join facebook page

Friday, 21 August 2015

06-12-2014 Daily kalar kantha suvosonggo-ta amar অণুগল্প

এক সন্ধেবেলায়
সোহানুর রহমান অনন্ত

কপালের লাল টিপটি ছুঁয়ে এক ফোঁটা ঘাম এসে পড়ল চোখের সামনে। আজও মোহিনী ওর স্বামীকে দেখেছে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে। যদিও এটা এখন আর নতুন কিছু নয়। মোহিনী নিজে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে। তার স্বামী দেশের নামকরা ব্যবসায়ীদের একজন। অনেক টাকা। হয়তো টাকার কাছেই বিক্রি হয়ে গেছে মোহিনী। বিক্রি হয়ে গেছে ২৫টি বছর ধরে বিন্দু বিন্দু করে গড়ে ওঠা সব চাওয়া-পাওয়া। প্রতিদিন এই সময়টিতে মোহিনীর বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে। কিন্তু আজ আর তাড়া নেই। এর আগেও ওর স্বামীকে অন্য মেয়ের সঙ্গে দেখেছে। শুধু দেখা নয়, আরো বেপরোয়া জীবনযাপনের ব্যাপারটিও সে জানে। কখনো এত খারাপ লাগেনি যতটা আজ লাগছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি গাছের নিচে এসে বসল মোহিনী। অনেক দিন পর আসা হলো এখানে। একটি শুকনো পাতার দিকে তাকিয়ে আবারও ভাবতে থাকে সে। ওর স্বামীর চরিত্রে যে সমস্যা আছে, সেটা টের পায় বিয়ের দেড় বছরের মাথায়। হয়তো কাজের মেয়েটি প্রেগন্যান্ট না হলে, তা-ও জানা হতো না তার। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন কেমন যেন বিষয়টি সয়ে গেছে। যে মনের বাঁধনে আটকায়নি, সে কী করে মুখের কথায় আটকাবে? তার স্বামী যখন পাশের রুমে অন্য মেয়েদের সঙ্গে মধুর হাসাহাসি করে, সে তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুতে চাঁদের ফিকে আলো ঝলসে ওঠে। সে একটি মোমের পুতুল-সবই জানে, তবুও কিছুই যেন জানে না। প্রতিবাদ যে কখনো করেনি এমনটি নয়, করেছিল; কিন্তু লাভ হয়নি। মানুষ অনেক সময় অভ্যাসের দাস হয়ে যায়। তার স্বামীর বেলায় তেমনটিই ঘটেছে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হয় ছেড়ে চলে যাই। সে ভাবে, বিয়ে তো মানুষ জীবনে একবারই করে। তাই বাধ্য হয়েই একসময় নিশ্চুপ হয়ে গেছে। চোখটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে মোহিনীর। একটি ছোট্ট মেয়ে এসে বেশ জোর গলায়ই বলছে, 'ফুল লাগব আফা ফুল, তাজা ফুল।' মোহিনী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফুলগুলোর দিকে। মোহিনীর মনে পড়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সুজয়ের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোর কথা। তখন প্রতিটি সকাল হতো নতুন একটি স্বপ্নের সূচনা দিয়ে। পাগলের মতো সুজয় তাকে ভালোবাসত। যখনই সুজয়ের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসত, একটি গোলাপ কিনে তার খোঁপায় গুঁজে দিত। কপালে টিপ না থাকলে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে টিপ বানিয়ে দিত। যতই অভিমান করুক না কেন, সুজয়ের ভালোবাসার কাছে তার অভিমান পরাজিত হতো। সুজয় মোহিনীকে আলতো করে ছুঁয়ে বলত, 'মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় আমার প্রতিটি রক্তের বিন্দুজুড়ে মিশে গেছ তুমি। তুমি না থাকলে কেমন যেন রক্তবিন্দুগুলো চলতে চায় না। থেমে যায়। তখন খুব কষ্ট হয় আমার। প্রচণ্ড কষ্ট হয়।' সুজয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসি দিত মোহিনী। কিভাবে যে সময় চলে যেত! নিয়তির কাছে পরাজিত হয়ে, মা-বাবার পছন্দে সুজয়কে রিক্ত করে মোহিনী সংসার সাজায় ধনাট্য এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সে তখনো বুঝতে পারেনি, জীবনের অঙ্কটা এভাবে ভুল হবে, যার ফল কেবল শূন্যই থেকে যাবে। এবার ঘাম নয়, চোখের কোণ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ল মোহিনীর। ফুল হাতে মেয়েটি আবারও বলল, 'আফা নিবেন না?' 'হ্যাঁ নেব, দাম কত?' 'দুইটা ২০ টাকা।' ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেয়। নিজেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দেয়। কপালে নতুন করে গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়ে টিপ পরে।

