join facebook page

Saturday, 30 August 2014


আমার মনে পড়ল শৈশবের কথা। আহা! কত ভিজেছি শ্রাবণের বৃষ্টিতে। শহরে এসে তো মেশিন হয়ে গেছি। আবেগ-অনুভূতি সব ভোঁতা হয়ে গেছে। শুধু খাওয়া আর ঘুমানোই যেন নিত্যদিনের রুটিন এখন। ভিজতে ভিজতে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। রাস্তার দু'পাশের হলুদ লাইটগুলো জ্বলে উঠেছে। ঘোলাটে আলোর দিকে তাকালে নিমিষেই কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া যায়। নন্দিনীর কথা বড্ড বেশি মনে পড়তে লাগল। ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় বৃষ্টি দেখলেই ফোন দিয়ে বলত, 'চল, রিকশায় করে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াই অথবা হাতে হাত রেখে কোনো রেললাইনের পথ ধরে হেঁটে যাই বহুদূর।'
মেয়েটি পাগলি বটে। আজ নন্দিনী নেই, আছে শুধু ওর স্মৃতি। যে স্মৃতিগুলো বৃষ্টিতে ভিজে আবার রোদে শুকিয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে একসময় ভেজা শরীর নিয়ে বাসায় ফিরলাম। রাতে প্রচণ্ড জ্বর এলো। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, ইদানীং বৃষ্টিতে ভিজলেই শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। জ্বরকে আমি খুব ভয় পাই। এই শহরে আপন বলতে কেউ নেই। চোখ বন্ধ করে তাই মায়ের আদর খুঁজছিলাম। কাঁথাটা পাতলা টিস্যু মনে হচ্ছে, খুব শীত লাগছিল। মায়ের ছবিটা মাথার কাছে রেখে দিলাম। ঠিক যেমনটি ছোটবেলায় জ্বর এলে মা মাথার কাছে বসে থাকতেন। রাত বাড়তে থাকে আর আমার মুখ দিয়ে একটি শব্দ বের হয় মা... মাগো! বুঝতে পারি কণ্ঠটা ধরে এসেছে। চোখ ভিজে উঠেছে।

২৮ আগস্ট ২০১৪, বৃহস্পতিবার daily noyadeganta

কাছে-দূরে
সোহানুর রহমান অনন্ত

কাউন্টারে তিল ধারণের জায়গা নেই। কোনো রকম বাসে উঠে বসলাম। এত বিরক্তির মধ্যেও আনন্দ আছে। বাড়ি ফেরার আনন্দ, মায়ের মুখ দেখার আনন্দ। আমার পাশের সিটে একটি মেয়ে বসেছে; যাকে বলে একেবারে আধুনিক স্টাইলের মেয়ে। আমি ব্যাগটা রেখে বসে পড়লাম। পাশের সিটের মেয়েটি কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে।
আমি মাঝে মধ্যে মেয়েটির দিকে টেরাভাবে তাকাচ্ছিলাম। সে একমনে গান শুনে যাচ্ছে। বাস চলতে শুরু করল ধীরে ধীরে। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে দূর গাঁয়ের উদ্দেশে। গাড়ির মধ্যে যাত্রীদের হইচই থেমে গেছে। আমার চোখ একবার জানালায়, একবার মেয়েটির দিকে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুক ওপেন করলাম। পিকচারবিহীন মেয়েটির মেসেজ। অবশ্য অনেক আগে পাঠিয়ে রেখেছে।
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে হোমপেজ দেখছিলাম। এমন সময় পাশের মেয়েটি কানের হেডফোন খুলে একবার আমার দিকে তাকাল। তারপর জানালা দিয়ে বাইরে চোখ রাখল। আমি আবারো টেরা চোখে তাকাতে লাগলাম। ছেলেদের মনের ভাষা বুঝে ফেলার অসাধারণ এক মতা নাকি মেয়েদের মধ্যে আছে। সেটাই সম্ভবত হয়েছে। মেয়েটি বোধহয় বুঝে ফেলেছে আমার আড়চোখে দেখার ব্যাপারটা। আর তাকাব না পণ করে মোবাইলে চোখ রাখলাম। একটা স্ট্যাটাস দিলাম বাড়ি যাওয়া নিয়ে।
পিকচারবিহীন মেয়েটি এখন লাইনে। কেমন আছো? ফাইন, ইউ? আছি ভালো, তুমি? ভালো, ঈদ কোথায় করবে? বাড়িতে যাচ্ছি, ওখানেই বাবা-মায়ের সাথে করব। কিভাবে যেন পাশের সিটের মেয়েটির দিকে আবার চোখ চলে গেল। মুচকি মুকচি হাসছে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে। অবশ্য এমন একটি সুন্দরী মেয়ে পাশে বসা থাকলে চোখ ভুল করতেই পারে।
এভাবে আবার তাকানোর জন্য নিজেকেই নিজে বকতে লাগলাম। আমিও বাড়ি যাচ্ছি, এখন বাসেÑ বলল পিকচারবিহীন মেয়েটি। ভেরি গুড, তা তোমার পিকচার দাও না কেন? আমি পিকচারবিহীন মানুষ হা হা হা। কিভাবে যেন সময় চলে গেল।
বাস এসে থেমেছে জংতলা স্টেশনে। এখানেই নামব আমি। নামার আগে ইনবক্সে আরো একটা মেসেজ এলো। আপনি এখন কোথায়? পিকচারবিহীন মেয়েটি জানতে চাইল। জংতলা স্টেশনে, ঈগল কাউন্টারের সামনে বাস থেকে নামব। এই বলে মাত্র বাস থেকে নামলাম। আবারো মেসেজÑ বলেন কী! আমিও তো জংতলা স্টেশনে, ঈগল বাসে বসে আছি। বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলাম, কোথায় তুমি? আমি তো বাসের কাছেই। মেয়েটি জানালা দিয়ে মাথা বের তাকাল। আমিও তাকালাম, চোখে চোখ পড়ে গেল। বাস ততণে চলতে শুরু করেছে।
হায় নিয়তি! এতটা পথ যার সাথে বসে এলাম সেই যে পিকচারবিহীন বালিকা, সেটা কে জানত। বাস এক সময় চোখের আড়াল হয়ে গেল। আমি তখনো তাকিয়ে রইলাম। ফেসবুক ইনবক্সে মেসেজের টুংটাং শব্দ।
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট, ২০১৪ >সুহৃদ সমাবেশ> daily somokal

