join facebook page

Monday, 22 September 2014

07 september 2014

Daily ittafaq fun magazine thatta 21 september 2014
রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০১৪
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪> Daily Bangladesh Potidine>রকমারি
রম্য

ফেসবুকে নতুনত্ব
সোহানুর রহমান অনন্ত

* কাজী অফিস : দিনকে দিন ফেসবুক-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, পাবলিক এখন পারলে খাওয়া-দাওয়াটাও ফেসবুকে করে। যেহেতু এখানে লাখ লাখ মানুষের আনাগোনা তাই ফেসবুকে কাজী অফিস খোলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি পাত্র-পাত্রীর ছবি ও বায়োডাটা থাকবে এবং পছন্দমতো পাত্র বা পাত্রীকে যাচাই-বাছাই করে বিয়ে করতে পারবে। এমনটা করলে মন্দ হয় না।

* সেরা লাইক সুন্দরী : টিভি রিয়েলিটি শো-এর পাশাপাশি ফেসবুকেও সেরা সুন্দরী খোঁজা যেতে পারে। যেভাবে সারা দিন তরুণীরা সেলিব্রেটিদের মতো ছবি আপলোড মারে, তাতে এমনটা করা যেতেই পারে। কমেন্ট ও লাইকের মাধ্যমে সেরা ফেসবুক লাইক সুন্দরী নির্বাচিত করা যেতে পারে। এমনটা করলে ফেসবুক নতুন মাত্রা পাবে।

* অটো ঝগড়া অ্যাপস : ফেসবুক মানেই হাসাহাসি ঝগড়া। সরকারি দল-বিরোধী দল, বউ-স্বামী, প্রেমিক-প্রেমিকা ইত্যাদির ঝগড়া। কিন্তু ঝগড়ার সময় অনেকেই দিক হারিয়ে ফেলেন, অথবা কথা খুঁজে পান না। তাই তাদের জন্য ঝগড়া অ্যাপস বের করা যেতে পারে। এই অ্যাপস অটো ঝগড়ার উত্তর দেবে। সুতরাং নো চিন্তা ডু ঝগড়া।

* আঁতেল কবি নির্বাচন : ফেসবুকে কিছু আঁতেল কবি আছে, যারা সারা দিন আজাইরা কবিতা ও স্ট্যাটাস আপলোড মারে। তাদের দিয়ে ফেসবুক আঁতেল কবি নির্বাচন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তারা তাদের কবিতা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান তৈরি করে পোস্ট দেবে এবং ফেসবুক ভোটের মাধ্যমে একজন আঁতেল কবি নির্বাচিত করা যেতে পারে। যার কবিতা দিয়ে বই বের করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আঁতেলদের আজাইরা পোস্ট মারা কমে যাবে।

* ফেসবুক সিরিয়াল : একঘেয়েমি চ্যাট করতে করতে অনেকেই বিরক্ত হয়ে যান। তাই ফেসবুকেও সিরিয়ালের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে চ্যাট করার পাশাপাশি সিরিয়াল দেখেও পাবলিক বিনোদন পাবে।

সাপ্তাহিক ২০০০ : ২৮ ভাদ্র ১৪২১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বর্ষ ১৭, সংখ্যা ১৬
তারুণ্য> সময়টা স্বপ্নময় নামে আমার প্রথম লেখা ছাপা হলো...........
......

আজ ১৪-০৯-২০১৪ দৈনিক ইত্তেফাকের ফান ম্যাগাজিন ঠাট্টায় আমার লেখা
আজ ১৪-০৯-২০১৪ দৈনিক ইত্তেফাকের ফান ম্যাগাজিন ঠাট্টায় আমার লেখা
আজ ১৪-০৯-২০১৪ দৈনিক নয়াদিগন@রে অবকাশে>জীবনের বঁাকে বঁাকে তে আমার মিনি গল্প
ঠাট্টা_২৮২, প্রকাশের তারিখ : ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ইং
১৫-০৯-২০১৪ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর রকমারি রম্যতে আমার লেখা টিপস& মিস করলে চলবে না ভায়া...........
.

৬টি টিপস একটি নিখোঁজ
সবাই চিপায় পড়ে গেলে টিপস খোঁজেন কীভাবে পরিস্থিতির সামাল দেবেন। কোন পরিস্থিতিতে কী করবেন তা দেখে নিন একনজরে। লিখেছেন- সোহানুর রহমান অনন্ত

প্রেমিকা যদি অন্য মেয়ের হাত ধরতে দেখে ফেলে যা বলবেন :

- ইয়ে মানে জান, আসলে মেয়েটি চোখে দেখে না, তাই হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলাম, জানই তো আমি আবার দিল দরদি। ব্যস দেখবেন আপনার প্রেমিকা মোমের মতো গলে গেছে। মেয়েরা আবার পরোপকারী বয়ফ্রেন্ড পছন্দ করে।



বউ যদি সারাক্ষণ হিন্দি সিরিয়াল দেখে তাহলে যা করবেন :

- বউয়ের মোবাইলে ৫০০ টাকা লোড করে দেবেন। তারপর ওমুককে ফোন দাও তমুককে ফোনে বলে, মোবাইলে বিজি করে দেবেন। দেখবেন সে আজাইরা কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এ সুযোগে আপনি আরামে টিভি দেখতে পারবেন।



ছুটি বেশি কাটালে বসকে যা বলবেন :

- স্যার আপনি তো আসল খবরই জানেন না। আমার বউ বলছে সপ্তাহে তিন দিন মার্কেটে নিয়ে যেতে। আর বাকি চার দিন রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়াতে। তাই ছুটির ওপরে থাকি আরকি। এই যে তিন দিনের কথা বলে এক সপ্তাহ পার করে দিলাম সেটাও কিন্তু ওই যে সাত দিনের শিডিউল দেখে।



পাওনাদার টাকা চাইলে, যা করবেন :

- আরে ভাই টাকা পাইবেন ভালো কথা, আগে বাসায় আসেন। আপনারে আগে খাওয়ামু তারপর টাকা দিমু। ব্যস বাসায় নিয়ে কিছু খাইয়ে দিন। যদি বুয়ার রান্নায় গণ্ডগোল থাকে তাহলে তো কথাই নেই। আপনার কাছে টাকা চাওয়া তো দূরের কথা, আপনাকে দেখলেই পালাবে।



বন্ধুদের খাওয়ার জন্য যা বলবেন :

- খাইতে চাইছ ভালো কথা, তোরা খাবি না তো কে খাইব? কিন্তু কথা হলো ভুল কইরা মানিব্যাগটা বাসায় ফালাইয়া আইছি, এহন তোদের থেকে কেউ ইমার্জেন্সি টাকা ধার দিলেই খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি। দেখবেন খাওয়ার কথা এমনিতেই ভুলে গেছে।

