চাঁদপুর, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৪ আশ্বিন (shishi kantha)
মনুষ্যত্ব
মনুষ্যত্ব
সোহানুর রহমান অনন্ত
স্কুল
থেকে মন খারাপ করে বাসায় এলো অন্তু। এসেই সোজা মায়ের ঘরে চলে গেল। অন্তুর
মা তখন টিভি সিরিয়াল দেখছে। ঘরের এক কোণে এসে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইলো
অন্তু। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তুর মা জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে অন্তু?
অন্তু কোন কথা বলল না। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অন্তুর মা আবার জিজ্ঞেস করল,
বাবা কি হয়েছে? অন্তু এবার মুখ খুলে, আচ্ছা মা লিমনরা কি আমাদের চেয়ে অনেক
বড় লোক? হঠাৎ এই কথা কেন বলছো, কি হয়েছে তোমার? না তেমন কিছু নয়। আজ লিমন
নতুন গাড়িতে করে স্কুলে এসেছে তাই জিজ্ঞেস করলাম। মা তুমি না বলেছিলে
লিমনের বাবার চেয়ে আমার বাবার বেতন বেশি। পদটাও আমার বাবার উপরে তবে কেন মা
আমাদের এত টাকা নেই? সেটা তোমার বাবাকেই জিজ্ঞেস করো। এখন যাও হাত মুখ
ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
রাতে খাবার টেবিলে বসে অন্তু বাবাকে প্রশ্ন করে। আব্বু তোমার টাকা এত কম কেন? ছেলের কথা শুনে প্রথমে আতিকুর রহমান চমকে যায়। হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন বাবা? না মানে লিমন আমাকে বলেছে ওর নাকি টিচারের অভাব নেই। তাছাড়া ওর পেছনেই নাকি তিনজন চাকর সারাক্ষণ থাকে। ছেলের কথা শুনে এবার হেসে উঠে আতিকুর রহমান। তুমি তো দেখছি লিমনদের সম্পর্কে সবি জানো, ছেলের উদ্দেশ্যে বলে আতিকুর রহমান। হ্যাঁ জানিতো অনেক কিছুই কিন্তু? কিন্তু কি? না মানে ও আগে আমার বন্ধু ছিল। এখন আর আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে না। আমার নাকি টাকা পয়সা কম তাই আমার সাথে ও আর চলবে না। বাবা তুমিই বলো ওর বাবার থেকে তো তোমার বেতন বেশি তাহলে আমাদের নতুন গাড়ি নেই কেন? কেন আমার চার পাঁচটা টিচার নেই? অন্তুর মা বলে এবার ছেলের কথার উত্তর দাও?
আতিকুর রহমান অন্তুকে বলে, আগে খাবার শেষ করো। তারপর আমার ঘরে এসো, বলছি।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে অন্তুকে ওর বাবা নিজের ঘরে নিয়ে যায়। তারপর প্রশ্ন করে আচ্ছা বাবা বলোতো পড়াশোনা করে তুমি কী হতে চাও? অন্তু চটপট উত্তর দেয় ডাক্তার। আচ্ছা এবার বল পড়াশোনা করার প্রধান উদ্দেশ্য কী? পড়াশোনা করার অর্থ হচ্ছে নিজের মনুষ্যত্বকে চেনা, অজানাকে জানা, ভাল এবং মন্দর মধ্যে পাথর্ক্য করতে শেখা ইত্যাদি। আচ্ছা এবার বল তোমার কি মনে হয় পড়াশোনা করে সবাই এসব চিন্তে করে? অন্তু এবার মাথা নাড়িয়ে বলে- মনে হয় না। দেখ যত বড় বড় দুর্নীতি আছে তার সাথে কিন্তু বড় বড় শিক্ষিত লোকরাই জড়িত। লিমনের বাবা আমার চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা কম বেতনে চাকুরি করে, তবুও তাঁর সবই আছে কিন্তু কি নেই জানো? কি বাবা? নেই মনুষ্যত্ব। দুর্নীতি করে আজকে সে তাঁর ভাগ্য বদলিয়েছে ঠিকই কিন্তু মনের কালির দাগ মুছতে পারেনি। এই আমাকে