join facebook page

Tuesday, 28 October 2014

১৯ অক্টোবর ২০১৪, রবিবার daily nayadiganta Abokash a amar lakha

মৃত পুতুলের দ্বীপ
সোহানুর রহমান অনন্ত

ভূত শব্দটি শুনলেই কেমন গা ছমছম করে ওঠে আমাদের। কল্পনায় আমরা এঁকে ফেলি একটি ভৌতিক পরিবেশ। এ তো গেল কল্পনার কথা, আর সেই ভয়ের পরিবেশটি যদি আপনি বাস্তবে দেখেন, তাহলে কেমন হবে? হ্যাঁ, আজ পরিচয় করিয়ে দেবো মেক্সিকোর মৃত পুতুলের দ্বীপের সাথে। বছরের পর বছর ধরে যে দ্বীপ রহস্যের বেড়াজালে ঢেকে আছে। অনেক বছর আগের কথা, এক পরিবার সেই দ্বীপে বাস করত। এক দিন তিন শিশু পুতুল নিয়ে খেলা করছিল। নির্জন দ্বীপটিতে খেলতে খেলতেই তিনজনের একজন নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজা হয় কিন্তু কোথাও হদিস পাওয়া যায় না। পরে দ্বীপের পাশের একটি খালে পাওয়া গেল মৃতদেহ। এর পর থেকে মানুষের মনে এক আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এই দ্বীপকে গিরে। অনেকেই অনেক রকম কথা বলতে থাকে। পরে মেয়েটির বাবা মেয়েটির খেলার সব পুতুল ফেলে দেয় সেই খালের পানিতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পুতুলগুলো বেশির ভাগ ঢেউয়ের সাথে থেকে যায় দ্বীপটির আশপাশে। পুতুলগুলো তত দিনে প্রায় ভগ্নাংশে পরিণত হয়েছে। কোনোটার মাথা নেই, কোনোটার নেই চোখ। স্থানীয় লোকজন ভয়ে আর সেখানে পা বাড়ায় না। অনেকেই রাতে সেখান থেকে ভয়ানক চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেত। এই দ্বীপটি মেক্সিকো সিটি থেকে ১৭ মাইল দেিণ জোকিমিলকো জেলায় অবস্থিত। দ্বীপটির আশপাশে কেউ ভুল করেও যেত না। এর অনেক বছর পর ডন জুলিয়ান সানতানা নামে এক যাজক নির্জনে তপস্যা করার জন্য দ্বীপটিকে বেছে নিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল, এখানে তাকে কেউ বিরক্ত করবে না। কিন্তু তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল হয়ে যায়। কারণ দ্বীপটিতে থাকা অবস্থায় সেই মৃত মেয়েটির আত্মা বারবার তার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাসে এবং পুতুল চেয়ে বায়না ধরে। জুলিয়ান প্রথমে বিষয়টি এরিয়ে গেলেও একটা সময় মেয়েটির বায়না রাখতে রাজি হয়। কিন্তু মেয়েটি যেমন তেমন পুতুল নেবে না। বীভৎস সব পুতুল চেয়ে বসে। জুলিয়ান তাতেই রাজি হয়ে যায়। মানুষের কাছ থেকে নষ্ট পুতুল সংগ্রহ করতে থাকে, যা দেখতে ভয়ঙ্কর। জঙ্গলে এনে গাছের ডালের সাথে এগুলো বেঁধে রাখে। মেয়েটির আত্মা খুশি হয়। জুলিয়ান এমনি করে হাজারো পুতুল এনে নির্জন দ্বীপের গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। একটা সময় মৃত পুতুলের রাজ্যে পরিণত হয় দ্বীপটি। যে দিকে চোখ পড়ে কেবল মৃত পুতুল। যদিও দ্বীপটাতে কেউ যেত না, তারপর কেউ কেউ বিশ্বাস করত, দ্বীপটিতে এখনো মৃত শিশুটির আত্মা ঘোরাঘুরি করে। রাতের অন্ধকারে দ্বীপটির দিকে তাকালো হুট করে মনে হয় আগুন জ্বলে ওঠে, আবার মুহূর্তেই নিভে যায়। মাঝে মধ্যে শোনা যায় গা হিম করা ভুতুড়ে আওয়াজ। বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, পুতুলগুলোর মধ্যেই সেই আত্মাটি বসত করে। এ ছাড়া ঘটে যেতে থাকে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা। অবশেষে মেক্সিকান সরকার দ্বীপটিকে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করে। এই দ্বীপে যেন আবারো মানুষের আনাগোনা শুরু হয় সেই কারণে, দ্বীপকে পরিষ্কার-পরিচ্ছ
ন্ন করে পর্যটন অঞ্চল বানানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এত সব রহস্য শোনার পর পর্যটকেরা আর আসতে চায় না মৃত পুতুলের দ্বীপে। একে একে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। একবার স্থানীয় এক বাসিন্দা একটি বড় নৌকা দ্বীপের কাছে ভেসে থাকতে দেখে। পরে সে আরো কিছু মানুষকে ডেকে দেখালে তারা এগিয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো কাছে গিয়ে তারা কোনো নৌকাই দেখতে পায়নি। এভাবেই একের পর এক রহস্য জš§ দিতে থাকে এই দ্বীপটি। সর্বশেষ যে ঘটনাটি জানা যায়, তা হলোÑ জুলিয়ান তার ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে সেই দ্বীপের কাছে মাছ ধরছিলেন। তার চোখ চলে যাচ্ছিল বারবার সেই দ্বীপটির দিকে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পান এবং ভাতিজাকে বলেন, ‘পানির নিচ থেকে আমাকে কারা যেন ডাকছে তাদের কাছে যাওয়ার জন্য। জুলিয়ানের কথা শুনে চমকে ওঠে ভাতিজা এবং তাৎণিক তারা সেখান থেকে চলে আসেন। কিন্তু বিধির বিধান , কিছু দিন পরই ওই দ্বীপের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় জুলিয়ানের মৃতদেহ। ভৌতিক মৃত পুতুল দ্বীপের রহস্য আজো রহস্যই রয়ে গেছে। বিজ্ঞান আজো এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। প্রকৃতির নিয়মে অনেক কিছুই ঘটে যায়, যা আমরা কেউ বিশ্বাস করি, কেউ করি না।


