join facebook page

Tuesday, 12 May 2015

11-05-2015 Daily somokal-ar pachall a amar idea
11-05-2015 daily banglades protidin rokomari rommo te

বৈবাহিক পরিবর্তন
সোহানুর রহমান অনন্ত

প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন : বিয়ে করলে প্রথমে আপনার কোন জিনিসটার পরিবর্তন আসবে। আপনি বুঝতে কিঞ্চিৎ লেট করলেও আমরা কিন্তু বুঝতে সময় নেব না। সবার প্রথমে আপনার ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচারটা পরিবর্তন হবে। মানে একজনের জায়গায় দুজন। সিঙ্গেলের জায়গায় ম্যারিড, তবে ফেসবুকে অন্য কারও সঙ্গে প্রেমসংক্রান্ত জটিলতা থাকলে। এমনটা নাও দেখা যেতে পারে।



লেট লতিফ : বিয়ে করলে নতুন বউকে ছেড়ে অফিস যেতে কারোই ইচ্ছে করে না। তারপরও অফিস যেতে হয়, তবে সেটা সময়ের চেয়ে অসময়ে বেশি। মানে প্রতিদিনই লেট। আর বসের এক কথা। আপনি বিয়ে করার পর লেট লতিফ হবেন এটা সবাই একশ পার্সেন্ট বিশ্বাস করে।



গ্রেট চাপাবাজ : বিয়ে করলে একটু আকটু চাপাবাজি করবেনই। শশুরবাড়ির লোকজনদের কাছে, আপনি হেন-তেন কাবলি ডাবলি কত কিছু যে বলবেন। চাপা যে কম মারবেন না এটা আপনি সিউর না হলেও আমরা কিন্তু পুরোপুরি সিউর। তবে ননস্টপ চাপা মারার সময় একটু খেয়াল করবেন। হ্যাঁ বলতে গিয়ে হালুয়া রুটি বলে ফেললে সমস্যায় পড়তেই পারেন।



ভয়ানক কৃপণ : বিয়ের আগে আপনি বন্ধুদের নিয়ে টাকা পয়সা ধূমধাম উড়ালেও বিয়ের পর আপনি পকেটে হাত দিতে তিনবার ঢোক গিলবেন। বন্ধুদের দেখলে খরচ করা তো দূরের কথা উল্টো সংসারের অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছে টাকা চাইবেন। বিয়ের পর যে আপনি আসলেই কৃপণ হবেন সেটা বিশ্বাস করতেই হবে। নইলে বিয়ে করেই দেখুন!

সময় সচেতন : বিয়ের আগে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকলেও বিয়ের পর আর সেটা হচ্ছে না। বউয়ের ভয়ে ১০টার মধ্যে আপনাকে ঘরে প্রবেশ করতে হবে। নয়তো কালবৈশাখীর আলামত দেখা শুরু করবেন। তবে ঘরে প্রবেশ করার আগে শার্ট ভালো করে চেক করে যান। ঢাকার আকাশে শুধু টাকাই উড়ে না লম্বা লম্বা চুলও উড়ে। আর সেটা যদি আপনার বউ শার্টে দেখে। থাক বাকিটা বলতে গেলে আমারই হার্টঅ্যাটাক হয়ে যাবে।

এক সকালে লোকটি কলিংবেল টেপার শব্দে ঘুম ভাঙে আমার....লোকটাকেই দেখেই কেন যেন খুব খারাপ লাগে...ছদ্দনামে লিখে ফেললাম তাকে নিয়ে আজকের অবকাশে .................লোকটার আরো কিছু ছবি আছে আমি কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি

