Abokash 17-05-2015
বাঙালির প্রিয় মধুমাস
সোহানুর রহমান অনন্ত
বাঙালির মধুমাস জ্যৈষ্ঠ এসে গেছে। বাহারি রঙের ফলে ছেয়ে গেছে বাজারগুলো। গ্রামের হাটবাজারে এখন মিষ্টি ফলের গন্ধ। প্রচণ্ড গরমে রসাল ফল আপনাকে শুধু চাঙাই করবে না, নিমেষেই মনকে ভালো করে দেবে। ফল প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার। ফল পছন্দ করে না, এমন মানুষ নেই বললেই চলে। বিভিন্ন জেলা ফলের জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। সাধ্যের মধ্যে যে যার মতো ফল কিনে মনের তৃপ্তি মেটাচ্ছে। গ্রামের মতো শহরের বিভিন্ন জায়গায় দোকানিরা ফলের দোকান সাজিয়ে বসেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে মধুমাসের নানা জাতের ফল। দেশী ফলের পাশাপাশি অনেকে আবার বিদেশী ফল সাজিয়ে রেখেছেন। তবে দেশী ফলের কদর বিন্দুমাত্র কমেনি তাতে। মধুমাসের ফলগুলো হচ্ছে- আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, কাঁচা তাল, জামরুল, তরমুজ, পেয়ারা, আতা, করমচা, জাম্বুরা, কাউফল, গোলাপজাম, কামরাঙা, লটকন, টেপাফল, তেঁতুল, গাব, নোনা, বেথুন, ডেউয়াসহ আরো কত কী!
বাঁশখালী, চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার চরাঞ্চল, পটিয়ার চক্রশালা, বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ি এলাকা, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু পাহাড়ি অঞ্চলে তরমুজের চাষ হয়। এসব এলাকা থেকে পাইকারেরা নগরে সরবরাহ করেন তরমুজ। তারপর শুরু হয় বিক্রি। গরমে তরমুজের চাহিদাও অনেক। তবে মধুমাস বলতে গেলে আমের কথাই সবার আগে আসে। এরই মধ্যে বাজারে শোভা পাচ্ছে পাকা টসটসে আম। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নাটোর, ঈশ্বরদী থেকে গুটি আম, মোহনভোগ, গোপালভোগসহ বাহারি নামে বিভিন্ন আমে বাজার সয়লাব। ভারতীয় গুটি আম গোবিন্দভোগ, হিমসাগর পাওয়া যাচ্ছে বৈশাখের শুরু থেকেই। এ ছাড়া রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ মধুমাসকে পরিপূর্ণ করবে। আর এর পরই আসবে সে অঞ্চলের ফজলি আম। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। কেউ আম খেতে ভালোবাসে, কেউ আবার কাঁঠাল। পরিবারের কর্তাকে তাই বিপদে পড়তে হয়। বছরের অন্য মাসগুলোর তুলনায় জ্যৈষ্ঠ মাসে ফল সবচেয়ে বেশি হয়।
রসে টইটম্বুর মওসুমি ফলের ম ম ঘ্রাণে ভরে ওঠে ফলের আড়তগুলো। আবহমান বাংলার অনেক ঐহিত্য রয়েছে এই মধুমাসকে নিয়ে। মেয়ের বাবা রসাল ফল নিয়ে মেয়ে আনতে যান তার শ্বশুরবাড়ি। ফল দিয়ে মেয়ে-জামাই এবং পরিবারের অন্যদের দাওয়াত দিয়ে আসেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাই না এলে মধুমাসই পরিপূর্ণ হবে না, এমনটিই তাদের চিন্তাভাবনা। মেয়ের জামাই বেড়াতে এলে আম, দুধ, কাঁঠাল আরো কত কী খেতে দেন! ঝড় হোক আর রোদে মাঠঘাঠ শুকিয়ে যাক, আম-কাঁঠাল নিয়ে মেয়েবাড়িতে যেতেই হবে। এর সাথে গ্রামের অনেকটা সম্মানও জড়িয়ে থাকে। গ্রামের লোকজনের নিজেদের গাছ থাকায় খুব কম জিনিসই কিনে খেতে হয়। তার পরও যাদের নেই তারাও থেমে থাকে না। বাজার থেকে কিনে এনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে বসে। এই সময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। কোথাও কোথাও মওসুমি ফলের মেলা বসে। তখন মনে হয় বাংলার প্রকৃতি যেন সেজেছে রসের হাঁড়ি নিয়ে। তবে বিশেষ করে আমগাছে ঢিল দেয়া অথবা আম চুরি করা নিয়ে প্রত্যেক মানুষের জীবনেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে। গ্রামের মতো রাজধানীতে মওসুমি ফলের মেলা বসে। বিশেষ করে আমের মেলা সবার দৃষ্টি কাড়ে।
