Aj 24-05-2015 Abokash-a
মানবপাচার
সোহানুর রহমান অনন্ত
একজন মানুষের স্বপ্ন অনেক বড় হয়। তার এই স্বপ্নের মাঝে থাকে তার পরিবার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যখন নিজেই পড়ে যান জীবন মরণের মাঝখানে ঠিক তখনই সেই স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। সাগরের প্রতিটি ঢেউয়ের সাথে স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়। এটা কোনো উপন্যাসের ভূমিকা নয়, বাস্তব। এভাবেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়া অনেক বাংলাদেশী ভাসছে সাগরের জলে। দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে সাগরে ভেসে বেড়ানো কিংবা জঙ্গলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করার কথা এখন সবার মুখে মুখে। মানবপাচার করে অনেক পাচারকারী আবার কোটিপতি বনে গেছেন। গরিবের সরলতার সুযোগ নিয়ে দালালেরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা, যা দেখার কেউ নেই। ভালো উপার্যনের আশায় সমুদ্রপথে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে। কিন্তু শুরু যতটা না সুন্দর হয় শেষটা হয় তার চেয়েও কঠিন। তারা জানে না এটা খুবই দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যাত্রা। যখন এই চিরসত্যটি তারা বুঝতে পারেন তখন আর ফেরার পথ নেই। মানবপাচারে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গাসহ তিন শতাধিক স্থানীয় ও বহিরাগত দালাল। এমনটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। হঠাৎ করে গণমাধ্যমে বিষয়টি চলে আসায় বিভিন্ন দেশের প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। সমুদ্রে ভেসে থাকা বিভিন্ন নৌকায় আটকে পড়াদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশী। দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদের জীবন প্রদীপও নিভতে বসেছে। নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেও অনেকে, উদ্ধাদের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর কিছুদিন আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে মারা যান অনেক অবৈধ অভিবাসী। সেই ঘটনার পর ইউরোপীয় দেশগুলো নড়েচড়ে বসে। তারা এগিয়ে আসে মানবপাচার বন্ধে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। অর্ধেক বাংলাদেশী হলেও বাকি অর্ধেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা বাঙালি। দেশটিতে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, লুণ্ঠনসহ নানা নির্যাতন চালিয়ে আসছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে অন্যান্য দেশে। জানা যায়, বিদেশগামী এসব মানুষকে প্রায়ই আটকে রেখে পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে পাচারকারীরা। না খেয়ে বন্দী অবস্থাতেই অনেকে মারা যায়। এভাবেই পাচারকারীরা নাকের ডগায় বসে সাধারণ মানুষের জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের মতে, জানুয়ারি থেকে মার্চে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বঙ্গোপসাগর থেকে যাত্রা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার উদ্দেশে। দিন দিন এর হার বেড়েই চলছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ রয়েছে। আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার জন্য তারা বিদেশে পাড়ি জমান অবৈধ পথে। তাদের ধারণা, উন্নত কোনো একটি দেশে যেতে পারলে তাদের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকেই বিক্রি কয়ে দেয় নিজের পৈতৃক সম্পত্তি। দালালের হাতে তুলে দেয় টাকা। ট্রলারে গভীর সমুদ্রে পাড়ি জমান। অনেক মানুষ একসাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। খাবার চাইতে গেলে উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অর্থনৈতিক কারণে দেশান্তরী হওয়া এসব মানুষের তখন আর কিছুই করার থাকে না। আবার চালকহীন নৌযানে সাগরের বুকে মৃত্যুর দিন গুনছেন অনেকে।
মালাক্কা প্রণালী ও এর আশপাশে সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম। অন্য দিকে ইন্দোনেশীয় সরকারের প থেকে গত সোমবার নৌকায় অবস্থানকারী শতাধিক বিদেশগামীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সীমান্তসংলগ্ন জঙ্গলে গোপন নির্যাতন শিবির ও বেশ কয়েকটি কবরের সন্ধান পায় দেশটির পুলিশ। সেই খবর পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে উঠে আসে মানবপাচারের ব্যাপারটি। এ ঘটনার পর থেকেই দেশটির আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী মানবপাচারের সাথে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। সাগরে ভাসমান এই মানুষের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। খাবার-পানির অভাবে বেঁচে থেকেও তারা প্রায় মৃত্য। এসব মানুষকে উদ্ধার করতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন এবং দালালদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করা। অবৈধ পথে যাতে কেউ বিদেশ গমন করতে না পারে সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। উপকূলীয় মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত প্রতিটি মানুষের জীবনই মূল্যবা