একজন মজিবুর রহমান

প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি সুন্দর স্বপ্ন থাকে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে-শান্তিকে বেঁচে থাকা। কিন্তু কারো কারো জীবনে সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তেমনি একজন স্বপ্নভাঙা মানুষ মজিবুর রহমান। ষাটের কাছাকাছি বয়স, একসময়ের দাপটে মানুষটি এখন নিয়তির কাছে পরাজিত হয়ে মানুষের কাছে হাত পাতছে দু’টি টাকার জন্য। গাইবান্ধার ধানগড়া গ্রামে জন্ম তার। ধানের মিলে কাজ করে সংসার কোনো রকম চলছিল। ছেলে সন্তানের আশায় একে একে পাঁচটি মেয়ে হলো। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে মেয়েদের পড়ানোর কথা চিন্তা করাও পাপ। একে একে মেয়েদের বিয়ে দেন, কেবল ছোট মেয়েটি পড়াশোনা করছিল। কারো স্বামী রিকশাচালক, কেউবা বাসের হেলপার অথবা ড্রাইভার। মেয়েরা সুখে থাকলেই তার সুখ। তবে সুখের দিন যেন একটি জ্বলন্ত মোমের মতো হালকা বাতাসেও নিভে যায়। তেমনি চালের মিলে কাজ করতে গিয়ে, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার শরীরের নিচের অংশ পুড়ে যায়। এরপর শুরু হলো কষ্টের দিন। চিকিৎসার জন্য মিল থেকে যা দেয়া হতো তা খুবই কম, তাই নিজের সম্পত্তি আস্তে আস্তে বিক্রি করতে হলো। একটা সময় শারীরিক দুর্বলতার কারণে মিলের চাকরিটাও হারালেন। চলে এলেন ঢাকায়। কাজলা মৃধাবাড়ি ময়লার রাস্তার পাশে একটি বাসা ভাড়া করলেন। চাকরি নিলেন নাইট গার্ডের। বেশ কিছু দিন কাজ করার পর হঠাৎ একদিন হার্ট অ্যাটাক হলো। মজিবুরের ভাগ্য আবারো নিয়ম পাল্টে দিলো। শরীর দুর্বল হওয়ায় চাকরি আর করতে পারলেন না। এ দিকে স্ত্রী ও ছোট মেয়েটি উপস থাকে। মেয়ের জামাইদের কাছেও হাত পাততে রাজি নন তিনি। ছোট মেয়েটি পড়াশোনা বাদ দিয়ে একটি জুতার কারখানায় কাজে লেগে গেল। আর মজিবুর রহমান শুরু করলেন ভিক্ষা করা। প্রতিদিন অনেকটা পথ হেঁটে ভিক্ষা করেন। যা জোটে তাতে কোনো রকম চলে যায়। বয়সের ভারে শরীর নুয়ে গেলেও, জীবনের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। এভাবেই মজিবুর নিজের নিয়তির সাথে খেলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কে জানে এই খেলার শেষ কোথায়।

10-05-2015 অবকাশে মা দিবস স্পেশাল লেখা................