অন্য দিকে রসাল লিচু দেখে লোভ সামলানো দায়। ছোট বড় সাইজের লিচুর দাম চড়া হলেও ক্রেতার সংখ্যা থাকে বেশি। কারণ, বছরের এই সময়টাতে কেবল এমন রসাল ফলের স্বাদ নেয়া যায়। মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও ঢাকার অদূরের সোনারগাঁও অঞ্চলের লিচু অনেক আগে থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে। ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে আনন্দ লণীয়। কারণ, বছরের এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি ফল বিক্রি হয়। দিনাজপুরের লিচু বাজারে আসতে একটু দেরি হয়। বড় সাইজের লিচুগুলোর বাজারে খুব কদর। তবে আম মোটামুটি পাওয়া গেলেও লিচু খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কারণ, সব ফলের চেয়ে লিচু আর আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। বাসস্ট্যান্ড কিংবা টারমিনালগুলোয় এসব ফল সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বাজারের পাশাপাশি নগরীর অলিগলির মধ্যেও ঝুড়িতে করে অল্পদামে ফল বিক্রি হয়। গ্রীষ্মে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত জনসাধারণের প্রাণ জোড়াচ্ছে ফলগুলো। তবে যারা একেবারে নিম্নশ্রেণীর, তাদের জন্য মধুমাস অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতোই। বিশেষ করে পথশিশুরা মধুমাস থেকে বঞ্চিত হয়। তবে অনেক সমাজসেবী আবার দলবদ্ধ হয়ে পথশিশুদের মাঝে আম বিলিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের মাঝেও মধুমাসের এক অন্যরকম উৎসব সৃষ্টি হয়। এভাবে যদি আরো অনেকে এগিয়ে আসে, তবে হয়তো কাউকেই আর এই রসাল ফল খাওয়া থেকে বাদ পড়তে হবে না। এ মাসটি সবার প্রিয় মাস।
ফলকে অনেক দিন তরতাজা রাখার জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। এটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যদিও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে, তারপরও ফরমালিন দেয়া থেমে নেই। জানা যায়, কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করে বাগানেই বিষাক্ত ইথিলিন দিয়ে পাকানো হয়। তবুও মধুফল বলে কথা। তাপদাহের যন্ত্রণায় জনমনে একটু শীতলতার পরশ ও প্রশান্তি মধুমাসের এই মধুফলে। তাই মানুষ খেয়ে যাচ্ছে তাদের প্রিয় মধুফল। তবে কিছু বিষয় ল করলে আপনি নিজেই ফরমালিনযুক্ত ফল শনাক্ত করতে পারবেন। বাজারে গিয়ে কিভাবে বুঝবেন ফলে ফরমালিন আছে কি না? প্রথমেই ল করুন আমের গায়ে মাছি বসছে কি না। কেননা ফরমালিনযুক্ত আমে মাছি বসবে না। আমটি যদি ফরমালিনমুক্ত হয় অবশ্যই তাতে মাছি বসবে। ল করুন আমের গায়ে সাদাটে ভাব আছে কি না, যদি থাকে তবে ভাববেন ফলটি ফরমালিনমুক্ত। কারণ ফলে যখন ফরমালিন দেয়া হয় তখন সেটি ঝকঝকে সুন্দর টসটসে দেখায়। একেবারে দাগহীন আম দেখলে কিনবেন না, কারণ গাছপাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর। আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছপাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেয়া আম হলে কোনো গন্ধ থাকবে না কিংবা বাজে গন্ধ থাকবে। আম মুখে দেয়ার পর যদি দেখেন কোনো সৌরভ নেই কিংবা আমে টক-মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, বুঝবেন যে আমে ওষুধ দেয়া। আম কেনা হলে কিছুণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছপাকা আম হলে গন্ধে ম ম করে চার পাশ। ওষুধ দেয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবেই না। তবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো যদি আপনি বুঝতে পারেন কিংবা জানতে পারেন কোনো বিক্রেতা ফরমালিনযুক্ত ফল বিক্রি করছে। তবে কাছের পুলিশকে জানান কিংবা মোবাইল কোর্টকে জানাতে পারেন; এতে সবাই উপকৃত হবে। মধুমাসের মধুর রসে বাহারি সব ফলের গন্ধ ঝরে, তাই ফলের রসে টইটম্বুর চার পাশ। জ্যৈষ্ঠ আসে ঘ্রাণের মধুমাসের সাজ। তাই মধুমাসের টসটসে ফলের রসে ভরে উঠুক সবার প্রাণ।
sranontojugantor@gmail.com
