join facebook page

Monday, 1 September 2014

31-08-2014 Daily Prothom alo Bundhu sovay amar golpo

জোছনার সুখ-দুঃখ

সোহানুর রহমান

ঘুমের ঘরে নাক ডাকছে সোহেল, শব্দটা একেবারে সহ্য হয় না জোছনার। বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ বছর, কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি জোছনার সংসারে। এই কষ্টটা তাড়া করে বেড়ায় খুব। সোহেল একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। কাজ আর ঘুম—এটা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। ঘরে যে একটা বউ আছে, তাকেও যে সময় দিতে হয়, সেটা যেন সোহেলকে বুঝিয়ে দিতে হয়। জোছনা তাকিয়ে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে, ফেসবুকেই তার সময় কাটে বেশি। একা একটি মেয়ের আর কীই-বা করার আছে। জোছনা বেশ কয়েকবার সোহেলকে বলেছে, ‘চলো, ছাদে গিয়ে আকাশ দেখি।’ কিন্তু সোহেল খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়ল। কত শখ করে সেজেছিল, কপালে লাল টিপ পরেছিল। এগুলো দেখার আগ্রহটাও যেন সোহেলের নেই। দিন দিন সংসারের প্রতি অনিহা জেগে উঠেছে, জোছনার। জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে। চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে অশ্রু, চাঁদের আলোয় ঝলসে ওঠে। নারীজনম সত্যি খুব কষ্টের।
খুব সকালে উঠে সোহেল অফিসে চলে যায়। আজ জোছনার মনটা খুব খারাপ। খুব ইচ্ছা হচ্ছিল দূরে কোথাও ঘুরে আসতে। সোহেল চলে যেতেই জানালার পাশে এসে বসে, হালকা বাতাস এসে চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। মেঘলা আকাশ বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়। হঠাৎ কলবেলের শব্দ। জোছনা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
সোহেল তুমি?
দরজার সামনে সোহেল একগুচ্ছ ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ‘হ্যঁা আমি, তোমাকে চমকে দিলাম, আজ যে তোমার বার্থ ডে, সেটাই ভুলে গেলা?’ জোছনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়, আসলেই নিজের জন্মদিন নিজেই ভুলে গেছে। সোহেল জোছনার হাত ধরে ছাদে নিয়ে যায়। ‘চলো, আজ একসঙ্গে দুজন বৃষ্টিতে ভিজব, তারপর বিকেলে সারা শহরটা ঘুরব।’ জোছনার খুশিতে মনটা ভরে ওঠে। সবই সত্যি, নাকি কল্পনায় ঘটছে। বৃষ্টিতে ভিজে যায় দুজন, ভিজে জোছনার মনের দেয়াল। সোহেল পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের আংটি বের করে জোছনার আঙুলে পরিয়ে দেয়। ‘এটা তোমার বার্থ ডে গিফট।’ জোছনা তাকিয়ে থাকে সেই দিকে, নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। হঠাৎ বজ্রপাতের বিকট শব্দ হয়। সোহেলের হাতটা আরও শক্ত করে ধরে জোছনা।

No comments:

Post a Comment