মানবপাচার
সোহানুর রহমান অনন্ত
একজন মানুষের স্বপ্ন অনেক বড় হয়। তার এই স্বপ্নের মাঝে থাকে তার পরিবার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যখন নিজেই পড়ে যান জীবন মরণের মাঝখানে ঠিক তখনই সেই স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। সাগরের প্রতিটি ঢেউয়ের সাথে স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়। এটা কোনো উপন্যাসের ভূমিকা নয়, বাস্তব। এভাবেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়া অনেক বাংলাদেশী ভাসছে সাগরের জলে। দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে সাগরে ভেসে বেড়ানো কিংবা জঙ্গলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করার কথা এখন সবার মুখে মুখে। মানবপাচার করে অনেক পাচারকারী আবার কোটিপতি বনে গেছেন। গরিবের সরলতার সুযোগ নিয়ে দালালেরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা, যা দেখার কেউ নেই। ভালো উপার্যনের আশায় সমুদ্রপথে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে। কিন্তু শুরু যতটা না সুন্দর হয় শেষটা হয় তার চেয়েও কঠিন। তারা জানে না এটা খুবই দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যাত্রা। যখন এই চিরসত্যটি তারা বুঝতে পারেন তখন আর ফেরার পথ নেই। মানবপাচারে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গাসহ তিন শতাধিক স্থানীয় ও বহিরাগত দালাল। এমনটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। হঠাৎ করে গণমাধ্যমে বিষয়টি চলে আসায় বিভিন্ন দেশের প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। সমুদ্রে ভেসে থাকা বিভিন্ন নৌকায় আটকে পড়াদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশী। দালালদের খপ্পরে পড়ে তাদের জীবন প্রদীপও নিভতে বসেছে। নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেও অনেকে, উদ্ধাদের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর কিছুদিন আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে মারা যান অনেক অবৈধ অভিবাসী। সেই ঘটনার পর ইউরোপীয় দেশগুলো নড়েচড়ে বসে। তারা এগিয়ে আসে মানবপাচার বন্ধে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। অর্ধেক বাংলাদেশী হলেও বাকি অর্ধেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা বাঙালি। দেশটিতে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, লুণ্ঠনসহ নানা নির্যাতন চালিয়ে আসছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে অন্যান্য দেশে। জানা যায়, বিদেশগামী এসব মানুষকে প্রায়ই আটকে রেখে পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে পাচারকারীরা। না খেয়ে বন্দী অবস্থাতেই অনেকে মারা যায়। এভাবেই পাচারকারীরা নাকের ডগায় বসে সাধারণ মানুষের জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের মতে, জানুয়ারি থেকে মার্চে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বঙ্গোপসাগর থেকে যাত্রা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার উদ্দেশে। দিন দিন এর হার বেড়েই চলছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ রয়েছে। আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার জন্য তারা বিদেশে পাড়ি জমান অবৈধ পথে। তাদের ধারণা, উন্নত কোনো একটি দেশে যেতে পারলে তাদের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকেই বিক্রি কয়ে দেয় নিজের পৈতৃক সম্পত্তি। দালালের হাতে তুলে দেয় টাকা। ট্রলারে গভীর সমুদ্রে পাড়ি জমান। অনেক মানুষ একসাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। খাবার চাইতে গেলে উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অর্থনৈতিক কারণে দেশান্তরী হওয়া এসব মানুষের তখন আর কিছুই করার থাকে না। আবার চালকহীন নৌযানে সাগরের বুকে মৃত্যুর দিন গুনছেন অনেকে।
মালাক্কা প্রণালী ও এর আশপাশে সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম। অন্য দিকে ইন্দোনেশীয় সরকারের প থেকে গত সোমবার নৌকায় অবস্থানকারী শতাধিক বিদেশগামীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সীমান্তসংলগ্ন জঙ্গলে গোপন নির্যাতন শিবির ও বেশ কয়েকটি কবরের সন্ধান পায় দেশটির পুলিশ। সেই খবর পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে উঠে আসে মানবপাচারের ব্যাপারটি। এ ঘটনার পর থেকেই দেশটির আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী মানবপাচারের সাথে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। সাগরে ভাসমান এই মানুষের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। খাবার-পানির অভাবে বেঁচে থেকেও তারা প্রায় মৃত্য। এসব মানুষকে উদ্ধার করতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন এবং দালালদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করা। অবৈধ পথে যাতে কেউ বিদেশ গমন করতে না পারে সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। উপকূলীয় মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত প্রতিটি মানুষের জীবনই মূল্যবা
No comments:
Post a Comment