অফুরন্ত ভালোবাসায় মা

সোহানুর রহমান অনন্ত

মা ভালোবেসে আমাদের বড় করে তুলেছেন, ঠিক সেভাবেই তাকে ভালোবাসতে হবে সারা জীবন। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি আমাদের অফুরান ভালোবাসা আর অশেষ শ্রদ্ধা। লিখেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত
মা এমন একজন মানুষ, যিনি সন্তানের সব কষ্ট হাসিমুখে সয়ে যান, নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। সন্তানের সুখের জন্য নিজের সব সুখ বিলিয়ে দেন। আমরা প্রথম যে বুলি শিখি সেটাও মায়ের মুখ থেকে। পৃথিবীর কেউ আপনার মনের ভাষা বুঝতে না পারলেও মা আপনার মুখ দেখেই বলে দিতে পারবেন আপনি কষ্ট আছেন, না সুখে আছেন। আপনি যত বড়ই হন না কেন, মায়ের কাছে আপনি সেই ছোট শিশুর মতোই। আপনার বাড়ি ফিরতে দেড়ি হলে কিংবা ফোন বন্ধ থাকলে মায়ের চেয়ে বেশি কষ্ট আর কেউ পায় না। যখন আপনি দরজায় এসে দাঁড়াবেন মা-ই সবার আগে দৌড়ে গিয়ে বলবে খোকা এসেছিস, কত টেনশনে ছিলাম। মায়ের হাতের রান্না করা খাবার সব খাবারের ঊর্ধ্বে, যার কোনো তুলনা হয় না। আপনি হয়তো ভাবছেন মাকে শুধু নির্দিষ্ট একটা দিনে খুব বেশি ভালোবাসতে হবে কেন? মাকে তো প্রতিদিনই ভালোবাসা যায়, আলাদা করে একটি দিনের কী প্রয়োজন? প্রয়োজন আছে? এই ব্যস্ততম জীবনে সময়ের স্রোতে ভেসে হয়তো মাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। হয়তো মায়ের কী প্রয়োজন, তার শরীর ভালো কী খারাপ, তার কোনো খবর জানতে পারেননি। কিংবা আপনার মা হয়তো আপনার কাছে নেই অথবা বৃদ্ধাশ্রমে আপনার পথ চেয়ে চোখের পানি ফেলছে। তাই এই একটি দিন দুনিয়ার সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য উৎসর্গ করা হয়। হয়তো কখনো মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারেননি আপনি তাকে কত ভালোবাসেন। বলতে পারেননি আপনার মনের জমে থাকা কষ্টের কথাগুলো। আর তাই মা দিবসে আপনি সারা দিন মায়ের সাথে কাটাতে পারেন। মায়েরা সব সময় সন্তানদের কাছে পেতে চায়। আপনি যদি মায়ের সাথে কিছুটা সময় কাটান, দেখবেন মা অনেক খুশি হবে। আর আপনার কাছেও বেশ ভালো লাগবে। যদি মা দূরে থাকে তবে ছুটে যান তার কাছে। চাইলে মাকে সারপ্রাইজও দিতে পারেন। আপনার এমন পাগলামো দেখে নিশ্চয়ই মা আনন্দিত হবেন। বিভিন্ন উপহার দিয়ে মাকে চমকে দিতে পারেন। কী উপহার দেবেন মাকে? ভিন্ন ধরনের কিছু দিতে চাইলে কোনো শিল্পীকে দিয়ে করিয়ে নিন মায়ের সুন্দর মুখের স্কেচ। চাইলে ফুল দিতে পারেন কিংবা একবাক্স চকোলেট। সুন্দর ফ্রেমের মধ্যে করে দিতে পারেন মায়ের কোনো সুন্দর মুহূর্তের ছবি আর যদি শাড়ি উপহার দিতে চান, তাহলে দেখুন মায়ের কোন ধরনের শাড়ি বেশি পছন্দ। আবার যদি মা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাহলে উপহার দিন মায়ের ভালো লাগে এমন কোনো বই। আর যদি মা গান শুনতে ভালোবাসেন, তাহলে কিনে ফেলুন তার পছন্দের গানের সিডি। নিতে পারেন মায়ের জন্য তার পছন্দের খাবারও। তবে মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় উপহার আর কিছুই নেই। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় সন্তানদের হারানোর পর জুলি ওয়ার্ড নামে এক মহিলা সব মাকে একত্র করেন এ জন্য যে, যাতে কোনো মায়ের সন্তান যেন অন্য মায়ের সন্তানদের হত্যা না করে। তিনি ৪ জুলাই মা দিবস পালনের প্রস্তাব রাখেন। তার প্রস্তাবনা বিবেচনা করে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ২ জুলাই আমেরিকার ১৮টি অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই এই আয়োজন স্তিমিত হয়ে যায়। মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতেরো শতকের কথা। মায়ের সাথে সময় দেয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ। তবে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। কিছু ইতিহাসবিদের মতে, মা নিয়ে এই দিনটি প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা
থেকে সূত্রপাত হয়। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলের উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিযশেন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই দু’টি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সম হন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস। খুব ঘটা করে পালন করা হয় এই দিনটি। কার্ডের দোকানগুলোতে, মাকে নিয়ে তৈরি করা অনেক কার্ড দেখা যায়। মা দিবস হলো মায়ের সম্মানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য বছরের একটি বিশেষ দিন। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উদযাপিত হয়ে আসছে এ দিবস। সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসেই বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। তবে মাকে ভালোবাসার জন্য ৩৬৫ দিনই মা দিবস। বিভিন্ন দেশে অনেক উৎসব থাকলেও মা দিবস খুব জাঁকজমকভাবে পালন করে থাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশগুলোতে ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন হয়ে থাকে। প্রতি বছর ২৭ মে বলিভিয়ায় মা দিবস পালন করা হয়। মা দিবসটি চীন দেশে আগে ততটা জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনের সাথে সাথে চীনাদের মনেও এই দিনটি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছে। এখন খুব জাঁকজমকভাবেই সেখানে মা দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে ১৯২২ সালে আলভারো ওব্রেগন সরকার মা দিবসের প্রচলন করে। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সারা বিশ্বের প্রায় ৬০টির মতো দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার একসাথে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে বহু যুগ ধরেই। আমাদের দেশেও মা দিবসের গুরুত্ব অনেক বেশি। মাকে নানা রকম উপহার দেয়া, মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি চোখে পড়ার মতো। যারা প্রবাসে থাকে তারা হয়তো মায়ের কাছে আসতে পারেন না কিন্তু ফোনে ঠিকই মায়ের সাথে কথা বলেন। এভাবেই মা দিবস প্রতিটি সন্তানের কাছে মায়ের ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে সব মা যে এই দিনে ভালোবাসা পাচ্ছেন, এমনটাও কিন্তু নয়। যে মায়ের ভাষায় কথা বলছি, সেই মা-ই হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে সন্তানের অপেক্ষায় পথের দিকে চেয়ে থাকে। হয়তো ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে কোনো মা তাকিয়ে থাকে হাজারো লোকের ভিড়ে যদি সন্তানকে একনজর দেখা যায়। মা দিবসেও হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে তাদের দিন কাটে অন্য আট দশটা দিনের মতো। সত্যি বলতে, মায়ের প্রতি আজো আমাদের ভালোবাসাটা একটু কাঁচা রয়ে গেছে। মা থাকতেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখা অনেকটা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝার মতো। যার মা পৃথিবীতে নেই, সে যে কতটা অসহায় তার বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। আপনি ব্যবসায় লস করলে হয়তো, ভবিষ্যতে লাভবান হবেন। একটা চাকরি হারালে আরেকটা চাকরি পাবেন কিন্তু মা একবার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে তাকে আর ফিরে পাবেন না। যদি সম্ভব হয় একটি দিনে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা মায়ের জন্য কিছু ফুল, ভালো কিছু খাবার নিয়ে তাদের সাথে সারা দিন কাটিয়ে দিন। নিঃসঙ্গ, অসহায় মায়েরা বহুদিন পর সন্তানদের দেখতে পেয়ে যে পরিমাণ খুশি হবেন, তাতে সারা বছর দেখা না করার কষ্টটা কিছুণের জন্য বিলীন হয়ে যাবে। তবে মাকে পাশে রাখা, তার সেবা করাই আমাদের কর্তব্য। মোটা মোটা বই পড়ে হয়তো আমাদের মাথাও একসময় মোটা হয়ে যায়, তাই মায়ের কথা ভুলে যাই খুব সহজে। তাই কৃত্রিমতা নয়; ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের একান্ত গহিন থেকে। ভালোবাসতে হবে এক দিনে জন্য নয় বরং প্রতিদিন ও সার্বণিকভাবে। যেভাবে মা ভালোবেসে আমাদের বড় করে তুলেছেন ঠিক সেভাবেই তাকে ভালোবাসতে হবে সারা জীবন। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি আমাদের অফুরান ভালোবাসা আর অশেষ শ্রদ্ধা