আজ ২৭-১০-২০১৪ চাঁদপুর কণ্ঠ সাহিত্য পাতায় আমার কবিতা

যদি ফিরে পেতাম
সোহানুর রহমান অনন্ত

যদি ফিরে পেতাম, বারোটি বছর আগের সেই দিনগুলো

শেষ রাতের ঝাপসা আঁধারের মাঝে

জীবন স্রোতের মুখে সে সুখগুলো আজ এলোমেলো

যন্ত্রণার সুর হয়ে নিশিদিন বাজে।

যদি ফিরে পেতাম, প্রিয়ার সেই হাসিমাখা মুখ

নীরব প্রেমের ছন্দগুলো সেই

ডুকরে ওঠা মনের মাঝে আছে শুধু দুঃখ

সবি আছে, কী যেন কী নেই।

যদি ফিরে পেতাম, গল্প লেখা সেই সময়টাকে

নিশি জেগে লেখা কবিতার মিল

হারিয়ে ফেলেছি সব হারিয়ে যাওয়ার বাঁকে

শরতের সাদা মেঘ, হয়ে গেছে নীল।

যদি ফিরে পেতাম, না বলা সেই সুপ্ত অনুভব

চোখ ভরে হাজারো কল্প দেখা

অস্তরবির মতোই হারিয়ে গেছে সব

এতোটা পথ জুড়ে কেবল আমি একা।

জানি পাবো না ফিরে, হয়তো সবি মিছে আশা

হারানো দিনগুলো কেউ কি ফিরে পায়

মিছে মিছে আজ খুঁজে বেড়াই কত ভালাবাসা

বুঝি না, মনের ঘরটা অগোছানোই থেকে যায়।
26 October 2014 Daily ittafaq-ar fun magazine thattay amar lakha
26 October 2014 Daily ittafaq-ar fun magazine thattay amar lakha
Aj 12-10-2014 daily nayadiganter Abokash-a amar lakha
হয়ে উঠুন গ্রাফিক্স ডিজাইনার
সোহানুর রহমান অনন্ত

ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন গ্রাফিক্স ডিজাইনকে। এখানে যেমন আপনি কাজের অফুরন্ত সুযোগ পাবেন, তেমনি ভালো কাজ দেখিয়ে দেশী-বিদেশী সব জায়গা থেকে সুনাম পেতে পারেন। লিখেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত
বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। তাই চাকরি পাওয়া অনেকটা সোনার হরিণ। তবে মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ব্যক্তি। ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন গ্রাফিক্স ডিজাইনকে। এখানে যেমন আপনি কাজের অফুরন্ত সুযোগ পাবেন, তেমনি ভালো কাজ দেখিয়ে দেশী-বিদেশী সবখান থেকে সুনাম অর্জন করতে পারেন। এটি এক দিকে যেমন সম্মানীয় পেশা, অন্য দিকে যুগোপযোগী। সারা বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের চাহিদা অনেক। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে কী লাগে।
শুরুতেই জেনে নেই গ্রাফিক্স ডিজাইনার কে? গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো আর্টের মাধ্যম। যিনি গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী বেশ কিছু কালার, আইডিয়া, টাইপফেস, ইমেজ এবং অ্যানিমেশন ব্যবহারের মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণ করতে সম হন। মোটকথা নিজের আইডিয়া এবং কম্পিউটারের টুলস ব্যবহার করে যিনি নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করেন, তিনিই গ্রাফিক্স ডিজাইনার।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স শাস্ত্রটিকে নিচের চারটি প্রধান শাখায় ভাগ করা সম্ভব :
১. জ্যামিতি : বিভিন্ন জ্যামিতিক তল কিভাবে উপস্থাপন ও প্রক্রিয়া করা হবে, তার গবেষণা
২. অ্যানিমেশন : দৃশ্যমান বস্তুর চলন (motion) কিভাবে উপস্থাপন ও পরিবর্তন করা যায়, তার গবেষণা
৩. রেন্ডারিং : আলোর পরিবহন কিভাবে অ্যালগারিদমের মাধ্যমে সৃষ্টি করা যায়, তার আলোচনা।
৪. ইমেজিং : ছবি আয়ত্তকরণ (image acquisition) এবং ছবি সম্পাদনা (image editing)
গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আয় :
হয়তো আপনি জানতে চাইবেন একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আয় কত হতে পারে? বাংলাদেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনে ডিপ্লোমাধারীর বেতন মাসে সাধারণত ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে ব্যাচেলর ফাইন আর্টসে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীদের বেতন মাসিক এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে যে শিাগত যোগ্যতা খুব বেশি দরকার তা কিন্তু নয়। তবে শিক্ষা থাকাটা জরুরি। যেহেতু কাজগুলো আপনাকে কম্পিউটারে করতে হবে এবং বিভিন্ন সাইটে ইংরেজিমাধ্যমে কথা আদান-প্রদান করতে হবে। সাধারণত আপনি অল্প শিতি হলেও গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে মাসে ১০-২০ হাজার টাকা আয় করতে পারে। আগেই বলেছি, বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রচুর কদর রয়েছে।
আপনি চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের
মাধ্যমেও বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারেন। অনলাইনে আপনি একটি লোগো ডিজাইন করলে পাঁচ থেকে শুরু করে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের বেশ কিছু জনপ্রিয় সাইট হলো : ৯৯ ডিজাইন’স ডটকম, ফ্রিল্যান্সার কনটেস্ট, ওডেস্ক। এসব সাইটে
আপনি বিভিন্ন কাজ পাবেন। কাজ যত ক্রিয়েটিভি হবে তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। জাতীয় যুব উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর কোর্স চালু করে থাকে। এখান থেকে আপনি কোস শেষ করে চাকরি পেতে পারেন খুব সহজে। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন একেবারে সহজে।
যে লিখতে পারে সে আঁকতেও পারে<<< আজ ১৪-১০-২০১৪ দৈনিক সমকালে আমার গল্প নন্দিনী<<< অলংকরনটাও আমার করা>>>