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪>Daily bangladesh potidine rokomari rommo-ta amar lakha

ফরমালিন ঠেকাতে
আমাদের চারপাশে এখন ফরমালিনের ছড়াছড়ি। ফল থেকে শুরু করে মাছ, সবজি সব জায়গাতেই ফ্রি হিসেবে মেলে ফরমালিন বিষ। তবে ফরমালিন না দিয়েও সব কিছু কীভাবে তরতাজা পেতে পারি সেটাই জানাচ্ছে- সোহানুর রহমান অনন্ত

রাস্তার গর্তে মাছ চাষ

শহরে ভাঙা ও গর্তওলা রাস্তার অভাব নেই। সেই গর্তগুলো মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এমনিতেই পড়ে থাকে। তাই সেখানে মাছ চাষ করা যেতে পারে। ক্রেতারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাছ পছন্দ করবে আর বিক্রেতারা তাজা মাছ ধরে দেবে। এ ক্ষেত্রে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।



ছাদে চাষ পদ্ধতি

অনেক বাড়ির ছাদ ফাঁকা পড়ে থাকে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে চুরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আলো বাতাস দুটোই পাওয়া যাবে। ক্রেতারা একেবারে ছাদ থেকে তাজা সবজি কিনবে। একদিকে বাড়িওলারা যেমন লাভবান হবে অন্যদিকে ফরমালিন ব্যবহার করতে হবে না।





ক্যাটালগ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে বিক্রেতারা ফলের ক্যাটালগ নিয়ে বসে থাকবে। ক্রেতারা সেই ক্যাটালগ দেখবে এবং ফল পছন্দ করবে। দরদাম ঠিক হলে, একেবার বাগান থেকে ফল সাপ্লাই দেবে, যেহেতু সরাসরি গাছ থেকে ফলটা আসবে সেহেতু ফরমালিনের ব্যবহার কোনোভাবে দরকার নেই।



শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে বিক্রেতা গাড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করবে। যেহেতু গাড়িটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, মাছ নষ্ট বা পচে যাওয়ার কোনো চান্স নেই। আর বিক্রেতাও এক জায়গায় না বসে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতে পারবে।



রাস্তার পাশে ফল গাছ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে রাস্তার পাশগুলোতে ফলের চারা রোপণ করতে হবে। প্রতিটি গাছের মালিক গাছে ফল হওয়া মাত্রই বিভিন্ন রেট দিয়ে বিক্রি শুরু করবে। এতে একদিকে যেমন ফরমালিন মুক্ত ফল পাওয়া যাবে অন্যদিকে গাছে গাছে ভরে উঠবে আমাদের চারপাশ।
চাঁদপুর, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২১


ফুলপরীদের খেলাঘর
সোহানুর রহমান অনন্ত
অর্পাদের বাগানে অনেক রকমের ফুল গাছ আছে। নানা রঙ আছে ফুলের আছে অনেক রকম সৌরভ। অর্পার বাবার ফুল খুব পছন্দ। অর্পা ক্লাস ফোরে উঠেছে এবার। সময় পেলেই অর্পা ফুল বাগানে খেলতে বের হয়, মাথার জুটি বাতাসে দুলিয়ে। রুনু কে ডাক দেয়, আমার সাথে খেলবে যদি আয়। রুনু অর্পাদের কাজের বুয়ার মেয়ে। টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারেনা তাই মায়ের সাথে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে। বয়সে অর্পার সমান একটু চিকন, কালো। মাথার চুলগুলো এলোমলো, হাসলে হলদে দাঁতগুলো বেরিয়ে আসে। রুনু অর্পার সাথে খেলুক এটা অর্পার মায়ের পছন্দ নয়। এ নিয়ে প্রায় সময় রুনুকে বকাঝোঁকা করে অর্পার আম্মু। অর্পা ওর আম্মুকে বুঝাতে চায় একা একা কি খেলা করা যায় নাকি তাছাড়া রুনুর সাথে মিশলে সমস্যাটা কি? আম্মু বলেন কম্পিউটারে গেম খেল অথবা রূপকথার বই পড় আর ছোটলোকদের সাথে মিশলে তুমিও ছোটলোক হয়ে যাবে। ধনি গরিবের ব্যবধান অর্পার কাছে ভাল লাগে না। সবচে বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা মানুষ আর এই চিরসত্য কথাটাই মাকে বোঝানো যায় না। কম্পিউটারে সারাদিন গেম খেলতে ভাল লাগেনা অর্পার, ভাল লাগেনা সারাদিন বই পড়তে। ভাল লাগে সবুজ ঘাসের পাটিতে বসে রুনুর সাথে বউ পুতুল খেলতে। ফুল বাগানে প্রজাপতির মতো হাত দুটি তুলে উড়ে বেড়াতে। সেদিন বিকেল বেলা অর্পার আম্মু ঘুমিয়ে আছে। অর্পা চুপি চুপি গিয়ে রুনুকে খবর দেয়, আয় আমরা ফুল বাগানে খেলতে যাই। রুনুও বারণ করে কিন্তু অর্পা শোনে না। সে জানায় ওর আম্মু এখন ঘুমাচ্ছে। রুনু খেলতে যায় অর্পার সাথে। দু'জন মিলে বউ পুতুল খেলে। অর্পার আম্মু বিষয়টা দেখে ফেলে এবং রুনুকে সেদিন অনেক মারধোর করে। অর্পা ওর আম্মুকে অনেক করে বোঝাতে চেয়েছে, রুনুর কোনে দোষ নেই সব দোষ অর্পার কিন্তু অর্পার আম্মু সেদিকে কান দেয়নি। সেদিন রাতে অর্পার একটুও ঘুম হয়নি সারারাত কেঁদে কাটিয়েছে। সেদিনের পর থেকে রুনু আর অর্পার কাছে আসে না। দু'তিন দিন পর কাজের বুয়া কাজ ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। সঙ্গে চলে যায় রুনু। অর্পার খুব কষ্ট হয় রুনুকে বিদায় দিতে। তারপর থেকে শুরু হয় অর্পার একলা জীবন। খেলার কোন সাথী নেই, একলা একলা ফুল বাগানে হেঁটে বেড়ায় অর্পা। বউ পুতুলগুলো পড়ে থাকে গাছের নিচে। একদিন মাঝ রাতে অর্পার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। ফুল বাগানে কারা যেন কথা বলছে। আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসে অর্পা। জানালা দিয়ে উকি দেয়। কতগুলো ছোট ছোট মেয়ে। লম্বায় অর্পার সমান, ফুল বাগানে খেলা করছে। অর্পা দরজা খুলে ফুল বাগানে চলে যায়। গিয়ে দেখে ওর বউ পুতুল দিয়ে মেয়েগুলো খেলা করছে। অর্পা কাছে গিয়ে বলে কে তোমরা? এখানে কি চাও? অর্পার কথায় ভয় পেয়ে যায় মেয়ে গুলো। আমরা ফুলপরী। অর্পার এবার অবাক হয় তাইতো বলি তোমাদের পিঠে পাখা কেন। বইয়ের মাঝে তোমাদের কথা অনেক পড়েছি। শুনেছি অনেক রূপকথাও। ফুলপরীরা হেসে বলে, ঠিক আমাদের দিয়ে মানুষরা গল্প রচনা করে। তোমরা এখানে রোজ খেলতে আসো? প্রশ্ন করে অর্পা। হ্যাঁ, এটাইতো আমাদের খেলাঘর।