বিবাহিত ব্যাচেলর
সোহানুর রহমান অনন্ত
দূর থেকে দেখলে বোঝাই যায় না, এটা টু-লেট না টয়লেট লেখা। কলিংবেল চাপতেই এক ভদ্রলোক খুলে দিলেন। কী চাই? না মানে বাইরে টু-লেট দেখলাম...। ব্যাচেলর? হেসে বললাম বিবাহিত ব্যাচেলর। মানে? মানে হলো বিয়ে করেছি কিন্তু বউ দেশের বাড়িতে থাকে। তার মানে তুমি একা থাকবে? জি বলতে পারেন। কী কর? পত্রিকা অফিসে চাকরি করি। সাংবাদিক? না, ফটোগ্রাফার। ও। কিন্তু তোমাকে ভাড়া দেওয়া যাবে না। হাসিটা মিলিয়ে গেল আমার। কেন? কারণ তুমি বিবাহিত হলেও ব্যাচেলর থাকবে। তাতে কী, বউ তো মাঝে মধ্যে আসে। একটু দাঁড়াও, আমি আসছি। আমাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে লোকটা ভেতরে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, তোমার সাহস কেমন? জি মাশাল্লাহ ভালো, কিন্তু কেন? তোমাকে ছাদে যে রুমটায় থাকতে হবে সেটায় একটু সমস্যা আছে। কী সমস্যা? সেটা হলো সেই রুমে একটি মেয়ে থাকত, মাসখানেক আগে মেয়েটি গলায় ফাঁস নিয়ে মারা যায়। এরপর আর রুমটা ভাড়া দিতে পারিনি। যারাই ভাড়া নেয় দু'তিন দিন থেকে চলে যায়। কোনো সমস্যা নেই, আমি এসব বিশ্বাস করি না। ঠিক আছে দেখ থাকতে পার কি-না।
২.
আসলেই কি ভয় পাচ্ছি আমি, বুকে একটু ফুঁ দিয়ে নিলাম। মিথ্যা কথাটা গুছিয়ে না বলতে পারলে হয়তো এ বাসাটাও পেতাম না। ভূতের হোক আর যাই হোক মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই তো হয়েছে। ব্যাচেলর বলে কি আমরা মানুষ না। এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ। বুকটা দপাস করে উঠল। দোয়া যা জানতাম সব পড়ে ফেলেছি। আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুললাম। একটা মেয়ে দাঁড়ানো হাতে খাবারের বাটি। কী ব্যাপার কানে কি তুলো দিয়েছেন? ইয়ে মানে... আপনি। আপনার বাড়িওয়ালার মেয়ে। বাবা বাসায় নেই তাই মা খাবারটা আমাকে দিয়েই পাঠিয়েছে, নিন। আমি ভয়ে ভয়ে নিলাম। কি ভয় পাচ্ছেন নাকি? না কিসের ভয়, আমি হলাম সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। মেয়েটি হেসে বলল, তা আপনি নাকি বিবাহিত ব্যাচেলর। লজ্জায় পড়ে গেলাম। মুচকি হেসে চলে গেল মেয়েটি। আমি দরজা লাগিয়ে বসে পড়লাম। ভালোই হলো ক্ষুধায় পেটের অবস্থা মরুভূমি। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
৩.
রাতটা ভালই কাটলো, সকাল সকাল অফিস চলে গেলাম। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে শাহবাগে মেয়াটার সঙ্গে দেখা। মেয়েটি গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, এখন গাড়ি পাওয়া যাবে না, ইচ্ছা করলে পেছনে বসতে পারেন। মেয়েটি উঠে বসল। আজ ভার্সিটিতে একটু কাজ ছিল তাই দেরি হয়ে গেল। আমি কিছুই বললাম না। আচ্ছা আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? নেই। বলেন কী? হুম। বিয়ে করেছেন কয় বছর হলো? করিনি। মানে? মানে বিয়ে করিনি এখনও। তাহলে বাবাকে যে বললেন। না বললে তো আর ঘরটা পাওয়া হতো না। ও মাই গড! আপনি এত বড় মিথ্যা বলেছেন। কিছু করার নেই, মিথ্যা না বলে উপায় ছিল না। তাই আব্বু জানলে, আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেবে। আপনার আব্বাকে তো বলিনি, বলেছি আপনাকে। বাসার কিছুটা আগে মেয়েটি নেমে পড়ল। বাড়িওয়ালা দেখে ফেললে বিপদ। ওহ্ মেয়েটির নাম ফারিয়া, তবে ফারিয়া আমাকে বিবাহিত ব্যাচেলর বলেই ডাকবে বলে ঠিক করেছে। মোটামুটি বেশ কয়েকদিন কথা বলায় ভালোই সম্পর্ক হয়ে গেল।
৪.
ভালোবাসাটা খুব অদ্ভুত, কখন এসে যায় কেউ বলতে পারে না। ফারিয়াকে ইদানীং খুব ভালো লাগতে শুরু করেছে। সেই কথাটা বলতেও বাধা নেই, কিন্তু বলার জন্য ভালো একটা সময়ের প্রয়োজন। রাতের একটা অধ্যায় ওর সঙ্গে ফেসবুকে কাটে যদিও একই বাড়িতে থাকি আমরা। মাঝে মাঝে বাইকে করে ঘুরে বেড়াই ঢাকা শহরটা। কখনওবা রেললাইনের পথ ধরে হেঁটে যাই বহুদূর। তবুও বলা হয় না, হবে হবে এ আশায়।
হঠাৎ করেই একটা ঝড় আসে আমার জীবনে। ফারিয়ার ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক ভাবি আমি, একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে বিয়ে করে কী লাভ, শেষে সারাটা জীবন তার স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। ভালোবাসাটা চাপা দিয়ে ফেলি। বাসাটা ছেড়ে দিই আমি। ফারিয়া ঘুম থেকে ওঠার আগে এক কাকডাকা ভোরে নতুন বাসায় চলে যাই। যেখানে ফারিয়া নেই, নেই ফারিয়ার স্মৃতিগুলো। মাস তিনেকের মধ্যেই ফারিয়া মারা গেল। খবর শুনেছি আমি কিন্তু দেখতে যাইনি। পুরনো স্মৃতিকে জাগাতে চাই না। খুব তাড়াহুড়া করেই সুন্দরী কলিগকে বিয়ে করে ফেলি। জীবনটাকে নতুন করে সাজাবো বলে। আমি এক স্বার্থপর মানুষ।
৫.
ইদানীং ফারিয়াকে খুব বেশি মনে পড়ে। আমার বউকে আমি অনেক ভালোবাসি, তাই মনে পড়লেও ভুলতে চাই সেসব স্মৃতি। আজ আমাদের ঘরে আলোর প্রদীপ হয়ে আসবে আমার একমাত্র সন্তান। হাসপাতালে তখন অপেক্ষা করছি, একটা শব্দ শোনার জন্য। ডাক্তার বেরিয়ে এলো, মুখটা কালো করে। কী ব্যাপার ডাক্তার সাহেব? স্যরি, দু'জনের একজনকেও বাঁচানো গেল না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আমি যেন পাথর হলে গেলাম। ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল কথাটা। সবকিছু এলোমেলো লাগছিল। নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিলাম ভালোবাসাকে। এক এক করে সবাই চলে গেল। আমি তখনও দাঁড়িয়ে, চোখ দিয়ে জল পড়ছে। বুকের মধ্যে হাহাকার। চলে আসার জন্য পা বাড়াবো এমন সময় হঠাৎ ফারিয়ার বাবার সঙ্গে দেখা। আংকেল আপনি? হ্যাঁ বাবা, মেয়ের কবর দেখতে এলাম। ফারিয়াকে কি এখানে কবর দেওয়া হয়েছে?। হু ওই তো নতুন কবরটার পাশের কবরটাই ফারিয়ার। কবরটার দিকে তাকিয়ে বুকটা চমকে উঠল। এবার ফারিয়াকে ভুলব কী করে? আমার ভালোবাসাকে দেখতে এলেই যে পুরনো ভালোবাসাকেও দেখতে হবে।
হসুহৃদ ঢাকা

Sunday, 17 August 2014

চাঁদপুর, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০১৪, ২ ভাদ্র ১৪২১, ২০ শাওয়াল ১৪৩৫


অনুশোচনা
সোহানুর রহমান অনন্ত
আয়নায় নিজের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো হাসান। ঘড়িতে বারোটা বাজার ঢং ঢং শব্দ। পেছনে এসে দাঁড়ালো নীলু। কি জনাব এখানে দাঁড়িয়ে কি করা হচ্ছে? নীলুর কথায় নিজেকে ফিরে পায় হাসান। কই কিছু না তো, এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি। নীলু আর হাসানের বিয়ে হয়েছে বছরখানেক হলো। দীর্ঘ চার বছর প্রেম করেছে দু'জন অবশেষে বিয়ে করছে পরিবারের স্ব-মতে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো টেবিলে খাবার দেয়া আছে। ঠিক আছে তুমি গিয়ে শুরু কর আমি আসছি। একটা সিগারেট বের করে পকেট থেকে। জানালা দিয়ে আসছে দক্ষিণা বাতাস। মুখ থেকে ধোঁয়া ছেড়ে আবারো আয়নায় নিজের মুখের দিকে তাকায় হাসান। নীলুর কথা ভেবে ঠোঁটের কোণে পৈচাশিক হাসি ফুটে উঠে।

২.

নীলু ঘুমিয়েছে কি না ভালো করে দেখলো হাসান। ইদানীং ফেসবুকে একটি মেয়ের সাথে বেশ ভাব হয়েছে হাসানের। মেয়েটি জানতে চেয়েছে হাসান বিবাহিত কি না। হাসান বলেছে সে বিবাহিত না। কারণ আজকালকার মেয়েরা বিবাহিত শুনলে আর আগ্রহ দেখায় না। ফেসবুক লগিং করতেই মেয়েটির ম্যাসেজ চোখে পড়লো। চমৎকার করে ম্যাসেজ লেখে মেয়েটি। প্রোফাইল পিকচারটার ভালো করে দেখে নিল। আধুনিক মেয়ে, দেখতেও বেশ চমৎকার। কিন্তু সমস্যা হলো নীলুকে নিয়ে। কাবাব মে হাড্ডি। যদিও নীলু ফেসবুক সম্পর্কে তেমন কোনো ধরণা রাখে না। ধারণাটা হাসানেরও ছিলো না। অফিস কলিগ আকরাম মাসখানেক আগে আইডিটা খুলে দেয়। প্রথম প্রথম তেমন একটা বসা হয়নি, কিন্তু ইদানীং মেয়েটির কারণে বসা হয়। এত সহজে যে এত সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যাবে হাসান ভাবতেও পারেনি। অপেক্ষা করতে থাকে মেয়েটির জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি লাইনে আসে এবং দুজনের চ্যাট শুরু হয়। নীলু আচমকা ঘুরে হাসানের হাতের উপর নিজের হাতটা রাখে। হাসান ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কিন্তু না সব ঠিক আছে। নীলু ঘুমের মধ্যে এমনটা করেছে। হাসান মেয়েটির সাথে চ্যাটে মনোযোগী হয়।

৩.

