09-05-2015 Abokash-a
প্রাণের শহর
সোহানুর রহমান অনন্ত
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনা। বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাস। ব্যস্ত এই ঢাকা এখন মানুষের প্রাণের শহর। চাকরির খোঁজে অথবা যেকোনো প্রয়োজনে মানুষ এখন ছুটে আসে ঢাকায়। ৪০০ বছরের পুরনো প্রিয় নগরী।
এই নগরীতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দিন দিন বড় বড় দালানের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে নীল আকাশ। নেই খেলার মাঠ কিংবা বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো জায়গা। সারাণই মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ আজকের ঢাকা। সকাল থেকে রাত, আবার রাত থেকে সকালÑ সারাণই মানুষের পদচারণায় মুখরিত ঢাকার পথঘাট। প্রাণের নগরী ঢাকাও তাই ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য, সৌন্দর্য।
পুরান ঢাকায় এখনো কিছু রীতিনীতি চললেও নতুন ঢাকায় এসব একদম চলে না। যে যার মতো ব্যস্ত, কারো সাথে কারো কথা বলারও সুযোগ নেই। মানুষের চাপ বাড়ছে; তাই বাড়ছে যানজট, বাড়ছে বাড়িভাড়া। নানামুখী কষ্ট, তবুও মানুষ ঢাকার পানেই ছুটে আসছে। ঢাকার ছেলেমেয়েরা মাঠে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলে না, তারা কম্পিউটারে বাসে খেলে। গাছ কিংবা পাখির কলতান কবেই মরে গেছে। আগের ঢাকা আর এখনকার ঢাকার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ওই এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, তাই রাজা মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী গড়ে ওঠা শহরটি এখন অনেক বড়। প্রাচীন এই শহরজুড়ে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী মসজিদ রয়েছে। তাই রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দরবারে ‘মসজিদের শহর’ হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু আমাদের এ গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য এক দিনে গড়ে ওঠেনি।
অসংখ্য মসজিদের শহরে এই ঢাকা ঐতিহ্যকে বহন করেই চলেছে। পুরান ঢাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডে এখনো গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত নারিন্দা বিনত বিবির মসজিদ। জানা যায়, এখানে বসবাসকালীন আরাকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাকে এই মসজিদের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় এবং পরবর্তীকালে আরাকান আলীর মৃত্যু ঘটলে তাকেও এখানেই কবর দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বিনত বিবির নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালে একটি
কালো পাথরে এই ইতিহাস ফারসি ভাষায় খোদাই করা আছে।
এ ছাড়া ঢাকায় রয়েছে বেশ কিছু দার্শনিক স্থান। আহসান মঞ্জিল জাদুঘর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। সেখানে প্রতিদিন ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। ঐতিহ্যের আরেক সাী বিউটি বোর্ডিং। বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, চিত্রপরিচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হতো বিউটি বোর্ডিং। অনেক বড় বড় ব্যক্তি এখানে যাতায়াত করতেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের ক্যান্টিনে বসেই প্রতিদিন চায়ের কাপের সাথে আড্ডার ঝড় তুলতেন নির্মলেন্দু গুণ, শহীদ কাদরী, কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও শামসুল হকের মতো কবি-সাহিত্যিকেরা। বিউটি বোর্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রহøাদ সাহা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
প্রহাদ সাহার বড় মেয়ের নামে বোর্ডিংটির নামকরণ করা হয় বিউটি বোর্ডিং। এ ছাড়া আরো রয়েছে ঢাকা জাদুঘর, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হলসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক স্থান।
ঢাকা শহরে মানুষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এই শহর। এখন থেকেই সচেতন না হলে অদূরভবিষ্যতে ঢাকায় বসবাস করা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে। সেই সাথে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে তাহলে হতাহতের সংখ্যা অনেক গুণ ছাড়িয়ে যাবে। তাই প্রিয় শহর ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এবং নিজেরা বাঁচতে হলে এখন থেকেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
আমরাই পারি আমাদের শহরকে সুন্দর করে তুলতে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর শহর উপহার দিতে