আর্পা ওদের আরো কাছে গিয়ে বলে, আমাকে তোমাদের সাথে খেলতে নেবে? আমার কোন বন্ধু নেই, কেউ আমার সাথে খেলতে চায় না। ফুলপরী বলল কেন নেবোনা, এসো আগে তোমাকে আমাদের বন্ধু বানাই। সেটা কিভাবে? তোমার পায়ে দু'টো রূপার নুপুর পরিয়ে দেবো, তাহলেই তুমি আমাদের বন্ধু হবে। দেখছো না আমাদের সবার পায়ে দু'টি করে নুপুর আছে। দু'টি সুন্দর রূপার নুপুর অর্পার পায়ে পরিয়ে দিল ক্ষুদে ফুল পরীরা। তারপর সবাই খেলায় মেতে উঠলো। খুব আনন্দ হলো, অর্পার মনের মাঝে। অনেকদিন পর খেলার সাথী জুটেছে ওর।

ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে, অর্পা স্কুলের সময় হয়েছে। ঘুম ভাঙতেই অর্পা চমকে উঠে নিজেকে বিছানায় দেখে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বেজে কুঁড়ি মিনিট। গত রাতের সব কিছু স্বপ্ন মনে হয় অর্পার কাছে কিন্তু যখন পায়ের দিকে চোখ পড়ে অমনি দেখে পায়ে দু'টি রূপার নুুপুর। রৌদ্রের আলো খেলা করছে তার উপরে। অর্পা খুব খুশি হয়। রাতের বেলা আবার সে পরীদের খেলাঘরে গিয়ে খেলা করে। এভাবেই আনন্দে কাটে অর্পার প্রতিটি রাত।

চাঁদপুর, শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২৯


অপরাধী
সোহানুর রহমান অনন্ত
মানুষের জীবনে কখন এসে দুর্দিন দেখা দেয় তা কেউ বলতে পারে না, বলতে পারেনি আদম আলীও। তার জীবনে আজ দুর্দিন ভয়াবহ দুর্দিন যাচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগেও তার গোলাভরা ধান ছিলো, উঠোন জুড়ে ছিলো হাস-মুরগির বিচরণ, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর জুড়ে ছিলো বড় বড় মাছের ছোটাছুটি ছিলো। কিন্তু আজ নেই কিছুই নেই আদম আলীর। সর্বনাশা পদ্মার ভাঙ্গনে তার জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। চোখের সামনেই বাপ-দাদার ভিটা মাটি ফসলের মাঠ এক এক করে হারিয়ে গেলো পদ্মার গহীন অথৈ জলে। সবকিছু হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে ঢাকার শহরে পারি জমায় আদম আলী। সঙ্গে তার স্ত্রী এবং দু' মেয়ে ১০ বছরের মণি ও ৭ বছরের মুক্তা। প্রথমে ঢাকায় এসে কাজের জন্য দিশেহারা হয়ে যায় আদম আলী। পরে অনেক কষ্টে ইসলামপুর একটা মার্কেটে লেবারের কাজ পায়। দিনে যা রোজগার হতো কোনো রকম দু মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে দু' মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে চলে যেতো কদম আলীর। এক সময় খুব আরামের বিছানায় শুয়ে দিন কেটেছিলো আদম আলীর স্ত্রী কিন্তু আজ ঠাঁই হয়েছে কমলাপুর বস্তিতে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আদম আলীর বউ পড়শীদের কাছে বলে কে ভেবে ছিলো আল্লাহ্ আমাদের কপালে এমন কষ্ট লেইখা রাখছে। মেয়ে দুটো সারাক্ষণ রেল লাইনের রাস্তার পাশে বসে খেলা করে, আর অপেক্ষায় থাকে কহন সন্ধ্যা হইবো আর বাপজান আইবো। কদম আলীর কোনদিন রোজগার একটু বেশি হয়, কোনদিন আবার কম হয়, যেদিন বেশি হয় সেদিন ছোট মেয়েটা মুক্তার জন্য পাকা কলা নিয়ে যায়। ছোট থেইকাই মুক্তা পাকা কলার পাগল, আর বড় মেয়ে মণি ওর কোনো ইচ্ছা নেই। কম বেশি মণি সংসারের সব কিছুই বুঝতে শিখেছে। বাপের অবস্থা ভালো করেই উপলব্ধি করছে মণি তাই ওর কোনো বায়না নেই। এভাবেই আদম আলীর সংসার এক রকম দুঃখে কষ্টে চলে যাচ্ছিলো। একদিন সন্ধ্যা বেলা গম্ভীর মুখে বাসায় ফিরে আদম আলী। এসে দেখে ছোট মেয়েটার ভীষণ জ্বর, পাশে বসে ওর মা মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে। কহন থেইকা ওর জ্বর? প্রশ্ন করে আদম আলী। দুপুরের পর থেইকা জ্বর আইছে, আপনের মুখটা এতো শুকনা কেন? কোনো খারাপ সংবাদ। না, মানে কাইল থেইকা দুই দিন হরতাল, হরতালে দিয়াতো আর মার্কেট খুলবোনা আর মার্কেট না খুললো টেকা পয়সাও কামাইতে পারুম না। এর মধ্যে আবার মাইয়াডার জ্বর আইছে অহন যে আমি কি করি। অতো চিন্তা কইরেন না আল্লাহ একটা না একটা ব্যবস্থা কইরাই দিবো। মণি কই? আছে হয়তো রানুগো ঘরে বইসা রানুর লগে কথা কইতাছে। আপনে কয়ডা ভাত খাইয়া ঘুমানতো সারাদিন অনেক খাইট্টা আইছেন। হু, দাও দেহি কয়ডা ডাইল ভাত।