ইদানীং হাসানের কাজে মন বসে না। সুযোগ পেলেই ফেসবুকে ডু মারে। মেয়েটির সাথে চ্যাট করতে মনটা ছটফট করে। এক অন্য রকম আকর্ষণ আছে মেয়েটির মাঝে। ফোনটা বেজে উঠতেই মোবাইল স্কীনে নিলুর নামটা ভেসে উঠে। হ্যালো, দুপুরের খাবার খেয়েছো? নাহ্। কেন? সময় পাইনি, আর কিছু বলবে? একটা কথা ছিলো। কি কথা? ভাবছি ফোনে নয় তোমাকে সরাসরি বলবো। ওকে আমি এখন রাখছি অনেক ব্যস্ত। এই বলে ফোনটা রেখে দেয় হাসান। ইদানীং আর নীলুকে ভালো লাগে না ওর। মন পড়ে থাকে ফেসবুকের অপরিচিত মেয়েটির কাছে। ওহ্ মেয়েটির নামই তো বলা হয়নি। তানিশা চৌধুরী, গুলশানে থাকে। মেয়েটির কথা মনে পড়তেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে হাসানের। রাতে বাসায় ফিরতেই নীলু বলে উঠলো। আজকাল অনেক রাত করে অফিস থেকে ফিরছো, বউকে যে একটু সময় দিতে হয় সেটাও বুঝি ভুলে গেছো? হাসান কিছুই বলে না নীলুর কথায়। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। নীলু হাসানের হাত ধরে বলে, একটা ভালো খবর আছে। কি ভালো খবর? আমাদের...। কি আমাদের? আমাদের সন্তান আসছে...কথাটা বলেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নেয় নীলু। কথাটা শুনে আনন্দে মনটা ভরে উঠে হাসানের কিন্তু মুহূর্তেই সেই আনন্দ মিলিয়ে যায়। মুখে এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নীলু তাকিয়ে থাকে হাসানের দিকে। মুখে বিস্ময়।

৪.

দায়িত্বে অবহেলার কারণে চাকুরিটা চলে যায় হাসানের। তা ছাড়া কয়েকজন অভিযোগ করেছে হাসান এখন আর আগের মতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। সারাদিন ইন্টারনেটে পড়ে থাকে। চাকুরিটা হারিয়ে হাসান খুব ভেঙে পড়ে। হুট করে এমনটা হবে ভাবতেও পারেনি সে। অফিস থেকে বের হয়ে লোকাল বাসে চড়ে বসে। মোবাইলটা বের করে লগইন করতেই মেয়েটির ম্যাসেজ। তোমার কথা বাবাকে বলেছি, বাবা বলেছে সে আমাদের বিয়েতে রাজি আছে। খুব দ্রুত তোমার সাথে কথা বলবে। কথাটা শুনে মনটা ভালো হয়ে যায় হাসানের। একদিকে সুন্দরী বউ অন্যদিকে কোটি টাকা। রাজ্য, রাজকন্যা সবি আমার হাতে। কিন্তু সমস্যা হলো নীলুকে নিয়ে। ও থাকতে অন্য কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে তো দূরের কথা, বন্ধুত্ব শুনলেও খবর আছে। একটা ফন্দি আসে হাসানের মনে। লোভে চকচক করে উঠে হাসানের চোখ। একটা পথই আছে এখন সমাধান হিসেবে। আর সেটাই আজ রাতে করবে হাসান। বিকেলের আকাশটা তখন মেঘে ঢেকে গেছে। কেবল বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়।

৫.

বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হাসানের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে নীলু। এত রাতে ছাদে নিয়ে এলে কেনো হাসান। দেখ না তোমাকে বিয়ে করার পর রাতের আকাশ দেখা হয়নি। তাই ভাবছি আজ দু'জন রাতের আকাশ দেখবো। সত্যি হাসান, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো? সেটা আর বলতে হয় পাগলি, তোমাকে অনেক ভালবাসি। আশেপাশে তাকায় হাসান, রাতের শহর মোটামুটি ঘুমন্ত এখন। এক পা দু' পা করে একেবারে ছাদের এক কোণে চলে যায় দু'জন। এখান থেকে আকাশ দেখা যায়, দেখা যায় নিচের মাটিও তবে দুটোর দূরত্বই অনেক। নীলু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসান তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। হঠাৎ নীলু কিছু বুঝে উঠার আগেই হাসান ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নীলুকে। তারপর দ্রুত ছাদ থেকে নেমে যায়। নীলু বুঝতেও পারেনি, সে এবং তার অনাগত সন্তান কিছুক্ষণের মধ্যেই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। হাসান রুমে এসে একটা বুদ্ধি বের করে ফেলে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে সে কিছু জানে না। তা ছাড়া নীলুর মাঝে মাঝে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আছে। বৃষ্টি হয়েছে হয়তো পা পিছলে পড়ে গেছে। সবি ঠিকঠাক আছে, পথের কাটাও শেষ। দেয়ালে বাঁধানো নীলুর ছবির দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে হাসান। নীরব কণ্ঠে বলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।

৬.

মোবাইলে ফেসবুক লগিং করতেই তানিশার নিউ ম্যাসেজ। বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে হাসান। কিন্তু ম্যাসেজটা পড়েই থমকে গেলো হাসান। মাথার উপর সবকিছু কেমন যেন ঘুরতে লাগলো। চোখের ভুল হচ্ছে না তো। তানিশা লিখেছে, আসলে তার ভুল হয়ে গেছে। হাসানকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। কারণ তানিশার পুরনো প্রেমিক আবার ফিরে এসেছে। সো প্রথম প্রেম বলে কথা, তার কাছেই তানিশাকে ছুটতে হলো। হাসান যেনো তাকে ক্ষমা করে দেয়। হাসান জানতো না তানিশার আগে প্রেম ছিলো। তা ছাড়া বড় লোকের মেয়ে বলে কথা, একাধিক বন্ধু, প্রেমিক থাকতেই পারে। নিজের বোকামি বুঝতে পেরে নিজের চুলই ছিড়তে ইচ্ছে করছে হাসানের। খুব জোরে মোবাইলটাকে দেয়ালে ছুড়ে মারলো হাসান। সব নষ্টের মূল এই জিনিসটা। সব শেষ হয়ে গেছে তার। নীলুর কথা মনে পড়তেই দু'চোখ বেয়ে জল ঝড়ে পড়তে লাগলো। আর নীলুর গর্ভে থাকা হাসানের অনাগত সন্তান...। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে হাসান। এ কি করলাম আমি.... কি করলাম। সব শেষ হয়ে গেলো।

৭.

নীলুর লাশের পাশে মানুষের ভিড়। রক্তে একাকার হয়ে গেছে পথের ধুলোগুলো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখলো হাসান। চোখের কোণে তখনো কান্না। একবারের জন্যও আর নীলুকে দেখতে যেতে মন চাইছে না তার। অনুশোচনায় পুড়ছে। একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে এ কাজটা কিভাবে করলো? চারটি বছর প্রেমের পর যাকে বিয়ে করেছে। চার সেকেন্ডে তাকে শেষ করে দিলো? নিজেকেই ছিঃ ছিঃ দেয় হাসান। এক পা দু পা করে থানার দিকে হেঁটে যায়। সবকিছু স্বীকার করবে সে, অকারণে নীলুকে হত্যার কথা। কিছুই আর লুকাবে না। কিছুই না।

sranontojugantor@gmail.com

16-08-2014 daily borar kagoj

জলের ছায়া
ভোরের কাগজ : ১৬/০৮/২০১৪

ঢেউগুলো বারবার আছড়ে পড়ছে লঞ্চের গায়ে। লঞ্চের এক পাশে বসে আছে রিয়া। তাকিয়ে আছে পদ্মা নদীর দিকে। এই জলে এক সময় কতো সাঁতার কেটেছে, কতো পা ভিজিয়ে বসে সময় কাটিয়েছে। অথচ ইদানীং কেন যেন এই জলকেই ভয় করতে শুরু করেছে। ব্যাগটা আরো কাছে টেনে নেয়। রিয়া রাজুর জন্য আজ ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছরের ফোনেই প্রেম। কেউ কাউকে দেখেনি আজো। হঠাৎ করে রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় দুজন ঠিক করলো পালিয়ে বিয়ে করবে। রাজু শ্রীনগর থাকে, পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বাবা-মাকে ছেড়ে আসার কারণে রিয়ার মনটা একটু খারাপ। তবে রাজুর কথা ভেবে এক অন্যরকম আনন্দ লাগছে। অপেক্ষা আর সাইছে না কখন লঞ্চ ছাড়বে। একে একে যাত্রীতে ভরে গেলো লঞ্চটি। চারপাশে কোলাহল, তিল ধারণের জায়গা নেই। খুব জোরে লঞ্চের হর্ন বেজে উঠলো তারপর আস্তে আস্তে লঞ্চটা ছুটে চললো মাওয়া ঘাটের দিকে।

২.

রিয়ার সামনে সাত আট বছরের একটি ছেলে। গাড়ি নিয়ে খেলা করতে করতে বলছে, বাজান সামনের ঈদে কিন্তু দুইটা নতুন জামা কিনে দিতি হইবো। ছেলেটির বাবা হেসে বললো, দেবো বাবা তোরে দুইটাই কিনি দিমু। রিয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছাদে যাওয়ার কিন্তু এতো মানুষ হয়েছে যে, ছাদেও দাঁড়াবার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে হলো। একজন লোক এসে বললো আফা পানি লাগবো, ঠা-া পানি? এক বোতল পানি কিনে নিলো। খুব ক্ষুধা লেগেছে, সঙ্গে বেশি টাকাও নেই। বোতল থেকে একটু পানি হাতে নিয়ে মুখে ছিটিয়ে নিলো। সাইড ব্যাগ থেকে আয়নাটা বের করে নিজের মুখটা দেখলো একবার। তাড়াহুড়ার কারণে একটু সাজতেও পারেনি। এই ভেবে ঠোঁটের কোণে এক টুককো হাসি ফুটে উঠলো।

৩.

