10-05-2015 অবকাশে মা দিবস স্পেশাল লেখা................
অফুরন্ত ভালোবাসায় মা
সোহানুর রহমান অনন্ত
মা ভালোবেসে আমাদের বড় করে তুলেছেন, ঠিক সেভাবেই তাকে ভালোবাসতে হবে সারা জীবন। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি আমাদের অফুরান ভালোবাসা আর অশেষ শ্রদ্ধা। লিখেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত
মা এমন একজন মানুষ, যিনি সন্তানের সব কষ্ট হাসিমুখে সয়ে যান, নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। সন্তানের সুখের জন্য নিজের সব সুখ বিলিয়ে দেন। আমরা প্রথম যে বুলি শিখি সেটাও মায়ের মুখ থেকে। পৃথিবীর কেউ আপনার মনের ভাষা বুঝতে না পারলেও মা আপনার মুখ দেখেই বলে দিতে পারবেন আপনি কষ্ট আছেন, না সুখে আছেন। আপনি যত বড়ই হন না কেন, মায়ের কাছে আপনি সেই ছোট শিশুর মতোই। আপনার বাড়ি ফিরতে দেড়ি হলে কিংবা ফোন বন্ধ থাকলে মায়ের চেয়ে বেশি কষ্ট আর কেউ পায় না। যখন আপনি দরজায় এসে দাঁড়াবেন মা-ই সবার আগে দৌড়ে গিয়ে বলবে খোকা এসেছিস, কত টেনশনে ছিলাম। মায়ের হাতের রান্না করা খাবার সব খাবারের ঊর্ধ্বে, যার কোনো তুলনা হয় না। আপনি হয়তো ভাবছেন মাকে শুধু নির্দিষ্ট একটা দিনে খুব বেশি ভালোবাসতে হবে কেন? মাকে তো প্রতিদিনই ভালোবাসা যায়, আলাদা করে একটি দিনের কী প্রয়োজন? প্রয়োজন আছে? এই ব্যস্ততম জীবনে সময়ের স্রোতে ভেসে হয়তো মাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। হয়তো মায়ের কী প্রয়োজন, তার শরীর ভালো কী খারাপ, তার কোনো খবর জানতে পারেননি। কিংবা আপনার মা হয়তো আপনার কাছে নেই অথবা বৃদ্ধাশ্রমে আপনার পথ চেয়ে চোখের পানি ফেলছে। তাই এই একটি দিন দুনিয়ার সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য উৎসর্গ করা হয়। হয়তো কখনো মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারেননি আপনি তাকে কত ভালোবাসেন। বলতে পারেননি আপনার মনের জমে থাকা কষ্টের কথাগুলো। আর তাই মা দিবসে আপনি সারা দিন মায়ের সাথে কাটাতে পারেন। মায়েরা সব সময় সন্তানদের কাছে পেতে চায়। আপনি যদি মায়ের সাথে কিছুটা সময় কাটান, দেখবেন মা অনেক খুশি হবে। আর আপনার কাছেও বেশ ভালো লাগবে। যদি মা দূরে থাকে তবে ছুটে যান তার কাছে। চাইলে মাকে সারপ্রাইজও দিতে পারেন। আপনার এমন পাগলামো দেখে নিশ্চয়ই মা আনন্দিত হবেন। বিভিন্ন উপহার দিয়ে মাকে চমকে দিতে পারেন। কী উপহার দেবেন মাকে? ভিন্ন ধরনের কিছু দিতে চাইলে কোনো শিল্পীকে দিয়ে করিয়ে নিন মায়ের সুন্দর মুখের স্কেচ। চাইলে ফুল দিতে পারেন কিংবা একবাক্স চকোলেট। সুন্দর ফ্রেমের মধ্যে করে দিতে পারেন মায়ের কোনো সুন্দর মুহূর্তের ছবি আর যদি শাড়ি উপহার দিতে চান, তাহলে দেখুন মায়ের কোন ধরনের শাড়ি বেশি পছন্দ। আবার যদি মা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাহলে উপহার দিন মায়ের ভালো লাগে এমন কোনো বই। আর যদি মা গান শুনতে ভালোবাসেন, তাহলে কিনে ফেলুন তার পছন্দের গানের সিডি। নিতে পারেন মায়ের জন্য তার পছন্দের খাবারও। তবে মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় উপহার আর কিছুই নেই। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় সন্তানদের হারানোর পর জুলি ওয়ার্ড নামে এক মহিলা সব মাকে একত্র করেন এ জন্য যে, যাতে কোনো মায়ের সন্তান যেন অন্য মায়ের সন্তানদের হত্যা না করে। তিনি ৪ জুলাই মা দিবস পালনের প্রস্তাব রাখেন। তার প্রস্তাবনা বিবেচনা করে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ২ জুলাই আমেরিকার ১৮টি অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই এই আয়োজন স্তিমিত হয়ে যায়। মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতেরো শতকের কথা। মায়ের সাথে সময় দেয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ। তবে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। কিছু ইতিহাসবিদের মতে, মা নিয়ে এই দিনটি প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে সূত্রপাত হয়। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলের উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিযশেন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই দু’টি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সম হন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস। খুব ঘটা করে পালন করা হয় এই দিনটি। কার্ডের দোকানগুলোতে, মাকে নিয়ে তৈরি করা অনেক কার্ড দেখা যায়। মা দিবস হলো মায়ের সম্মানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য বছরের একটি বিশেষ দিন। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উদযাপিত হয়ে আসছে এ দিবস। সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসেই বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। তবে মাকে ভালোবাসার জন্য ৩৬৫ দিনই মা দিবস। বিভিন্ন দেশে অনেক উৎসব থাকলেও মা দিবস খুব জাঁকজমকভাবে পালন করে থাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশগুলোতে ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন হয়ে থাকে। প্রতি বছর ২৭ মে বলিভিয়ায় মা দিবস পালন করা হয়। মা দিবসটি চীন দেশে আগে ততটা জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনের সাথে সাথে চীনাদের মনেও এই দিনটি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছে। এখন খুব জাঁকজমকভাবেই সেখানে মা দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে ১৯২২ সালে আলভারো ওব্রেগন সরকার মা দিবসের প্রচলন করে। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সারা বিশ্বের প্রায় ৬০টির মতো দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার একসাথে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে বহু যুগ ধরেই। আমাদের দেশেও মা দিবসের গুরুত্ব অনেক বেশি। মাকে নানা রকম উপহার দেয়া, মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি চোখে পড়ার মতো। যারা প্রবাসে থাকে তারা হয়তো মায়ের কাছে আসতে পারেন না কিন্তু ফোনে ঠিকই মায়ের সাথে কথা বলেন। এভাবেই মা দিবস প্রতিটি সন্তানের কাছে মায়ের ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে সব মা যে এই দিনে ভালোবাসা পাচ্ছেন, এমনটাও কিন্তু নয়। যে মায়ের ভাষায় কথা বলছি, সেই মা-ই হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে সন্তানের অপেক্ষায় পথের দিকে চেয়ে থাকে। হয়তো ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে কোনো মা তাকিয়ে থাকে হাজারো লোকের ভিড়ে যদি সন্তানকে একনজর দেখা যায়। মা দিবসেও হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে তাদের দিন কাটে অন্য আট দশটা দিনের মতো। সত্যি বলতে, মায়ের প্রতি আজো আমাদের ভালোবাসাটা একটু কাঁচা রয়ে গেছে। মা থাকতেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখা অনেকটা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝার মতো। যার মা পৃথিবীতে নেই, সে যে কতটা অসহায় তার বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। আপনি ব্যবসায় লস করলে হয়তো, ভবিষ্যতে লাভবান হবেন। একটা চাকরি হারালে আরেকটা চাকরি পাবেন কিন্তু মা একবার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে তাকে আর ফিরে পাবেন না। যদি সম্ভব হয় একটি দিনে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা মায়ের জন্য কিছু ফুল, ভালো কিছু খাবার নিয়ে তাদের সাথে সারা দিন কাটিয়ে দিন। নিঃসঙ্গ, অসহায় মায়েরা বহুদিন পর সন্তানদের দেখতে পেয়ে যে পরিমাণ খুশি হবেন, তাতে সারা বছর দেখা না করার কষ্টটা কিছুণের জন্য বিলীন হয়ে যাবে। তবে মাকে পাশে রাখা, তার সেবা করাই আমাদের কর্তব্য। মোটা মোটা বই পড়ে হয়তো আমাদের মাথাও একসময় মোটা হয়ে যায়, তাই মায়ের কথা ভুলে যাই খুব সহজে। তাই কৃত্রিমতা নয়; ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের একান্ত গহিন থেকে। ভালোবাসতে হবে এক দিনে জন্য নয় বরং প্রতিদিন ও সার্বণিকভাবে। যেভাবে মা ভালোবেসে আমাদের বড় করে তুলেছেন ঠিক সেভাবেই তাকে ভালোবাসতে হবে সারা জীবন। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি আমাদের অফুরান ভালোবাসা আর অশেষ শ্রদ্ধা