মাঝ রাতে হঠাৎ রানুর বাপ এসে আদম আলীরে ডেকে বললো কাইল থেইকা দুইদিন তো হরতাল, এইর মধ্যে তো কাজ কর্ম নাই চলো আমরা মিছিলে যাই হাজিরা দুইশো টাকা। আদম আলী মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে না মিয়া মিছিল মিটিংয়ের ধারে কাছে যামু না। চিন্তা কইরা দেখো আদম দুই দিনে চাইরশো টেকা পাইবা না খেয়ে মরার চেয়ে তিন চাইর ঘণ্টা মিছিল কইরা যদি চাইরশো টেকা পাও তাতে মন্দ কি? আদম আলী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ঘরে আদরের মেয়ে মুক্তার জ্বর, চাল-ডালও নাই, ঘরে বসে থাকার চেয়ে মিছিলে গেলে মনে হয় ভালা অইবো, আমরা গরিবেরা কাজ না করলে তো আসলেই না খাইয়া মরুম। আদম আলী পাকা কথা দিয়ে দেয় রানুর বাপকে কাল সে মিছিলে যাচ্ছে। পরদিন আদম আলী মিছিলে যায়, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝে প্রথম দিন হরতাল শেষ হয়। সন্ধ্যা বেলা মেয়ের জন্য ঔষধ নিয়ে আসে আদম আলী। মুক্তার অবস্থা এখন আগের চাইতে একটু ভালো। আদম আলীকে আসতে দেখেই মাথা তুলে মুক্তা বলে আমার জন্য কলা আনছো বাপজান? হু মা আনছি কলা আনছি আম আনছি। কি মজা মণি আপার লাইগা কিছু আনে নাই সব আমার লাইগা আনছ এই বলে মুক্তা বিছানা থেকে মাথা তুলে হাসে। মণি ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলো, আদম আলী সেদিকে তাকিয়ে বলে তোর লাইগা কাইল কিছু আনুম নে মন খারাপ করিস্ না মা। আব্বা এই মিছিলে তোমার না গেলে অয় না? কি মারামারি হয় আমার ডর করে। ডর কিরে মা ঘরে বইসা থাকলে তোগোরে খাওয়াইবো কে? নে চাল আনছি ভাত রান্না কর ক্ষিধা লাগছে।

পরের দিন আবার হরতালে গেলো আদম আলী, আসার সময় মুক্তাকে বলে এসেছে আজ আবার ওর জন্য পাকা কলা নিয়ে যাবে। এ কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলো মুক্তা। আজকের হরতাল খুব ভয়াবহ চলছে, চারিদিকে গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। মিছিলের ঝাঁঝালো আওয়াজে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। হঠাৎ হরতালে পক্ষ বিপক্ষের মধ্যে মারামারি লেগে গেলো। দু চারটা বোমা ফুটলো, মানুষ দিগি�দিক ছুটতে লাগলো, কদম আলী কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকটা যুবক এসে মারতে শুরু করলো। পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখলো সেই দৃশ্য পুলিশের দায়িত্বের কোনো ভূমিকা পালন করলো না। আদম আলী ছেলেগুলোর পা ধরে বলতে লাগলো বাবা গো আমারে ছাইড়া দাও পেটের জ্বালায় রাস্তায় নামছি, আমি গরির মানুষ সন্ত্রাসী না। ঘরে আমার অসুস্থ মেয়ে আমার পথ চেয়ে আছে, এ বলে আবার পুলিশের পায়ে গিয়া ধরলো। ভাইরা আমারে বাঁচান ওরা আমারে মাইরা ফালাইলো। পুলিশ কিছুই করলো না ওল্টো আরো আদম আলীর শার্ট টেনে ধরে ওদের হাতে তুলে দিলো। আদম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতো লাগলো আমারে আর মাইরোনা মইরা যামু আর শয্য হইতাছে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা নরপশুরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাত করেই শান্ত� হয়নি। রাস্তার মধ্যে ফেলে মোটা লোহার শেকল দিয়ে মাথার মধ্যে কয়েক বার আঘাত করে ফেলে যায় আদম আলীকে। আদম আলীর রক্তে লাল হয়ে যায় রাস্তার ধুলো মাটিগুলো। আদম আলী চোখের সামনে আপছা আপছা আঁধার দেখতে পায়, ভেসে উঠে বড় মেয়েটির মুখ। (বাপজান তুমি মিছিলে যাইওনা আমার কেমন জানি ডর করে) সেই কচি সুর কানে বেজে উঠে। ছোট্ট মেয়েটির সেই মুখ ভারা হাসি, (বাপজান আমার লাইগা পাকা কলা আইনো, তাইলে আমার জ্বর ভালা অইয়া যাইবো) তারপর আস্তে আস্তে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে আদম আলীর। নিভে যাচ্ছে জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে, হাজার হাজার লোক ছুটে যাচ্ছে আদম আলীর ওপর দিয়ে, কেউবা হাতে কেউবা মুখের ওপর পায়ের চাপা দিয়ে। আদম আলী চিৎকার করে ওদের বললো আমারে তোমরা একটু বাঁচাও....বাঁচাও...কেউ শুনলোনা সেই ডাক। এক সময় চারিদিকের কোলাহলের মাঝে থেমে গেলো আদম আলীর চিৎকার। নিভে গেলো আদম আলীর জীবন প্রদীপ, সেই দৃশ্য দেখে আকাশটা বুঝি কষ্ট পেয়েছিলো, কষ্ট পেয়েছিলো মেঘেরা। তাইতো আদম আলীকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য বৃষ্টি হয়ে নেমে এলো বৃষ্টির দল। বাতাস থেমে গিয়েছিলো কিছুক্ষণের জন্য, গোটা পৃথিবী নিঃশব্দে কেঁদেছিলো কিছুক্ষণের জন্য। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কেউ পথে বসে মরে কেউবা চেয়ে চেয়ে দেখে সেই দৃশ্য। তাই মনে আজ প্রশ্ন জাগে, আর কতদিন এভাবে পথে পথে নীরিহ গরির মানুষদের প্রাণ হারাতে হবে, দেশের এই অবস্থার জন্য কে অপরাধী। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এলো তবুও আদম আলী ফিরলো না ঘরে, ছোট্ট মেয়েটি বাবার অপেক্ষায় বসে আছে, কখন বাপজান আসবে পাকা কলা নিয়ে। কিন্তু কে তাকে বলবে তার বাবা যে আর কোনোদিনও ফিরবে না........কোনোদিনও না।

চাঁদপুর, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৪ আশ্বিন (shishi kantha)