কেন যেন খুব খারাপ লাগছিল রিয়ার কাছে। হয়তো সবাইকে ছেড়ে আসার এক কষ্ট এটা। লঞ্চের মধ্যে একা একা চুপ থাকাটা আরো কষ্টকর। কারো সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। রিয়ার পাশের সিটে একটি ছেলে বয়স পনেরোর কাছাকাছি। রিয়া ইচ্ছে করেই কথা বললো, কি নাম তোমার?। ছেলেটি প্রথমে চমকে উঠলেও বলতে লাগলো, চান মিয়া গ্রামের পোলাপান মাঝে মাঝে চান্দু বলে খেপায়। যাইতাছি বড় ভাইয়ের কাছে, মায় মুড়ির মোয়া আর পিঠা বানায়া দিছে। রিয়া হেসে উঠলো, প্রশ্ন একটা করলে ছেলেটি এক সঙ্গে অনেকগুলো উত্তর দেয়। চলার পথে কতো বিচিত্র লোকের দেখা মেলে। কতো লোক লঞ্চের মধ্যে, কেউ যাচ্ছে ভাইয়ের কাছে, কেউবা যাচ্ছে স্ত্রীর কাছে, কেউবা বাবা-মাকে ছেড়ে

কর্মের খোঁজে। ফোনটা বেজে উঠলো। রাজুর ফোন, হ্যালো, আমি মাওয়া ঘাটে আছি লঞ্চ আসতে আর কতোক্ষণ লাগবো?। আমি কি করে বলবো, আমি তো কিছুই চিনি না। আচ্ছা আসো আমি ঘাটেই আছি। তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনছি, এইডা পইরাই আমগো বিয়া হইবো। রিয়া হেসে উঠলো রাজুর কথা শুনে।

৪.

হঠাৎ করেই লঞ্চটা কেমন দুুলে উঠলো। আকাশটা মেঘলা, নদীটাও কেমন ফুলে উঠেছে। ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো রিয়ার। সামনের সিটে বসা একজন মহিলা বলতে লাগলো লাইলাহা ইল্লালাৃ। এই আপনারা সবাই দোয়া পড়েন। গাড়ি নিয়ে খেলতে থাকা ছেলেটা মায়ের কোলে ঘুমিয়ে গেছে। পাশে থাকা ছেলেটা নিজের ব্যাগ গুচ্ছাচ্ছে। মাওয়া ঘাট নাকি চলে এসেছে, ওই যে দেখা যায়। ছোট ছোট ঘরগুলো, দোকানগুলো। ঢেউগুলো কেমন আছড়ে পড়তে লাগলো লঞ্চের বুকে। পদ্মার এমন ঢেউ রিয়ার এর আগে কখনো দেখা হয়নি। কেন যেন খুব ভয় করতে লাগলো। কিসের ভয় সে নিজেও জানে না। আর একটু, এইতো চলে এসেছে, ভালোবাসার মানুষটির কাছে।

আর একটুৃ। হঠাৎ একটা বড় ঢেউ আসতেই লঞ্চটা হালকাভাবে এক পাশ কাত হয়ে গেলো। আঁতকে উঠলো লঞ্চের মানুষ। ঘুমন্ত শিশুটির ঘুম ভেঙে গেলো। নামার প্রস্তুতি যারা নিচ্ছিল তারা ভয়ে হতবাক হয়ে গেলো। লঞ্চে পানি উঠে গেলো। ভয়ে সবাই বাঁচাও বাঁচাও বলে এক পাশে চলো এলো। আর তখনি ঘটলো অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনাটি। আরেকটা ঢেউয়ের দোলানিতে লঞ্চটা বাম দিকে পুরোপুটি কাত হয়ে গেলো। রিয়ার চারপাশে এক ভয়ানক চিৎকার বাঁচার করুণ আর্তনাদ। রিয়া বের হতে গিয়েও পারলো না জামার একটা সাইড আটকে গেছে সিটের পাশে লাগানো পেরেকের মধ্যে। সেকেন্ডের মধ্যে সব আশা, সব স্বপ্ন ডুবে গেরো পদ্মা ঘোলা জলে। বাঁচার চেষ্টাও এক সময় বিফলে গেলো। আস্তে আস্তে লঞ্চের সঙ্গেই রিয়াসহ আরো অনেকে তলিয়ে যেতে লাগলো গভীরে, আরো গভীরেৃঅনেক গভীরে।

৫.

শাড়িটার দিকে বারবার তাকাচ্ছে রাজু। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। রিয়াকে ফোন করতেই দেখলো ফোন অফ। এমনটা তো হওয়ার কথা না। এক দুশ্চিন্তার ছাপ পড়লো রাজুর মুখে। মেয়েটি কিছুই চেনে না কোনো বিপদ হয়নি তো?। ঠিক সেই মুহূর্তেই মানুষের ছোটাছুটি চোখে পড়লো। একজন দৌড়াতে দৌড়তে বলছে হে মাবুদ কি দেখলাম, এতোগুলা তাজা জান শেষ হইয়া গেলো চোখের পলকে। বুকটা কেঁপে উঠলো রাজুর। দোকান থেকে বের হতেই দেখে সবাই মাওয়া ঘাটের দিকে যাচ্ছে। রাজুও ছুটতে লাগলো। সবার দৃষ্টি উত্তাল পদ্মার মাঝের সাদা অংশটুর দিকে। কি হয়েছে জানতে চাইলে একজন বিস্তারিত বলে। রাজু আবারো ফোন করে রিয়াকে। ফোন বন্ধ। পাগলের মতো এক এক করে ফোন দিতে থাকে।

এক সময় কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে মাটিতে। আমার সব শেষ হয়ে গেলো। ঘোলা জলে রাজু নিজের ছায়াটুকু দেখলো যার পাশে ভালোবাসার মানুষটি থাকার কথা সে আজ নেই। অশ্রু জলে তাকিয়ে রইলো নদীর দিকে। বছরের পর বছর এমনটাই ঘটে চলছে। অবহেলায় ঝরে যাচ্ছে কতো প্রাণ। তবুও প্রশাসনের টনক নড়ে না, আসে না কোনো নিয়মকানুন। রাজুর মতো হয়তো কারো ভালোবাসার মানুষ, কারো বুকের মানিক, কারো একমাত্র উপাজর্ন করার ব্যক্তি, চান মিয়ার মতো ভাইয়ের কাছে ছোট কোনো কিশোর, অথবা রিয়ার মতো নতুন স্বপ্ন বোনা মানুষটি হারিয়ে গেছে। এভাবে আর কতোদিনৃ। অশ্রু চোখে রাজু তাকিয়ে থাকে পদ্মার দিকে। উত্তাল পদ্মা তখনো শান্ত হয়নি।

সোহানুর রহমান অনন্ত, ঢাকা
16-08-2014 Daily samokal-ar Khola haway

বোকা
সোহানুর রহমান অনন্ত
ফুচকার বিল তো তোর কাছে কখনোই থাকে না_ বলেই খিলখিল করে হেসে উঠল বৃষ্টি। হাসি যেন আর থামতেই চায় না। বৃষ্টিটা এমনই। এমন প্রাণখোলা হাসি আমি আর কোনো মেয়ের মুখে কোনো দিন দেখিনি।
'বিশ্বাস কর, তোর সঙ্গে ফুচকা খেতে আসলেই আমার কেমন যেন স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়ে যায়। কোন পকেটে যে টাকা রাখি সেটাই ভুলে যাই।' আমিও হেসে জবাব দিই।
'ইস রে, বন্ধু না হয়ে প্রেমিকা হলে তো ঠিকই সব মনে থাকত।'
'তুই কি আমার প্রেমিকা হবি?' ঠাট্টার ছলেই বললাম।
'আমার তো আর তোর মতো স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয় নাই।'
'আজ ক্লাসে নতুন মেয়েটাকে দেখেছিস, আমার দিকে কীভাবে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকাচ্ছিল?'
'তোর মাথায় যে একটা শিং গজিয়েছে সেটা দেখছিল।'
'তুই সব সময় আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি করিস, একবার দূরে যাই বুঝবি তখন।' এই বলে আমি উঠে গেলাম।
কয়েক দিন পরের কথা। আকাশটা মেঘলা। বৃষ্টিকে ফোন দিই আমি। রিসিভ করেই বৃষ্টি বলল, 'এই অসময় ফোন করলি? কাহিনী কী বল তো?'
'আমি অসময়ের মানুষ।'
'ধ্যাত! কী জন্য ফোন করেছিস?'
'একবার ছাদে উঠে দাঁড়াবি? বৃষ্টি হচ্ছে খুব। দাঁড়া না একবার।' আমার কণ্ঠে আকুতি
'ঠিক আছে ফোন রাখ, বৃষ্টিতে ভিজে যদি আমি অসুস্থ হই তাহলে মনে রাখবি তোর খবর আছে।'
'ওকে।' বৃষ্টি ছাদে উঠে দাঁড়াল, আমি দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশে।
'কেন ছাদে উঠতে বললি?' ছাদে উঠে ফোন করল বৃষ্টি।
'তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল।'
'বাসায় আসলেই তো দেখতে পারতি।'
'সেই দেখা আর এই দেখার মাঝে অনেক পার্থক্য। বৃষ্টির রঙে আঁকা বৃষ্টিকে দেখছি আমি।' বৃষ্টি হেসে উঠল। তোর মোবাইলে একটা মেসেজ করেছি আমি চলে যাওয়ার পর দেখিস।
আমি চলে যেতেই ইনবক্স খুলে মেসেজ পড়ে বৃষ্টি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বৃষ্টি বলল, 'তুই কি সত্যি আমাকে ভালোবাসিস?'
'কেন, তোকে ভালোবাসা যাবে না?'
'আমি কি তাই বলেছি, কেন_ বন্ধুত্বটা থাকলে হয় না?'
'কেন যেন তোকে খুব আপন মনে হয়!'
'তাই?'
'হুঁ।'
'বিয়ে করতে পারবি আমাকে?'
'কেন পারব না, কাজী অফিসে গেলেই তো বিয়ের কাজ শেষ।'
'তুই একটা বোকা।'
'এই বোকা ছেলেটাকে একটু ভালোবাসবি?'
'তুই আসলেই একটা বোকা। কিচ্ছু বুঝিস না!।' ফোনটা রেখে দেয় বৃষ্টি। আমার খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছিল বৃষ্টির কথা শুনে। আহা! ভালোবাসা এমন সুখের হয় কেন?