দেখ। আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা অথচ আজ পর্যন্ত কারো কাছ থেকে এক টাকা ঘুষ খাইনি। দুর্নীতি করিনি কখনো, হালাল পথে টাকা কামিয়েছি। আমার এতদিনের কর্মের ফসল হিসেবে পেয়েছি মানুষের ভালবাসা,স্নেহ, সম্মান। আমি মরলে মানুষ আমার জন্য কাঁদবে। কেন কাঁদবে জানো? অন্তু আবার বলে কেন? কারণ আমি এমন কিছু কাজ করেছি যা মানুষ আমাকে চিরকাল স্মরণ রাখবে। আর লিমনের বাবা গরিব দুখী, দিনমুজুরের কাছ থেকেও ঘুষ খেয়েছে। ঘুষ ছাড়া তাঁর কলম চলে না। বল সে মরলে কি কেউ কাঁদবে? অন্তু বলে, না। এবার আতিকুর রহমান সাহেব ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে-সেটা জীবন নয়, যে জীবন কিছু রেখে যেতে পারে না। এই দেখ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কায়কোবাদ বিশ্বের আরো অনেক মনীষী আছে। তারা কি ঘুষখোর ছিল? অন্তু বলে, না। তারা কি দুর্নীতিবাজ ছিল? না। তারা এমন কিছু করে গেছে যার ফলে পৃথিবীর বুকে মানুষ যত দিন রবে তাদের কথা স্মরণ করবে। তাঁদের নিয়ে মানুষ গর্ব করে, কাব্য লেখে। কোনো ঘুষখোর কে নিয়ে তো মানুষ গর্ব করে না। কই কখনো শুনেছো কোনো ঘুষখোর বা সন্ত্রাসীকে মানুষ শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করেছে? সারাজীবন মানুষ তাদের ঘৃণা করবে এটাই স্বাভাবিক। আশা করি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছ। অন্তু এবার বাবার কাছে এসে বলে, আব্বু আমি বড় হয়ে তোমার মত একজন সৎ ব্যক্তি হতে চাই। দোয়া করি বাবা তুমি অনেক বড় হও। তারপর থেকে অন্তু ওর বাবাকে সব সময় অনুসরণ করে। ঠিক মতো পড়াশোনা করে। লিমনের সাথে মেশে না। কিছুদিন পর লিমনের বাবাকে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ক্লাসের সব স্টুডেন্টরা লিমনকে ঘৃৃণা করতে লাগলো। কেউ ওর সাথে আর মিশলো না। বাবার অপকর্মের ফল ছেলের ঘাড়ের উপর এসে পড়লো। অন্তু এসে ওর বাবাকে বলল. সত্যি অপরাধ মানুষকে কিছুই দিতে পারে না কেবল মানুষের ঘৃণা ছাড়া। মানুষের মত মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতেই হবে। তাহলেই একটি মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে।
রাতে খাবার টেবিলে বসে অন্তু বাবাকে প্রশ্ন করে। আব্বু তোমার টাকা এত কম কেন? ছেলের কথা শুনে প্রথমে আতিকুর রহমান চমকে যায়। হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন বাবা? না মানে লিমন আমাকে বলেছে ওর নাকি টিচারের অভাব নেই। তাছাড়া ওর পেছনেই নাকি তিনজন চাকর সারাক্ষণ থাকে। ছেলের কথা শুনে এবার হেসে উঠে আতিকুর রহমান। তুমি তো দেখছি লিমনদের সম্পর্কে সবি জানো, ছেলের উদ্দেশ্যে বলে আতিকুর রহমান। হ্যাঁ জানিতো অনেক কিছুই কিন্তু? কিন্তু কি? না মানে ও আগে আমার বন্ধু ছিল। এখন আর আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে না। আমার নাকি টাকা পয়সা কম তাই আমার সাথে ও আর চলবে না। বাবা তুমিই বলো ওর বাবার থেকে তো তোমার বেতন বেশি তাহলে আমাদের নতুন গাড়ি নেই কেন? কেন আমার চার পাঁচটা টিচার নেই? অন্তুর মা বলে এবার ছেলের কথার উত্তর দাও?