মনুষ্যত্ব
সোহানুর রহমান অনন্ত
স্কুল থেকে মন খারাপ করে বাসায় এলো অন্তু। এসেই সোজা মায়ের ঘরে চলে গেল। অন্তুর মা তখন টিভি সিরিয়াল দেখছে। ঘরের এক কোণে এসে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইলো অন্তু। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তুর মা জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে অন্তু? অন্তু কোন কথা বলল না। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অন্তুর মা আবার জিজ্ঞেস করল, বাবা কি হয়েছে? অন্তু এবার মুখ খুলে, আচ্ছা মা লিমনরা কি আমাদের চেয়ে অনেক বড় লোক? হঠাৎ এই কথা কেন বলছো, কি হয়েছে তোমার? না তেমন কিছু নয়। আজ লিমন নতুন গাড়িতে করে স্কুলে এসেছে তাই জিজ্ঞেস করলাম। মা তুমি না বলেছিলে লিমনের বাবার চেয়ে আমার বাবার বেতন বেশি। পদটাও আমার বাবার উপরে তবে কেন মা আমাদের এত টাকা নেই? সেটা তোমার বাবাকেই জিজ্ঞেস করো। এখন যাও হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

রাতে খাবার টেবিলে বসে অন্তু বাবাকে প্রশ্ন করে। আব্বু তোমার টাকা এত কম কেন? ছেলের কথা শুনে প্রথমে আতিকুর রহমান চমকে যায়। হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন বাবা? না মানে লিমন আমাকে বলেছে ওর নাকি টিচারের অভাব নেই। তাছাড়া ওর পেছনেই নাকি তিনজন চাকর সারাক্ষণ থাকে। ছেলের কথা শুনে এবার হেসে উঠে আতিকুর রহমান। তুমি তো দেখছি লিমনদের সম্পর্কে সবি জানো, ছেলের উদ্দেশ্যে বলে আতিকুর রহমান। হ্যাঁ জানিতো অনেক কিছুই কিন্তু? কিন্তু কি? না মানে ও আগে আমার বন্ধু ছিল। এখন আর আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে না। আমার নাকি টাকা পয়সা কম তাই আমার সাথে ও আর চলবে না। বাবা তুমিই বলো ওর বাবার থেকে তো তোমার বেতন বেশি তাহলে আমাদের নতুন গাড়ি নেই কেন? কেন আমার চার পাঁচটা টিচার নেই? অন্তুর মা বলে এবার ছেলের কথার উত্তর দাও?

আতিকুর রহমান অন্তুকে বলে, আগে খাবার শেষ করো। তারপর আমার ঘরে এসো, বলছি।

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে অন্তুকে ওর বাবা নিজের ঘরে নিয়ে যায়। তারপর প্রশ্ন করে আচ্ছা বাবা বলোতো পড়াশোনা করে তুমি কী হতে চাও? অন্তু চটপট উত্তর দেয় ডাক্তার। আচ্ছা এবার বল পড়াশোনা করার প্রধান উদ্দেশ্য কী? পড়াশোনা করার অর্থ হচ্ছে নিজের মনুষ্যত্বকে চেনা, অজানাকে জানা, ভাল এবং মন্দর মধ্যে পাথর্ক্য করতে শেখা ইত্যাদি। আচ্ছা এবার বল তোমার কি মনে হয় পড়াশোনা করে সবাই এসব চিন্তে করে? অন্তু এবার মাথা নাড়িয়ে বলে- মনে হয় না। দেখ যত বড় বড় দুর্নীতি আছে তার সাথে কিন্তু বড় বড় শিক্ষিত লোকরাই জড়িত। লিমনের বাবা আমার চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা কম বেতনে চাকুরি করে, তবুও তাঁর সবই আছে কিন্তু কি নেই জানো? কি বাবা? নেই মনুষ্যত্ব। দুর্নীতি করে আজকে সে তাঁর ভাগ্য বদলিয়েছে ঠিকই কিন্তু মনের কালির দাগ মুছতে পারেনি। এই আমাকে দেখ। আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা অথচ আজ পর্যন্ত কারো কাছ থেকে এক টাকা ঘুষ খাইনি। দুর্নীতি করিনি কখনো, হালাল পথে টাকা কামিয়েছি। আমার এতদিনের কর্মের ফসল হিসেবে পেয়েছি মানুষের ভালবাসা,স্নেহ, সম্মান। আমি মরলে মানুষ আমার জন্য কাঁদবে। কেন কাঁদবে জানো? অন্তু আবার বলে কেন? কারণ আমি এমন কিছু কাজ করেছি যা মানুষ আমাকে চিরকাল স্মরণ রাখবে। আর লিমনের বাবা গরিব দুখী, দিনমুজুরের কাছ থেকেও ঘুষ খেয়েছে। ঘুষ ছাড়া তাঁর কলম চলে না। বল সে মরলে কি কেউ কাঁদবে? অন্তু বলে, না। এবার আতিকুর রহমান সাহেব ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে-সেটা জীবন নয়, যে জীবন কিছু রেখে যেতে পারে না। এই দেখ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কায়কোবাদ বিশ্বের আরো অনেক মনীষী আছে। তারা কি ঘুষখোর ছিল? অন্তু বলে, না। তারা কি দুর্নীতিবাজ ছিল? না। তারা এমন কিছু করে গেছে যার ফলে পৃথিবীর বুকে মানুষ যত দিন রবে তাদের কথা স্মরণ করবে। তাঁদের নিয়ে মানুষ গর্ব করে, কাব্য লেখে। কোনো ঘুষখোর কে নিয়ে তো মানুষ গর্ব করে না। কই কখনো শুনেছো কোনো ঘুষখোর বা সন্ত্রাসীকে মানুষ শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করেছে? সারাজীবন মানুষ তাদের ঘৃণা করবে এটাই স্বাভাবিক। আশা করি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছ। অন্তু এবার বাবার কাছে এসে বলে, আব্বু আমি বড় হয়ে তোমার মত একজন সৎ ব্যক্তি হতে চাই। দোয়া করি বাবা তুমি অনেক বড় হও। তারপর থেকে অন্তু ওর বাবাকে সব সময় অনুসরণ করে। ঠিক মতো পড়াশোনা করে। লিমনের সাথে মেশে না। কিছুদিন পর লিমনের বাবাকে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ক্লাসের সব স্টুডেন্টরা লিমনকে ঘৃৃণা করতে লাগলো। কেউ ওর সাথে আর মিশলো না। বাবার অপকর্মের ফল ছেলের ঘাড়ের উপর এসে পড়লো। অন্তু এসে ওর বাবাকে বলল. সত্যি অপরাধ মানুষকে কিছুই দিতে পারে না কেবল মানুষের ঘৃণা ছাড়া। মানুষের মত মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতেই হবে। তাহলেই একটি মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে।

চাঁদপুর, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৫ আশ্বিন(pathok forum)

