগলো। শাহেদ খুব দ্রুত দৌড়াতে লাগলো। গাড়িতে উঠেই দ্রুত টান দিলো। নিলু বলল কি হয়েছে। শাহেদ কিছুই বলছে না, চোখের কোনে বন্ধুর জন্য অশ্রু এসে জমেছে। যত দ্রুত সম্ভব লোকালয়ে যেতে হবে। বাঁচতে হবে তাদেরকে। কিন্তু হঠাৎ করেই গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেলো। নিভে গেলো হেডলাইট। চারিপাশে অন্ধকার নেমে এলো। অন্ধকার চোখে সয়ে আসতেই দেখে সামনের শুরু রাস্তা দিয়ে একটা অবয়ব হামাগুড়ি দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ঠিক সেই সময় সেই গন্ধটা আবার এসে নাকে ধাক্কা মারলো।
ই-মেইল:sranontojugantor@gmail.com
No comments:
Post a Comment