আজ কেন যেন সুজয়কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে মোহিনীর। আচ্ছা, সুজয় কি এখন দেখলে তাকে চিনতে পারবে? বড় একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মোহিনী। সন্ধ্যার আঁধার নেমে এসেছে চারপাশে। মোহিনীর চোখে বৃষ্টি, নিজের প্রতি ঘৃণার বৃষ্টি। মনের আনাচে-কানাচে আজ সুজয়ের স্মৃতিগুলো ডুকরে কাঁদছে। অধিক সম্পত্তির চেয়েও যে ভালোবাসাটা বেশি জরুরি তা বোধ হয় বুঝতে পেরেছে মোহিনী। যদিও বড্ড দেরি হয়ে গেছে, নাগরিক জীবনে একটু ভালোবাসার বড্ড বেশি প্রয়োজন। অন্ধকারটা ভালো করেই নেমেছে এবার। হালকা আলোয় নিজেকে খুঁজে ফেরে মোহিনী। খুঁজে ফেরে হারানো অতীত। কপাল থেকে খসে পড়ে গোলাপের টিপ। বাতাসে এলোমেলো হয় চুলগুলো। অন্ধকারে সবুজ ঘাসের ওপর হেঁটে বেড়ায় একা একা। আকাশের তারাগুলো সাক্ষী হয়ে থাকে। আস্তে আস্তে নীরব হতে থাকে চারপাশ। নীরব হয়ে আসে মোহিনীর মনের উত্তাল সাগর। তবুও আজ অন্ধকারে হারাতে খুব ইচ্ছা করছে ওর। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই আজ।

Tuesday, 11 August 2015

আজ ১১-০৮-২০১৫ দৈনিক সমকালের সুহৃদ-এ, লেখা এবং আঁকা দুটোই আমার

লজিং মাস্টার

সোহানুর রহমান অনন্ত

লজিং থাকাটা অনেকটা ঘরজামাইয়ের মতো। মুখবুজে সবকিছু সহ্য করতে হয়। আমার কথা শুনে মুখ টিপে হাসল পল্লবী। হাসলে ওর গালে টোল পড়ে, বড় টোল। হাসছ কেন? হাসির কিছু বলেছি। নাহ্ বলেননি, এমনি হাসলাম। এক কাপ চা দিয়ে গেল মুকুলের মা। চায়ের ধোঁয়া উঠছে কুণ্ডলী পাকিয়ে, সেই ধোঁয়া ঝাপসা করে দেয় সুন্দর মুখটাকে। পাশে বসে অঙ্ক করছে টুনি। ক্লাস ফাইভে পড়ে, পল্লবী এবার কলেজে উঠেছে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে, আলাদা হয়ে গেছে বছর দুয়েক আগে। মাঝে মধ্যে আসে। ইচ্ছে হলে হাতখরচ দেয়, না হলে দেয় না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্লবীর মা খেটে মরে। মুখ দিয়ে তবু একবারের জন্যও স্বামীর নামে অভিশাপ দেয় না। এখানেই বোধহয় স্ত্রী হওয়া সার্থকতা। এমন ভালো মানুষটিকে নিয়ে কেন সংসার করল না, তা আমার বোধগম্য নয়। এমন একটা সংসারে লজিং থাকাও লজ্জার ব্যাপার। কিন্তু উপায় নেই, ভালো একটা চাকরি না পেয়ে কোথাও যাচ্ছি না। স্যার আপনি কি বিকেলে ফ্রি আছেন? পল্লবীর কথায় নিজেকে ফিরে পেলাম। আছি কেন বল তো? আমার সঙ্গে একটু যেতে হবে, কি যাবেন না? কোথায়? গেলেই দেখতে পাবেন। ঠিক আছে যাব। আবার টোল পড়া ঘালের হাসি চোখ ঝাপসা করে দিল।