সোনালী স্বপ্ন
সোহানুর রহমান অনন্ত
সারাদিন পথে পথে কাগজ কুড়ায় মন্টু। ক্ষুধা পেলে রাস্তার পাশের টিউবওয়েল থেকে পানি খায়। রাতের বেলা রাস্তার পাশে ছালা বিছিয়ে ঘুমায় মাথার নিচে শক্ত ইট দিয়ে। মন্টুর সাথে ওর বয়সী আরো অনেক টোকাই আছে এখানে। কিন্তু মন্টু ওদের সাথে মেশে না। ওরা নেশা করে, নেশা খুব খারাপ কাম এটা মন্টু জানে। মন্টু এ লাইনে একেবারে নতুন। আগে একটা হোটেলে কাজ করতো, কয়েক দিন আগে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে। হোটেলের মালিক লোকটা বেশি একটা সুবিধার ছিলো না। মন্টুকে খুব খাটাতো বিনিময়ে দিতো বাসি খাবার। সেদিন হাত থেকে পড়ে একটা গ্লাস ভেঙে গিয়েছিলো তাই লোকটা মন্টুকে খুব মারধর করে। সেদিন রাতেই মন্টু পলিয়ে আসে।

আজ বেশি একটা কাগজ কুড়াতে পারেনি মন্টু। বৃষ্টি হয়েছিলো, তাই এ অবস্থা। রাতের বেলা রাস্তার পাশে বসে গাড়ির আসা যাওয়া দেখছে। পেটে টান টান ক্ষুধার উত্তেজনা। এমন সময় সেখানে কয়েকটা ছেলে এসে দাঁড়ালো।

মন্টুর সামনে দাঁড়িয়ে একটি ছেলে বললো, এই লাইনে নতুন?

ছেলেটির দিকে তাকালো মন্টু। মুখের মধ্যে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আছে। গালের মধ্যে সেলাইয়ের দাগ।

মন্টু মাথা নিচু করে বললো জ্বি নতুন এসেছি।

নাম কি? পাশে থাকা একটি ছেলে প্রশ্ন করে।

মন্টু।

আগে কী করতা?

হোটেলে চাকুরি করতাম।

আমগোরে চেনো?

জ্বে না।

কি হালায় আমগোরে চেনে না, ছেলেগুলো হাসাহাসি করতে লাগলো। মাঝখানে থাকা ছেলেটা বললো এই যে, এই এলাকায় আছত, এইটা আমাগো এলাকা বুঝলি। এখানে থাকতে হলে আমগোরে চান্দা দিয়া থাকতে হয় বুঝলি। এখন ক� তো পকেটে কতো টেকা আছে।

মন্টু ঘাবড়ে গেলো, তোতলাতে তোতলাতে বললো, না আমার কাছে কোন টাকা নেই। মাঝখানের ছেলেটা বললো, তোরা দু�জন দেখতো ওর পকেটে কি আছে? হুকুম নাযিল হতেই ছেলে দু�টি মন্টুকে টেনে তুললো বসা থেকে। তারপর পকেট থেকে বের করে আনলো বিশ টাকার একটি নোট। মন্টু ওদের সাথে টানাটানি করতে গিয়ে নিজের ছেড়া শার্টটা আরো ছিড়ে ফেলে। টাকা নিয়েই ছেলেগুলো সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

মন্টুর দু�চোখ দিয়ে জল ঝড়তে থাকে। কত কষ্ট করেই না টাকাটা জমিয়েছিলো। কিন্তু পাষাণ ছেলেগুলো অসহায় ওর কাছ থেকে তা কেড়ে নিল। মন্টু জানে না ওর বাবা কে? কি-বা ওর পরিচয়। কোথায় বাড়ি, কোথায় ঘর এসব ও কিছুই জানে না। ছোট থেকেই মানুষের ধিক্কার খেয়ে এতটুকু বয়স পর্যন্ত এসেছে। কেউ আজ পর্যন্ত ওকে আপন করে নেয়নি। কেউ ওর বন্ধুও হয়নি কোনদিন। শুধু এ পথ আর রাস্তার পাশে ল্যাম্প লাইটগুলো ছাড়া। মন্টুর কাছে যখন বেশ একা একা লাগে ল্যাম্প লাইটের সাথে কথা বলে। উত্তরের আশায় নয় বরং নিজের কষ্টগুলো বলে যাওয়ার আশায়। মন্টু নামটি ওর কে রেখেছে সেটাও জানে না। শুধু জানে মন্টু এ পৃথিবীতে বড় একা। আর মানুষ যখন বড় একলা হয়ে যায় তখন সে অসহায় ও ঘৃণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকে এ পৃথিবীর বুকে।

পরদিন ঠিক একি অবস্থা হলো। সারদিন কাগজ কুড়িয়ে এসে মন্টু যখন রাস্তার পাশে দাঁড়ালো। ছেলেগুলো এসে জোর করে ওর টাকাট নিয়ে গেলো। আজও মন্টু কিছু বলতে পারলো না। এভাবেই তিন চারদিন টাকা নেয়ার পর মন্টু ভাবলো সে এখানে আর থাকবে না। এখানের ছেলেগুলা একটুও ভালা না। তাই সে পরদিন সেখান থেকে চলে গেলো। এরি মধ্যে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পাক হানাদার বাহিনী, ঝাপিয়ে পড়ছে বাঙালি মানুষদের ওপর। চারিদিকে মানুষের করুণ আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি রেখে সবাই পালাতে লাগলো একটু নিরপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

বাঙালি বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো এ দেশের মাটি রক্ষা করার জন্য। মন্টু খুব ছোট, যুদ্ধ করার মতো বয়স ওর হয়নি। কিন্তু ও যুদ্ধে যেতে চায়। জন্মের পর থেকে কেউ ওরে আপন করে নেয়নি কেবল এ মাটি ছাড়া। আজ এ মাটিকে রক্ষা করতে নিজের প্রাণটি পর্যন্ত দিতে রাজি মন্টু।

সেখান ছেড়ে অনিক অনেক দূরে চলে এলো। নতুন জায়গায়। চারিদিকে গাছ-গাছালি ভরা। আঁকা-বাঁকা কাঁচা রাস্তা, গ্রাম্য পরিবেশ। এখানে এসে বাজারের রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ পায় মন্টু। ঘুমায় রাস্তার পাশে।

