আজ ০৯-১১-১৪ দৈনিক নয়াদিগন্তের অবকাশে আমার লেখা
হেমন্তে নবান্ন উৎসব
সোহানুর রহমান
হেমন্তকে হচ্ছে শীতের পূর্বাভাস। ছয় ঋতুর এই দেশে প্রত্যেকটি ঋতুই আলাদা আলাদা রূপ বহন করে। এর মধ্যে হেমন্ত একেবারেই ভিন্ন একটি ঋতু। এর মাঝে যেমন বর্ষার লাবণ্যতা নেই, তেমনি নেই বসন্তের মতো বাহারি রূপ। হেমন্তের রঙ ধূসর। সাধারণত হেমন্তে দেখা যায় অখণ্ড নীল আকাশ। ভোরের নরম আলোয় টুপটাপ শিশির ঝরার শব্দ। মিষ্টি সোনালি রোদে মাঠজুড়ে আলো আঁধারের লুকোচুরি। দুপুরের রোদের স্নিগ্ধতা, সন্ধ্যায় বাঁশঝাড়ে পাখির কলকাকলি ভিন্নমাত্রার সৃষ্টি করে। কবির ভাষায় বলতে গেলে, হেমন্ত প্রিয়ার বাধনহারা চুলের মতোই উদাসীন। তাই একে বলা হয় অনুভবের ঋতু।
হেমন্তের আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তাই রাতের বেলা জ্যোৎস্নামাখা আকাশটা একেবারেই অন্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। গরমের তীব্রতা কমে গিয়ে শীত পড়তে শুরু করে। সকালবেলা দূরের গ্রামগুলো কুয়াশায় ঢেকে যায়। গাছিরা খেজুরগাছের মাথায় নরম অংশ কেটে প্রস্তুত রাখে রস সংগ্রহ করার জন্য। এ ছাড়া পাখিদের মিষ্টি সুর মন জুড়িয়ে দেয়। এক সময় বাংলা বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ ধান কাটার হিসেব ঠিকমতো রাখতেই বাংলা মাসের সূচনা হয়েছিল। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। কৃষাণীরা নিজ আঙিনা লেপেপুঁছে পরিষ্কার করে নতুন ধান তোলার জন্য। কৃষকের চোখে নতুন ধানের রঙিন স্বপ্ন। কার্তিকের পর আসে সার্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্ন। বাড়িতে বাড়িতে রাতজেগে ধান নেয় কৃষক ও কৃষাণীরা। গোলা ভরে ওঠে নতুন ধানে। এ সময় তারা স্থানীয় বিভিন্ন গান করে থাকে। গান আর ধান নেয়ার শব্দ, দূর-দূরান্ত থেকে শোনা যায়। নতুন চালের ফিরনি-পায়েশ অথবা ীর তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়স্বজনকে খাওয়ানো হয়। বাড়িতে বাড়িতে তখন নতুন চালের মিষ্টি গন্ধ। নবান্নে জামাতাকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকেও ‘নাইওর’ আনা হয়। গ্রাম্যজনপদে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় নবান্নের ধান তোলার মাধ্যমে। এ সময় গ্রামের পথে-প্রান্তরে অনেক রকম মেলা বসে, দূর-দূরান্ত থেকে সার্কাস পার্টি আসে, হয় যাত্রাপালা। দেশীয় নৃত্য, গানবাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ ছাড়া লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি ইত্যাদি চোখে পড়ে। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন, রাজ অশোকসহ নানা জাতের ফুল। হেমন্ত বাংলা সাহিত্যের বিরাট একটি জায়গা দখল করে রেখেছে। যুগে যুগে কবিরা হেমন্ত ঋতু নিয়ে অনেক গান-কবিতা রচনা করে গেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ, গোলাম মোহাম্মদ এবং আরো অনেকে। এর মধ্যে কবি সুফিয়া কামালের ছড়া-কবিতা (হেমন্ত) প্রায় সবার মুখে মুখে শোনা যায়। সবুজ পাতার খামের ভেতর, হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে কোন্ পাথারের ওপার থেকে, আনল ডেকে হেমন্তকে? হেমন্ত আমাদের গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। হেমন্ত এলে প্রকৃতি ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যে সাজে। া
হেমন্তে নবান্ন উৎসব
