join facebook page

Monday, 22 September 2014

চাঁদপুর, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২১


ফুলপরীদের খেলাঘর
সোহানুর রহমান অনন্ত
অর্পাদের বাগানে অনেক রকমের ফুল গাছ আছে। নানা রঙ আছে ফুলের আছে অনেক রকম সৌরভ। অর্পার বাবার ফুল খুব পছন্দ। অর্পা ক্লাস ফোরে উঠেছে এবার। সময় পেলেই অর্পা ফুল বাগানে খেলতে বের হয়, মাথার জুটি বাতাসে দুলিয়ে। রুনু কে ডাক দেয়, আমার সাথে খেলবে যদি আয়। রুনু অর্পাদের কাজের বুয়ার মেয়ে। টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারেনা তাই মায়ের সাথে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে। বয়সে অর্পার সমান একটু চিকন, কালো। মাথার চুলগুলো এলোমলো, হাসলে হলদে দাঁতগুলো বেরিয়ে আসে। রুনু অর্পার সাথে খেলুক এটা অর্পার মায়ের পছন্দ নয়। এ নিয়ে প্রায় সময় রুনুকে বকাঝোঁকা করে অর্পার আম্মু। অর্পা ওর আম্মুকে বুঝাতে চায় একা একা কি খেলা করা যায় নাকি তাছাড়া রুনুর সাথে মিশলে সমস্যাটা কি? আম্মু বলেন কম্পিউটারে গেম খেল অথবা রূপকথার বই পড় আর ছোটলোকদের সাথে মিশলে তুমিও ছোটলোক হয়ে যাবে। ধনি গরিবের ব্যবধান অর্পার কাছে ভাল লাগে না। সবচে বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা মানুষ আর এই চিরসত্য কথাটাই মাকে বোঝানো যায় না। কম্পিউটারে সারাদিন গেম খেলতে ভাল লাগেনা অর্পার, ভাল লাগেনা সারাদিন বই পড়তে। ভাল লাগে সবুজ ঘাসের পাটিতে বসে রুনুর সাথে বউ পুতুল খেলতে। ফুল বাগানে প্রজাপতির মতো হাত দুটি তুলে উড়ে বেড়াতে। সেদিন বিকেল বেলা অর্পার আম্মু ঘুমিয়ে আছে। অর্পা চুপি চুপি গিয়ে রুনুকে খবর দেয়, আয় আমরা ফুল বাগানে খেলতে যাই। রুনুও বারণ করে কিন্তু অর্পা শোনে না। সে জানায় ওর আম্মু এখন ঘুমাচ্ছে। রুনু খেলতে যায় অর্পার সাথে। দু'জন মিলে বউ পুতুল খেলে। অর্পার আম্মু বিষয়টা দেখে ফেলে এবং রুনুকে সেদিন অনেক মারধোর করে। অর্পা ওর আম্মুকে অনেক করে বোঝাতে চেয়েছে, রুনুর কোনে দোষ নেই সব দোষ অর্পার কিন্তু অর্পার আম্মু সেদিকে কান দেয়নি। সেদিন রাতে অর্পার একটুও ঘুম হয়নি সারারাত কেঁদে কাটিয়েছে। সেদিনের পর থেকে রুনু আর অর্পার কাছে আসে না। দু'তিন দিন পর কাজের বুয়া কাজ ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। সঙ্গে চলে যায় রুনু। অর্পার খুব কষ্ট হয় রুনুকে বিদায় দিতে। তারপর থেকে শুরু হয় অর্পার একলা জীবন। খেলার কোন সাথী নেই, একলা একলা ফুল বাগানে হেঁটে বেড়ায় অর্পা। বউ পুতুলগুলো পড়ে থাকে গাছের নিচে। একদিন মাঝ রাতে অর্পার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। ফুল বাগানে কারা যেন কথা বলছে। আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসে অর্পা। জানালা দিয়ে উকি দেয়। কতগুলো ছোট ছোট মেয়ে। লম্বায় অর্পার সমান, ফুল বাগানে খেলা করছে। অর্পা দরজা খুলে ফুল বাগানে চলে যায়। গিয়ে দেখে ওর বউ পুতুল দিয়ে মেয়েগুলো খেলা করছে। অর্পা কাছে গিয়ে বলে কে তোমরা? এখানে কি চাও? অর্পার কথায় ভয় পেয়ে যায় মেয়ে গুলো। আমরা ফুলপরী। অর্পার এবার অবাক হয় তাইতো বলি তোমাদের পিঠে পাখা কেন। বইয়ের মাঝে তোমাদের কথা অনেক পড়েছি। শুনেছি অনেক রূপকথাও। ফুলপরীরা হেসে বলে, ঠিক আমাদের দিয়ে মানুষরা গল্প রচনা করে। তোমরা এখানে রোজ খেলতে আসো? প্রশ্ন করে অর্পা। হ্যাঁ, এটাইতো আমাদের খেলাঘর।

আর্পা ওদের আরো কাছে গিয়ে বলে, আমাকে তোমাদের সাথে খেলতে নেবে? আমার কোন বন্ধু নেই, কেউ আমার সাথে খেলতে চায় না। ফুলপরী বলল কেন নেবোনা, এসো আগে তোমাকে আমাদের বন্ধু বানাই। সেটা কিভাবে? তোমার পায়ে দু'টো রূপার নুপুর পরিয়ে দেবো, তাহলেই তুমি আমাদের বন্ধু হবে। দেখছো না আমাদের সবার পায়ে দু'টি করে নুপুর আছে। দু'টি সুন্দর রূপার নুপুর অর্পার পায়ে পরিয়ে দিল ক্ষুদে ফুল পরীরা। তারপর সবাই খেলায় মেতে উঠলো। খুব আনন্দ হলো, অর্পার মনের মাঝে। অনেকদিন পর খেলার সাথী জুটেছে ওর।

ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে, অর্পা স্কুলের সময় হয়েছে। ঘুম ভাঙতেই অর্পা চমকে উঠে নিজেকে বিছানায় দেখে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বেজে কুঁড়ি মিনিট। গত রাতের সব কিছু স্বপ্ন মনে হয় অর্পার কাছে কিন্তু যখন পায়ের দিকে চোখ পড়ে অমনি দেখে পায়ে দু'টি রূপার নুুপুর। রৌদ্রের আলো খেলা করছে তার উপরে। অর্পা খুব খুশি হয়। রাতের বেলা আবার সে পরীদের খেলাঘরে গিয়ে খেলা করে। এভাবেই আনন্দে কাটে অর্পার প্রতিটি রাত।

No comments:

Post a Comment