একদিন মাঝ রাতে মন্টু ঘুমিয়ে আছে রাস্তার পাশে। হঠাৎ কিছুর শব্দ পেয়ে মন্টু ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলতেই মন্টু দেখে, কালো চাদর মুড়ি দেয়া কয়েকজন লোক এদিকে আসছে। মন্টু প্রথমে পাকবাহিনী ভেবে ভয় পেয়ে যায়। শোয়া থেকে উঠে বসে। লোকগুলো কাছে আসতেই মন্টু ভয়ে কাঁপতে লাগলো। শেষে লোকগুলো মন্টুর অবস্থা দেখে বললো, ভয় পেয়ে না ছোট ভাই আমরা পাক হানাদার নই, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনতেই সাহসে মন্টুর বুকটা ভরে উঠে। পাশে থাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা বললো, রাস্তার পাশে তুমি কি করো? মিলিটারি ঘুরতাছে, তোমার ডর করে না? মন্টু মাথা উঁচু করে বললো আমার কোনো ঘর-বাড়ি নাই। এ রাস্তাই আমার ঘর-বাড়ি। আর ডর ভয় তো ওল্টা আমারে ডরায়। লোকগুলো অবাক হয়ে যায় মন্টুর কথা শুনে।

একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে ধরে মন্টু বললো, আমারে আপনেগো সাথে নেবেন। আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চাই। মুক্তিযোদ্ধারা অবাক হয়ে যায় এতুটুকু ছেলের কথা শুনে। তারপর একজন বললো, দেখ তুমি এখনো অনেক ছোট। তুমিতো যুদ্ধ করতে পারবে না। কথাটা শুনে মন্টুর মুখ কালো হয়ে গেলো। তাৎক্ষণিক আবার বললো, আইচ্ছা আমি কি আপনাগো কোনো উপকার করতে পারুম না?

এমনিতে তুমি কি করো?

আমি কাগজ কুড়াই, বাজারের রাস্তা ঝাড়� দেই।

তাইলো তুমি আমগো অস্ত্রগুলান এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে বা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছাইয়া দিতে পারো। তুমি কাগজ কুড়াও তাই তোমারে মিলিটারিরা সন্দেহ করবো না। মন্টু রাজি হয়ে গেলো ওদের কথায়। মুক্তিযোদ্ধারা মন্টুকে ক্যাম্পে নিয়ে গেল।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান লিটন ভাই মন্টুর সাহস এবং মনোবল দেখে খুব খুশি হলেন। তিনি মন্টুকে খুব পছন্দ করলেন। পরদিন থেকেই দেশের জন্য ওর কাজ শুরু হয়ে গেলো। জীবন বাজি রেখে নিজের কাগজের ব্যাগে গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলো।

একদিন মন্টু কাগজের ব্যাগ নিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার ক্যাম্পে যাচ্ছিলো, হঠাৎ করে পাকহানাদার বাহিনীর সামনে পড়ে গেলো।

ওর দিকে পিস্তল তাক করে কয়েকজন এগিয়ে এলো। সাথে ছিলো একজন অফিসার এবং কয়েকজন লোক। হাত-পা বাধা বাঙালি। মন্টু ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। মন্টুর সামনেই বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। মন্টু ভয়ে অফিসারের পায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর বললো স্যার হ্যামি টোকাই মানুষ। হ্যামারে মাইরেন না। মন্টুর কান্না দেখে অফিসারের দয়া হলো, তাই সে মন্টুকে না মেরে কাছে ডেকে নিলেন।

তু টোকাই হে?

জ্বি স্যার

আচ্ছা, তু তো জানতাহে ইদার মে মুক্তি কাহা হে?

হা স্যার

কাহা?

মন্টু আঙুল দিয়ে ভুল পথের দিকে দেখিয়ে দিলো।

অফিসার খুশি হয়ে বললো, যা মে তুজ কো ছোড় দে তা হু, যাহ্।

নতুন জীবন পেয়ে মন্টু ছুটে গেলো পাখির মতো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খবরটা জানালো যে পাকসেনাদের ওল্টো রাস্তা দেখিয়ে এসেছে। ঠিক তখনি মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাস্তায় গিয়ে ফাঁদ পেতে রইলো। পাক সেনারা আসতেই শুরু করলো গুলি। ব্যাস সব মরে সাফ।

এভাবেই মন্টু একের পর খবর দিতে লাগলো মিলিটারীদের সম্পর্ক। আর ছালার বস্তায় করে গোলাবারুদ, মেশিনগান মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলো। যুদ্ধ চলতে লাগলো।

মন্টু একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলো দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। লাল-সবুজ পতাকা সবাই বিজয়ের গান গাইছে। মুক্ত পাখিরা আকাশে উড়ছে, রক্ত স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সোনালী স্বপ্ন মন্টু মুক্তিযোদ্ধার প্রধান লিটন ভাইকে বললো। লিটন ভাই হেসে বললো তোমার স্বপ্ন সত্যি হবে মন্টু।

সেদিন মন্টু কাশবনের পাশ দিয়ে ফিরছিলো। পাক-বাহিনীর সম্পর্কে একটা জরুরি খবর দিতে হবে লিটন ভাইকে। এমন সময় দেখে কয়েকজন লোক এদিকে আসছে। লোকগুলো মন্টুর কাছে আসতেই মন্টু ওদের চিনতে পারলো। আকবর ভাই আর করিম ভাই। ওরা দু�জন ক্যাম্পের পাশে থাকে। আকবর ভাই কাছে এসে বললো মন্টু তোমাকে লিটন ভাই এখনি যেতে বলেছে। মন্টু বলল আমিতো লিটন ভাইয়ের কাছেই যাচ্ছি, চল আমরা ক্যাম্পে যাই। লিটন ভাই ক্যাম্পে নেই মন্টু ওনি একটা গোপন জায়গায় আছে। কোথায়? চল তোমায় নিয়ে যাচ্ছি। মন্টু ওদের পেছনে হাঁটতে লাগলো। লোকগুলো মন্টুকে কিছু দূর হরিপুরের কাছের একটা স্কুলের ভেতর নিয়ে গেলো। কোনো মুক্তিকেই মন্টু দেখতে পেলো না। তাই মন্টুর কেমন যেন ভয় করছে। লোকগুলোর মতলব ঠিক ভালো নয়। একটু পরেই মন্টু আসল সত্যটা জেনে গেলো। আসলে ও যাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ভেবেছে আসলে ওরা রাজাকার। এ দেশের শুত্রু। মন্টুকে ওরা পাকহানাদের হাতে তুলে দিলো। মন্টু বুঝতে পারছিলো যে ওর আর বাঁচা হবে না। তাই মরার আগে দেশের জন্য একটা ভালো কাজ করে যেতে চায়। স্কুলটির ভেতরে বেশ কয়েকজন রাজাকার ছিলো। রাজাকাররা মন্টুর অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো। আর পাকিস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলতে লাগলো। মন্টু ওদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, এ দেশ তোদের নয়, এ দেশের মাটিও তোদের নয়, তোগো এ দেশের বুকে বেঁচে থাকার কোনো হক নেই। ছালার বস্তা থেকে বোমা বের করে মন্টু ফাটিয়ে দিলো। আর সাথে সাথে স্কুলটির ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটলো। রাজাকারদের হাসি থেমে গেলো। পাকহানাদারদের ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেলো। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মন্টু পাকহানাদের শেষ করে গেলো। এদিকে লিটন ভাই মন্টুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু মন্টু আর ফিরে এলো না। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলো। কালো মেঘের ফাঁকে উঁকি দিলো একটি স্বাধীন সূর্য। চারিদিকে লাল-সবুজের পতাকা হাতে সবাই বিজয়ের গান গাইতে লাগলো। মন্টুর স্বপ্ন সত্যি হলো। মন্টুর মতো এমন লাখো লাখো বাঙালির রক্তের উপর ভর করে দাঁড়ালো আরেকটি দেশ। বাংলাদেশ।