নন্দিনী
সোহানুর রহমান অনন্ত

কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি জানালা দিয়ে ঘরে এসে পড়ল। কাঁসর ঘণ্টার শব্দ শোনা যাচ্ছে পাশের বাড়ি থেকে। এই হিন্দু পাড়ার মধ্যে মুসলিম বাড়ি হিসেবে প্রথমে আমাদের বাড়িটিই নজরে আসে। বাবা সরকারি উঁচু শ্রেণীর চাকরিজীবী, চাকরি করলেও নিজে একটা ব্যবসা করেন আর সেই কারণেই বেশিরভাগ দেশের বাইরে কাটান। পড়াশোনা শেষ করেছি বছরখানেক আগে। বাবার অগাধ সম্পত্তি, একমাত্র ছেলে আমি, তাই তেমন একটা টেনশন নেই। আমাদের নিচতলায় নতুন দম্পতি ভাড়াটিয়া এসেছে। মেয়েটির নাম নন্দিনী, অদ্ভুত মেয়ে। পছন্দ বলতে কিছু নেই। বিয়ে করেছে কি একটা বুড়ো আদমিকে। নন্দিনীকে প্রথম যেদিন দেখি, কেন যেন চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। শ্যামলা বর্ণের মেয়েটির টানাটানা চোখ সত্যি পুরুষদের ঘায়েল করার যন্ত্র। বোধ করি নন্দিনীকে একনজর দেখার জন্যই দিনে বেশ কয়েকবার ওপর থেকে নিচে আর নিচ থেকে ওপরে উঠি। কখনও দেখতে পাই কখনও বা পাই না। এটা ভালোলাগা থেকে কি-না জানি না। তবে নন্দিনীকে দেখলে ভালো লাগে। শিহরণ জাগে, বুকের ভেতর কাঁসর ঘণ্টা বাজে।
২.
হাত বাড়িয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির স্পর্শ নিলাম। নন্দিনী কীভাবে যেন বুঝতে পেরেছে আমি ওকে আড় চোখে দেখি। তাই এখন আর জানালার কাছে তেমন একটা দাঁড়ায় না। আমার খুব কষ্ট লাগে, একটা টান অনুভব করি ওর জন্য। মধ্যরাতে ডুকরে কেঁদে উঠি। কেন এমন হয়? তার উত্তর নন্দিনী। নিজেকে বোঝাতে চাই, একে তো মেয়েটি সনাতন ধর্মাবলম্বী তার ওপর বিবাহিত। কিন্তু মন যে এই শব্দগুলোর বিপরীত। ভালোবাসা কি জাত দেখে হয়? এসব হাজারো প্রশ্ন একাকার হয় মনের মধ্যে। দরজাটা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলাম। নন্দিনীর ঘরের দরজা হালকাভাবে খোলা তাতে বোঝা যায় না ভেতরের কিছু। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার ওপরে ওঠার জন্য পা বাড়ালাম। পেছন থেকে মিষ্টি একটা শব্দ, শুনুন।
আমি চমকে পেছনে ফিরে তাকালাম। নন্দিনী দাঁড়িয়ে আছে, কপালে বড় একটা টিপ, সিঁদুরের লাল রঙে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবশেষে আবার সেই কাজল কালো টানাটানা চোখ। আমি যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। নন্দিনী বলে উঠল, আপনাকে একটা কথা বলি? আমি কেবল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলাম। ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম। অপ্রত্যাশিতভাবে