২.
রিকশা স্টেশন রোড ধরে চলছে। আমরা যাচ্ছি কোথায় সেটাই তো বললে না? কোথাও যাচ্ছি না, আপনাকে নিয়ে রিকশায় ঘুরতে ইচ্ছে হলো, এমনি বললে তো আর আসতেন না। মানে কি? মানে-টানে কিছু নেই, ঘুরতে ইচ্ছে হলো ঘুরছি। তাই বলে আমাকে বলবে না? না বলব না, বলিনি তো কী হয়েছে। হুটহাট রেগে যায় পল্লবী, এখনও মনে হয় রেগে গেছে। আমি কিছুই বললাম না, রাগী মেয়েদের বেশি রাগাতে নেই। বেশি রেগে গেলে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। এই তোমার রিকশা ঘুরিয়ে আগের জায়গা নিয়ে যাও। বুঝলাম বড্ড বেশি রেগে গেছে। রিকশাওয়ালা কী বুঝল জানি না, সে আবার ঘুরিয়ে ফেলল। বাড়ির সামনে আসতেই রিকশা থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভেতর চলে গেল পল্লবী। আমি হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার দিকে গেলাম। লাইব্রেরিতে একটু ঢুঁ মারব। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। যখন বাসায় ফিরলাম ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে। টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছিল, এখন বড় বড় ফোঁটা আকারে পড়তে শুরু করেছে। বাসায় ফিরতেই শুনি পল্লবী সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে। অদ্ভুত ব্যাপার, এটা আবার কখন ঘটল। টুনি আর কিছুই বলল না, পল্লবীর ঘরে চলে গেল। শব্দ করে একটা কাঁশি দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। পল্লবীর মাথায় ব্যান্ডেজ, আমাকে দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। পল্লবীর মা কি কিচেনে চলে গেল। সেই সুযোগে জিজ্ঞেস করলাম, এত পাগলী কেন তুমি। কোনো উত্তর নেই। আচ্ছা এখানে রাগ করার মতো কী হয়েছে? তারপরও কোনো উত্তর নেই। আমি চলে আসব এমন সময় বলল, আমি আপনার ওপর রাগ করিনি। আমার মনটা এমনিতেই ভালো নেই। বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যি, এই দেখুন আমি হাসছি। টোল পড়া হাসিমাখা একটা মুখ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আর আমি মার্বেলের মূর্তির মতো তাকিয়ে রইলাম।
৩.
পল্লবীকে ভালোবাসি কি-না জানি না। তবে ওর কথা ভাবতে ভালোলাগে। মাঝে মধ্যে জ্যোৎস্নামাখা রাত দেখতে ইচ্ছে করে। হাতে হাত রেখে রেললাইনের পথ ধরে বহুদূর হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কেন যেন একটা দেয়াল অনুভব করি। পল্লবীর মা আমাকে অগাত বিশ্বাস করে, আর পল্লবীও তো আমাকে কোনো গ্রিন সিগনাল দেয়নি। সুতরাং একতরফা ভালোবাসার কোনো মানে হয় না। দিনগুলো যেন খাঁচায় বন্দিপাখির মতোই কাটতে লাগল আমার। সকাল-বিকেল পল্লবীর হাসি আমার স্নায়ুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিজেকে আড়াল করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার। বিশ্বাসে আগুন দেওয়া পাপ, তাই নিজ থেকেই সরে যেতে চাইছিলাম। এরই মধ্যে এক বিকেলে পিয়ন এসে একটা চিঠি ধরিয়ে দিল। আমার চাকরি হয়ে গেছে। টুনি খুশিতে একটা লাফ দিয়ে বলল, ভাই মিষ্টি খাওয়াবেন না? আমি হেসে বললাম খাওয়াব।
কাশি দিয়ে আবার ঘরে ঢুকলাম। টুনি এতক্ষণে ঢোল পিটিয়ে সব বলে দিয়েছে। তারপরও আমি বললাম, একটা চাকরি হয়ে গেছে আমার। কয়েকদিন পরই চলে যাব এ বাড়ি ছেড়ে। পল্লবীর মা অনুরোধের সুরে বলল, পল্লবীর বিয়ের সময় ডাকলে আসতে হবে কিন্তু। আমি নীরবে মাথা নাড়িয়ে বলেছি আসব, অবশ্যই আসব। পল্লবী কিছুই বলেনি, ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। সামনের চুলগুলো বাতাসে এদিক-সেদিক নড়াচড়া করছে। টুনি বলল, স্যার আমার বিয়ের সময়ও কিন্তু আসতে হবে। ওর কথা শুনে সবাই হেসেছিল, হাসেনি কেবল পল্লবী। ওর মুখে অন্য কিছু ফুটে উঠেছে, যা পড়তে পাড়ি কিন্তু পড়ব না। পড়লে বিপদ আরও বেড়ে যাবে। ব্যাগ কাঁধে যখন নেমে পড়ি, তখন পল্লবীকে দেখতে পাইনি। টুনির চোখে জল, পল্লবীর মায়ের চোখেও জল। এতটা দিন তাদের বাসায় লজিং ছিলাম, আমাকে কোনোদিন পরের ছেলের মতো দেখেননি তিনি। তাই বোধকরি কষ্ট হচ্ছিল।
রাস্তায় হলদে বাতির নিচে দাঁড়িয়ে একবার ফিরে তাকিয়েছিলাম বাড়িটির দিকে। পল্লবী দাঁড়িয়ে ছিল বারান্দার শিক ধরে। ওর চোখ ভরতি বৃষ্টি, অনেকদিনের জমানো বৃষ্টি। তার অবিরত বর্ষণে সুন্দর মুখটা এক চিলতে নদীর মতো দেখাচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে সামনে দিকে হাঁটতে লাগলাম। কেন যেন আমার চোখে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে।

10-08-2015 Daily somokal-ar pachall-a

শান্তি নাইরে পাগলা!