সোহানুর রহমান
হেমন্তকে হচ্ছে শীতের পূর্বাভাস। ছয় ঋতুর এই দেশে প্রত্যেকটি ঋতুই আলাদা আলাদা রূপ বহন করে। এর মধ্যে হেমন্ত একেবারেই ভিন্ন একটি ঋতু। এর মাঝে যেমন বর্ষার লাবণ্যতা নেই, তেমনি নেই বসন্তের মতো বাহারি রূপ। হেমন্তের রঙ ধূসর। সাধারণত হেমন্তে দেখা যায় অখণ্ড নীল আকাশ। ভোরের নরম আলোয় টুপটাপ শিশির ঝরার শব্দ। মিষ্টি সোনালি রোদে মাঠজুড়ে আলো আঁধারের লুকোচুরি। দুপুরের রোদের স্নিগ্ধতা, সন্ধ্যায় বাঁশঝাড়ে পাখির কলকাকলি ভিন্নমাত্রার সৃষ্টি করে। কবির ভাষায় বলতে গেলে, হেমন্ত প্রিয়ার বাধনহারা চুলের মতোই উদাসীন। তাই একে বলা হয় অনুভবের ঋতু।
হেমন্তের আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তাই রাতের বেলা জ্যোৎস্নামাখা আকাশটা একেবারেই অন্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। গরমের তীব্রতা কমে গিয়ে শীত পড়তে শুরু করে। সকালবেলা দূরের গ্রামগুলো কুয়াশায় ঢেকে যায়। গাছিরা খেজুরগাছের মাথায় নরম অংশ কেটে প্রস্তুত রাখে রস সংগ্রহ করার জন্য। এ ছাড়া পাখিদের মিষ্টি সুর মন জুড়িয়ে দেয়। এক সময় বাংলা বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ ধান কাটার হিসেব ঠিকমতো রাখতেই বাংলা মাসের সূচনা হয়েছিল। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। কৃষাণীরা নিজ আঙিনা লেপেপুঁছে পরিষ্কার করে নতুন ধান তোলার জন্য। কৃষকের চোখে নতুন ধানের রঙিন স্বপ্ন। কার্তিকের পর আসে সার্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্ন। বাড়িতে বাড়িতে রাতজেগে ধান নেয় কৃষক ও কৃষাণীরা। গোলা ভরে ওঠে নতুন ধানে। এ সময় তারা স্থানীয় বিভিন্ন গান করে থাকে। গান আর ধান নেয়ার শব্দ, দূর-দূরান্ত থেকে শোনা যায়। নতুন চালের ফিরনি-পায়েশ অথবা ীর তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়স্বজনকে খাওয়ানো হয়। বাড়িতে বাড়িতে তখন নতুন চালের মিষ্টি গন্ধ। নবান্নে জামাতাকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকেও ‘নাইওর’ আনা হয়। গ্রাম্যজনপদে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় নবান্নের ধান তোলার মাধ্যমে। এ সময় গ্রামের পথে-প্রান্তরে অনেক রকম মেলা বসে, দূর-দূরান্ত থেকে সার্কাস পার্টি আসে, হয় যাত্রাপালা। দেশীয় নৃত্য, গানবাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ ছাড়া লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি ইত্যাদি চোখে পড়ে। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন, রাজ অশোকসহ নানা জাতের ফুল। হেমন্ত বাংলা সাহিত্যের বিরাট একটি জায়গা দখল করে রেখেছে। যুগে যুগে কবিরা হেমন্ত ঋতু নিয়ে অনেক গান-কবিতা রচনা করে গেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, জসীমউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ, গোলাম মোহাম্মদ এবং আরো অনেকে। এর মধ্যে কবি সুফিয়া কামালের ছড়া-কবিতা (হেমন্ত) প্রায় সবার মুখে মুখে শোনা যায়। সবুজ পাতার খামের ভেতর, হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে কোন্ পাথারের ওপার থেকে, আনল ডেকে হেমন্তকে? হেমন্ত আমাদের গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। হেমন্ত এলে প্রকৃতি ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যে সাজে। া
No comments:
Post a Comment