ই নন্দিনী বলে ওঠে, আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? নন্দিনীর এমন কথায় থতমত খেয়ে যাই। আমার নীরবতা দেখে নন্দিনী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, আপনার চোখে এত ভয় কেন? ভয় পেলে তো ভালোবাসা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আরেক টুকরো মিষ্টি হাসি দিয়ে নন্দিনী ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল। আর আমি হয়ে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। সে রাতটায় একটুও চোখের পাতা এক করতে পারিনি। সারাক্ষণ নন্দিনীকে ভেবেছি। অনেকটা বেশি ভেবেছি।
৩.
এরপর থেকে নন্দিনীর সঙ্গে চোখে চোখে প্রেম শুরু হলো। অল্পতে গড়িয়ে গেল অনেক দূর। জেনেছি এই বিয়েতে নন্দিনীর মত ছিল না। নন্দিনীর বাবা-মা জোর করেই এই বুড়োর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। গ্রামে এমন অনেক কিছুই সম্ভব। সে যাই হোক আমাদের প্রেম যে আমার ফ্যামিলি মেনে নেবে না সেটা খুব ভালো করে জানি আমি। জানে নন্দিনীও। শুধু জানে না ভালোবাসা নামক অদৃশ্য মায়াটি। এক শরতের বিকেলে নন্দিনী আমার হাতে হাত রেখে বলল, চলো আমরা অনেক দূর পালিয়ে যাই। আমি কেবল ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, কোথায় যাব?। অনেক দূর, যেখানে তোমার আমার মাঝখানে কেউ দেয়াল হতে পারবে না। নন্দিনীর কথাটা অনেক ভালো লেগেছিল। ওর ঠোঁটের কোণের তিলটা ছুঁয়ে বলেছিলাম। হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাওয়ার মাঝে, যদি তুমি পাশে থাক। নন্দিনীর সেই মায়াভরা হাসি।
৪.
কয়েক দিন ধরেই নন্দিনীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। নন্দিনীর স্বামী অসুস্থ, সারাক্ষণ স্বামীর কাছেই থাকে। আমি দাঁড়িয়ে থাকি দরজার ওপাশে, মাঝে মাঝে শুনতে পাই, নন্দিনীর পায়ের শব্দ। কিন্তু নন্দিনীর মুখ দেখতে পাই না। নির্ঘুম রাত কাটে, চোখের কোণে একরাশ জল নিয়ে। শরতের শেষ বিকেলে নন্দিনী ওর স্বামীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। ডাক্তারে ওদের ভক্তি নেই, গ্রামের কবিরাজদের দিয়েই নাকি সব রোগ সাড়ানো যায়। আমি তাকিয়েছিলাম নন্দিনীর দিকে। নন্দিনী কেবল একবার তাকিয়েছিল আমার দিকে, জল ছলছল চোখে। তারপর চোখ ফিরিয়ে নেয়। নন্দিনী চলে যায় আর ফেরেনি। কত শরৎ আসে কত শরৎ যায় নন্দিনী আর আসে না। নন্দিনী চলে যাওয়ার পর নন্দিনীর বাবা একবার এসেছিল, ঘর ভাড়া এবং জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করেছিলাম নন্দিনীর কথা। উত্তরে শুনেছিলাম, এখান থেকে যাওয়ার পর নন্দিনীর অসুস্থ স্বামী মারা যায়। এবং নন্দিনীর মামা ওকে কলকাতা নিয়ে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। লোকটি যেমন তাড়াহুড়া করে এলো তেমন তাড়াহুড়া করেই বেরিয়ে গেল। আমি এক পা এগিয়ে নন্দিনী যে ঘরটিতে ছিল সেদিকে তাকালাম। আমার চোখ দিয়ে তখনআমার চোখ দিয়ে তখন বৃষ্টি ঝড়ছিল। মনের মধ্যে থেমে থেমে ভেজে উঠছিল নন্দিনীর মায়ামাখা হাসির শব্দ।