স্বামীর অনেক বিষয় নিয়েই বউদের আপত্তি থাকে, কোনো কিছু থাকলেও যেমন তাদের সমস্যা আবার কোনো কিছু না থাকলেও সমস্যা! কেমন সেই সমস্যাগুলো সেটাই জানাচ্ছেন বউয়ের হাতে নির্যাতিত স্বামী সোহানুর রহমান অনন্ত

হতাড়াতাড়ি আসলে : স্বামী অফিস থেকে তাড়াতাড়ি আসলে বউয়ের অভিযোগ, কাজ ফাঁকি দিয়ে এত তাড়াতাড়ি বাসায় আস কেন? টাকাটা তো অন্তত হালাল করে আনতে পার। তোমাকে যে কোন গাধা চাকরি দিয়েছে! এত ফাঁকি দাও তাও কিছু বলে না।
হদেরি করে আসলে : এত কাজের অজুহাত দেখাচ্ছ কেন? সোজা কথা বললেই তো পার তোমার পাশে সুন্দরী কলিগ জয়েন করেছে। তাকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করে না। মনে করছ_ আমি কিছুই বুঝি না। আগে তো সন্ধ্যা না হতেই বাসায় চলে আসতা আর এখন ১০টা বাজলেও খবর থাকে না। আমার প্রতি যে তোমার মহব্বত কমতাছে, এটাই তার বড় প্রমাণ।
বি.দ্র : এরপর যদি কোনো চুলটুল শার্টে পাওয়া যায় তাহলে কী হতে পারে সেটা চিন্তা করে লিখতে গেলে হার্ট অ্যাটাক করার সম্ভাবনা আছে!
হঅন্য দিকে না তাকালে : তুমি আজকাল চোখ আসমানে নিয়া চলাফেরা কর নাকি! এই যে পাশের বাড়ির ভাবি কত্ত সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরে আর তুমি বলছ তুমি দেখই না। এত্ত কিপ্টা তুমি কেমতে হইতে পারলা। মানুষের বউরা কত্ত কিছু কিনে আর আমি কিছুই পাই না। মনডা চায় ইঁদুরের ওষুধ খাইয়া সুইসাইড করি।
হকোনো দিকে তাকালে : কী বললা তুমি! পাশের বাড়ির ভাবি তোমারে দেইখা হাসছে! তুমি দেখলা ক্যামনে! তার মানে তুমি তাকাইছ! এই জন্যই তো কই তোমার চোখ আজকাল টেরা লাগে কেন। এক চোখ দিয়ে আমারে দেখ অন্য চোখ দিয়ে দেখ অন্য মাইয়া মানুষরে। আসলে তোমার চরিত্র পাতিলের তলার চেয়েও কালো। আর যদি কোনো মাইয়ার দিকে তাকাইছ তোমার চোখ কিন্তু জায়গায় থাকব না।
হদাম দিয়ে কিছু কিনলে : বেকুবের বেকুব! এই এত দাম দিয়ে কেউ বেগুন কেনে! তোমার মতো গাধা স্বামী আমি আর দেখি নাই। মানুষ সস্তা জিনিস খোঁজে সেভিং করে আর তুমি কি-না...। আসলেই তোমার বুদ্ধি হাঁটুর নিচে। কেমতে যে তোমার লগে সংসার করুম!
হকম দামি কিনলে : তোমার যে পুঁটি মাছের আত্মা সেটা আবারও প্রমাণ করলা। একটা শাড়িই তো কিনছ। বেশি দাম দিয়ে বড় মার্কেট থেকে কিনলে কী হতো? শেষ পর্যন্ত কি-না গুলিস্তানের কাপড় কিনা আনলা : আমার বাবার বাড়িতে কখনও কম দামি জিনিস পরি নাই। তোমার সংসারে এসে এসব পরতে হইতাছে। আমার কপালডাই খারাপ!
হফেসবুক না চালালে : তুমি আসলেই আপডেড হইতে পারলা না। এখন কারও আবার ফেসবুক আইডি না থাকে! তুমি তো দেখতাছি মানুষের সামনে এই কথা বইলা ইজ্জত পাংচার করবা। আজকেই একটা আইডি খুলবা। দরকার হইলে আমার কাছ থেইক্কা ট্রেনিং নিবা কেমতে চালাইতে হয়।
হআইডি থাকলে : এই কারণেই তো কই, আমারে সময় দেওয়ার সময় তোমার থাকব কই থেইক্কা! তুমি তো আছ তোমার ফেসবুক নিয়া। সারাক্ষণ অন্য মাইয়াগো লগে চ্যাটিং কর। তুমি আসলেই হনুমান একটা। আজকেই যদি আইডি ডিঅ্যাকটিভ না করছ তাইলে তোমার ঘরে ঢোকা বন্ধ।

10-08-2015 Daily somokal-ar pachall-a

যেভাবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে

কোনো এক মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, সুন্দরবনের বাঘ ওপার বাংলায় বেড়াতে গেছে! কেন বলেছেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারেন। তবে বাঘকে সুন্দরবনে রাখতে হলে কী করতে হবে_ সেটাই জানাচ্ছেন বাঘের তাড়া খেয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে আসা প্যাঁচআল-এর নিয়মিত লেখক সোহানুর রহমান অনন্ত