১০ মে ২০১৫ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন রোববার সাহিত্য পাতায়
abokash...........3-5-2015
20-04-2015 Daily somokal-ar pachall-a aamar Idea
9-04-2015 Daily Ittafaq-ar fun magazine thattay amar lekha idea
12-04-2015 Daily ittefaq-ar Fun magazine thattay amar lekha idea........
11-04-2015 Daily prothom alo- Chutir Dine (ছুটির দিনে )-a amar lekha mini golpo>><<<<<<<<<<<<<<<<<<<

ইঁদুর ভূত
সোহানুর রহমান

নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার পর বুঝতে পারলাম, আমরা ছাড়াও এখানে আরও কিছু বাসিন্দা থাকে। সেই বাসিন্দারা হলো ছোট ছোট ইঁদুর। রাতে আমরা যখন খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি, তখন ইঁদুরের দল বের হয় এবং পুরো ফ্ল্যাটে ছোটাছুটি করে। বাবা অনেক ওষুধ দিয়েছেন, কিন্তু চালাক ইঁদুরগুলো সে খাবারে মুখও দেয় না। প্রতিদিনই মায়ের হাতে বাবা বুকনি খান। তাই নতুন বাসা খুঁজে পেতে বাবা পেরেশান। বিপদটা আমার ওপরেও কম যায় না। বাবা মাঝেমধ্যেই রেগে বলে ওঠেন, ‘এই বজ্জাত ইঁদুর বড় সাংঘাতিক। হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা এলেও নাস্তানাবুদ হয়ে যেত।’ বাবার কথা শুনে মাঝেমধ্যে হাসি পায়। সেদিন বাসায় ফিরে দেখি মামা এসেছেন গ্রামের বাড়ি থেকে। আমাকে দেখে বললেন, ‘ভাগনে দেখি বড় হয়ে গেছ।’ মামার একটা দোষ হলো তিনি অতিরিক্ত পান খান। তিনি কথা বলার সময় পানের পিক ছিটিয়ে সামনের আদমির অবস্থা খারাপ করে দেন। রাতে মামাকে আমার সঙ্গে ঘুমাতে দেওয়া হলো। মামা একা একা বকবক করেই যাচ্ছেন। এদিকে আমার ঘুমের বারোটা বাজছে। সব ঘরের লাইট নিভে যেতেই শুরু হলো ইঁদুরের রাজত্ব, মানে টুসটাস শব্দ। মামা ভয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এমন শব্দ কোথা থেকে আসে?’ বললাম, কী জানি, ভূতে করে হয়তো। ‘ভূত!’ মামার তখনই অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়। দোয়া পড়ে মামা শুয়ে পড়লেন। হঠাৎ একটা ইঁদুর তার বেয়ে লাফিয়ে পড়ল মামার ওপর। ভয়ে ভূত ভূত বলে মামা লাফিয়ে খাট থেকে পড়লেন। মামার চিত্কার শুনে আব্বু-আম্মু ছুটে এলেন। ভয়ে তখনো মামা ঘামছেন। বিস্তারিত শুনে মা হেসে খুন। বললেন, ‘এগুলো সব ইঁদুরের কাণ্ড।’ কিন্তু মামা বিশ্বাস করতে চান না। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, ‘আমি গ্রামের পোলা, ভূত আর ইঁদুরের পার্থক্য বুঝি না?’ মা বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন, ভিতু মামা পরদিনই ভূতের ভয়ে গ্রামে ফিরে গেলেন।
ঢাকা।

জোতিষি বলে দিয়েছে ভবিষ্যৎতে আমার মেয়র পদে দাঁড়ানোর বেপুক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগে থেকেই পদ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। হিকহিক...আজ ০৬-০৪-২০১৫ দৈনিক সমকালের প্যাঁচালে আমার লেখা নির্বাচনী আইডিয়া...
30-3-2015 Daily bangladesh pratidin-ar rokomari rommo-ta amar lakha<<< lakha porar por kaw kachalla porla ami dai noi tongue emoticon tongue emoticon tongue emoticon