প্রাণের শহর
সোহানুর রহমান অনন্ত
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনা। বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাস। ব্যস্ত এই ঢাকা এখন মানুষের প্রাণের শহর। চাকরির খোঁজে অথবা যেকোনো প্রয়োজনে মানুষ এখন ছুটে আসে ঢাকায়। ৪০০ বছরের পুরনো প্রিয় নগরী।
এই নগরীতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দিন দিন বড় বড় দালানের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে নীল আকাশ। নেই খেলার মাঠ কিংবা বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো জায়গা। সারাণই মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ আজকের ঢাকা। সকাল থেকে রাত, আবার রাত থেকে সকালÑ সারাণই মানুষের পদচারণায় মুখরিত ঢাকার পথঘাট। প্রাণের নগরী ঢাকাও তাই ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য, সৌন্দর্য।
পুরান ঢাকায় এখনো কিছু রীতিনীতি চললেও নতুন ঢাকায় এসব একদম চলে না। যে যার মতো ব্যস্ত, কারো সাথে কারো কথা বলারও সুযোগ নেই। মানুষের চাপ বাড়ছে; তাই বাড়ছে যানজট, বাড়ছে বাড়িভাড়া। নানামুখী কষ্ট, তবুও মানুষ ঢাকার পানেই ছুটে আসছে। ঢাকার ছেলেমেয়েরা মাঠে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলে না, তারা কম্পিউটারে বাসে খেলে। গাছ কিংবা পাখির কলতান কবেই মরে গেছে। আগের ঢাকা আর এখনকার ঢাকার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ওই এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, তাই রাজা মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী গড়ে ওঠা শহরটি এখন অনেক বড়। প্রাচীন এই শহরজুড়ে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী মসজিদ রয়েছে। তাই রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দরবারে ‘মসজিদের শহর’ হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু আমাদের এ গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য এক দিনে গড়ে ওঠেনি।
অসংখ্য মসজিদের শহরে এই ঢাকা ঐতিহ্যকে বহন করেই চলেছে। পুরান ঢাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডে এখনো গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত নারিন্দা বিনত বিবির মসজিদ। জানা যায়, এখানে বসবাসকালীন আরাকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাকে এই মসজিদের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় এবং পরবর্তীকালে আরাকান আলীর মৃত্যু ঘটলে তাকেও এখানেই কবর দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বিনত বিবির নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালে একটি
কালো পাথরে এই ইতিহাস ফারসি ভাষায় খোদাই করা আছে।
এ ছাড়া ঢাকায় রয়েছে বেশ কিছু দার্শনিক স্থান। আহসান মঞ্জিল জাদুঘর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। সেখানে প্রতিদিন ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। ঐতিহ্যের আরেক সাী বিউটি বোর্ডিং। বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, চিত্রপরিচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হতো বিউটি বোর্ডিং। অনেক বড় বড় ব্যক্তি এখানে যাতায়াত করতেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের ক্যান্টিনে বসেই প্রতিদিন চায়ের কাপের সাথে আড্ডার ঝড় তুলতেন নির্মলেন্দু গুণ, শহীদ কাদরী, কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও শামসুল হকের মতো কবি-সাহিত্যিকেরা। বিউটি বোর্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রহøাদ সাহা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
প্রহাদ সাহার বড় মেয়ের নামে বোর্ডিংটির নামকরণ করা হয় বিউটি বোর্ডিং। এ ছাড়া আরো রয়েছে ঢাকা জাদুঘর, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হলসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক স্থান।
ঢাকা শহরে মানুষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এই শহর। এখন থেকেই সচেতন না হলে অদূরভবিষ্যতে ঢাকায় বসবাস করা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে। সেই সাথে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে তাহলে হতাহতের সংখ্যা অনেক গুণ ছাড়িয়ে যাবে। তাই প্রিয় শহর ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এবং নিজেরা বাঁচতে হলে এখন থেকেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
আমরাই পারি আমাদের শহরকে সুন্দর করে তুলতে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর শহর উপহার দিতে
No comments:
Post a Comment