হহরিণের ছবিযুক্ত ফেস্টুন : সুন্দরবনের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে হরিণের ছবিযুক্ত ফেস্টুন টানিয়ে দিতে হবে। যেন খুব সহজেই বাঘের নজরে পড়ে। ব্যস, যত বাঘের নজরে পড়বে ততই লাভ! মানে বাঘ রিয়েল হরিণ মনে করে বন ছেড়ে বাইরে যাবে না। সো, বাঘ কমার কোনো চান্সই নেই।
হবাঘ পার্লার পদ্ধতি : বর্তমান যুগ স্টাইলের যুগ! সেদিক থেকে বাঘ কেন পিছিয়ে থাকবে। যেখানে আমাদের মাঠের টাইগাররা এত্তো এত্তো স্টাইলিশ। তাই বাঘ মনের দুঃখে বন ছেড়ে পালাচ্ছে। তাই সুন্দরবনে বাঘদের জন্য টাইগার পার্লার খুললে বাঘরা সুন্দরবনে থাকতে উৎসাহবোধ করবে।
হঅলস পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে বাঘদের অলস থাকার উপকার সম্পর্কে জানাতে হবে। অলস হলেই যে বনে উন্নতি করা সম্ভব সেটাও তাদের বোঝাতে হবে। ব্যস, একবার বাঘরা অলস হয়ে গেলেই হলো। মরে গেলেও আর সুন্দরবন ছেড়ে কোনো এলাকায় যাবে না।
হপ্রজেক্টর পদ্ধতি : বাঘদেরও তো বিনোদনের প্রয়োজন আছে। তাই বনের মধ্যে প্রজেক্টর টানাতে হবে এবং বিনোদনমূলক চ্যানেল দেখাতে হবে। চাইলে মাঝে মধ্যে টক শোও দেখাতে পারেন, আজকাল টক শোতেও ব্যাপক বিনোদন থাকে। আশা করি, এমন বিনোদন পেলে বাঘেরা কোথাও যাবে না।
হগুজব পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে বাঘদের মধ্যে গুজব রটিয়ে দিতে হবে_ পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া পাশের দেশের বনে গেলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । ব্যস, একবার গুজব বাঘদের কানে ঢুকাতে পারলেই তারা পাশের দেশ তো দূরের কথা, জান বাঁচাতে পাশের গ্রামেও আর যাবে না!

09-05-2015 Abokash-a

প্রাণের শহর

সোহানুর রহমান অনন্ত

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনা। বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাস। ব্যস্ত এই ঢাকা এখন মানুষের প্রাণের শহর। চাকরির খোঁজে অথবা যেকোনো প্রয়োজনে মানুষ এখন ছুটে আসে ঢাকায়। ৪০০ বছরের পুরনো প্রিয় নগরী।
এই নগরীতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দিন দিন বড় বড় দালানের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে নীল আকাশ। নেই খেলার মাঠ কিংবা বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো জায়গা। সারাণই মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ আজকের ঢাকা। সকাল থেকে রাত, আবার রাত থেকে সকালÑ সারাণই মানুষের পদচারণায় মুখরিত ঢাকার পথঘাট। প্রাণের নগরী ঢাকাও তাই ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য, সৌন্দর্য।
পুরান ঢাকায় এখনো কিছু রীতিনীতি চললেও নতুন ঢাকায় এসব একদম চলে না। যে যার মতো ব্যস্ত, কারো সাথে কারো কথা বলারও সুযোগ নেই। মানুষের চাপ বাড়ছে; তাই বাড়ছে যানজট, বাড়ছে বাড়িভাড়া। নানামুখী কষ্ট, তবুও মানুষ ঢাকার পানেই ছুটে আসছে। ঢাকার ছেলেমেয়েরা মাঠে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলে না, তারা কম্পিউটারে বাসে খেলে। গাছ কিংবা পাখির কলতান কবেই মরে গেছে। আগের ঢাকা আর এখনকার ঢাকার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ওই এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, তাই রাজা মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী গড়ে ওঠা শহরটি এখন অনেক বড়। প্রাচীন এই শহরজুড়ে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী মসজিদ রয়েছে। তাই রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দরবারে ‘মসজিদের শহর’ হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু আমাদের এ গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য এক দিনে গড়ে ওঠেনি।
অসংখ্য মসজিদের শহরে এই ঢাকা ঐতিহ্যকে বহন করেই চলেছে। পুরান ঢাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডে এখনো গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত নারিন্দা বিনত বিবির মসজিদ। জানা যায়, এখানে বসবাসকালীন আরাকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাকে এই মসজিদের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় এবং পরবর্তীকালে আরাকান আলীর মৃত্যু ঘটলে তাকেও এখানেই কবর দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বিনত বিবির নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালে একটি
কালো পাথরে এই ইতিহাস ফারসি ভাষায় খোদাই করা আছে।
এ ছাড়া ঢাকায় রয়েছে বেশ কিছু দার্শনিক স্থান। আহসান মঞ্জিল জাদুঘর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। সেখানে প্রতিদিন ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। ঐতিহ্যের আরেক সাী বিউটি বোর্ডিং। বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, চিত্রপরিচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হতো বিউটি বোর্ডিং। অনেক বড় বড় ব্যক্তি এখানে যাতায়াত করতেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের ক্যান্টিনে বসেই প্রতিদিন চায়ের কাপের সাথে আড্ডার ঝড় তুলতেন নির্মলেন্দু গুণ, শহীদ কাদরী, কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও শামসুল হকের মতো কবি-সাহিত্যিকেরা। বিউটি বোর্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রহøাদ সাহা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
প্রহাদ সাহার বড় মেয়ের নামে বোর্ডিংটির নামকরণ করা হয় বিউটি বোর্ডিং। এ ছাড়া আরো রয়েছে ঢাকা জাদুঘর, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হলসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক স্থান।
ঢাকা শহরে মানুষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এই শহর। এখন থেকেই সচেতন না হলে অদূরভবিষ্যতে ঢাকায় বসবাস করা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে। সেই সাথে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে তাহলে হতাহতের সংখ্যা অনেক গুণ ছাড়িয়ে যাবে। তাই প্রিয় শহর ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এবং নিজেরা বাঁচতে হলে এখন থেকেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
আমরাই পারি আমাদের শহরকে সুন্দর করে তুলতে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর শহর উপহার দিতে