বউ এবং ক্যাঁচাল
বউ আছে আর ক্যাঁচাল নেই এটা অনেক ক্ষেত্রেই বিরল ঘটনা। তেমনি কিছু ঘটনা তুলে ধরেছে- সোহানুর রহমান অনন্ত

বউ যখন সিরিয়াল প্রেমী :

সিরিয়াল প্রেমী বউ হলে আপনার টিভি দেখার কপাল পুড়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনি একটা কাজ করতে পারেন। বউ যখন সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত আপনি সেই সুযোগে ঘরের মধ্যে কয়েকটা তেলাপোকা ছেড়ে দিতে পারেন। দেখবেন আপনার বউ এ ঘর থেকে অন্য ঘরে পালিয়ে গেছে। তবে এরপর আপনি নিজে ঘরে বসে তেলাপোকার যন্ত্রণার মাঝে টিভি দেখতে পারবেন কিনা জানি না।



বউ যখন শপিং প্রেমী :

বউয়ের সঙ্গে শপিংয়ে যাওয়া মানে আপনার মাথা আর মানিব্যাগ দুটোরই লালবাতি। তাই বউয়ের এ যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আপনাকে আড়চোখে তাকানোর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ শপিংয়ে আসা সুন্দরী মেয়েদের দিকে আড়চোখে তাকাতে হবে। বউয়ের হাতে দু'একদিন ধরা পড়লেই দেখবেন আপনাকে নিয়ে আর শপিংয়ে আসবে না। যদিও আপনার চরিত্রের লালবাতি জ্বলে যাবে। এ ছাড়া আর কোনো বুদ্ধি খুঁজে পেলাম নারে ভাই।



বউয়ের গীতচর্চা :

মেয়েদের গান পছন্দ শুধু পছন্দই না সকাল সকাল তারা গেয়ে ওঠে...ওওওওওওও লা লা লা লা। আর সেই বেসুরা গানে আপনার ঘুম ভাঙতেই পারে। তাই হেডফোন অথবা তুলা দিয়ে ঘুমান। তাতেও কাজ না হলে আলমারির ভিতর ঢুকে ঘুমাতে পারেন। গান তো নয় ঘরের ভেতর সমাবেশ হলেও আপনি টের পাবেন না।



বউ যখন প্রশংসাপ্রেমী :

প্রশংসা শুনতে কার না ভালোলাগে। তবে মেয়েরা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। কোনোভাবে যদি প্রশংসা করা যায় তবেই হয়েছে। একেবারে তেল ছাড়াই পুরি হয়ে যায়। তাই ঘরের শান্তি রক্ষায় বউকে বেশি বেশি করে প্রশংসা করতে শিখতে হবে। দরকার হলে বাংলা ছবি দেখে প্রশংসা শিখুন, বেশি বেশি প্রশংসা করুন নিরাপদে থাকুন।