Monday, 11 August 2014

Saturday, 9 August 2014

daily kalar kantha fun magazine gorardim 9-08-2014 idea

চাঁদপুর, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০১৪, ২৫ শ্রাবণ ১৪২১, ১২ শাওয়াল ১৪৩৫


কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি
সোহানুর রহমান অনন্ত


আমার মতো এমন একটি কালো মেয়ের পাশে হাঁটতে তোর খারাপ লাগে না? হাসতে হাসতে বললো জাকিয়া। আমি বুট চাবাতে চাবতে বললাম, এখানে খারাপ লাগার কি আছে? ভালো করে চোখ মেলে দেখ, আশেপাশে ছেলেদের পাশে কতো সুন্দরী মেয়ে আর তুই কিনা... এখনো স্টুপিড রয়ে গেলি। খোলা বাতাসে উড়ছিলো জাকিয়ার চুলগুলো, বার বার মুখের উপর আছড়ে পড়ছে বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো। এমন হা করে কি দেখিস? তোকে দেখছি। আমার কি মাথায শিং গজিয়েছে? না, ঘাড়ের পাশ দিয়ে আরেকটা মাথা বের হচ্ছে। কি বললি, তুই একটা শয়তান, রেগে গেলো জাকিয়া। তোর কালো মুখটা রাগলে আরো ভালোলাগে। পাম দিচ্ছিস্? তুই আমার বন্ধু তোকে পাম দেয়ার কি দরকার। কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, যার হৃদয়টা নিখাদ সুন্দর। আহারে কতো রোমান্টিক কথা, তোর কথা শুনে আমার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। আমার প্রেমে পড়। মাথা খারাপ আমার। এখানে মাথা খারাপের কি হলো, পড়াশোনা তো শেষ করলি বিয়া শাদী এবার কর। কালো মেয়েদের কপালে এত সহজে বর জোটে না। আমাকে বিয়ে করবি? হেসে বললাম। তোর ফাজলামো করার অভ্যাসটা আর গেলো না। তুই তো দেখছি আটো মেশিন, সব কিছুকেই ফাজলামো মনে করিস্। আরে বাবা আমি তো সিরিয়াস। হয়েছে তোর সিরিয়াস নিয়ে তুই থাক আমি গেলাম। এই বলে জাকিয়া হাঁটতে লাগলো। আরে শোন, আমি কিন্তু আসলেই সিরিয়াস এই বলে জাকিয়ার পেছনে হাঁটতে লাগলাম।

২.

তুই আমাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস্ দিলি কেন? ফোনটা ধরেই বললো জাকিয়া। কেনো তুই কি বারাক ওবামার বউ হয়ে গেছিস যে তোকে নিয়ে স্ট্যাটাস্ দেয়া যাবে না। দেখ আরিয়ান সব কিছু নিয়ে ফাজলামো করিস্ না। কেনো তোর বয়ফ্রেন্ড কিছু বলেছে স্ট্যাটাস্ দেখে? আশ্চর্য তুই দেখছি আমাকে নিয়ে জোক শুরু করে দিয়েছিস্। কি করবো সিরিয়াস কিছু বললেও তো তুই জোক হিসেবে দেখছ। শোন পড়াশোনা শেষ করেছিস্ এখন একটা চাকুরি বাকরি কর। তারপর বিয়ে করে সংসারি হ। আমি তো তোকে এটাই বুঝাতে চাই বন্ধু। মানে? মানে তোকে আমার ভালোলাগে। হাও ফানি, তোর মতো এমন স্মার্ট ছেলের পাশে আমার মতো একটা মেয়েকে মানাবে না বন্ধু। কি সব যে বলিস্ না তুই, কালোই জগতের আলো। হয়েছে তোকে আর কবি কবি ভাব দেখাতে হবে না। ফোনটা রাখ আমি ঘুমোবো অনেক রাত হয়েছে। তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে। তাহলে ফোন কানে নিয়ে থাক, আমি ঘুমালাম। আরে শোন, কি মেয়েরে বাবা, টু টু লাইন কাটার শব্দ।

৩.

জাকিয়াকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারি না, ওকে আমি কতো ভালবাসি। আমার সব কথা ও জোক হিসেবে নেয়। আমি কষ্ট পাই, তবুও জোর করতে পারি না। আমি জাকিয়ার ভেতরের সৌন্দর্যকে দেখেছি, বাইরের রূপটা নয়। অর্থে অনেক সুন্দর মুখ মেলে কিন্তু সুন্দর মন মেলে না। যেটা জাকিয়ার মাঝে আমি পেয়েছি। ইদানীং জাকিয়ার সাথে তেমন একটা দেখা করি না, ওর সামনে গেলেই ওকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। যে ভালবাসাটা আমার কাছে সিরিয়াস হলেও জাকিয়ার কাছে জোক। ফিফা গেমস্-এর মতই নকল মানুষের কথা। এভাবেই আমার জীবন বয়ে চলে রেললাইনের মতো, একা একা।

৪.

আমি এখন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে চাকুরি করি। কখনো সুন্দরবন তো কখনো রাঙামাটি। স্থায়ীভাবে কোথাও থাকতে পারি না। তাই জাকিয়ার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই। দীর্ঘ তিন বছর পর হঠাৎ জাকিয়ার ফোন পেয়ে বেশ আনন্দিত হলাম। কি ব্যাপার এতদিন পর মনে পড়লো? আমার তো মনে পড়েছে তোর বোদহয় তাও হয় না। তুই তো আমার মন নতুন করে মনে করার কি আছে তোকে। বিয়ে করেছিস্, মিষ্টি সুরে বললো জাকিয়া। নাহ্। কেন? তোর মতো কৃষ্ণকলি পাইনি বলে। জাকিয়া হেসে উঠলো, তোর সেই জোক করার অভ্যাসটা আজও গেলো না। আমার লাইফটাই তো জোক বন্ধু। শোন যে কারণে তোকে ফোন করেছি পরশু আমার বিয়ে তোকে আসতে হবে। শেষ পর্যন্ত বিয়াটা তোর হয়েই গেলো। কেন তুই কি দোয়া করেছিস্ আমার বিয়ে না হোক? নাহ্ তা কেন তোর বিয়ে হবে সংসার হবে এটাই তো আমি দেখতে চেয়েছিলাম। তা হলে চলে আসিস, রাখলাম। ফোনটা রেখে দিলো জাকিয়া। আমার সামনে তখন পড়ন্ত বিকেলের সূর্যটা হেলে পড়েছে। কেন যেন খুব খারাপ লাগছিলো, বুকের ভেতর একটা টান অনুভব করলাম। কি যেনো একটা হারিয়ে যাচ্ছে মন থেকে, ভালবাসা থেকে, সকল চাওয়া পাওয়া থেকে।

sranontojugantor@gmail.com

চাঁদপুর, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০১৪, ২৪ শ্রাবণ ১৪২১, ১১ শাওয়াল ১৪৩৫