বাঙালির প্রিয় মধুমাস
সোহানুর রহমান অনন্ত
বাঙালির মধুমাস জ্যৈষ্ঠ এসে গেছে। বাহারি রঙের ফলে ছেয়ে গেছে বাজারগুলো। গ্রামের হাটবাজারে এখন মিষ্টি ফলের গন্ধ। প্রচণ্ড গরমে রসাল ফল আপনাকে শুধু চাঙাই করবে না, নিমেষেই মনকে ভালো করে দেবে। ফল প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার। ফল পছন্দ করে না, এমন মানুষ নেই বললেই চলে। বিভিন্ন জেলা ফলের জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। সাধ্যের মধ্যে যে যার মতো ফল কিনে মনের তৃপ্তি মেটাচ্ছে। গ্রামের মতো শহরের বিভিন্ন জায়গায় দোকানিরা ফলের দোকান সাজিয়ে বসেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে মধুমাসের নানা জাতের ফল। দেশী ফলের পাশাপাশি অনেকে আবার বিদেশী ফল সাজিয়ে রেখেছেন। তবে দেশী ফলের কদর বিন্দুমাত্র কমেনি তাতে। মধুমাসের ফলগুলো হচ্ছে- আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, কাঁচা তাল, জামরুল, তরমুজ, পেয়ারা, আতা, করমচা, জাম্বুরা, কাউফল, গোলাপজাম, কামরাঙা, লটকন, টেপাফল, তেঁতুল, গাব, নোনা, বেথুন, ডেউয়াসহ আরো কত কী!
বাঁশখালী, চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার চরাঞ্চল, পটিয়ার চক্রশালা, বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ি এলাকা, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু পাহাড়ি অঞ্চলে তরমুজের চাষ হয়। এসব এলাকা থেকে পাইকারেরা নগরে সরবরাহ করেন তরমুজ। তারপর শুরু হয় বিক্রি। গরমে তরমুজের চাহিদাও অনেক। তবে মধুমাস বলতে গেলে আমের কথাই সবার আগে আসে। এরই মধ্যে বাজারে শোভা পাচ্ছে পাকা টসটসে আম। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নাটোর, ঈশ্বরদী থেকে গুটি আম, মোহনভোগ, গোপালভোগসহ বাহারি নামে বিভিন্ন আমে বাজার সয়লাব। ভারতীয় গুটি আম গোবিন্দভোগ, হিমসাগর পাওয়া যাচ্ছে বৈশাখের শুরু থেকেই। এ ছাড়া রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ মধুমাসকে পরিপূর্ণ করবে। আর এর পরই আসবে সে অঞ্চলের ফজলি আম। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। কেউ আম খেতে ভালোবাসে, কেউ আবার কাঁঠাল। পরিবারের কর্তাকে তাই বিপদে পড়তে হয়। বছরের অন্য মাসগুলোর তুলনায় জ্যৈষ্ঠ মাসে ফল সবচেয়ে বেশি হয়।
রসে টইটম্বুর মওসুমি ফলের ম ম ঘ্রাণে ভরে ওঠে ফলের আড়তগুলো। আবহমান বাংলার অনেক ঐহিত্য রয়েছে এই মধুমাসকে নিয়ে। মেয়ের বাবা রসাল ফল নিয়ে মেয়ে আনতে যান তার শ্বশুরবাড়ি। ফল দিয়ে মেয়ে-জামাই এবং পরিবারের অন্যদের দাওয়াত দিয়ে আসেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাই না এলে মধুমাসই পরিপূর্ণ হবে না, এমনটিই তাদের চিন্তাভাবনা। মেয়ের জামাই বেড়াতে এলে আম, দুধ, কাঁঠাল আরো কত কী খেতে দেন! ঝড় হোক আর রোদে মাঠঘাঠ শুকিয়ে যাক, আম-কাঁঠাল নিয়ে মেয়েবাড়িতে যেতেই হবে। এর সাথে গ্রামের অনেকটা সম্মানও জড়িয়ে থাকে। গ্রামের লোকজনের নিজেদের গাছ থাকায় খুব কম জিনিসই কিনে খেতে হয়। তার পরও যাদের নেই তারাও থেমে থাকে না। বাজার থেকে কিনে এনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে বসে। এই সময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। কোথাও কোথাও মওসুমি ফলের মেলা বসে। তখন মনে হয় বাংলার প্রকৃতি যেন সেজেছে রসের হাঁড়ি নিয়ে। তবে বিশেষ করে আমগাছে ঢিল দেয়া অথবা আম চুরি করা নিয়ে প্রত্যেক মানুষের জীবনেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে। গ্রামের মতো রাজধানীতে মওসুমি ফলের মেলা বসে। বিশেষ করে আমের মেলা সবার দৃষ্টি কাড়ে।
