join facebook page

Saturday, 9 August 2014

চাঁদপুর, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০১৪, ২৫ শ্রাবণ ১৪২১, ১২ শাওয়াল ১৪৩৫


কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি
সোহানুর রহমান অনন্ত


আমার মতো এমন একটি কালো মেয়ের পাশে হাঁটতে তোর খারাপ লাগে না? হাসতে হাসতে বললো জাকিয়া। আমি বুট চাবাতে চাবতে বললাম, এখানে খারাপ লাগার কি আছে? ভালো করে চোখ মেলে দেখ, আশেপাশে ছেলেদের পাশে কতো সুন্দরী মেয়ে আর তুই কিনা... এখনো স্টুপিড রয়ে গেলি। খোলা বাতাসে উড়ছিলো জাকিয়ার চুলগুলো, বার বার মুখের উপর আছড়ে পড়ছে বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো। এমন হা করে কি দেখিস? তোকে দেখছি। আমার কি মাথায শিং গজিয়েছে? না, ঘাড়ের পাশ দিয়ে আরেকটা মাথা বের হচ্ছে। কি বললি, তুই একটা শয়তান, রেগে গেলো জাকিয়া। তোর কালো মুখটা রাগলে আরো ভালোলাগে। পাম দিচ্ছিস্? তুই আমার বন্ধু তোকে পাম দেয়ার কি দরকার। কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, যার হৃদয়টা নিখাদ সুন্দর। আহারে কতো রোমান্টিক কথা, তোর কথা শুনে আমার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। আমার প্রেমে পড়। মাথা খারাপ আমার। এখানে মাথা খারাপের কি হলো, পড়াশোনা তো শেষ করলি বিয়া শাদী এবার কর। কালো মেয়েদের কপালে এত সহজে বর জোটে না। আমাকে বিয়ে করবি? হেসে বললাম। তোর ফাজলামো করার অভ্যাসটা আর গেলো না। তুই তো দেখছি আটো মেশিন, সব কিছুকেই ফাজলামো মনে করিস্। আরে বাবা আমি তো সিরিয়াস। হয়েছে তোর সিরিয়াস নিয়ে তুই থাক আমি গেলাম। এই বলে জাকিয়া হাঁটতে লাগলো। আরে শোন, আমি কিন্তু আসলেই সিরিয়াস এই বলে জাকিয়ার পেছনে হাঁটতে লাগলাম।

২.

তুই আমাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস্ দিলি কেন? ফোনটা ধরেই বললো জাকিয়া। কেনো তুই কি বারাক ওবামার বউ হয়ে গেছিস যে তোকে নিয়ে স্ট্যাটাস্ দেয়া যাবে না। দেখ আরিয়ান সব কিছু নিয়ে ফাজলামো করিস্ না। কেনো তোর বয়ফ্রেন্ড কিছু বলেছে স্ট্যাটাস্ দেখে? আশ্চর্য তুই দেখছি আমাকে নিয়ে জোক শুরু করে দিয়েছিস্। কি করবো সিরিয়াস কিছু বললেও তো তুই জোক হিসেবে দেখছ। শোন পড়াশোনা শেষ করেছিস্ এখন একটা চাকুরি বাকরি কর। তারপর বিয়ে করে সংসারি হ। আমি তো তোকে এটাই বুঝাতে চাই বন্ধু। মানে? মানে তোকে আমার ভালোলাগে। হাও ফানি, তোর মতো এমন স্মার্ট ছেলের পাশে আমার মতো একটা মেয়েকে মানাবে না বন্ধু। কি সব যে বলিস্ না তুই, কালোই জগতের আলো। হয়েছে তোকে আর কবি কবি ভাব দেখাতে হবে না। ফোনটা রাখ আমি ঘুমোবো অনেক রাত হয়েছে। তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে। তাহলে ফোন কানে নিয়ে থাক, আমি ঘুমালাম। আরে শোন, কি মেয়েরে বাবা, টু টু লাইন কাটার শব্দ।

৩.

জাকিয়াকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারি না, ওকে আমি কতো ভালবাসি। আমার সব কথা ও জোক হিসেবে নেয়। আমি কষ্ট পাই, তবুও জোর করতে পারি না। আমি জাকিয়ার ভেতরের সৌন্দর্যকে দেখেছি, বাইরের রূপটা নয়। অর্থে অনেক সুন্দর মুখ মেলে কিন্তু সুন্দর মন মেলে না। যেটা জাকিয়ার মাঝে আমি পেয়েছি। ইদানীং জাকিয়ার সাথে তেমন একটা দেখা করি না, ওর সামনে গেলেই ওকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। যে ভালবাসাটা আমার কাছে সিরিয়াস হলেও জাকিয়ার কাছে জোক। ফিফা গেমস্-এর মতই নকল মানুষের কথা। এভাবেই আমার জীবন বয়ে চলে রেললাইনের মতো, একা একা।

৪.

আমি এখন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে চাকুরি করি। কখনো সুন্দরবন তো কখনো রাঙামাটি। স্থায়ীভাবে কোথাও থাকতে পারি না। তাই জাকিয়ার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই। দীর্ঘ তিন বছর পর হঠাৎ জাকিয়ার ফোন পেয়ে বেশ আনন্দিত হলাম। কি ব্যাপার এতদিন পর মনে পড়লো? আমার তো মনে পড়েছে তোর বোদহয় তাও হয় না। তুই তো আমার মন নতুন করে মনে করার কি আছে তোকে। বিয়ে করেছিস্, মিষ্টি সুরে বললো জাকিয়া। নাহ্। কেন? তোর মতো কৃষ্ণকলি পাইনি বলে। জাকিয়া হেসে উঠলো, তোর সেই জোক করার অভ্যাসটা আজও গেলো না। আমার লাইফটাই তো জোক বন্ধু। শোন যে কারণে তোকে ফোন করেছি পরশু আমার বিয়ে তোকে আসতে হবে। শেষ পর্যন্ত বিয়াটা তোর হয়েই গেলো। কেন তুই কি দোয়া করেছিস্ আমার বিয়ে না হোক? নাহ্ তা কেন তোর বিয়ে হবে সংসার হবে এটাই তো আমি দেখতে চেয়েছিলাম। তা হলে চলে আসিস, রাখলাম। ফোনটা রেখে দিলো জাকিয়া। আমার সামনে তখন পড়ন্ত বিকেলের সূর্যটা হেলে পড়েছে। কেন যেন খুব খারাপ লাগছিলো, বুকের ভেতর একটা টান অনুভব করলাম। কি যেনো একটা হারিয়ে যাচ্ছে মন থেকে, ভালবাসা থেকে, সকল চাওয়া পাওয়া থেকে।

sranontojugantor@gmail.com

No comments:

Post a Comment