"ভৌতিক গল্প
পিচাশ
সোহানুর রহমান অনন্ত


হেড লাইটটা অফ হয়ে যেতেই অন্ধকারে ঢেকে গেলো চারপাশ। শাহেদ নিলুর মুখের দিকে তাকালো। ভয়ে মুখটা চুপসে আছে। বড় একটা ছুটি পড়ায় শাহেদ এবং নিলু শাহেদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে। সাথে আছে শাহেদের খুব কাছের বন্ধু মাসুম। পেছনের সীটে হেলান দিয়ে মাসুম নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। বড় অদ্ভুত শাহেদদের গ্রাম। এখনো আধুনিকতার ছিটেফোটাও লাগেনি। গ্রামে ঢুকার মুখে প্রায় মাইল দুয়েকের একটি জঙ্গল। জায়গাটার নাম জংতলা। এখানকার মানুষেরা জংতলা জঙ্গল বলে ডাকে। শাহেদ ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় একবার গ্রামে ঘুরতে এসেছিলো। তারপর আর আসা হয়নি। নিলুর সাথে বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হলো। শহরের মেয়ে গ্রাম সম্পর্কে নিলুর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তাই সব সময় গ্রামে যাবো বলে শাহেদের মাথা খারাপ করে ফেলতো। গ্রামের বাড়িতে থাকার মধ্যে শাহেদদের পুরনো কেয়ারটেকার রাখাল দা আছেন। তিনিই বছরের পর বছর সব কিছু দেখাশোনা করে আসছেন। গাড়িটা নষ্ট হওয়ায় আর জায়গা পেলো না। বলে উঠলো শাহেদ, চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ যদিও নিলুকে কিছুই বলতে পারছে না। বেচারি এমনিতেই ভয়ে চুপসে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে কাল সকালেই ঢাকা যাওয়ার জন্য আবার উঠে পড়ে লাগবে। আশে-পাশে কোন আলো চোখে পড়ছে না। হঠাৎ কাছে কোথায় বিকট একটা চিৎকারের শব্দ হয়। অনেকটা মানুষের চিৎকারের মতো। ভয়ে প্রায় লাফিয়ে উঠে নিলু। শাহেদও ভয় পেয়ে গেছে। মোবাইলের হালকা আলোয়, যদিও কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। মাসুম পেছনে তখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। শাহেদ নিলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ও কিছু না, গ্রামে এমন নিশাচর প্রাণীর অনেক শব্দ রাতে পাওয়া যায়। শাহেদ কথা শেষ না করতেই গাড়িটা মৃদু ধুলে উঠলো। নিুল চিৎকার করতেই ধুলোনি থেমে গেলো। নিলু রীতিমত ভয়ে কাঁপছে আর মুখ ফুটে শুধু একটা কথাই বলছে। শাহেদ আমাকে ঢাকা নিয়ে চলো। আমি এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে চাই না। শাহেদ নিলুকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে লাগলো। হয়তো সবি কাকতালীয় ব্যাপার। মনের ভুল। তা ছাড়া এত দূর থেকে এসেছি, এখন আবার ফিরে যাবো। শাহেদ গাড়ি থেকে বের হতে গেলে নীলু শাহেদের হাত চেপে ধরে। না তুমি বের হবে না। শাহেদ নিলুর হাতটা হালকাভাবে ছাড়িয়ে বলে। লক্ষীটি, ভয় পেয়ো না আমিতো আছি। কারো সাহায্য না পেলে তো সারারাত এখানেই থাকতে হবে।



আকাশে একটুকুরো মরা চাঁদ। শাহেদ আশে-পাশে তাকালো। কোথাও মানুষে নামগন্ধ নেই। কি করবে কি করবে না ঠিক বুঝতে পারছে না শাহেদ। কোন কারণ ছাড়াই মোবাইলের নেটওয়ার্ক সমস্যা করছে। কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কেন যে বুদ্ধি করে একটা টর্চ সাথে করে আনলো না। মাসুম চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসেছে। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল, কোথায় আমরা?। নিলু বললাম, গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। কোথায় আছি সেটা তো আমি জানি না, তবে শাহেদ বলতে পারবেন। ঠিক সেই মুহুর্তে নিলু চিৎকার দিয়ে উঠে কি যেন দেখে। শাহেদ গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। নিলুর চিৎকার শুনে গাড়ির ভেতরে ঢুকে। মেয়েটা ফোপাচ্ছে। আঙুল দিয়ে রাস্তার পাশের জঙ্গলের দিকে দেখালো। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, দুটো চোখ।



শাহেদ আর মাসুম বেশ ভালো করেই দেখলো। কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই। হ্যালুসিনেসন হয়েছে, বলল মাসুম। শাহেদ মাথা নেড়ে বলল হতে পারে। এভাবে কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ। নিলু ভেতর থেকে গলা ছেড়ে বলে, শাহেদ কোন উপায় পেলে। না। মাসুম বলল এখন কি করবি?। কিছু বুঝতে পারছি না, শাহেদ বলল। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা শব্দ কানে ভেসে এলো। দু'জনই একসঙ্গে তাকালো সেই দিকে। অন্ধকারের বুক চিরে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো শাহেদের সামনে।



এই গরমের মধ্যেও রিক্সাওলা চাঁদর মুড়ি দিয়ে রেখেছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো রিক্সায় একটা হ্যারিকেন নেই। কোন আলো ছাড়াই এই জঙ্গলের ভেতর কিভাবে চালাচ্ছে কে জানে। লোকটা বোধহয় শাহেদের মনের ভাষা বুঝতে পারলো। তাই হাসতে হাসতে বলল, আপনেরা শহরের মানুষ, আর আমরা গ্রামের, এই জঙ্গলের পথঘাট সব কিছু আমার চোখের সামনে থাকে। চোখ বন্ধ কইরাও আমি চালাতে পারি। শাহেদ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। উত্তর শুনে, কিভাবে বুঝলো লোকটা যে শাহেদ এ কথাটাই ভাবছে। নিলু এসে যোগ দিলো ওদের মাঝে। মাসুম বলল, আশে-পাশে কোথাও গ্যারেজ আছে?। রিক্সাওলা হেসে বলল, এইহানে তো কারো গাড়িই নাই, গ্যারেজ কইথেন আইবো। তয় মাইল তিনেক গেলে, একখান গ্যারেজ পাইবার পারেন। মাসুম শাহেদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই নিলুকে নিয়ে এখানে অপেক্ষা কর, আমি বরং গিয়ে মিস্ত্রি নিয়ে আসি। শাহেদ বলল, তুই তো কিছুই চিনিস না। আরে তাতে কি, কোন সমস্যা হবে না। এই বলে মাসুম রিক্সায় ওঠে বসলো। আর অমনি রিক্সা চলতে লাগলো। শাহেদের মনে হলো আরে রিক্সাওলার চেহারাই তো দেখা হয়নি। চাঁদর দিয়ে যে ঘোমটা দিয়েছে তাতে দেখার কথাও না। অন্ধকারে রিক্সাটা মিলিয়ে গেলো।



জংতলা এই জঙ্গল নিয়ে অনেক বিচ্ছিরি ঘটনা মানুষের মুখে মুখে। প্রকৃতির ভয়াবহতায় এখানে সব কিছু বিরাজমান। লোকমুখে শোনা যেত এই জঙ্গলে নাকি পিচাশ ঘুরে ফিরে। অনেকেই অনেক কিছু দেখেছে এই জঙ্গলে। আবার এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে অনেকের জীবনে ঘটে গেছে ভয়াবহ ঘটনা। সে অনেক আগের কথা। এখন এই আধুনিক সভ্যতায় এইসব ভাবতেও চায়না শাহেদ। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ফোনেও কারও সাথে যোগযোগ করতে পারছে না। নেটওয়ার্ক নেই। বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাহেদ। নিলু সীটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠলো ভয়ে এক হাত পিছে সরে গেলো শাহেদ। ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ড দিতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। নিলু জেগে উঠে বলল, কি হয়েছে?। শাহেদ বলল, গাড়িটার পাগলামো, নিজে নিজেই ভালো হয়ে গেছে। নিলুর চোখে মুখে স্বস্তির ছাপ। দীর্ঘ জঙ্গলে সরু ফাঁকা রাস্তা যতটুকু সম্ভব দ্রুত চালাতে চাচ্ছে শাহেদ। এই জঙ্গল থেকে আগে বের হতে হবে। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় তেমন একটা এগুতে পারছে না। নিলু কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেলো।



