join facebook page

Sunday, 26 July 2015

Aj 26-07-2015 Daily Prothom Alo Bhundhu Shovay Amar Golpo

নীল ক্যাফের ভালোবাসা
সোহানুর রহমান

আরিস সবে কফির কাপের চুমুক দিয়েছে। ঠিক এমন সময় নাবিলার মেসেজ এল।
—তোর কি আমার স্ট্যাটাস চুরি করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?
—আছে তো।
—আছে মানে?
—হ্যাঁ, তোর স্ট্যাটাসে লাইক দেওয়া। এটাও তো একটা কাজ, কী বলিস? উত্তর দিয়ে আরিস মিটিমিটি হাসে।
—বুঝেছি, তুই কথা প্যাঁচাবি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখ, আকাশে কী সুন্দর একটা চাঁদ!
—তুই তো কেবল চাঁদটাই দেখলি, চাঁদের মধ্যে কালো বর্ণে কী লেখা, সেটা দেখলি না।
—কী লেখা?
—সেখানে লেখা নাবিলার নাকটা এভারেস্টের চেয়ে কম নয়। হা হা হা ।
—ইউ, তুই আমাকে পচালি, আমার নাক এভারেস্টের মতো? আমাকে যদি দেখতি তাহলে বুঝতি আমার নাক কত কিউট।
—একটা সেলফি তুলে পাঠিয়ে দে, দরকার হলে ফেসবুকে আপ করে পুরো দেশকে দেখাব।
—হয়েছে, পাম মারিস না। আমি গেলাম।
—দোস্ত, একটা পিক দে না, কতকাল আর এমন পিকচারবিহীন থাকবি।
—যতকাল পিকচার না দিচ্ছি, ততকাল। নাবিলা ফেসবুক থেকে চলে যেতেই আরিস নাবিলার টাইমলাইনে ঢোকে। ফেসবুকে নাবিলার সঙ্গে পরিচয়। একসময় ভালো বন্ধুত্ব। আরিস মনে মনে ভাবল, আজব মেয়ে, কোনো ছবিই দেয়নি। তা ছাড়া সব ইনফরমেশনই অনলি মি করা। কেবল ডলের ছবি দেওয়া কতগুলো। বড় ডল, ছোট ডল, অদ্ভুত। ইদানীং নাবিলাকে খুব ভাবছে আরিস। ফেসবুকে তো আরও অনেক বন্ধু আছে কিন্তু নাবিলা কেন? অচেনা একটা মেয়ে, যাকে কোনো দিন দেখেনি। এমনও তো হতে পারে আইডিটা ফেইক। নাহ্, ফেইক হতে পারে না, আরিস নিজেকে ধমক দেয়। আরিস দুষ্টুমি করেই নাবিলার ইনবক্সে টেক্সট করে।È‘নাবিলা, আমি বোধ হয় তোর প্রেমে পড়ে গেছি। সারাক্ষণ কেবল তোকেই ভাবি, স্যরি তোমাকেই ভাবি। উত্তরের আশা করে লাভ নেই। আমি জানি, তুমিও আমায় ভালোবাসো।’ দুষ্টুমি করে দিলেও কেমন যেন ভয় লাগছে। সারা রাত আর ফেসবুকে ঢোকেনি, তার পরদিনও না। তিন দিন পর ফেসবুকে ঢুকে শক্ট হলো আরিস। কোনো উত্তর দেয়নি নাবিলা, আরও অদ্ভুত ব্যাপার এই তিন দিন ফেসবুকে আর কোনো স্ট্যাটাস দেয়নি ও। এমন তো কখনো হয় না। এরপর আরও অনেক দিন কেটে গেল। নাবিলা ফেসবুকে নেই, অকারণেই ওর টাইমলাইন ঘাঁটাঘাঁটি করে আরিস। অদেখা মেয়েটির জন্য এমন লাগছে কেন? তাহলে কি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে নাবিলাকে? হয়তো-বা...। আরিস অনেক ভেবে একটা টেক্সট করে নাবিলাকে। ‘প্রথমটা দুষ্টুমি হলেও এখন সিরিয়াস বলছি, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। তোমার শূন্যতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। যে ফেসবুকে তুমি নেই, সেখানে আমার থাকাটাও বেমানান।
আমি তোমার জন্য নীল ক্যাফেতে অপেক্ষা করব। আসবে কি না পুরোটাই তোমার ইচ্ছে...।’
এরপর প্রতিটি বিকেল যেন নীল ক্যাফের কাচের জানালাগুলোতে ভালোবাসার আলপনা আঁকত। আরও পনেরো দিন কেটে গেল কিন্তু নাবিলা আসেনি। এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে আরিস ক্যাফেতে বসে আছে। ঝিরঝির বৃষ্টি তখনো পড়ছিল। ঠিক বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একটি মেয়ে প্রবেশ করল ক্যাফেতে। সোজা এসে বসল আরিসের সামনের চেয়ারটাতে। আরিস কিছু বলার আগেই বলল, ‘নাবিলা, তোমার চুরি করা স্ট্যাটাসের একমাত্র মালিক।’ মুহূর্তেই আরিস যেন নিজেকে ফিরে পেল।
—নাবিলা...।
—ইয়েস, কোনো সন্দেহ?
—ফেসবুকে ছিলে না কেন?
—তোমাকে বাজিয়ে দেখলাম, সত্যি ভালোবাসো কি না।
—কী বুঝলে? বুঝলাম, এখানে অন্তত চুরিটা নেই।
এই বলে নাবিলা হেসে উঠল। আরিস তাকিয়ে রইল ওর মুগ্ধ করা মুখটির দিকে। বাইরে তখন বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

No comments:

Post a Comment