আতিকুর রহমান অন্তুকে বলে, আগে খাবার শেষ করো। তারপর আমার ঘরে এসো, বলছি।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে অন্তুকে ওর বাবা নিজের ঘরে নিয়ে যায়। তারপর প্রশ্ন করে আচ্ছা বাবা বলোতো পড়াশোনা করে তুমি কী হতে চাও? অন্তু চটপট উত্তর দেয় ডাক্তার। আচ্ছা এবার বল পড়াশোনা করার প্রধান উদ্দেশ্য কী? পড়াশোনা করার অর্থ হচ্ছে নিজের মনুষ্যত্বকে চেনা, অজানাকে জানা, ভাল এবং মন্দর মধ্যে পাথর্ক্য করতে শেখা ইত্যাদি। আচ্ছা এবার বল তোমার কি মনে হয় পড়াশোনা করে সবাই এসব চিন্তে করে? অন্তু এবার মাথা নাড়িয়ে বলে- মনে হয় না। দেখ যত বড় বড় দুর্নীতি আছে তার সাথে কিন্তু বড় বড় শিক্ষিত লোকরাই জড়িত। লিমনের বাবা আমার চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা কম বেতনে চাকুরি করে, তবুও তাঁর সবই আছে কিন্তু কি নেই জানো? কি বাবা? নেই মনুষ্যত্ব। দুর্নীতি করে আজকে সে তাঁর ভাগ্য বদলিয়েছে ঠিকই কিন্তু মনের কালির দাগ মুছতে পারেনি। এই আমাকে দেখ। আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা অথচ আজ পর্যন্ত কারো কাছ থেকে এক টাকা ঘুষ খাইনি। দুর্নীতি করিনি কখনো, হালাল পথে টাকা কামিয়েছি। আমার এতদিনের কর্মের ফসল হিসেবে পেয়েছি মানুষের ভালবাসা,স্নেহ, সম্মান। আমি মরলে মানুষ আমার জন্য কাঁদবে। কেন কাঁদবে জানো? অন্তু আবার বলে কেন? কারণ আমি এমন কিছু কাজ করেছি যা মানুষ আমাকে চিরকাল স্মরণ রাখবে। আর লিমনের বাবা গরিব দুখী, দিনমুজুরের কাছ থেকেও ঘুষ খেয়েছে। ঘুষ ছাড়া তাঁর কলম চলে না। বল সে মরলে কি কেউ কাঁদবে? অন্তু বলে, না। এবার আতিকুর রহমান সাহেব ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে-সেটা জীবন নয়, যে জীবন কিছু রেখে যেতে পারে না। এই দেখ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কায়কোবাদ বিশ্বের আরো অনেক মনীষী আছে। তারা কি ঘুষখোর ছিল? অন্তু বলে, না। তারা কি দুর্নীতিবাজ ছিল? না। তারা এমন কিছু করে গেছে যার ফলে পৃথিবীর বুকে মানুষ যত দিন রবে তাদের কথা স্মরণ করবে। তাঁদের নিয়ে মানুষ গর্ব করে, কাব্য লেখে। কোনো ঘুষখোর কে নিয়ে তো মানুষ গর্ব করে না। কই কখনো শুনেছো কোনো ঘুষখোর বা সন্ত্রাসীকে মানুষ শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করেছে? সারাজীবন মানুষ তাদের ঘৃণা করবে এটাই স্বাভাবিক। আশা করি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছ। অন্তু এবার বাবার কাছে এসে বলে, আব্বু আমি বড় হয়ে তোমার মত একজন সৎ ব্যক্তি হতে চাই। দোয়া করি বাবা তুমি অনেক বড় হও। তারপর থেকে অন্তু ওর বাবাকে সব সময় অনুসরণ করে। ঠিক মতো পড়াশোনা করে। লিমনের সাথে মেশে না। কিছুদিন পর লিমনের বাবাকে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ক্লাসের সব স্টুডেন্টরা লিমনকে ঘৃৃণা করতে লাগলো। কেউ ওর সাথে আর মিশলো না। বাবার অপকর্মের ফল ছেলের ঘাড়ের উপর এসে পড়লো। অন্তু এসে ওর বাবাকে বলল. সত্যি অপরাধ মানুষকে কিছুই দিতে পারে না কেবল মানুষের ঘৃণা ছাড়া। মানুষের মত মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতেই হবে। তাহলেই একটি মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে।
No comments:
Post a Comment