অফুরন্ত ভালোবাসায় মা
সোহানুর রহমান অনন্ত
মা ভালোবেসে আমাদের বড় করে তুলেছেন, ঠিক সেভাবেই তাকে ভালোবাসতে হবে সারা জীবন। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি আমাদের অফুরান ভালোবাসা আর অশেষ শ্রদ্ধা। লিখেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত
মা এমন একজন মানুষ, যিনি সন্তানের সব কষ্ট হাসিমুখে সয়ে যান, নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। সন্তানের সুখের জন্য নিজের সব সুখ বিলিয়ে দেন। আমরা প্রথম যে বুলি শিখি সেটাও মায়ের মুখ থেকে। পৃথিবীর কেউ আপনার মনের ভাষা বুঝতে না পারলেও মা আপনার মুখ দেখেই বলে দিতে পারবেন আপনি কষ্ট আছেন, না সুখে আছেন। আপনি যত বড়ই হন না কেন, মায়ের কাছে আপনি সেই ছোট শিশুর মতোই। আপনার বাড়ি ফিরতে দেড়ি হলে কিংবা ফোন বন্ধ থাকলে মায়ের চেয়ে বেশি কষ্ট আর কেউ পায় না। যখন আপনি দরজায় এসে দাঁড়াবেন মা-ই সবার আগে দৌড়ে গিয়ে বলবে খোকা এসেছিস, কত টেনশনে ছিলাম। মায়ের হাতের রান্না করা খাবার সব খাবারের ঊর্ধ্বে, যার কোনো তুলনা হয় না। আপনি হয়তো ভাবছেন মাকে শুধু নির্দিষ্ট একটা দিনে খুব বেশি ভালোবাসতে হবে কেন? মাকে তো প্রতিদিনই ভালোবাসা যায়, আলাদা করে একটি দিনের কী প্রয়োজন? প্রয়োজন আছে? এই ব্যস্ততম জীবনে সময়ের স্রোতে ভেসে হয়তো মাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। হয়তো মায়ের কী প্রয়োজন, তার শরীর ভালো কী খারাপ, তার কোনো খবর জানতে পারেননি। কিংবা আপনার মা হয়তো আপনার কাছে নেই অথবা বৃদ্ধাশ্রমে আপনার পথ চেয়ে চোখের পানি ফেলছে। তাই এই একটি দিন দুনিয়ার সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য উৎসর্গ করা হয়। হয়তো কখনো মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারেননি আপনি তাকে কত ভালোবাসেন। বলতে পারেননি আপনার মনের জমে থাকা কষ্টের কথাগুলো। আর তাই মা দিবসে আপনি সারা দিন মায়ের সাথে কাটাতে পারেন। মায়েরা সব সময় সন্তানদের কাছে পেতে চায়। আপনি যদি মায়ের সাথে কিছুটা সময় কাটান, দেখবেন মা অনেক খুশি হবে। আর আপনার কাছেও বেশ ভালো লাগবে। যদি মা দূরে থাকে তবে ছুটে যান তার কাছে। চাইলে মাকে সারপ্রাইজও দিতে পারেন। আপনার এমন পাগলামো দেখে নিশ্চয়ই মা আনন্দিত হবেন। বিভিন্ন উপহার দিয়ে মাকে চমকে দিতে পারেন। কী উপহার দেবেন মাকে? ভিন্ন ধরনের কিছু দিতে চাইলে কোনো শিল্পীকে দিয়ে করিয়ে নিন মায়ের সুন্দর মুখের স্কেচ। চাইলে ফুল দিতে পারেন কিংবা একবাক্স চকোলেট। সুন্দর ফ্রেমের মধ্যে করে দিতে পারেন মায়ের কোনো সুন্দর মুহূর্তের ছবি আর যদি শাড়ি উপহার দিতে চান, তাহলে দেখুন মায়ের কোন ধরনের শাড়ি বেশি পছন্দ। আবার যদি মা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাহলে উপহার দিন মায়ের ভালো লাগে এমন কোনো বই। আর যদি মা গান শুনতে ভালোবাসেন, তাহলে কিনে ফেলুন তার পছন্দের গানের সিডি। নিতে পারেন মায়ের জন্য তার পছন্দের খাবারও। তবে মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় উপহার আর কিছুই নেই। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় সন্তানদের হারানোর পর জুলি ওয়ার্ড নামে এক মহিলা সব মাকে একত্র করেন এ জন্য যে, যাতে কোনো মায়ের সন্তান যেন অন্য মায়ের সন্তানদের হত্যা না করে। তিনি ৪ জুলাই মা দিবস পালনের প্রস্তাব রাখেন। তার প্রস্তাবনা বিবেচনা করে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ২ জুলাই আমেরিকার ১৮টি অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই এই আয়োজন স্তিমিত হয়ে যায়। মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতেরো শতকের কথা। মায়ের সাথে সময় দেয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ। তবে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। কিছু ইতিহাসবিদের মতে, মা নিয়ে এই দিনটি প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে সূত্রপাত হয়। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলের উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিযশেন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই দু’টি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সম হন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস। খুব ঘটা করে পালন করা হয় এই দিনটি। কার্ডের দোকানগুলোতে, মাকে নিয়ে তৈরি করা অনেক কার্ড দেখা যায়। মা দিবস হলো মায়ের সম্মানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য বছরের একটি বিশেষ দিন। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উদযাপিত হয়ে আসছে এ দিবস। সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসেই বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। তবে মাকে ভালোবাসার জন্য ৩৬৫ দিনই মা দিবস। বিভিন্ন দেশে অনেক উৎসব থাকলেও মা দিবস খুব জাঁকজমকভাবে পালন করে থাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশগুলোতে ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন হয়ে থাকে। প্রতি বছর ২৭ মে বলিভিয়ায় মা দিবস পালন করা হয়। মা দিবসটি চীন দেশে আগে ততটা জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনের সাথে সাথে চীনাদের মনেও এই দিনটি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছে। এখন খুব জাঁকজমকভাবেই সেখানে মা দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে ১৯২২ সালে আলভারো ওব্রেগন সরকার মা দিবসের প্রচলন করে। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সারা বিশ্বের প্রায় ৬০টির মতো দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার একসাথে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে বহু যুগ ধরেই। আমাদের দেশেও মা দিবসের গুরুত্ব অনেক বেশি। মাকে নানা রকম উপহার দেয়া, মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি চোখে পড়ার মতো। যারা প্রবাসে থাকে তারা হয়তো মায়ের কাছে আসতে পারেন না কিন্তু ফোনে ঠিকই মায়ের সাথে কথা বলেন। এভাবেই মা দিবস প্রতিটি সন্তানের কাছে মায়ের ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে সব মা যে এই দিনে ভালোবাসা পাচ্ছেন, এমনটাও কিন্তু নয়। যে মায়ের ভাষায় কথা বলছি, সেই মা-ই হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে সন্তানের অপেক্ষায় পথের দিকে চেয়ে থাকে। হয়তো ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে কোনো মা তাকিয়ে থাকে হাজারো লোকের ভিড়ে যদি সন্তানকে একনজর দেখা যায়। মা দিবসেও হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে তাদের দিন কাটে অন্য আট দশটা দিনের মতো। সত্যি বলতে, মায়ের প্রতি আজো আমাদের ভালোবাসাটা একটু কাঁচা রয়ে গেছে। মা থাকতেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখা অনেকটা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝার মতো। যার মা পৃথিবীতে নেই, সে যে কতটা অসহায় তার বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। আপনি ব্যবসায় লস করলে হয়তো, ভবিষ্যতে লাভবান হবেন। একটা চাকরি হারালে আরেকটা চাকরি পাবেন কিন্তু মা একবার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে তাকে আর ফিরে পাবেন না। যদি সম্ভব হয় একটি দিনে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা মায়ের জন্য কিছু ফুল, ভালো কিছু খাবার নিয়ে তাদের সাথে সারা দিন কাটিয়ে দিন। নিঃসঙ্গ, অসহায় মায়েরা বহুদিন পর সন্তানদের দেখতে পেয়ে যে পরিমাণ খুশি হবেন, তাতে সারা বছর দেখা না করার কষ্টটা কিছুণের জন্য বিলীন হয়ে যাবে। তবে মাকে পাশে রাখা, তার সেবা করাই আমাদের কর্তব্য। মোটা মোটা বই পড়ে হয়তো আমাদের মাথাও একসময় মোটা হয়ে যায়, তাই মায়ের কথা ভুলে যাই খুব সহজে। তাই কৃত্রিমতা নয়; ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের একান্ত গহিন থেকে। ভালোবাসতে হবে এক দিনে জন্য নয় বরং প্রতিদিন ও সার্বণিকভাবে। যেভাবে মা ভালোবেসে আমাদের বড় করে তুলেছেন ঠিক সেভাবেই তাকে ভালোবাসতে হবে সারা জীবন। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি আমাদের অফুরান ভালোবাসা আর অশেষ শ্রদ্ধা
No comments:
Post a Comment