অনেক দিন পর প্রথম আলোতে লিখলাম আজ ১৫-০৩-২০১৫ দৈনিক প্রথম আলোর বন্ধুসভায়

নীল ক্যাফের ভালোবাসা
সোহানুর রহমান

আরিস সবে কফির কাপে চুমুক দিয়েছে। ঠিক এমন সময় নাবিলার মেসেজ এল।
-তোর কি আমার স্ট্যাটাস চুরি করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?
-আছে তো?
-আছে মানে?
-হ্যাঁ তোর স্ট্যাটাসে লাইক দেওয়া। এটাও তো একটা কাজ, কী বলিস? উত্তর দিয়ে আরিস মিটিমিটি হাসে।
-বুঝেছি তুই কথা প্যাঁচাবি, বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখ, আকাশে কী সুন্দর একটা চাঁদ।
-তুই তো কেবল চাঁদটাই দেখলি, চাঁদের মধ্যে কালো বর্ণে কি লেখা সেটা দেখলি না।
-কী লেখা?
-সেখানে লেখা নাবিলার নাকটা এভারেস্টের চেয়ে কম নয়। হা হা হা, হো হো।
-ইউ, তুই আমাকে পচালি, আমার নাক এভারেস্টের মতো? আমাকে যদি দেখতি তাহলে বুঝতি আমার নাক কত কিউট।
-একটা সেলফি তুলে পাঠিয়ে দে, দরকার হলে ফেসবুকে আপ করে পুরো দেশকে দেখাব।
-হয়েছে পাম মারিস না, আমি গেলাম।
-দোস্ত একটা পিক দে না, কতকাল আর এমন পিকচার বিহীন থাকবি।
-যতকাল পিকচার না দিচ্ছি ততকাল। নাবিলা ফেসবুক থেকে চলে যেতেই আরিস নাবিলার টাইমলাইনে ঢুকে। ফেসবুকে নাবিলার সঙ্গে পরিচয়। একসময় ভালো বন্ধুত্ব। আরিস মনে মনে ভাবল, আজব মেয়ে, কোনো ছবিই দেয়নি। তা ছাড়া সব ইনফরমেশনই অনলি মি করা। কেবল ডলের ছবি দেওয়া কতগুলো, বড় ডল ছোট ডল, অদ্ভুত। ইদানীং নাবিলাকে খুব ভাবছে আরিস। ফেসবুকে তো আরও অনেক বন্ধু আছে কিন্তু নাবিলা কেন? অচেনা একটা মেয়ে, যাকে কোনো দিন দেখেনি, এমনো তো হতে পারে আইডিটা ফেক। নাহ্ ফেক হতে পারে না, আরিস নিজেকে ধমক দেয়। আরিস দুষ্টুমি করেই নাবিলার ইনবক্সে টেক্সট করে।È‘নাবিলা আমি বোধ হয় তোর প্রেমে পড়ে গেছি, সারাক্ষণ কেবল তোকেই ভাবি, স্যরি তোমাকেই ভাবি। উত্তরের আশা করে লাভ নেই, আমি জানি তুমিও আমায় ভালোবাসো।’ দুষ্টুমি করে দিলেও কেমন যেন ভয় লাগছে। সারা রাত আর ফেসবুকে ঢোকেনি, তার পরদিনও না। তিন দিন পর ফেসবুকে ঢুকে শকট হলো আরিস। কোনো উত্তর দেয়নি নাবিলা, আরও অদ্ভুত ব্যাপার এই তিন দিন ফেসবুকে আর কোনো স্ট্যাটাসও দেয়নি ও। এমন তো কখনো হয় না। এরপর আরও অনেক দিন কেটে গেল। নাবিলা ফেসবুকে নেই, অকারণেই ওর টাইমলাইন ঘাঁটাঘাঁটি করে আরিস। অদেখা মেয়েটির জন্য এমন লাগছে কেন? তাহলে কি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে নাবিলাকে? হয়তো বা...। আরিস অনেক ভেবে একটা টেক্সট করে নাবিলাকে। ‘প্রথমটা দুষ্টুমি হলেও এখন সিরিয়াস বলছি, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। তোমার শূন্যতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, যে ফেসবুকে তুমি নেই, সেখানে আমার থাকাটাও বেমানান। আমি তোমার জন্য নীল ক্যাফেতে অপেক্ষা করব। আসবে কি না পুরোটাই তোমার ইচ্ছে...।’
এরপর প্রতিটি বিকেল যেন নীল ক্যাফের কাচের জানালাগুলোতে ভালোবাসার আলপনা আঁকত। আরও ১৫ দিন কেটে গেল কিন্তু নাবিলা আসেনি। এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে, আরিস ক্যাফেতে বসে আছে। ঝিরঝির বৃষ্টি তখনো পড়ছিল। ঠিক বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একটি মেয়ে প্রবেশ করল ক্যাফেতে। সোজা এসে বসল আরিসের সামনের চেয়ারটাতে। আরিস কিছু বলার আগেই বলল নাবিলা, ‘তোমার চুরি করা স্ট্যাটাসের একমাত্র মালিক।’ মুহূর্তেই আরিস যেন নিজেকে ফিরে পেল। নাবিলা...। ‘ইয়েস, কোনো সন্দেহ?’ ‘ফেসবুকে ছিলে না কেন?’ ‘তোমাকে বাজিয়ে দেখলাম, সত্যি ভালোবাস কি না,’ ‘কি বুঝলে?’ ‘বুঝলাম এখানে অন্তত চুরিটা নেই।’ এই বলে নাবিলা হেসে উঠল... আরিস তাকিয়ে রইল ওর মুগ্ধ করা মুখটির দিকে। বাইরে তখন বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।