09-08-2015 Daily ittafaq-ar fun magazine Thattay.
04-08-2015 Daily kalar kantha-ar Gorar dim-a

অলস রঙ্গ
১০ আগস্ট অলস দিবস
আইডিয়া : সোহানুর রহমান অনন্ত।

নেতা : তুই কেমতে সিওর হইলি, এরা রাজপথ দখল করে আন্দোলন সফল করবে? আমার তো সন্দেহ হইতাছে।

সাগরেদ : ওস্তাদ, ওরা হইলো বাছাইকৃত সেরা অলস, একবার যেখানে বসাইয়ে দিবেন মইরা গেলেগাও সেই জায়গা থেইকা উঠব না।

03-08-2015 Daily somokal_ar pachall-a


02-08-2015 Abokash-aবন্ধু দিবস

সোহানুর রহমান অনন্ত

ন্ধু খুব ছোট একটি শব্দ অথচ এর গভীরতা অনেক বেশি। বন্ধু এমন একজন মানুষ, যে মুখ দেখেই মনের কথা বুঝতে পারে।
বন্ধু মানে দুষ্টামি, খোঁচা দিয়ে কথা বলা; তারপর মিষ্টি একটা মেসেজ দিয়ে অভিমান ভাঙানো। এক কথায় বলতে গেলে আত্মার কাছাকাছি যে বাস করে, সেই আত্মার বন্ধু বা স্বজন। বন্ধুত্বের জন্য চাই সুন্দর একটি মন, যে মন দিয়ে একজন আরেকজনকে বুঝতে পারবে। সুখে-দুঃখে ছায়ার মতো পাশে থাকবে।
বন্ধু শব্দের মাঝে মিশে আছে যেন নির্ভরতা আর বিশ্বাস। যে কথা বাবা-মা, ভাইবোন কিংবা স্বামী-স্ত্রীকে বলা যায় না, সে কথা অনায়াসে বন্ধুকে বলা যায়। অনেক সময় অনেক কষ্টের কথা বন্ধুর কাছে বলে হালকা হওয়া যায়। নেয়া যায় বন্ধুর থেকে ভালো পরামর্শ। একজন ভালো বন্ধু কেবল বন্ধুই নয়, ভালো অভিভাবকও বটে। বন্ধু আর বন্ধন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একজন বন্ধুর জন্য আরেকজন জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে।
বন্ধুত্ব কখন কিভাবে হয়ে যায় তা বলা মুশকিল। ছেলেবেলা থেকে শুরু করে সব বয়সেই কোনো না কোনোভাবে আমরা কারো সাথে বন্ধুত্ব করছি। হতে পারে সে ছেলে কিংবা মেয়ে অথবা বয়সে আপনার চেয়ে ছোট কিংবা বড়। ব্যস্ততার কারণে কিংবা অন্য কারণে হয়তো অনেকেই হারিয়ে যায় কিংবা যোগাযোগ করা হয় না। তার মাঝেও কিছু বন্ধু থাকে, যারা কখনো হারিয়ে যায় না। তারা সব সময় আপনার ভালোই চায়। বিপদে পাশে এসে দাঁড়ায়।
শতকষ্টের মধ্যেও আপনার মুখে হাসি ফোটায়। পাকাপোক্ত বন্ধনের ভিত্তিই বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব মানেই যেন হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, ভালোবাসা দিয়ে মন খুলে জমানো কথা বলা। বন্ধুর জন্য গেয়ে ওঠাÑ পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আমি অন্য দিক... সবাই বলে করছি ভুল আর তোরা বলিস ঠিক... বন্ধু বুঝে আমাকে...।
রোববার বিশ্ব বন্ধু দিবস। প্রতি বছর আগস্টের প্রথম রোববার দুনিয়াজুড়ে পালিত হয় দিবসটি। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব বন্ধু দিবস। বন্ধুত্বের জন্য যদিও আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তবুও এই একটি দিন কাছের কিংবা দূরের সব বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে পারেন। তাদের ফেসবুকে কিংবা মোবাইলে অথবা কার্ডে শুভেচ্ছা পাঠাতে পারেন। যদিও বর্তমানে শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় কার্ডের প্রচলন হারিয়ে যেতে বসেছে। তার পরও বন্ধু দিবসের কার্ড তুলে দেবেন বন্ধুর হাতে বন্ধু।
পাশাপাশি ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী দেবেন কেউ কেউ। আসুন, একটু জেনে নেয়া যাক কবে কিভাবে এই বন্ধু দিবস চালু হলো।
১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটি পালনের প্রথা চালু হয়। ইতিহাস মতে, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। হত্যার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সে সময় বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এর পর থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের অবদান আর তাদের প্রতি সম্মান জানানোর ল্েয আমেরিকান কংগ্রেস ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। সেই থেকে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিন দিন আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বন্ধু দিবস। পৃথিবীর অনেক দেশেই পালন করা হচ্ছে এ দিনটি। বন্ধু দিবসে তাই সব বন্ধুকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
01-08-2015 Daily somokal<<<