অন্য দিকে রসাল লিচু দেখে লোভ সামলানো দায়। ছোট বড় সাইজের লিচুর দাম চড়া হলেও ক্রেতার সংখ্যা থাকে বেশি। কারণ, বছরের এই সময়টাতে কেবল এমন রসাল ফলের স্বাদ নেয়া যায়। মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও ঢাকার অদূরের সোনারগাঁও অঞ্চলের লিচু অনেক আগে থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে। ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে আনন্দ লণীয়। কারণ, বছরের এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি ফল বিক্রি হয়। দিনাজপুরের লিচু বাজারে আসতে একটু দেরি হয়। বড় সাইজের লিচুগুলোর বাজারে খুব কদর। তবে আম মোটামুটি পাওয়া গেলেও লিচু খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কারণ, সব ফলের চেয়ে লিচু আর আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। বাসস্ট্যান্ড কিংবা টারমিনালগুলোয় এসব ফল সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বাজারের পাশাপাশি নগরীর অলিগলির মধ্যেও ঝুড়িতে করে অল্পদামে ফল বিক্রি হয়। গ্রীষ্মে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত জনসাধারণের প্রাণ জোড়াচ্ছে ফলগুলো। তবে যারা একেবারে নিম্নশ্রেণীর, তাদের জন্য মধুমাস অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতোই। বিশেষ করে পথশিশুরা মধুমাস থেকে বঞ্চিত হয়। তবে অনেক সমাজসেবী আবার দলবদ্ধ হয়ে পথশিশুদের মাঝে আম বিলিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের মাঝেও মধুমাসের এক অন্যরকম উৎসব সৃষ্টি হয়। এভাবে যদি আরো অনেকে এগিয়ে আসে, তবে হয়তো কাউকেই আর এই রসাল ফল খাওয়া থেকে বাদ পড়তে হবে না। এ মাসটি সবার প্রিয় মাস।
ফলকে অনেক দিন তরতাজা রাখার জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। এটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যদিও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে, তারপরও ফরমালিন দেয়া থেমে নেই। জানা যায়, কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করে বাগানেই বিষাক্ত ইথিলিন দিয়ে পাকানো হয়। তবুও মধুফল বলে কথা। তাপদাহের যন্ত্রণায় জনমনে একটু শীতলতার পরশ ও প্রশান্তি মধুমাসের এই মধুফলে। তাই মানুষ খেয়ে যাচ্ছে তাদের প্রিয় মধুফল। তবে কিছু বিষয় ল করলে আপনি নিজেই ফরমালিনযুক্ত ফল শনাক্ত করতে পারবেন। বাজারে গিয়ে কিভাবে বুঝবেন ফলে ফরমালিন আছে কি না? প্রথমেই ল করুন আমের গায়ে মাছি বসছে কি না। কেননা ফরমালিনযুক্ত আমে মাছি বসবে না। আমটি যদি ফরমালিনমুক্ত হয় অবশ্যই তাতে মাছি বসবে। ল করুন আমের গায়ে সাদাটে ভাব আছে কি না, যদি থাকে তবে ভাববেন ফলটি ফরমালিনমুক্ত। কারণ ফলে যখন ফরমালিন দেয়া হয় তখন সেটি ঝকঝকে সুন্দর টসটসে দেখায়। একেবারে দাগহীন আম দেখলে কিনবেন না, কারণ গাছপাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর। আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছপাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেয়া আম হলে কোনো গন্ধ থাকবে না কিংবা বাজে গন্ধ থাকবে। আম মুখে দেয়ার পর যদি দেখেন কোনো সৌরভ নেই কিংবা আমে টক-মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, বুঝবেন যে আমে ওষুধ দেয়া। আম কেনা হলে কিছুণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছপাকা আম হলে গন্ধে ম ম করে চার পাশ। ওষুধ দেয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবেই না। তবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো যদি আপনি বুঝতে পারেন কিংবা জানতে পারেন কোনো বিক্রেতা ফরমালিনযুক্ত ফল বিক্রি করছে। তবে কাছের পুলিশকে জানান কিংবা মোবাইল কোর্টকে জানাতে পারেন; এতে সবাই উপকৃত হবে। মধুমাসের মধুর রসে বাহারি সব ফলের গন্ধ ঝরে, তাই ফলের রসে টইটম্বুর চার পাশ। জ্যৈষ্ঠ আসে ঘ্রাণের মধুমাসের সাজ। তাই মধুমাসের টসটসে ফলের রসে ভরে উঠুক সবার প্রাণ।
sranontojugantor@gmail.com
No comments:
Post a Comment