weekly magazine robbar 08 march 2015 issue- shahitto patay amar golpo

0-3-2015 Daily Somokal-ar Suhriid-a amar lakha golpo>>><<<<<

অনুপমা
সোহানুর রহমান অনন্ত

আমাদের বাড়ির পাশেই কিরণ-মালার দীঘি। কীভাবে এই দীঘির নামকরণ হলো, এই দীঘির বয়সই বা কত, গ্রামের মানুষ বলতে পারে না। দীঘির ওপাশেই হিন্দুপাড়া। সন্ধ্যা হলেই কাঁসর ঘণ্টার শব্দ শোনা যায়। হিন্দুপাড়ার ঠিক মাঝখানেই ছিল অনুপমাদের বাড়ি। বেশ গোছানো একটি পরিবার। অনুপমার বড় ভাই বকুল ঘোষের সঙ্গে ছিল আমার ভালো সম্পর্ক। প্রায়ই দু'জন একসঙ্গে বাজারে মুনসুরের দোকানে বসে চা খাই। বকুলদার সঙ্গে সব সময় একটি রেডিও থাকত। গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা সুযোগ পেলেই ধরে বসত রেডিওর খবর শোনার জন্য। দেশের অবস্থা একেবারে ভালো না। পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর গুলি করছে নির্বিচারে। চারদিকে আতঙ্ক।
একেবারে অজো পাড়ার এক গ্রামে জন্ম আমার। তবে এই অজপাড়াগাঁয়েরও একটি সৌন্দর্য রয়েছে। আর তা হলো অনুপমা। পুরো নাম অনুপমা ঘোষ। গ্রামের আট-দশটা মেয়ের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন গায়ের রঙ তেমন চেহারা। কথা বলার ধরনটাও মিষ্টি। বেশ কয়েকটা বিয়ের সম্বন্ধ এসে ভেঙে গেছে। পাত্র যৌতুক হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। মাঝে মাঝেই বকুলদা আফসোসের সঙ্গে বলে, বোনটার জন্য একখান সুপাত্র পেলাম না! এই বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি কেবল শুনে যাই, কোনো উত্তর দিই না।
সন্ধ্যা হলেই অনুপমাদের বাড়ি গিয়ে উঠি বকুলদার খোঁজে। আর ঠিক সেই সময়টিতেই চোখাচোখি হয় অনুপমার সঙ্গে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখের পাপড়ি দুটি আর এক হয় না। এক কাপ চা আর মুড়ি খেতেই হয়। অনুপমার বাবা শয্যাশায়ী। এককালে বেশ নাম করা
সোনার ব্যবসায়ী ছিলেন। কালের বিবর্তনে এখন সেসব কিছুই নেই। অনুপমার কাকা নিতাই ঘোষ। মাঝে মাঝে আমাকে দেখলে তাকিয়ে থাকেন। তিনি যে আমার এ বাড়িতে আসা পছন্দ করেন না, সেটা ঢের বোঝা যায় চাহনি দেখে। অবশ্য এতে দোষের কিছু নেই। একজন মুসলিম ছেলে হিন্দুবাড়িতে এলে মানুষ আড়চোখে দেখতেই পারে। সেদিন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘোষবাড়িতে প্রবেশ করলাম। পুরো বাড়ি অন্ধকারে ঢাকা। উঠোনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার বকুলদার নাম ধরে ডাকলাম। কোনো সাড়া-শব্দ নেই। ফিরে যাব কি-না ভাবছি এমন সময় অনুপমা বলে উঠল, দাদা তো সদরে গেছে। আসমানের যা অবস্থা, তাতে আজ আর ফিরবে না বোধ হয়। সদরে দাদার বন্ধু তুষার দত্তের বাড়িতেই থেকে যাবে হয়তো। আমি কিছুই বললাম না। ফিরে যাবার জন্য পা বাড়াব এমন সময় অনুপমা বলল, দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে এসে বসেন। ভিজে যাচ্ছেন তো। আমি ছাতাটা রেখে ভেতরে গিয়ে বসলাম। অনুপমা একটা গামছা এনে বলল, মাথাটা মুছে নিন, ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ওর ঠোঁটের মুচকি হাসিতে ছোট্ট তিলটা নেচে উঠছে। হারিকেনের হালকা আলোয় অনুপমার মুখটা সত্যি বেশ সুন্দর লাগছে। আমি তাকিয়ে রইলাম অপলক দৃষ্টিতে।
২.
বৃষ্টি কমে এলে ছাতাটা নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। বকুলদা আমাকে দেখে বলল, শুনেছিস?
কী?
পাকবাহিনী নাকি গ্রামের মানুষদের ওপর হামলা শুরু করেছে। কথাটা শুনে চমকে গেলাম আমি। ভেতর থেকে বাবা বেরিয়ে এলেন। সর্বনাশ! এখন কী হবে? বকুলদা আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল, শোন, গ্রাম থেকে অনেকে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং নিতে যাইতাছে। সবকিছু ঠিক করে রেখেছি, আমিও চলে যাব। এখন তুই যাবি কি-না বল? আমি কী করব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। একদিকে অনুপমার ভালোবাসা অন্যদিকে দেশরক্ষা। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম, আজ রাতেই আমরা ট্রেনিং নিতে চলে যাব। সন্ধ্যায় আর একবার গেলাম