লাইটের আলোয় অনেক দূর দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ শাহেদ দেখলো সামনে একটা রিক্সা দাঁড়ানো। ব্রেক কষলো শাহেদ। আরে এটা তো সেই রিক্সা যেটাতে মাসুম উঠেছিলো। গাড়ি থেকে নেমে দেখে রিক্সায় কেউ নেই। আরে দু'জন কোথায় গেলো। মাসুম মাসুম বলে খুব জোরে চিৎকার করলো। কোন উত্তর নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা শব্দ কানে এলো শাহেদের। কে যেন করমড় করমড় করে হাড়গোড় চিবিয়ে খাচ্ছে। আস্তে আস্তে সেই শব্দ ধরে এগিয়ে যায় শাহেদ। একটা পঁচা গন্ধ শাহেদের নাকে ধাক্কা খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাছে কোথাও একটা গলিতো লাশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শব্দটা আরো স্পর্ক হচ্ছে, অন্ধকার একেবারে সয়ে এসেছে চোখে। শাহেদ দেখলো একটা কালো অবয়ব কি যেন চিব্বুচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে তার আলো সরাসরি ফেললো তার উপর। মুহূতেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো শাহেদের শরীরে। মাসুমের মৃত্যুর দেহটা মাটিতে পড়ে আছে আর তার উপর বসে আছে বিকৃত চেহারার এক মানুষ। যার মাথাটা অনেক বড়। চোখ বলতে কিছুই নেই। মুখের এক পাশের মাংস পচে খয়ে খয়ে পড়ছে। সারা শরীর বড় বড় লমে ঢাকা। মুখ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ফোটা। শাহেদের দিকে তাকিয়ে একটা বিকৃত হাসি দিলো। শাহেদ নড়তেও পারছে না, চিৎকারও করতে পারছে না। এক সময় সেই জিনিসটা হামাগুড়ি দিয়ে শাহেদের দিকে আসতে লাগলো। শাহেদ খুব দ্রুত দৌড়াতে লাগলো। গাড়িতে উঠেই দ্রুত টান দিলো। নিলু বলল কি হয়েছে। শাহেদ কিছুই বলছে না, চোখের কোনে বন্ধুর জন্য অশ্রু এসে জমেছে। যত দ্রুত সম্ভব লোকালয়ে যেতে হবে। বাঁচতে হবে তাদেরকে। কিন্তু হঠাৎ করেই গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেলো। নিভে গেলো হেডলাইট। চারিপাশে অন্ধকার নেমে এলো। অন্ধকার চোখে সয়ে আসতেই দেখে সামনের শুরু রাস্তা দিয়ে একটা অবয়ব হামাগুড়ি দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ঠিক সেই সময় সেই গন্ধটা আবার এসে নাকে ধাক্কা মারলো।

ই-মেইল:sranontojugantor@gmail.com

Thursday, 7 August 2014

Saturday, 2 August 2014

2-08-2014 Daily prothom alo chutir din-a amr lakha (special thanks Jobayer raju)

জিনের বাদশা

মোবাইলের রিং-টোনটা বেজে উঠতেই চোখ থেকে ঘুমটা লাফিয়ে পালাল। অপরিচিত একটা নম্বর। রিসিভ করব কি করব না, এমনটা ভাবতে ভাবতেই লাইনটা কেটে গেল। পর্দার নম্বরটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। এই মাঝরাতে কে ফোন করতে পারে। ঠিক এমনটা যখন ভাবছি, ফোনটা আবার বেজে উঠল। হ্যালো বললাম, কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। বেশ কয়েকবার ‘হ্যালো’ করতেই কেমন যেন একটা খসখস শব্দ শুনলাম ওপাশে। কিন্তু কোনো কথা নেই। কী ঘটছে কিছু বুঝতে পারছি না। খসখস শব্দটা থামার পর কর্কশ একটা কণ্ঠ ওপাশ থেকে বলল, তুই পাবি, সোনার কলসটা আমি তোকেই দেব। কণ্ঠটা কেমন যেন ভাসা ভাসা। কে আপনি? বলতেই আবার ওপাশের লোকটা হাসিতে ফেটে পড়ল। বলল, আমি জিনের বাদশা। কী, আপনি জিনের বাদশা? আরও কিছু বলতে যাব, ঠিক সেই মুহূর্তে লাইনটা কেটে গেল। একটু পরে দেখি সেই নম্বর থেকে মিসড কল আসছে। বুঝলাম না, জিনের বাদশার মোবাইল ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেল কি না যে মিসড কল দিচ্ছে। আর কয়েকটা মিসড কল আসতেই কল করলাম। ওপাশে আবার খসখস শব্দ। বললাম, জিনের বাদশা হয়ে মোবাইলে মিসড কল দিচ্ছেন। আপনি জানেন না ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ১০ টাকা অ্যাডভান্স নেওয়া যায়? ভন্ডামি রেখে আপাতত ঘুমে মনোযোগ দিন, কাজে দেবে। ওপাশে লাইন কেটে গেল। বুঝলাম জিনের বাদশা আমার কথা পছন্দ করেনি। মানুষের ভন্ডামি দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল।
সোহানুর রহমান
শনির আখড়া, ঢাকা।

daily borar kagoja amar eid golpo<<< sudhu-e golpo noy aro bashi kichu >><<

চেনাপথে অচেনা যাত্রী
সোহানুর রহমান অনন্ত
ভোরের কাগজ : ২৬/০৭/২০১৪

বুঝতে পারলাম, মায়ের জন্য কেনা ওষুধগুলো মেসে ফেলে এসেছি। এ সমস্যাটা আমাকে খুব তাড়া করে বেড়াচ্ছে, কোনো কিছু দ্রুত করতে গেলেই মন ভোলা হয়ে যাই। বাসস্ট্যান্ডে এসে মনে পড়লো, মায়ের ওষুধগুলো নেয়া হয়নি।

এদিকে বাসও ছেড়ে দেবে এখন। নিজের প্রতি নিজেরই বিরক্তি ধরে গেলো। যাই হোক জংতলা স্ট্যান্ডে নেমে ওষুধগুলো কিনে নেবো আবার। একটা কম বয়সী ছেলে এসে বললো, স্যার পানি লাগবো ঠা-া পানি। জোবায়ের এক বোতল পানি কিনে নিলো। কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা নেই। ঈদের আগে এমনটাই ঘটে টার্মিনালগুলোতে। সবার মুখেই বাড়ি ফেরার আনন্দ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।

২.

টিকেট নিয়ে একটু ঝামেলা হলো। আমি যে সিটে বসেছি, তার পাশের সিটে এসে বসলো একজন ভদ্রলোক। এসে বললো, ভাই একটা সমস্যা হয়ে গেছে, আমি আর আমার ওয়াইফ বাড়িতে যাচ্ছি। দুজনের সিট দুই জায়গায় পড়ে গেছে। আপনি যদি ঐ সিটটায় গিয়ে বসতেন, তাহলে আমরা দুজন এক সঙ্গে যেতে পারতাম। লোকটার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছি। আমি একটা মানুষ যে কোনো এক জায়গায় বসতে পারলেই হলো। সিটটা ছেড়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। জানালার পাশে, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম।

হুড়হুড় করে যাত্রীতে তলিয়ে গেলো পুরো বাসটা। আমার পাশের সিটে কে বসেছে তখনো আমার জানা হয়নি। চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম। হঠাৎ কে যেন আমার কান থেকে হেডফোনটা খুলে নিলো। এক প্রকার লাফিয়ে উঠলাম। পাশেই একটি মেয়ে বসা। কি ব্যাপার কতোক্ষণ ধরে আপনাকে ডাকছিৃ.। ইয়ে মানেৃমানে কেন?। জানালার পাশের সিটটায় কি আমাকে বসতে দেয়া যায়? আজ যে কার মুখ দেখে বাসে উঠছি। ঠিক আছে বসুন। জানালার পাশে মেয়েটি বসলো আমি পাশে বসলাম। রাতের যাত্রা এর আগে অনেক করেছি আমি। এই প্রথম কোনো সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে।

৩.

মেয়েটি কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে। মিষ্টি রিনরিনে গলা, চমৎকার একটা পারফিউমের ঘ্রাণ নাকের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। আমি মাঝে মাঝে ট্যাড়া চোখে তাকাচ্ছি। বাসের বেশির ভাগ মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন। আমারও একটা ঘুম দেয়া প্রয়োজন কিন্তু ঘুম যেন আর আসছে না। মেয়েটি ফোন রেখে দিলো। আচ্ছা আপনি কিছু মনে করেননি তো?। আবারো চমকে উঠলাম আমি। কেন, কি মনে করবো?। এই যে জানালার পাশে বসলাম বলে। আরে না, মনে করার কি আছে। তা নিশ্চয় গ্রামে যাচ্ছেন?।

জি, এটা তো গ্রামের যাওয়ারই রাস্তা। কি করা হয়? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। আপনি? সদ্য পাস করে বের হয়েছি, এখনো চাকরি-বাকরি কিছুই জোটেনি। বায় দ্যা ওয়ে, আমি জোবায়ের। আমি বিন্দু। ফাইন, নামটা বেশ চমৎকার। নিশ্চয় জংতলা স্ট্যান্ডে নামবেন?। জি। আর কি বলা যায় ঠিক ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটি কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছু একটা বলতে গিয়েও গিলে ফেললাম।

৪.

একটা হোটেলের সামনে এসে বাসটা থামলো। আপাতত বিরতি, বিশ মিনিট পর আবার ছাড়বে। হালকা আলো এসে পড়েছে জানালা দিয়ে। বিন্দুকে অনেক ভালো লাগছে। মুখের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চুলগুলো। বেশ কয়েকবার নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। আবারো ডাকলাম, মেয়েটি এবার উঠে বললো, কি হয়েছে?। তেমন কিছু হয়নি, আপনি চাইলে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আসতে পারেন বিরতি চলছে।

ধন্যবাদ, আমি খাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এই বলে মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটা আপেল বের করে খেতে লাগলো। কি ব্যাপার আপনি যাচ্ছেন না? না মানে আমার তো ক্ষুধা নেই। একটা আপেল খাবেন, যদিও আমি অপরিচিত। এই বলে মেয়েটি আপেল খেতে লাগলো। খাবো কি খাবো না এই দ্বন্দ্বে ভুগছি। কি হলো চুপ হয়ে গেলেন যে, না ভয় পেয়েছেন? যদি অজ্ঞান করে সব নিয়ে যাই। এই বলে বিন্দু হাসতে লাগলো। না না তেমন কিছু নয়, আসলেই আমি বাসে উঠলে যে তেমন কিছু খাই না। ওকে নো প্রবলেম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস আবার ছেড়ে দিলো।

৫.