Monday, 1 September 2014

31-08-2014 Daily Prothom alo Bundhu sovay amar golpo

জোছনার সুখ-দুঃখ

সোহানুর রহমান

ঘুমের ঘরে নাক ডাকছে সোহেল, শব্দটা একেবারে সহ্য হয় না জোছনার। বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ বছর, কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি জোছনার সংসারে। এই কষ্টটা তাড়া করে বেড়ায় খুব। সোহেল একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। কাজ আর ঘুম—এটা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। ঘরে যে একটা বউ আছে, তাকেও যে সময় দিতে হয়, সেটা যেন সোহেলকে বুঝিয়ে দিতে হয়। জোছনা তাকিয়ে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে, ফেসবুকেই তার সময় কাটে বেশি। একা একটি মেয়ের আর কীই-বা করার আছে। জোছনা বেশ কয়েকবার সোহেলকে বলেছে, ‘চলো, ছাদে গিয়ে আকাশ দেখি।’ কিন্তু সোহেল খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়ল। কত শখ করে সেজেছিল, কপালে লাল টিপ পরেছিল। এগুলো দেখার আগ্রহটাও যেন সোহেলের নেই। দিন দিন সংসারের প্রতি অনিহা জেগে উঠেছে, জোছনার। জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে। চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে অশ্রু, চাঁদের আলোয় ঝলসে ওঠে। নারীজনম সত্যি খুব কষ্টের।
খুব সকালে উঠে সোহেল অফিসে চলে যায়। আজ জোছনার মনটা খুব খারাপ। খুব ইচ্ছা হচ্ছিল দূরে কোথাও ঘুরে আসতে। সোহেল চলে যেতেই জানালার পাশে এসে বসে, হালকা বাতাস এসে চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। মেঘলা আকাশ বৃষ্টি আসার অপেক্ষায়। হঠাৎ কলবেলের শব্দ। জোছনা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
সোহেল তুমি?
দরজার সামনে সোহেল একগুচ্ছ ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ‘হ্যঁা আমি, তোমাকে চমকে দিলাম, আজ যে তোমার বার্থ ডে, সেটাই ভুলে গেলা?’ জোছনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়, আসলেই নিজের জন্মদিন নিজেই ভুলে গেছে। সোহেল জোছনার হাত ধরে ছাদে নিয়ে যায়। ‘চলো, আজ একসঙ্গে দুজন বৃষ্টিতে ভিজব, তারপর বিকেলে সারা শহরটা ঘুরব।’ জোছনার খুশিতে মনটা ভরে ওঠে। সবই সত্যি, নাকি কল্পনায় ঘটছে। বৃষ্টিতে ভিজে যায় দুজন, ভিজে জোছনার মনের দেয়াল। সোহেল পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের আংটি বের করে জোছনার আঙুলে পরিয়ে দেয়। ‘এটা তোমার বার্থ ডে গিফট।’ জোছনা তাকিয়ে থাকে সেই দিকে, নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। হঠাৎ বজ্রপাতের বিকট শব্দ হয়। সোহেলের হাতটা আরও শক্ত করে ধরে জোছনা।
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪> Daily Bangladesh Potidine>রকমারি
রম্য

ফেসবুকে নতুনত্ব
সোহানুর রহমান অনন্ত

* কাজী অফিস : দিনকে দিন ফেসবুক-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, পাবলিক এখন পারলে খাওয়া-দাওয়াটাও ফেসবুকে করে। যেহেতু এখানে লাখ লাখ মানুষের আনাগোনা তাই ফেসবুকে কাজী অফিস খোলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি পাত্র-পাত্রীর ছবি ও বায়োডাটা থাকবে এবং পছন্দমতো পাত্র বা পাত্রীকে যাচাই-বাছাই করে বিয়ে করতে পারবে। এমনটা করলে মন্দ হয় না।

* সেরা লাইক সুন্দরী : টিভি রিয়েলিটি শো-এর পাশাপাশি ফেসবুকেও সেরা সুন্দরী খোঁজা যেতে পারে। যেভাবে সারা দিন তরুণীরা সেলিব্রেটিদের মতো ছবি আপলোড মারে, তাতে এমনটা করা যেতেই পারে। কমেন্ট ও লাইকের মাধ্যমে সেরা ফেসবুক লাইক সুন্দরী নির্বাচিত করা যেতে পারে। এমনটা করলে ফেসবুক নতুন মাত্রা পাবে।

* অটো ঝগড়া অ্যাপস : ফেসবুক মানেই হাসাহাসি ঝগড়া। সরকারি দল-বিরোধী দল, বউ-স্বামী, প্রেমিক-প্রেমিকা ইত্যাদির ঝগড়া। কিন্তু ঝগড়ার সময় অনেকেই দিক হারিয়ে ফেলেন, অথবা কথা খুঁজে পান না। তাই তাদের জন্য ঝগড়া অ্যাপস বের করা যেতে পারে। এই অ্যাপস অটো ঝগড়ার উত্তর দেবে। সুতরাং নো চিন্তা ডু ঝগড়া।

* আঁতেল কবি নির্বাচন : ফেসবুকে কিছু আঁতেল কবি আছে, যারা সারা দিন আজাইরা কবিতা ও স্ট্যাটাস আপলোড মারে। তাদের দিয়ে ফেসবুক আঁতেল কবি নির্বাচন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তারা তাদের কবিতা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান তৈরি করে পোস্ট দেবে এবং ফেসবুক ভোটের মাধ্যমে একজন আঁতেল কবি নির্বাচিত করা যেতে পারে। যার কবিতা দিয়ে বই বের করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আঁতেলদের আজাইরা পোস্ট মারা কমে যাবে।

* ফেসবুক সিরিয়াল : একঘেয়েমি চ্যাট করতে করতে অনেকেই বিরক্ত হয়ে যান। তাই ফেসবুকেও সিরিয়ালের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে চ্যাট করার পাশাপাশি সিরিয়াল দেখেও পাবলিক বিনোদন পাবে।