ঘোষবাড়িতে। অনুপমা আজ একটি শাড়ি পরেছে। দেশের এই খারাপ সময়ের মাঝেও অনুপমার মুখটা দেখলে শান্তি পাই। নাহ্; ভালোবাসার কথাটা আর বলা যাবে না অনুপমাকে। আগে দেশ স্বাধীন করি, তারপর বলব। ফেরার সময় একবার তাকিয়েছিলাম অনুপমার দিকে। ঠিক সেদিনের মতো আজও আমার চলে আসার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আজ হাসি নেই। মলিন একটি মুখ। হয়তো অনুপমাও শুনতে চেয়েছিল আমার মুখের না-বলা সেই কথাটুকু। আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। মাঝরাতে আমরা বেশ কয়েকজন বেরিয়ে পড়লাম। বাবা অবশ্য বেশ কয়েকবার বলেছেন, দরকার নেই যুদ্ধে যাওয়ার। তার চেয়ে বরং আমরা ইন্ডিয়া চলে যাই। সেখানে আমাদের দুরসম্পর্কের একজন চাচা থাকে। কিন্তু দেশপ্রেমের কাছে সেদিন সবকিছুই মিছে হয়ে গিয়েছিল। অন্ধকারে কিরণ-মালার দীঘির পাড় ধরে আমরা হেঁটে চললাম। দীঘির জলে তখন আধা মেঘে ঢাকা চাঁদটা ভেসে আছে।
৩.
যুদ্ধ চলা অবস্থায় খুব মনে পড়ত অনুপমার কথা। চুপিচপি ঘোষবাড়িতে ঢুকে অনুপমার ঘরের দরজায় টোকা দিলাম।
কে? ফিসফিস করে বললাম, আমি। অনুপমা কণ্ঠ চিনতে পেরে দরজা খুলে দেয়। আমাকে দেখে হয়তো চমকে গেছে। আমি তাকিয়ে রইলাম ভালোবাসার মুখটির দিকে। অনুপমা মুচকি হাসলো।
দাদা কেমন আছে?
ভালো আছে।
আচ্ছা দেশ কবে স্বাধীন হইব?
হবে, খুব তাড়াতাড়ি। একটা কথা ছিল।
কী কথা?
নাহ্, এখন বলব না। যেদিন দেশ স্বাধীন করতে পারব সেদিন বলব।
ততদিনে যদি দেরি হয়ে যায়?
হবে না, আমি ফিরে আসবই। চাঁদের এক টুকরো আলো এসে পড়েছে অনুপমার মুখের উপর। আচ্ছা আমি এখন যাই_ বলে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম। এই প্রথম অনুপমার চোখে জল দেখলাম। চাঁদের হালকা আলোয় এক একটি ফোঁটা জ্বলজ্বল করছে। কষ্টটাকে মনে চাপা দিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। পেছনে আর তাকাতে পারলাম না।
৪.
চারদিকে বিজয়ের খবর শোনা যাচ্ছে। পাকিস্তানি বাহিনী এখন দিশেহারা। তবুও আমরা থেমে না গিয়ে আক্রমণ চালিয়ে গেলাম। অবশেষে শত্রুপক্ষকে শেষ করে স্কুলটি দখল করলাম। স্কুলের প্রতিটি রুমেই অনেক বাঙালির লাশ পড়ে আছে। সবাই একেকটি রুম দেখতে লাগলাম, কেউ বেঁচে আছে কিনা। একটি রুমে ঢুকতেই দেখলাম রুমটা অন্ধকার। হঠাৎ মনে হলো, একটা মানুষের দেহ মেঝেয় পড়ে আছে। পকেট থেকে ম্যাচটা বের করে এক নিঃশ্বাসে কাঠি জ্বালালাম। সামনে যা দেখলাম তাতে আমি কিছুক্ষণের জন্য পাথর। আগুনটা জ্বলতে জ্বলতে আঙুলে এসে আঘাত করেছে। চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল। অন্ধকারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখের ভুল নয়তো? আরও একটি কাঠি জ্বালালাম সাহস করে। হ্যাঁ সত্যি। ওই তো আমার অনুপমার অর্ধনগ্ন লাশ পড়ে আছে। নরপিশাচরা শকুনের মতো শেষ করেছে আমার ভালোবাসাকে। হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে লাগলাম। মনে পড়ে গেল অনুপমার কথা। সত্যি কি দেরি করে ফেললাম আমি?
৫.
চারদিকে চূড়ান্ত বিজয়ের আনন্দ। অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিরণ-মালার দীঘির জলে পা ভিজিয়ে আমি বসে আছি। দীঘির ওপারে শ্মশানে দাহ করা হয়েছে অনুপমাকে। আমার অশ্রু ঝরে পড়ে দীঘির জলে। বকুলদা এসে পাশে বসল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, এ আমার কী হলো রে ভাই? গ্রামের একজনের মুখে শুনলাম, কিছু রাজাকার জানতে পারে আমি মুক্তিযুদ্ধে গেছি। ব্যস, পাকিস্তানি বাহিনীকে খবর দিয়ে গ্রামে নিয়ে আসে। বাড়ি এসে প্রথমে বাবাকে হত্যা করে এবং অনুপমাকে তুলে নিয়ে যায়। আমি শুনে গেলাম কথাগুলো। কোনো উত্তর দিলাম না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শ্মশানের দিকে। বকুলদা পাশে কেঁদেই চলল। আমার হৃদয়টাও কাঁদছিল কিন্তুবকুলদা সে কান্না দেখতে পায়নি।