হঠাৎ করেই বিন্দু বমি করতে লাগলো। বেশ কয়েকবার মাথায় হালকা পানি দিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়িনি, তাই কি করতে হয় জানি না। বিন্দুর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো। ভোরের হালকা আলো এসে পড়েছে বাসের মধ্যে। শেষে অনেক কষ্টে বমি করা থামানো গেলো। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাস ততোক্ষণে জংতলা স্ট্যান্ডে চলে এসেছে। বাস থেকে নামলাম, বিন্দু কেমন লাগছে এখন। মোটামুটি। একা যেতে পারবেন তো? হ্যাঁ পারবো, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো। খুব মায়া লাগছিল মেয়েটির জন্য। অল্প সময়ের পরিচিত হলেও কোথায় যেন একটা টান অনুভব করছিলাম। বিন্দু একটা সিএনজিতে উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে বাই বাই জানালো। আমি তাকিয়ে রইলাম, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। তবে ভালো লাগাটুকু থেকে যাবে

22-07-2014 daily somokal- suhrid

এক মুঠো আনন্দের খোঁজে
সোহানুর রহমান অনন্ত
হঠাৎ বাসটা থেমে যাওয়ায় ঝাঁকুনি খেলাম। ঘুমে চোখটা লেগে এসেছিল। কন্ডাক্টর এসে বলল, চাকা পাংচার হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, গ্রাম্য জনপদ ঘুটঘুটে অন্ধকার। যাত্রীরা অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি শুরু করল। কাছেই একটা বাজার আছে, টিমটিমে আলো জ্বলছে। একটা সিগারেট খাওয়া প্রয়োজন। বাস থেমে নেমে হেলপারের কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম কতক্ষণ লাগবে? সে জানাল, বিশ-পঁচিশ মিনিট। আমি বাজারের দিকে পা বাড়ালাম। আমার মাথার ওপর দিয়ে চলতে লাগল অসংখ্য জোনাকি।
২.
দু'তিনটে দোকান নিয়ে এই বাজার। চা-বিস্কুট সবই পাওয়া যায়। একটা সিগারেট নিয়ে সবেমাত্র বসেছি, এমন সময় একজন লোককে দেখে চমকে উঠলাম। লোকটি ছেঁড়া একটা জামা হাতে বসে আছে। মুখভর্তি দাড়ি, মনে হয় বহুদিন তাতে যত্ন নেওয়া হয়নি। গায়ে পোশাক নেই, পরনে কেবল একটি পুরনো লুঙ্গি। দোকানে এছাড়া আরও দু'তিনজন ছিল। আমি ভিক্ষুক ভেবে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে এগিয়ে দিলাম। লোকটা টাকা না নিয়ে জামাটা আমাকে দেখিয়ে কী যেন বলতে লাগল। মোটামুটি বুঝতে পারলাম, লোকটার কথা বলার ক্ষমতা নেই। এবং সে জামাটা দেখিয়ে কী বোঝাতে চাইছে আমি সেই কথা বুঝতে পারছি না। হারিকেনের হালকা আলোয় জামাটার গায়ে রক্তের দাগ দেখতে পেলাম। দেখতে পেলাম লোকটার চোখে পানি। শিউরে উঠলাম, কিছুই যেন বুঝতে পারছি না আমি। কিছুই না।
৩.
লোকটা উঠে চলে গেল। হেলে-দুলে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল একসময়। আমি দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম লোকটার ব্যাপারে। দোকানি প্রথমে কিছু বলতে রাজি না হলেও আমার আগ্রহ দেখে বলতে শুরু করল। আজ থেকে আট বছর আগের কথা। ঠিক এমনই ঈদের আগেরদিন রাতে এখানে একটি বাস অ্যাকসিডেন্ট হয়। রাতের অন্ধকারে ভয়ানক শব্দে জেগে ওঠে গ্রামবাসী। সবাই আলো নিয়ে এগিয়ে আসে, ততক্ষণে অনেক তাজা প্রাণ শেষ। বাসটি রাস্তা থেকে ছিটকে নিচে পড়ে গিয়েছিল। বাস থেকে এক এক লাশ বের করতে লাগল গ্রামের লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ চলে এলো। একটি ছয় বছরের মেয়েকে বের করা হলো, তার বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কেবল এই দু'জনকেই জীবিত মনে হলো। সবাই মিলে নিয়ে গেল হাসপাতালে। কিন্তু হলো না। দোকানির চোখেও জল নেমে এলো। আমার চোখেও জল।
৪.
মেয়েটি মারা গেল। বাবা বেঁচে গেলেও সেই কথা শোনার পর আর কোনো কথা বলেনি। বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। আজও তেমনি আছে। মেয়েটির রক্তাক্ত জামা নিয়ে ঘুরেফিরে এখানে। অচেনা কাউকে দেখলেই জামাটা দেখায়। খুঁজে ফেরে মেয়েকে। কেউ আজও খোঁজ করতে আসেনি এ মানুষটির। কথা না বলতে পারায় কেউ জানতেও পারেনি কোথায় তার ঠিকানা। কেউ কিছু বললে নীরবে শুনে যায়, কেবল মেয়েটির জামার দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্রামের মানুষের ধারণা, লোকটা পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মনে হয় আদরের সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে বাবা। এমন সময় পেছন থেকে হেলপার এসে বলল, ভাই গাড়ি তো ছাইড়া দিতাছে আর আপনি এখানে বইসা আছেন? তাড়াতাড়ি আসেন। কখন যে চোখে জল এসে গেছে নিজেও জানি না। এটাই বোধহয় বাবার ভালোবাসা। দোকান থেকে উঠে গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। পেছনে ফিরে একবার তাকালাম। লোকটা যেদিকে চলে গেছে সেই দিকে। কোথাও কেউ নেই। সবই শূন্য।
৫.
সমস্ত পথ মনটা খুব ভীষণ্ন ছিল। লোকটার জন্য খুব খারাপ লাগছিল। ঈদের ভোরের আলো এসে পড়েছে বাসের ভেতর। তবুও যেন আঁধার কাটেনি আমার চোখের সামনে। আমি যেন এখনও দেখছি, অন্ধকারের বুক চিরে একজন বাবা তার হারানো মৃত মেয়ের রক্তাক্ত জামা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটে যাচ্ছে। এই আটটি বছর প্রতিটি ঈদ তার কাছে শূন্যতা নিয়ে এসেছে। এক মুঠো আনন্দও জোটেনি। ঈদের এই আনন্দে হয়তো সবাই মেতে থাকবে, তারই আড়ালে কেউ কেঁদে যাবে একা একা। লোকটার জন্য খুব খারাপ লাগছিল। জানি না আর কখনও দেখব কি-না। তবে এমন ভাগ্য যেন আর কোনো বাবার না হয়। এটা খুব কষ্টের, অনেক কষ্টের।
হসুহৃদ ঢাকা

daily amardesh vimrul 15-11-2012
daily amardesh vimrul 11 oct 2012

daily noyadiganta fun magazine therapy 20-02-2013
daily noyadiganta fun magazine therapy 20-02-2013
daily noyadiganta fun magazine therapy 20-02-2013

daily noyadiganta fun magazine therapy

thatta
daily ittafaq fun magazine thatta 24 aug 2013
daily ittafaq fun magazine thatta 24 aug 2013


daily ittafaq fun magazine thatta 24 aug 2013
daily ittafaq fun magazine thatta 23 september 2013
daily ittafaq fun magazine thatta 23 september 2013


aily ittafaq fun magazine thatta 15-09-2013
aily ittafaq fun magazine thatta 10-02-2014
daily ittafaq fun magazine thatta 6 march 2014

daily ittafaq fun magazine thatta 6 march 2014

daily ittafaq fun magazine thatta 6 march 2014

daily ittafaq fun magazine thatta 05-01-2014
daily ittafaq fun magazine thatta 05-01-2014
daily ittafaq fun magazine thatta 01-09-2013
daily ittafaq fun magazine thatta 01-09-2013
daily ittafaq fun magazine thatta 01-09-2013


daily ittafaq fun magazine thatta 01-09-2013


daily ittafaq fun magazine thatta 09 june 2013



daily ittafaq fun magazine thatta 23 july 2013


daily ittafaq fun magazine thatta 20 july 2013



daily ittafaq fun magazine thatta 07-07-2013


daily ittafaq fun magazine thatta 07-07-2013

daily ittafaq fun magazine thatta
daily ittafaq fun magazine thatta

daily somokal-ar suhrid 10-09-2013
daily somokal-ar suhrid 14-01-2014
daily somokal-ar suhrid 18-02-2014

daly somokal-ar suhrid 18-01-2014

31-08-2013 daily purbokone

daily noyadiganta priojon 27-06-2013