এক বৃষ্টিভেজা দিনে

এস আর অনন্ত
একেবারে কাকভেজা হয়ে মেয়েটি বাসে উঠল। বাস তখন কাকলীর দীর্ঘ জ্যামে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টির জলে জানালার কাচ ঘোলা, বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমার পাশের সিটে এসে বসল মেয়েটি। তারপর ওড়না দিয়ে চশমাটা পরিষ্কার করে নিল। অজান্তেই আরেকবার তাকালাম। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি।
_এমন ট্যারা চোখে তাকান কেন?
_কোথায় ট্যারা চোখে তাকালাম, আমার চোখ তো সোজাই।
_মেয়ে মানুষ বলে ফাজলামো করেন?
_আপনি আমার এমন পরিচিত কেউ নন যে আপনার সঙ্গে ফাজলামো করব।
মেয়েটি চুপ হয়ে গেল। রাগে একেবারে ফুলে আছে, আমি আর সেদিকে তাকালাম না। অযথা ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না। গাড়ি চলছে, যাকে বলে ঠেলাগাড়ির গতিতে। এদিকে বৃষ্টিও বেড়েছে। মেয়েটির ফোন আসতেই ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে গেল। ঠিক বের করার সময় একশ' টাকার একটা নোট বাইরে পড়ে গেল। মেয়েটি সম্ভবত খেয়াল করেনি। তারপর দীর্ঘ আলাপ শুরু। আমি মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছি বলে মেয়েটি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাল। কথা শেষ হলে বললাম, আপনার টাকা_ মেয়েটি এতে আরও রেগে গেল। বলল, আমার টাকার কি হাত-পা আছে যে আপনার কাছে হেঁটে হেঁটে গেছে? আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। টাকাটা ভাঁজ করে হাতে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর হেলপার এলো। মেয়েটি ব্যাগের মধ্যে টাকা খোঁজ করছে, কিন্তু টাকা নেই। বোধ করি লজ্জার মাথা খেয়েই মেয়েটি আমাকে বলল, টাকা বোধহয় সত্যি আমার। আমি আর কী বলব, টাকাটা মেয়েটির হাতে দিয়ে বললাম, টাকাটা সত্যি আপনার। আর একটা কথা, কেউ কিছু বলতে চাইলে তাকে আগে বলার সুযোগ দেবেন। আশা করি এতে এমন কোনো ক্ষতি হবে না আপনার। ফার্মগেট আসতেই আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম। মেয়েটি তখনও বাসের ঘোলা জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

01-08-2015 Daily Prothom Alo Chutirdin_ amar lekha

অভিমানী
সোহানুর রহমান

তুই কি এখন ছাদে উঠতে পারবি? ফিসফিস করে বলল রূপা। কেন? বৃষ্টি হচ্ছে। দেখছি জানালা দিয়ে। দেখা আর ছুঁয়ে দেখা এক কথা নয়, রূপা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি। রূপা হাসল, তারপর বলল, বোকা ছেলে, বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখলে কেউ অসুস্থ হয়! আমি তো বৃষ্টি হলেই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখি। আমি যুক্তি না খুঁজে ছাদে উঠে পড়লাম। ইলশেগুঁড়ি হচ্ছে, রূপার মতো আমি অত রোমান্টিক না, তাই বিরক্তি লাগছিল। ধমকের স্বরে বললাম, তোর মাথায় কি মাঝরাতে ভূত চেপেছে? আমার ঘুম নষ্ট করে ফাজলামো করছিস, তাই না। আচ্ছা বল তো প্রতিদিন রাতে আমার এভাবে ঘুম কেন নষ্ট করিস? তোর ঘুম আসে না বলে জগতের আর কেউ কি ঘুমাতে পারবে না? বোধ করি আমার কঠোর গলা শুনে রূপা স্থির হয়ে গেল। কেবল কানে আসছিল বড় বড় নিশ্বাস ফেলার শব্দ। তারপর ওপাশ থেকে টুট করে লাইনটা কেটে দিল।
এরপর অনেক বৃষ্টিবেলা কাটিয়েছি, রূপা আর ফোন করেনি। বিরক্ত করেনি কারণে অকারণে। কদম ফুল হাতে দাঁড়াতে বলেনি স্টেশন রোডের বকুলগাছটার নিচে। রূপার অভিমান আর আমার কঠোরতা দুজনকেই দুই প্রান্তে নিয়ে গেল। এখনো মাঝে মাঝে রূপাকে দেখি, রিকশায় খোলা চুল বাতাসে ভাসিয়ে ভার্সিটিতে যায়। আর আমি টং দোকানের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, তাকিয়ে থাকি। চোখে চোখ পড়ে, তারপর না দেখার ভান করে দুজনই অন্যদিকে তাকিয়ে ফেলি। দুজনের দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু অভিমানের গভীরতা অনেক বেশি। খুব বেশি।
ঢাকা।


Priomukh Eid Shangkha 2015
১১-০৮-২০১৫ দৈনিক কালের কণ্ঠেরে ঘোড়ার ডিম-এ আমার প্রেম পত্র থক্কু ক্রিকেটারের প্রেম পত্র

ক্রিকেটারের প্রেমপত্র
সোহানুর রহমান অনন্ত

প্রিয়া

শুরুতেই সবুজ ঘাসের শুভেচ্ছা নিও। ভাবছ তোমার ভাইয়ের গুগলি বলে আউট না হয়ে এখনো তোমার পেছনে ঘুরঘুর করছি কিভাবে? তুমি হয়তো জানো না, ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি সব সময় দায়িত্ববান। ফুল শট খেলতে কখনো পাওয়ার প্লের ওয়েট করি না। বিশ্বাস করো, আমি মোটেও উত্তেজিত খেলোয়াড় নই। প্রেমের পথে উত্তেজিত ব্যাটসম্যানরা খুব তাড়াতাড়ি বোল্ড হয়ে সাঝঘরে ফিরে যায়। আমি একজন নির্ভরযোগ্য প্রেমিক ব্যাটসম্যান। দেখে-শুনে ও বুঝে শট খেলি। তাই তো আমার ওপর তুমি ১০০ ভাগ আস্থা রাখতে পারো।

আমার গ্লাভস, প্যাড এমনকি হেলমেটজুড়ে শুধু তোমারই নাম। তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে এমন সাধ্য আছে কার বলো? আমার চোখের সামনে পিচজুড়ে শুধু তোমারই ছবি প্রিয়তমা। তোমাকে ছাড়া আমার স্কোরবোর্ড একেবারেই শূন্য। তোমার মাস্তান মামাতো ভাই চাকা রাসেল নাকি আম্পায়ারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢিল ছোড়ে। সিরিয়াস গতিতেও নাকি বল করে। কিন্তু আমি ভয় পাই না। তোমার জন্য যেকোনো বল মোকাবিলা করতে আমি প্রস্তুত। প্রয়োজনে ফ্রি হিটে পরপর ছক্কার মার মেরে ওর থোঁতা মুখটা ভোঁতা করে দেব। তোমার জন্য টেস্ট ম্যাচেও আমি টি-টোয়েন্টি ঝড় তুলতে পারি। গ্যাপ শট মেরে তোমার কাছে প্রেমপত্র পাঠাতে পারি। তোমার বাড়ির পাগলা কুকুরের দৌড়ানি খেতে খেতে আমার দৌড়ের স্পিড এতটাই বেড়ে গেছে যে চাইলেও কেউ আমাকে রানআউট করতে পারবে না। তোমার জন্য ৫০ ওভার নয়; বরং ৫০ বছর উইকেটে থাকতে পারি। অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে রানের পাহাড় গড়তে পারি। আশা করি তোমার মন থেকে আমায় এলবিডাব্লিউ করার চিন্তাটা গুম হয়ে গেছে। আমার ভয়ানক অলরাউন্ড পারফর্ম দেখিয়ে তোমায় বিয়ে করার পাত্রের সিরিয়াল রেংকিংয়ে প্রথম থাকতে চাই। আমার ক্রিকেট-জীবনের ওয়ার্ল্ডকাপ তুমি। তোমাকে আমার চাই-ই চাই। তোমার বাবা যতই রানআউট করতে চাক, থার্ড আম্পায়ার আমার বাবা তো আছেই। সুতরাং তুমি নিশ্চিন্তে আমার মনের গ্যালারিতে বসতে পারো।

ইতি তোমার

সোলেমান